Advertisment

সবর্না চট্টোপাধ্যায়ের একগুচ্ছ কবিতা

কম্পিউটার প্রযুক্তি নিয়ে বিশেষ পড়াশুনো শেষ করলেও প্রতিযোগিতার ইঁদুর দৌড় থেকে দূরে থাকতে চেয়েছেন, নিজের সাহিত্যানুরাগকেই প্রশ্রয় দিয়েছেন। ২০১৮ তেই প্রকাশিত হয়েছে সবর্না চট্টোপাধ্যায়ের প্রথম কবিতার বই। আজ তাঁর একগুচ্ছ কবিতা।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

ছবি- অরিত্র দে

লেখা আসে না যখন...

Advertisment

কতবার হয়েছে, কলম ধরে হাঁ করে আছি
জন্মায়নি কেউ।
উফ্, সে কী অসহ্য প্রসব যন্ত্রণা...

মেঘেদের বুকে কত পাখি
শোঁ শোঁ করছে বাতাস
হয়ত কোথাও বরফে ঢাকছে কোনো
পাহাড়ের নাভি,
তবুও ধরা দিচ্ছে না একফোঁটা জল।

শিশিরের মতো করে
নীরবে নিভৃতে
বৃষ্টির মতো করে
অঝোর ঝমঝমে...

চোখ বন্ধ করি।
উবু হয়ে শুই বইয়ের খোলা পাতা...
ভেদাভেদ ছেড়ে বহুদূরে
যেখানে পূর্ব থেকে পশ্চিমে মিশেছে
সমস্ত নিঃশ্বাস
ডানা মেলে দিই...

এখন শুধু পিয়াসীর সামনে এক দামাল সরোবর!

পায়রা

যতবার ভাবি এত মেঘ
কোথাও তো থেকে যাব ঠিক
রেখে দেব দুফোঁটা না বোঝা জল...
চমকে দেয় আকাশ।
ধমকে বলে, ' লাওয়ারিশ '!
লাশকাটা ঘরে হইহই...
চিরুনিতল্লাশি রক্তের উৎস্রোতে
তারপর নাড়ী ধরে ধরে
প্রেয়ার লাইনে চেকিং....

মানুষ হতে পারে না আজও যারা
মানুষের বাসজমি মাপে।
ঘাড় ধাক্কায় সব বিদেশি আগন্তুক
ছুঁড়ে দেবে পলিথিনব্যাগে ভরে।

মেঘে মেঘে বিদ্যুৎ কেঁপে ওঠে
বৃষ্টির হাহাকারে কানের পর্দা ফাটে
তবুও আকাশ কখনও তো মেঘে নীল!
কখনওবা সাদা পায়রার ঝাঁক
দূরে আরও আরও দূরে
উড়ছে তো উড়ছেই…

আরও পড়ুন, সৌমনা দাশগুপ্তর একগুচ্ছ কবিতা

কর্মফল

সিঁড়িতে উঠে দেখি
ছিঁড়ে গেল শেকল...
অনায়াসে মারিয়ে যাচ্ছি মধ্যবিত্ত বাবামা।

ক্রমে বাড়তে বাড়তে হাত
এভারেস্ট ছুঁলো
বুদবুদে স্বপ্নের চাঁদ...

আয়নায় হাসছে অহং
ময়ূরের পুচ্ছ গুঁজে বুঁদ
নেশাখোর পাপ…

একদিন ধীরে ধীরে
নিদ্রাহীন
হু হু চিতা…
কাঁদছে বাবা, কুঁজো মা....
ছেড়ে আসা পরিজন,
প্রথম স্ত্রী ও সন্তান।

চারদিকে নির্মেদ অন্ধকার।
ঘুমের মধ্যে একটা অজগর জেগে ওঠে
যেন চুল্লীর রাক্ষুসে হাঁ...
বিভৎস হাই ভোল্টেজে পুড়ে ছাই জীবনের
বিষাক্ত সাপ…

অশুভ

আরও পড়ুন, সুমন মান্নার দুটি কবিতা

চাঁদের আলোর মতো
একটা মুখ....
গলাতে কান্না ছিঁড়ে আসে।
নার্সিংহোমের বারান্দা-ঘর-ওটি থেকে
ঠিকরে আসছে ক্ষীণ
ক্ষুধার্ত চিৎকার....

অথচ তখনও
অপারেশন টেবিলে তার অসহায় মা,
কাতরাচ্ছে মৃত্যু যন্ত্রণায়...

বাইরে দাঁড়িয়ে ঠায়
কত লোকজন,
তবুও কেন, কিভাবে
পর হয়ে যায় এত আলো?
এত মেঘ, এই আকাশ
কোথাও মায়া নেই একটুও!

ফুটফুটে শরীরের ঘ্রাণ
কাটা নাড়ী, ছোট ছোট ধারালো আঙুল
তবু পাথর হয়ে গেছে কেমন
তার সমস্ত সংসার...
কেউ মুখ ফেরায় নি এতটুকু!
শুধু,
অপারেশন টেবিলে তার মা
কোমায় যেতে যেতে, একবার তাকিয়ে
দেখেছিল প্রথম সন্তানের মুখ…

কতটা ভালোবাসলে

কতটা ভালোবাসলে বলে দিতে পারি
যেতে পারো, আকাশের পথে।
মুঠো হাত,  বৃষ্টি ছোঁয়ার ছলে
খুলে দিতে পারি সমস্ত আঙুল......

তোমার চাওয়ার কথা ছিল যাকে,
আমারই মত কেউ
কাঁধে মুখ রেখে
বলে গেল,  মেঘের ঠিকানা...

তুমি চলে গেলে
নীল চাদর বিছানো উঠোন
তারপর একরাশ ঢেউ কেটে কেটে
ডুবে গেলে ক্রমশ আকাশের বুকে...

আর আমি
উন্মুক্ত মুঠোহাত রেখে
চিরকাল মনে রাখার লোভে
ভালোবাসতে বাসতে
শিখলাম ঘৃণা কাকে বলে...!

bengali poetry Bengali Literature
Advertisment