পাতালঘর
একটি সুড়ঙ্গ আছে, সব ট্রেন নেমে যায় যেখানে গভীর
আমরা নিয়তিদুষ্ট, ভয় পাই-
নিউজপ্রিন্টের গায়ে কালো কালো যৌনরোগ পড়ি।
নিজেকে গোপন করে
আমাদের গুপ্তকথা, নোংরা দেওয়ালের মত লিফলেট জড়ায়
তারপর পেচ্ছাপ করি পোস্টারের দিকে।
সিরিয়া
এ শহরে প্রতিধ্বনি হয় না কোথাও
দক্ষিণ, তোমার কাছে খুলে রাখি আমার জানালা
এসো, ছুঁয়ে যাও
কোথাও নিরীহ কিছু শরীরে ঘাসফুল ফুটে আছে
প্রতিটি শিশুর মুখে
যীশুর বেদনা
কোথাও ফুঁপিয়ে কাঁদছে ক্ষত
একটি কোকিল শুধু থেমে থেমে ডেকে যায়
কোথাও, নিহত
এ শহর রক্তমাখা তথ্য খায়
পেট-ভরানো ভাতে
মফস্বল
ছোট ছোট গলি দেখলে মনে হয় কেউ যেন অপেক্ষায় আছে
খড়খড়ির মধ্যে দিয়ে আরও কোনও অচিন জানলায়
তার মুখ মাঝে মাঝে দেখতে পাওয়া যায়
কোনওদিন দেখা হয় না কারু সাথে এ জীবনে, শুধু হাওয়া আসে
কখনও উত্তর থেকে দক্ষিণের দিকে
কখনও বা দক্ষিণের থেকে কোনও অচেনা রাস্তায়
আমিও প্রেমের কাব্য লিখি আর তুমি
ভাব আমরা ভাই বোন হয়ে গেছি কবে!
কত ট্রেন চলে যায়, কত বাস, চিঠি-
সময় পুরনো হয়ে স্নান করে আসে ;
আমার অচিন পাখি বুড়ো হয় না আনন্দবাজারে
তুমিও খড়খড়ি খোল, তবু কোনও জানলা বন্ধ হয়।
আরও পড়ুন, Literature: তুষ্টি ভট্টাচার্যের কবিতা
নকশালবাড়ি
বিপ্লব, আশ্চর্য শব্দ, দেওয়াল খসিয়ে ঝরে পড়ে
আমি তাকে বলি তুমি বুনোঝোপ দেখেছ কখনও?
সে আরও খরগোস হয়-
একা একা নিজেকে লুকোয়, যেন ধরা পড়ে গেছে।
ও কীসের দাগ? দেখি গাছে গাছে লকলকে আঁচড়।
এ ভরা বসন্তকালে, আগুন আদর করে কাকে?
মুখ তোলে ভগবান,-
বলে, সব মিথ্যে কথা্, বিশ্বাস কোর না।
মুক্তির দশক ছিল কোনও এক বসন্তের দেশে
এখন দেওয়ালে কোনও পুরনো ঠিকানা নেই,-
রঙ চটে গেছে।
পুরনো সমস্ত বই রূপকথা হয়ে যায়
লালকমল-নীলকমল দেশে।
আদর থাকে না, তার কেবল আঁচড় পড়ে থাকে।
আরও পড়ুন, পীযূষকান্তি বন্দ্যোপাধ্যায়ের একগুচ্ছ কবিতা
সন্ত্রাসের আগে
বাতাসে চড়ের শব্দ; ঘাড়-ধাক্কা দেওয়া হাওয়া বলে
তুমি আর নেই কোথাও;
বলে – চলে যাও। সব দরজাগুলো বন্ধ হয়ে গেছে।
দরজাই তো বন্ধ হয়। জানলা দিয়ে মুচকি হাসে লোক;
দেখে কারা চান্স পেল না, বোঝে কারা হেরে ভূত
ভাঙা বিস্কুটের টুকরো পোষা কুকুরের দিকে মানুষ ছড়ায়।
মালিকপক্ষের লোক, চকচকে সবুজ দেখতে
চোঙা ফুঁকে বলে যায় নাম।
এসব দুচোখ বুজে সহ্য করে গেলে তবে
ইমিউনিটি আসে; চোখ জলে ভরে গেলে তাই
কেঁদ না কখনও। বেঁচে থাক।
অপমান আছে, তাই, সমস্ত দরজার কাছে
রাত-পাহারা আছে।