শিউলিরা
পুরো অক্টোবর জুড়ে দেখি শিউলিরা ঝরে ভিতরের ঘরে
রক্তক্ষরণ হেতু সুগন্ধী নেশা, সারাদিন ভোরবেলা আলো
আটকিয়ে থাকে চোখে মুখে। শিউলির অক্ষরে অক্ষরে
সেলাই ফোঁড়াই চলে। নক্সীকাঁথার মাঠ উৎসবে জমকালো।
শুঁয়োপোকা কাটা পাতাগুলি জানে সহ্য করতে হয় ব্যথা
এইসব দিনে। ছোট ছোট কুঁড়িদের দুধের গেলাস বাড়ায়
পরীক্ষার পূর্ব রাতে সে জেগে থাকে ঠায় বারান্দায় অযথা
যতক্ষণ না ভোরে শুকতারা পুরোহিত এসে ফুলটি ফোটায়।
বাৎসরিক জমে থাকা হিসেব নিকেশ মায় যন্ত্রণা কথাগুলি
থেকে খোলসটি ভাঙে বর্ষায়। কাছাকাছি গ্রহ – নক্ষত্ররাও
সন্ধ্যার পরিষ্কার আকাশে দেখি কথা রাখে, যেন পদধূলি
“উৎসব এল” – বলে ডাকে - “ভিতরের দরজা খুলে দাও”।
যে যেমন পারে নেয় দেয় দুরে চলে যায় ফের কাছে আসে
নতুন জামায় নাগরিক, আকাশের গ্রহ তারা, শিউলিরা ঘাসে।
আরও পড়ুন, সংহিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এক গুচ্ছ কবিতা
লাইটপোস্ট
গলিরাস্তার টিমটিমে লাইটপোস্ট লক্ষ্য করে তোমায়
তার অদৃশ্য চোখ সারা বৎসর অপেক্ষা অন্তে
একটি বা দুটি উড়ন্ত ঘুড়ি আটকায়।
আলো জ্বলে থাকে দিনের মধ্যেও মাঝে মাঝে
কখনও খারাপ থাকে পনের দিন -এক মাস
দয়া করে বাতি বদলালে দেখা দেয় নতুন জামায়।
যতক্ষণ জেগে থাকো রাতে আলো জ্বেলে রাখো ঘরে
ঘুমোলে পর্দা টেনে অন্ধকার আয়ত্তে আনো
জীবনে দু’একটি মুহূর্ত আলো দিতে পেরেছে তোমায়
যখন পর্দাটি উড়ে যায় জোরালো হাওয়ায় বা ঝড়ে।
এই সুখ আজ অবধি কাউকে বোঝান যায় না।
নিজের ছায়া দেখা ল্যাম্পপোস্ট জীবনের উদ্দেশ্য,
পর্দায় করাঘাত করে এঁকে যাওয়া আলোর আলপনা।
কাছাকাছি
আমার খুব কাছাকাছি একটা সমুদ্র আছে
আমি তার ছাঁট পাই ঢেউয়ের,
অমাবস্যা পুর্ণিমার পুজোর প্রসাদ।
কাছাকাছি সীমাহীন গভীর জঙ্গল আছে
অজস্র অদৃশ্য পাখি, শিস দেয় দিনভর
কদাচিৎ দুর্লভ পালক স্পর্শ গায়ে এসে পড়ে।
এছাড়াও তিনকোণা ড্রইংখাতার পাহাড়চূড়া
সূর্যোদয়ের জন্য রাখা, যার অপার্থিব জ্যোৎস্নায়
আমার সম্পূর্ণ পৃথিবী আশ্চর্য নীল হয়ে যায়।
অনন্তের কাছাকাছি থাকি, আমি জানি কাছাকাছি
বিপুল শব্দসভার - মুখপোড়া চোখ সে সব জানবে না
অন্ধকারেই সারারাত হাটকাবে, দরজাটি খুঁজেই পাবে না।