Advertisment

রিমি মুৎসুদ্দির এক গুচ্ছ কবিতা

রিমি মুৎসুদ্দি দিল্লিনিবাসী, অর্থনীতির শিক্ষক। খবরের কাগজে ফ্রি ল্যান্স সাংবাদিকতা ছাড়াও অর্থনীতি বিষয়ক লেখালিখির অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। কবিতা ও গল্প লিখছেন বেশ কিছুকাল যাবৎ, দুটি বইও প্রকাশিত হয়েছে তাঁর।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

অলংকরণ- অরিত্র দে

কিছুটা বাজারি কিছুটা তরল

Advertisment

ফুলকপির গায়ে লেগে থাকা বাজারি ধুলো

জলের স্পর্শেও রয়ে গেছে ম্লানিমা, মেটে রঙ

শুধু ভাজার সময় একটু একটু করে লাল হতে থাকে।

যেন প্রতিটা বদলের গায়ে জরুরি লালচে আভা

আর ধুলোবালির শ্বাসপ্রশ্বাস। একমাত্র আগুন জানে

কতটা পুড়লে লাল আর কতটা পুড়লে ছাই!

বদলে যেতে থাকে শীতের আনাজ থেকে মরশুমি বাতাস

আসলে হিমবাহ হয়ে গেছে অতীত

যা থেকে গলে চুঁয়ে পড়বে না আর স্মৃতি

স্মৃতিহীনতাই সব স্বাদ অথবা কষাটে ভাব থেকে মুক্তি

তবুও বাজারের কোণে একা বসে থাকা গোল ছোট্ট লাউয়ের ফুলে

হয়ত কীটনাশকের বিষ নয় মাটি লেগে আছে

না দেখা সোমেশ্বরী গাঙের পাণি মুছে জেগে থাকা চর,

এখনও শিমুলগাছে কিছু পরিযায়ী পাখি উড়ে আসে।

বেলেহাঁসগুলো তবু আসে না আর।

যেন পূর্বজন্মে লেগে থাকা রক্তের দাগে সতর্ক

অথবা সমর্পণের আমিষ গন্ধে বহু আগেই বিলুপ্ত।

অবশেষে এইসব দু’একটুকরো বাজারি কিছু খুচরো স্বাদ

আমাদের ভালবাসা আর রক্তিম হতে চায় নি

নিজস্ব নিবিড় কোনও জ্যোৎস্নাও পথ ভুল আর আসে নি।

তার চেয়ে বরং আকাশের কাঁধে মাথা রাখি

ধুলোয় ঢাকা চাঁদ আর আঙুলে লেগে থাকা শিলবাটা কাঁচাপোস্ত

কিছুটা ব্যথা আটকে থাক এভাবেই,

ক্ষীরের মতো ঘন হয়ে যাক এখনও তরল সব শূন্যতা।

আরও বাংলা কবিতা পড়তে ক্লিক করুন এই লিংকে

বরফ কুয়াশা ও কিছুটা সাবধানী রোদ

বরফ ও কুয়াশায় কিছুটা শীতভাব লেগে থাকে।ইচ্ছে হয় আকাশ পিছলে একটা রোদ এসে পড়ুক। এই গুঁড়োগুঁড়ো শীতভাব কাচের টুকরোর মতো রোদ এসে চিরে দিক।একটু একটু করে পৃথিবীর সমস্ত উদাসী কোল্ড ওয়েভগুলোর সাথে অবাঞ্ছিত উত্তাপের একটা অনির্দিষ্ট বোঝাপড়া শুরু হোক।ফায়ারপ্লেসের আগুনগুলো যেন অব্যবহারে আরও বেশ কিছুদিন সুপ্ত স্মৃতির মতোই স্তিমিত থাকে।তাঁবুর মতো কুয়াশার গা ঘেঁষে আমাদের ভেজা ভেজা মুগ্ধতা অস্থায়ী বাতাসে অসমাপ্ত অথচ স্পষ্ট কিছু সংকেত রেখে যাক।

বরফের টুকরোগুলো মুখে পুড়তে পুড়তে বেলচা হাতে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটার সাথে কখনও বিচ্ছেদ হয় না পিচ্ছিল এক রাস্তার। ওরা কেউ কাউকে স্তম্ভিত করে না, কেউ কারো অন্ধকারে বেলাশেষের আলো জ্বেলে দেয় না।তবুও ওরা একে অপরের দিকে ঝুঁকে বেঁকে যাচ্ছে আর ওদের মাঝে জেগে থাকা আবহমান শূন্যতায়-

ভারী বাতাস ক্রমে সয়ে আসছে

ভারী বাতাস ক্রমে সয়ে আসছে-

স্থির বিশ্বাস। ঘন দুধের সরের নীচেই রয়েছে ঈষদুষ্ণ নরম তরল। আত্মার কান্না চেপে সেই কবে থেকেই অপেক্ষায় আছে গরম বুকের দুধ। ভারী বাতাসের ভেতর থেকে একদিন ভেসে আসবে হয়ত পালকের মতো হাল্কা সব শ্বাসবায়ু। প্রসবপিয়াসী মন আর কুণ্ডলীপাকানো শরীরে আঁকা উজ্জ্বল অসমাপ্ত সব দৃশ্যপটে কুয়াশার বিচক্ষণতা নেই। অপরিমেয় হঠকারিতায় সাবাধানী রোদ শুধু জানে কতটা কাদা আর কতটা বরফের ভেতর জমে আছে কিছুটা পরিশুদ্ধ জলের স্তর।

ধারাপাত

ধারাপাত হয়ে একদিন জানলার কাঁচে এসে আছড়ে পড়বে প্রবল বৃষ্টি।  ঈষৎ খরাপ্রবণ এলাকায় মকুব হওয়া সব কৃষিঋণের সাথে পাল্লা দিয়ে তমুল বৃষ্টি।ফোঁটা ফোঁটা দাগ মুছে গিয়ে আবার ফুটে উঠবে।

বীজ ফাটিয়ে বেড়ে ওঠা ধানের বুকে লেগে থাকা মাটির গন্ধে সদ্য স্বামীহারা যুবতী চাষীবউয়ের ঘেমে ওঠা পরিশ্রমী শরীরের মতো মাঝেমাঝে জেগে উঠি আমি। ফসলের সুরক্ষায় ছড়ানো কীটনাশকের মতো ছড়িয়ে দিই কিছুটা লুকানো বিষ। সমস্ত বিশ্বজুড়েই ছড়ানো বিষে বিষক্ষয়।অথচ আধসেদ্ধ ভাতগন্ধে এখনও অলিখিত যুদ্ধবিরতি।

অবিরাম ধারাপাতে জমে ওঠা জলে পুরনো কিছু গর্ত ভরে যেতে যেতে একপুকুর জল। সব ক্ষতচিহ্নগুলোও আপাতত ডুবে থাকে। ভিজে যাওয়া ব্যাঙের শরীরী উল্লাসে পোয়াতি গাভীর পেট থেকে উঁকি দেওয়া আশ্চর্য নরম এক গোধূলি আলোয় ঘরে ফেরার সুখপাপে জেগে ওঠে। তবুও জমে থাকা জলই শুধু জানে কতটা কান্না গিলে নিলে অন্তিম ইচ্ছেরা সব বৃষ্টিঋণে ফিরে আসে। ধারাপাত বাড়লে তাই সংরক্ষণ ও নিরাপত্তার ইতিহাস জেনে নিতে হবে।

bengali poetry Bengali Literature
Advertisment