Advertisment

তসলিমা নাসরিনের লজ্জা-র পরের অংশ আসছে

সুরঞ্জনদের জীবনে এ সময়েই দেখা হয়ে যায় রিয়েল লাইফ তসলিমা নাসরিনের সঙ্গে, যে তসলিমা নাসরিন কলকাতায় পুলিশি প্রহরায় নির্বাসিত জীবন যাপন করছেন।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

ছবি- তসলিমা নাসরিনের ফেসবুক প্রোফাইল থেকে

তসলিমা নাসরিনের নিষিদ্ধ উপন্যাস লজ্জার পরবর্তী অংশ প্রকাশ হবে ২০২০ সালে। লজ্জাহীন নামের এ উপন্যাস প্রথম লেখা হয়েছিল এক দশকেরও বেশি সময় আগে। এ লেখা এর আগে বাংলা বা কোনও ভারতীয় ভাষায় প্রকাশিত হয়নি। তবে অতি সম্প্রতি হিন্দিতে এ লেখা অনূদিত হয়েছে।

Advertisment

বিতর্কিত এবং বহুবিক্রিত লজ্জার পরবর্তী অংশ লেখা হয়েছে তাঁর কলকাতাবাসের সময়ে। এর পর তাঁকে চিরতরে কলকাতা ছাড়তে হয়।

লজ্জা উপন্যাসের বিষয় বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর বাংলাদেশের হিন্দুদের নির্যাতন। উপন্যাসের শেষে সুরঞ্জন দত্ত ও তাঁর পরিবারকে নিরাপদ জীবনের আশায় কলকাতায় চলে আসেন।

মা কিরণময়ী এবং বোন মায়াকে নিয়ে সুরঞ্জনের পরিবার কলকাতায় জীবনসংগ্রাম চালাতে থাকে তাকে উপজীব্য করেই গড়ে উঠেছে লজ্জাহীন। দরিদ্র, শিকড়হীন, হিংসার শিকার সুরঞ্জনরাই এ কাহিনির মূল।

এ মানুষগুলির ভিতরের অশান্তি ছাপ ফেলে সম্পর্কেও। কিরণময়ীর স্বামী সুধাময় কলকাতায় আসার পর আত্মহত্যা করেন। সমস্ত টাকা পয়সা ফুরিয়ে যায় তাঁদের।

সুরঞ্জন এবং মায়া দুজনেরই বিয়ে ভেঙে যায়। এদের দুজনেরই বিয়ে হয়েছিল বাঙালি হিন্দু পরিবারে। এরপর সুরঞ্জনের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে জুলেখার। জুলেখা গণধর্ষণের শিকার হয়েছিল। মায়ার সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয় শিবোহানের। যার নাম মায়া শুরুতে ভেবেছিল শোভন, যা হিন্দু নাম বলেই পরিচিত।

সুরঞ্জনদের জীবনে এ সময়েই দেখা হয়ে যায় রিয়েল লাইফ তসলিমা নাসরিনের সঙ্গে, যে তসলিমা নাসরিন কলকাতায় পুলিশি প্রহরায় নির্বাসিত জীবন যাপন করছেন। তসলিমা এই সদ্য পরিচিত মানুষগুলি যেভাবে নতুন জীবনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে, তা বোঝার চেষ্টা করেন। তিনি নিজেও তখন একইভাবে খাপ খাইয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন তাঁর নয়া বাস্তবতায়।

এ বইয়ের অনুবাদ করেছেন অরুণাভ সিনহা। ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে হার্পার কলিন্স ইন্ডিয়া বইটি প্রকাশিত হবে।

নাসরিন বলছেন, সুরঞ্জন ও তার পরিবার জায়গা বদলালেও তাদের সমস্যার সমাধান হয়নি।

তিনি বলেছেন, "পিতৃতন্ত্র, নারীর প্রতি অসম্মান, সাম্প্রদায়িক মনোভাব এবং ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার বাতাবরণ ভারতে বাংলাদেশের চেয়ে কিছু কম নেই। এক দেশ থেকে আরেক দেশ পালিয়ে আমরা আমাদের নিজেদের তৈরি করা এ ফাঁদ এড়াতে পারব না, সত্যিকারের সমস্যার চাই সত্যিকারের সমাধান।"

তিনি আরও বলেন, "লজ্জার পাঠকরা ভাবতে পারেন যে এ ধরনের ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা কেবল বাংলাদেশেই ঘটে। লজ্জাহীন উপন্যাসে তাঁরা দেখবেন সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা এবং হিংসা ভারতে রয়েছে উপমহাদেশের অন্য যে কোনও জায়গার মতই।"

অরুণাভ সিনহা এই প্রথম তসলিমা নাসরিনের কোনও পুরো বই অনুবাদ করছেন। বিষয়টি নিয়ে তিনি খুবই উৎফুল্ল। ১৯৯০ সালে লজ্জা প্রকাশিত হওয়ার পর তসলিমাকে বাংলাদেশ পরিত্যাগ করতে হয়। আর কোনওদিন সেখানে ফিরতে পারেননি তিনি। এর পর তিনি ইউরোপ এবং কলকাতায় কিছুকাল বসবাস করেছিলেন। এখন দিল্লিতে থাকেন তসলিমা।

অরুণাভ বলেন, "লজ্জা নিয়ে কী হয়েছিল তা আমার পুরোটাই মনে আছে। আমি জানি পাঠকরা অধীর আগ্রহে এর পর কী হবে তা জানার জন্য অপেক্ষা করে আছেন।"

হার্পার কলিন্সের সাহিত্য বিভাগের প্রকাশক উদয়ন মিত্র বলেছেন ধর্মের রাজনীতি মানুষ ও তার সম্পর্ককে কোথায় নিয়ে যায়, 'লজ্জাহীন'-এ তা দেখা যাবে।

তিনি বলেন, "আমাদের সময়ের সাধারণ মানুষের নিষ্ঠুর, হৃদয় মোচড়ানো গল্প লজ্জাহীন। এ যেন কলকাতার 'লজ্জা'- এ বই আমাদের সামনে আয়না ধরে দেখিয়ে দেবে ভয়ংকর রূপ, আমরা তো জানিই যে আয়না সত্যেরই দর্শন করায়।"

Book Release
Advertisment