জন্মান্তর
কোনো কোনো মেঘে আর বৃষ্টি পড়ে না।
জমে জমে পাথর হয়ে যায়।
ঠিক আমার মায়ের চোখের সাদা দাগের মতো।
জল পড়লেই জ্বালা করে।
মেঘ দেখলেই কুঁচকে যায়।
ঠিক তোমার চলে যাওয়ার মতো।
পাথর খণ্ড পেরোতে গিয়ে কবেই ভুলে গেছ একটু থেমে পেছন ফিরে তাকাতে হয়।
তাহলেই আবার বৃষ্টি পড়ত।
তুমি চাওনি। সোজা হেঁটে গেছো জন্মান্তরের দিকে।
সেখানে পথ মসৃণ।
বৃষ্টি পড়লেও কান্না পায় না।
কামড়
ভয়গুলো মিহি পাউডারের গুঁড়ো র মতো উড়ে যাচ্ছে।
উড়ে যাচ্ছে সমস্ত সংস্কার পেরিয়ে।
বেঁচে থাকাটা চিনি মিশ্রিত বাদাম।
প্রতিদিন কামড়ে খাচ্ছি। আহ! কী সুস্বাদু!
২৩ বছর পর ফিরে এলে ভুল বুঝতে পেরে।
দূরে কোথাও নাচ হচ্ছে। সাম্যের গান হচ্ছে।
আর কোথাও যাওয়া র নেই।
এই চড়ুইদের খোপে অনেকদিন পর উৎসব হচ্ছে।
পাখিরা খড়কুটো আনতে গেছে।
এই চাতালে আজ সারারাত বার-বি-কিউ হবে।
পাখিরাও মাতাল হবে আজ।
২৩ বছর পর পুরনো চার্চের ঘন্টা বাজবে আজ।
২৩ বছর ধরে নিখোঁজ মানুষদের জমায়েত আজ।
আরও পড়ুন, বহতা মুখোপাধ্যায়ের দুটি কবিতা
বিবাহ
মঁসিয়ে,
আপনার মনে পড়ে আমাকে। সেই যে আলেকজান্দ্রিয়ায় একটি দুর্গের সামনে আপনি গলায় দুরবীন ঝুলিয়ে আসলে দুর্গ নয় আমাকেই দেখছিলেন। আমার চোখে তখন দূরে
ভূ-মধ্যসাগরের ছায়া। আপনাকে নয় আমার হারিয়ে যাওয়া আপেলকে খুঁজছিল।
মঁসিয়ে, আপনার মনে পড়ে আপনার দূরবিন এ কাছে আসতে আসতে এক্কেবারে আপনার বুকের কাছে যখন এলাম আপেল টাকে দেখতে পেলাম। ঢেউএর মাথায় মুকুট হয়ে ভাসছে।
মঁসিয়ে আসলে আপনি কিছুই দেখেননি।
আপনার লেন্স আর আমার চোখের কোনোদিন বিবাহ হয়নি।
তবুও মঁসিয়ে আপনার কথা মনে পড়ে খুব।
চোখে দুরবীন লাগানো একটা পাগল রোজ আমাকে স্বপ্নের মধ্যে তাড়া করে।
সেই থেকে আমার তাড়াতাড়ি ঘুমোনোর অভ্যাস।
আপেল, দুরবীন আর ভূমধ্যসাগর
উফ! আর পারছি না মঁসিয়ে।
এবার ছেড়ে দিন।
স্মৃতির ঘর
লিখি তো!
প্রতিদিন লিখি।
জানলা, ঘর, বিছানা, বালিশ সব লিখে রাখি।
শুধু বালিশের নীচে স্মৃতির ঘর কাউকে বলি না।
মাঝে মাঝে তুমি আসো, ঝাড়পোঁছ করো।
২৭ বছরের স্মৃতির ঘর।
তুমি চলে যাওয়ার পর জানলা খুলিনি।
তবু ভাবি মাঝেমাঝেই তুমি আসো...
ঘুণাক্ষরেও সেসব লিখিনা কোনোদিন।
তোমার স্পেন্সার এর মতো উপছে পড়া সংসারে হ্যারিকেন এর আলো
মানায় না ভাল।
আরও পড়ুন, অদিতি বসুরায়ের একগুচ্ছ কবিতা
শীতকাল
প্রত্যেকটা দেখা হওয়ার ভেতর
চলে যাওয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে।
প্রত্যেকটা দেখা হওয়ার ভেতর
ফিরে আসা অপেক্ষা করে।
প্রত্যেকটা দেখা হওয়ার ভেতর
শীতকাল দাঁড়িয়ে থাকে একটু দূরে।