চোখ-১
পাঁচ নম্বর জংশনে তোমার বাড়ী
যাত্রার মুখোমুখি সিটে বসা দুপুর
রৌদ্র-পতনের ছায়া বড়ো হতে থাকবার পরও
পৌঁছুতে পারলাম না
তুমি আমি তোমার শহরে মিলিয়ে যাবো
এই জংশন থেকে অন্য জংশনে
তোমার ক্লাস ফোরে যাওয়া বৃত্তিপাড়ার ব্রোথেলে
যাবারও ইচ্ছে ছিলো
নন্দীর এখন হয়তো শেষ বিকেল
তবুও ;
উজোনগ্রামের মুকুল এখনও কি
তোমার মুখোশ দরজায় কড়া নাড়ে?
গনগনে দুপুরে সুমিতা কি এখনও
চালশে চোখ নিয়ে
দাঁড়িয়ে থাকে ভিড় ব্যস্ত বাসস্টপে?
কুকুর-ছেউড়-মানুষ-হট্টগোল-টার্মিনাল
সব পেরিয়ে যখন পৌঁছুলাম দুপুর নেমে
গেলো মধুবাজার।
কাক সন্ধ্যায় মুঠোভর্তি অন্ধকার নিয়ে
তোমার সামনে দাঁড়ালাম
তখন ফিরবার তাড়া
আর তোমার
সপ্তার্শয চোখ।
চোখ - ২
দরজাটা খুলে দাও চোখ
একগুচ্ছ মেঘ হয়ে এসেছি
এতিম স্টীমারে চেপে ;
স্টেশনের বৈদ্যুতিক ঘন্টায়,
শহরতলির কিছুই মনে নেই
সাইপ্রাস গাছের ছায়ায় চাঁদের আলো
পাহাড় হয়ে গেছে,
সন্ধ্যার দেয়ালে ঠেস দিয়ে
রাত চাই না।
দরজাটা খুলে দাও চোখ
আমি আরও একবার আগুন চাই
বর্ষার কঠিন শীতল জল চাই।
চোখ - ৩
১৯৮২ সাল সেপ্টেম্বর তখন
মৌসুমী হাওয়ার দিকে নেমে যাবে
রংপুর;
বিপরীত নীলে ধূসর পাখিদের বাঁকা ঠোট
মৌন খেয়ালী চুলে ইচ্ছের পুতুল
দূরবীন খুলে যে চোখের উষ্ণ নিমন্ত্রণ
দেখেছি তা এলো না তখনও
রংপুরের তেরছা বিকেলে
এক ঝাঁক পাখির মাস্তুলে
তখনো সন্ধ্যা নামেনি
পোড়াঘোর দোরে তোমার গৃহসুলভ হাসি
নিয়ে ফিরে এলাম ;
তারপর থেকেই অপেক্ষা
দ্রাবিড় চোখের।
চোখ - ৪
তোমার চোখের গভীরে সন্ধ্যার আলো
চিবুকে ভোরের ঘাস
দুঃখ পল্লবে ছাওয়া
তোমার হৃদয়ের উপরিভাগ
পেটের ফুটপাত জুড়ে স্বাধীনতা
কেবল মেজে আনা বাসন কোসনের মতো
তোমার আজকের দুপুর
তোমার মগ্ন শরীরে উৎসব
মরুর-নীলের মতো আর্শ্চয তোমার করিডোর
তোমার হাত ঘড়ির পাঁচিলে ঠেস দিয়ে
ঘুমায় আমার অসংখ্য চোখ।
চোখ - ৫
তোমার চোখের ভেতর ,
সে ;
যে স্বপ্ন বাঁচে
তা আমার বিস্ময়
পাহারা দেয়া সময় আর
কাঁটাতার ছুঁতেও পারে না
না হওয়া কথাদের
তাই নৈঃশব্দেই হোক
তোমার আমার গেরিলা যোগাযোগ।