Advertisment

ফণীর ফণা দেখতে দেখতে আর যাই হোক, রবীন্দ্রসংগীত মাথায় আসেনি

অবাক হয়ে ভাবছি প্রকৃতির রুদ্ররোষ ভদ্রলোক দেখেছিলেন নিশ্চয়ই তবু কেন বার বার বরণ করতে চেয়েছিলেন ঝড়কে? এটা কি, ঔপনিষদীয় দর্শনে সব অশুভের মধ্যে শুভর পদধ্বনি শুনতে চাওয়ার প্রবণতা বলে ব্যাখ্যা করব?

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Tagore Birthday, Rabindranath

ঔপনিবেশিক পরাধীন অবস্থা থেকে পরিত্রাণ চেয়ে, স্থিতুকে, স্থাণুকে হঠানোর আশা দেখেছিলেন ঝড়ের মধ্যে?

পশ্চিমবঙ্গের কলিকাতা নামে একটি শহর আছে। সে শহরে আজ রবি প্রণামের ঢেউ উঠবে। সেই ঢেউয়ের পেছনে চাপা পড়ে যাবে,  তিন চারদিন আগে ফণী বাবু নামের কে যেন একজন আসবেন আসবেন করেও এলেন না এমত অভিমান রাগ ও দুচ্ছাইবোধের, ইয়ার্কি ফাজলামির ঢেউ। যেন বড় আশা করে মালা ও ফুল নিয়ে ফণীবাবুকে বরণ করবেন ভেবেছিলেন তাঁরা। এদিকে তাঁদের প্রিয় রম্য ভ্রমণশহর পুরী ও তার আশপাশে কটক ভুবনেশ্বর ফণীর ছোবলে আক্রান্ত হলেন… বড় কাগজের হেডলাইন থেকে সে খবর সরে গেলেও… তা স্থান পেল তৃতীয় বা পঞ্চম পাতার ছোট খবরে। এখনও ৯০% শতাংশ ভুবনেশ্বর অন্ধকারে আর পুরীতে কবে বিদ্যুৎ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক ফিরবে তা ঈশ্বরই জানেন।

Advertisment

ইতিমধ্যে আমার রবীন্দ্রপ্রণাম কেবলই শুকনো পাতার, ঝরা ডালের, ভাঙা গাছের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। অবাক হয়ে ভাবছি প্রকৃতির রুদ্ররোষ ভদ্রলোক দেখেছিলেন নিশ্চয়ই তবু কেন বার বার বরণ করতে চেয়েছিলেন ঝড়কে? এটা কি, ঔপনিষদীয় দর্শনে সব অশুভের মধ্যে শুভর পদধ্বনি শুনতে চাওয়ার প্রবণতা বলে ব্যাখ্যা করব? নাকি,  ঔপনিবেশিক পরাধীন অবস্থা থেকে পরিত্রাণ চেয়ে, স্থিতুকে, স্থাণুকে হঠানোর আশা দেখেছিলেন ঝড়ের মধ্যে? নইলে লেখেন কেন...

ওরে ঝড় নেমে আয়! আয় রে আমার শুকনো পাতার ডালে.../ যা উদাসীন, যা প্রাণহীন, যা আনন্দহারা,/চরম রাতের অশ্রুধারায় আজ হয়ে যাক সারা--/ যাবার যাহা যাক সে চলে রুদ্র নাচের তালে॥

আচ্ছা উনি ঝড়কে সর্বদা এভাবে ডাকতেন কেন? বরণ করতে চাইতেন কেন? জীবনে বিধ্বংসী ঝড় দেখেন নি নাকি? নাহ, সেকথাও ত বিশ্বাসযোগ্য নয়। কারণ নৌকাডুবির মত একটা গোটা উপন্যাসই ত ঝড়ের রাতে নৌকো ডুবে যাবার সংগে যুক্ত। জীবনের উথাল-পাথাল কে ঝড়ের উথাল-পাথালের সংগে মেলাতে সে যুগের লেখকদের প্রবণতার কথা নাই বা ধরলাম। তার বাইরেও রবীন্দ্রনাথের ঝড় নিয়ে নানা অবসেশন। অবসেশনই ত! এই যে, তাসের দেশের রাজপুত্র, ঝড় হল বলেই না সে গিয়ে পড়ল নতুন দেশটায়। নতুন যৌবনেরই দূত হতে। গেলে ঝড়ের মধ্য দিয়ে আসতে হয় বৈকি। সঙ্গে সঙ্গে মনে পড়ল চারুলতার সেই দৃশ্য। হা রে রে রে করে ঝড়ের সংগে সংগে অমলের আবির্ভাব। নষ্টনীড়ে সে উল্লেখ ছিল না তবে অন্যান্য রবিকাহিনীতে ঝড় আর মেঘ আর বৃষ্টি বড় মুখর, সুন্দর তো!

কবীর সুমন যেন বলেছিলেন তাঁর গানে, বর্ষার মেঘ মানে আমাদের কাছে কাদা আর জল জমা রাস্তা। রবিবাবু মেঘেদের বড্ড সুন্দর করে এঁকেছিলেন। বর্ষার ত গোটাটা ইজারা নিয়েছিলেন। তাই ত কুলদা রায় শ্লেষ করে লিখেছিলেন বৃষ্টি ঠাকুর… আর এখন দেখছি ঝড়কেও যৌবনের প্রতীক করে তাকে তুলে গেছেন।

ফণীর মত ফণা তোলা ঝড়কে রবীন্দ্র বলয় থেকে বার করে আনতে গেলে তাই ঝড়ের আবাল্য রচিত স্বপ্নময় রূপটিকে বিনির্মাণ করতে হবে। সব ধ্বংসকে শুভ দেখতেন তিনি? এই যে বোঝাটা, এ যেন বড় একপেশে আমার কাছে। আজ যখন বংগোপসাগরের তটরেখা জুড়ে ভয়াবহ উন্মাদনায় লক্ষাধিক গাছকে ভেঙে ছিঁড়ে তছনছ করে গেছে সাইক্লোন,  বহু মানুষ গৃহহারা। অন্ন আপাতত সরকারি ত্রাণের মাধ্যমে সামান্য এলেও রুজিরোজগারের আশা দূর অস্ত, তখন তার মধ্যে অন্তত শুভ কিছুই খুঁজে পাচ্ছি না আমি। পাচ্ছি প্রকৃতির প্রতিশোধ।

(কর্মসূত্রে ভুবনেশ্বের বাস কবি ও সাহিত্য়িক যশোধরা রায়চৌধুরীর। সাইক্লোনের সময়ে সেখানেই ছিলেন তিনি। প্রত্যক্ষ করেছেন ঝড়ের রুদ্ররোষ। রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন এত ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে আগে কখনও আসেনি তাঁর জীবনে।)

Rabindranath Tagore Cyclone Fani
Advertisment