অন্ধ কুকুরের মতো
বড়োই অকস্মাৎ তোমার চুলের ঘন ছায়া
ঢেকে দিয়ে চলে যায় জলসত্র নির্বিকার যতো
আবার কী বৃষ্টি হবে? দাবদাহ কমে গিয়ে পুকুরের জল
বুড়বুড়ি কেটে ফের কোল দেবে শ্যাওলা ও ঝাঁঝিকে?
কখনো হওয়ার নয়।
ট্রামের টিকির মতো তোমার অবস্থান
ওভারহেড তার থেকে সামান্য সরে গেলে
আমার বিবর্ণ আত্মা ছুটে যায় মাগরীবের নামাজের মতো
' রূহ! রূহ! ' রবে ফেরেশতার দল
দানাপানি ফুরনো তোতার মতো হাহাকার করে ওঠে
ট্রামের চাকা কর্ণের রথের মতো বসে গেছে কবে
চৌরাস্তার মোড়ে আমি দিশাহারা রয়ে যাই
মূক ও বধির। অন্ধ কুকুরের মতো
সাবধানে রাস্তা পার হতে গিয়ে বুঝে যাই হাতখানি সরে গেছে
করপুটে পচা মাছ দুর্গন্ধ বালুকা ও চিড়খাওয়া
ঝিনুকের খোলা তাও ছিলো ভালো -
সম্বল ছিলো তো বটে তবু!
হাতিবাগানের মোড়ে চারিদিকে ব্যাপারির ভিড়
দরদাম হাঁকডাক, গর্ভিনী নারীর মতো ধীরলয়ে
সন্ধ্যা খসে পড়ে
পুজোর আগের রবিবারে বেচাকেনা বড়ই আনন্দময়।
আমি অন্ধ কুকুরের মতো ইতস্তত পদচ্ছাপ রেখে
চৌরাস্তার মোড়ে অ্যাসফল্টে মাথা ঘসি -
চাকা বসে গেছে, ফিরে চলে গেছে শূন্য করতল।
আর আসবেনা।
আরও বাংলা কবিতা পড়তে ক্লিক করুন এই লিংকে
অন্ধকার ইচ্ছার ভেতরে
নিঃশ্বাসে আগুন আছে - এই ভরসায়
আমি সযত্নে জল দি টবের মাটিতে রোজ
মুখে ভরে জল আনি প্রভুভক্ত চতুষ্পদ
সেই জল সাবধানে ছেটাই চিকন ঘাসবনে
হামাগুড়ি দিয়ে। ঘাস ফাঁক করে গোলাপি কুঁড়িতে
সেই জল লাগে - দুলে ওঠে, ফুলে ওঠে
ফুল হয়ে কবে ফুটে ওঠে
সেই দৃশ্য দেখবো বলে, সরল ও দৃঢ়, অপেক্ষায় থাকি
ভুট্টার মোচা গেড়ে ঘেরা থাকে টব
সুরক্ষিত হবে। ফনফনে লতা উঠে কুঁড়িমুখ খুলে যাবে
গোলাপি ফুলের অস্তিত্বে আগুন আছে
কতকাল হিমে ঢেকে আছি, ভেবে আনন্দ লাগে।
এইমাত্র লতা দিয়ে অথচ সে শক্তপাকে জড়ালো আমাকে!
তরল বহ্নি চূড়ান্ত শুষে নেবে এমনই আগুনখাকি সেই ফুল।
সুজাতা
আনন্দ মানুষ পেতে চায়।
রাত্রিদিন পথের শেষে ঝোলাকাঁধে বসে থাকে
ঝোলায় লালচালের মুড়ি, বাতাসা, একটু গুড়
কখনো বা একটুকরো পিঁয়াজ। ঘটিতে ঠান্ডা জল রাখে।
গায়ে ঘাম হাতে মাটি বেনোজল পচাপাঁক খানাখন্দ পেরিয়ে পেরিয়ে
কবে মানুষ সামনে এসে, তেলচিটে বসন পেটের ওপর থেকে তুলে
তাই দিয়ে মুখের ঘাম মুছবে দাঁড়িয়ে, শ্বাস ছেড়ে হেসে বলবে --
`এলাম'।
শম্ভুনাথ অতশত বোঝে না
সন্ধ্যার ভাড়া খাটা শেষে মালিকের ঘরে রিকশা জমা করে
একটা আপেল, একটু আঙুর, গোটাদুই সস্তার সন্দেশ কেনে
ছেলের তিন দিন জ্বর - জ্বরে এমন'ই পথ্য, বাবুরা বলে।
গত দুদিন ভাড়া জোটেনি তেমন।
আনন্দ আজ রাতে শম্ভুর ঘরে শোবে।
মৃতা কিশোরীর ফেসবুক প্রোফাইল
শেষ বৃষ্টি দূরগামী কিছুদিন হলো। তথাপি নাছোড় শ্যাওলার দাগ
গতাসু সন্ধ্যার মলিন অন্ধকারে দেওয়াল আঁকড়ে রয়ে গেছে
যেন প্রস্তরীভূত মরীচিকা। বড় মায়া - ধূপ ধুনো রজনীগন্ধার মালা
অগ্রাহ্য করে অস্থির হাতে ঠেলে সরিয়ে শান্তি স্বস্ত্যয়ন
রয়ে যেতে চায় দেওয়ালে আজও। উজ্বল বান্ধব, লাইক ও সুখস্মৃতি
অনধিগম্য গূঢ় ইনবক্স ব্যেপে - সবই কি বৃথা যাবে?
কী ছিলো শেষ লেখা দেওয়াল জুড়ে আখর সাজিয়ে উচ্ছল প্রাণ?
ভালোবাসা, নতজানু পুষ্পচয়ন, চুম্বনের স্মৃতি
ঝলসে ওঠা গভীর দীঘি নিজস্বী তে, সেও তো অবস্থান এক - নিঃশেষ তবে?
নিশির ডাকের মতো অসময়ে বয়েস থেমে গেছে আহা, বোনেরা দিদি হবে
তথাপি কিশোরীর উজ্বল চোখ নিষ্পলক প্রোফাইল পিকচারে
চেয়ে থাকে - ভালো আছো? ভালবাসো আজও?ভুলে যাবে না তো?
নবীন কিশোর, দায়বদ্ধতা দীর্ঘ বড়ো স্কন্ধে বোঝাসম
ব্যবহারিক গতায়াতপন্থা বুঝে নেয় প্রাজ্ঞ বিবেচনায়।
অনন্ত ইথারে স্তব্ধবাক চোখের সারি আজীবন রয়ে যায়
কদাচিৎ কেউ খুলে দেখে সীমিত সময়।