Advertisment

বাংলা অকাদেমিতে বই প্রকাশ সফল ব্যবসায়ীর, কলকাতায় জুয়েলারি পার্ক তৈরির পরিকল্পনা

এ বাংলায় তাঁর বই প্রকাশ করছে অভিযান, ওপার বাংলাতেও প্রকাশিত হবে এই বই। 'বিজনেসম্যান অফ দ্য ইয়ার' লেখার পিছনে তাঁর যে ভাবনা কাজ করেছে, আলম বলছিলেন, ‘‘দিশাহীন যুব সমাজের সরকারমুখীনতা’’।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

প্রকাশ পেল জোড়া বই

সাব অলটার্ন কথা বলতে পারে কি না, সে তর্ক কারও কারও কাছে আরও একবার উসকে গেল বাংলা অকাদেমির সভাঘরে, শনিবার। না, এদিন এ বিষয়ক কোনও তত্ত্ববোধিনী সভার আয়োজন ছিল না। ছিল একজনের দুটি বইয়ের প্রকাশ অনুষ্ঠান। তিনি কোনও লেখক নন। একজন ব্যবসায়ী। সফল ব্যবসায়ী।

Advertisment

জোড়া বইয়ের প্রকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অনেক নামজাদা ব্যক্তিত্ব। ছিলেন রাজ্যসভার সাংসদ তথা কলম পত্রিকার সম্পাদক ইমরান আহমেদ, ছিলেন লেখক জাহিরুল হাসান, প্রচেত গুপ্ত, শামিম আহমেদ প্রমুখ। ছিলেন কবি সুবোধ সরকারও, পরিচয়দান পর্বে সঞ্চালক ক্যাকটাস খ্যাত সিধু যাঁকে ‘বাংলা সাহিত্যের সেরা কবি’ বলে সম্ভাষণ করলেন। বক্তব্যের শুরুতেই সে সম্মাননার পাল্টায় সিধুকে ‘গায়কদের মধ্যে সেরা সঞ্চালক’ বলে অভিহিত করলেন সুবোধ।

আরও পড়ুন: নায়ার বাবুর ছুটি

বাংলা অকাদেমির সভাগৃহে যে বই দুটি প্রকাশিত হল, সে দুটির নাম যথাক্রমে ‘বিজনেসম্যান অফ দ্য ইয়ার’ এবং ‘মনের কথা’। প্রথম বইটি উপন্যাস হলেও, প্রকাশকের তরফ থেকে একে মোটিভেশনাল বই বলেই পরিচয় করানো হল। বইদুটির লেখক এস এস আলম। যাঁর আদি নিবাস ছিল বর্তমান পূর্ব মেদিনীপুরের দাসপুরে। গত তিন দশকের বেশি সময়কাল জুড়ে যিনি চেন্নাইয়ের বাসিন্দা, কলকাতায় এলে থাকেন দামি হোটেলে।

publive-image বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসেছিলেন সাংসদ, কবি, সাহিত্যিক প্রমুখ

কিন্তু এ গন্তব্য বড় সহজ ছিল না। চটকল মজদুরের সন্তান আলম বাবার কর্মহীনতার পরে যখন বাড়ি ছাড়েন, তখন তাঁর বয়স ১১ বছর। পৌঁছে যান মুম্বইয়ে। পড়াশোনা চালাবার সাধ্য ছিল না তাঁর। সভায় আলম বলছিলেন, খিদের জ্বালায় লঙ্গরখানার মত জায়গায় লাইনে দাঁড়িয়ে পড়েছেন দু-একবার। কিন্তু, লাইন এগোতে এগোতে আর যখন দুই বা তিনজন বাকি, সে সময়ে তাঁর মনে হয়েছিল, ‘‘ভিক্ষা নেব না, আমার তো সব আছে, তাহলে কেন?’’ এই কেন প্রশ্নই তাঁকে পরবর্তী বছরগুলোতে পরিশ্রমমুখী করে তোলে, করে তোলে হাজার জনেরও বেশি মানুষের কর্মসংস্থানকারী এক ব্যবসায়ী। তাঁর বইপ্রকাশ অনুষ্ঠানে এসে পৌঁছবেন তাঁর গ্রামের একদা জমিদার এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন এক সেনেট সদস্যও, যাঁকে বারংবার প্রশংসিতই করতে হবে স্কুলছুট এক ছেলেকে, বলতে হবে সে ছেলের সংস্কৃতিমনস্কতার কথা।

‘‘আমি কখনও ভাবি নি আমার বই প্রকাশ হবে,’’ খুবই কুণ্ঠিত শোনায় আলমের গলা। কিন্তু প্রায় পরক্ষণেই সে কণ্ঠে দার্ঢ্যের আভাস, যখন তিনি জানান, কলকাতার সিঁথিতে গোল্ড পার্ক তৈরি করবে তাঁর সংস্থা। হ্যাঁ, সোনার ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত আলম। মুম্বইয়ে গিয়ে তিনি সোনার কাজ শেখেন, কাজ শিখতে চলে যান দাদরা নগর হাভেলীতেও। সেখান থেকে চেন্নাই। চেন্নাইয়ে যখন তিনি ট্রেন থেকে নামেন, তখন তাঁর বয়স ২০, পকেটে সম্বল ৩০ টাকা। আর এখন? "পশ্চিমবঙ্গের যে কোনও স্টোরে সোনার চেন কিনলে আমার সংস্থার চেন পাবেন। আমি পশ্চিমবঙ্গে একক প্রচেষ্টায় জুয়েলারি পার্ক তৈরি করছি সিঁথির মোড়ে। নাম হবে স্বর্ণশিল্পী। এটা ২৫০ কোটি টাকার প্রকল্প। এখানে এক ছাদের নিচে কাজ করবেন ১০ হাজার স্বর্ণকার। তাঁরা সেখানে সমস্ত রকম সুযোগসুবিধা পাবেন।"

এ বাংলায় তাঁর বই প্রকাশ করছে অভিযান, ওপার বাংলাতেও প্রকাশিত হবে এই বই। 'বিজনেসম্যান অফ দ্য ইয়ার' লেখার পিছনে তাঁর যে ভাবনা কাজ করেছে, আলম বলছিলেন, ‘‘দিশাহীন যুব সমাজের সরকারমুখীনতা"। আলমের কথায়, ‘‘সবাই যদি সরকারের দিকেই তাকিয়ে থাকে, তাহলে কী করে চলবে? রাজ্যের চার কোটি কর্মহীন যুবক যুবতীকে দিশা দেওয়া আমার কর্তব্য বলে আমি মনে করেছি।’’

আলমের কর্মকাণ্ড শুধু ব্যবসাতেই সীমাবদ্ধ নেই। সামাজিক কাজকর্মের সঙ্গেও যুক্ত তিনি। ২০১৬ সালে ঘাটালের বন্যার সময়ে তাঁর নামাঙ্কিত আলম চ্যারিটেবল ট্রাস্ট (ACT) বন্যাত্রাণে বহু কাজ করেছে বলে জানাচ্ছিলেন এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত বক্তারা। আলমের দুটি বই থেকে প্রাপ্ত অর্থ এ ধরনের কাজেই ব্যয়িত হবে বলে জানিয়েছেন তিনি নিজে।

এস এস আলম যখন বাংলা অকাদেমির মঞ্চে বসে বা রেকর্ডারের সামনে কথা বলছিলেন, তখন তাঁর উচ্চারণে মান্য বাংলার গন্ধমাত্র ছিল না। ছিল তাঁর ব্যক্তিগত ইতিহাসের গন্ধ। যাকে সাব অলটার্ন ভাষারীতি বলে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে, গণ্যমান্যদের উচ্চারণে।

Book Release
Advertisment