অমিত শাহ। নামটা শুনলেই তো অনেকের পিলে চমকে ওঠে। অমিত শাহ নাকি খুব রাগী মানুষ।অমিত শাহকে খুব প্রাণ খুলে হাসতে দেখেছেন কত জন? তিনি আজ নরেন্দ্র মোদীর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।আডবানী ও ছিলেন অটল বিহারী বাজপেয়ীর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। কিন্তু অমিত শাহ সম্পর্কে বলা হচ্ছে তিনি কঠিন কঠোর। আডবানী ও হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির ব্রান্ড অ্যাম্বাসাডার ছিলেন এক সময়ে। কিন্তু অমিত শাহ অনেক বেশি কট্টরপন্থী। উত্তরপ্রদেশের ভোটে তিনি একজনও মুসলমান প্রার্থী দেননি। শাহিনবাগ নিয়েও রাজনীতির উত্তাপ চরমে ওঠে। কিন্তু দিল্লির নির্বাচনে বিজেপির বিপর্যের পর এই প্রথম প্রশ্ন উঠল অমিত শাহর এই কট্টরবাদী লাইন কি তবে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ল? এবার কি বিজেপি তবে কৌশল বদলাবে?
এবার দিল্লি নির্বাচনে ধরাশায়ী হয়ে যাওয়ার পরবর্তী রণকৌশল নিয়ে বিজেপির ভিতরেই মত পার্থক্য দেখা দিয়েছে। বিশেষত বিজেপির শীর্ষ নেতাদের একাংশ মনে করছেন পশ্চিমবঙ্গে ২০২১ সালের জন্য বিধানসভা নির্বাচনের জন্যও রণকৌশলে বদল আনা প্রয়োজন। উগ্র হিন্দুত্বর কৌশল বদলে নরেন্দ্র মোদীর উন্নয়নের বক্তব্যকেই সামনে আনা উচিত। বিষয়টি নিয়ে বিজেপি র সঙ্গে আরএসএসেরও বৈঠক হবে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দিল্লির নির্বাচনী বিপর্যয় নিয়ে সংশ্লিষ্ট নেতাদের সঙ্গে একপ্রস্থ আলোচনা করেছেন। সভাপতি জে পি নাড্ডা, ভূপেন্দ্র যাদব সহ বেশ কিছু শীর্ষ নেতাদের সাথে কথা বলেছেন মোদী- অমিত শাহ। আবার বিজয় গোয়েল,মনোজ তিওয়ারি, হর্ষবর্ধন, মীনাক্ষী লেখি এবং পরভেজ ভার্মার মত নেতাদের নিয়েছেন শাহ।
পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য নেতারাও অনেকে মনে করছেন 'হিন্দুত্ব' বিজেপি র আজকের মতাদর্শ নয়। এ তো বহুদিনের। বিজেপির দলীয় ইশতেহারেই আছে রাম মন্দির নির্মাণ, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি এবং তীর ধারার অবলুপ্তি। অমিত শাহ দলের সভাপতি হয়ে এই বিষয় গুলির বাস্তবায়ন করছেন। এসব নিয়ে দল এবং সঙ্ঘ পরিবারেও কোনও মতপার্থক্য নেই। কিন্তু প্রশ্ন হল কীভাবে এই বিষয়গুলি ভোটের সময় এগোনো দরকার।
আরএসএসেরও অনেকে মনে করেন,উওরপ্রদেশ ও দিল্লি একই রাজনৈতিক আবহাওয়া নয়। পশ্চিমবঙ্গ তো নয়ই। বিগত লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে ১৮ টা আসন পাওয়ায় অনেকে মনে করেছিলেন বাঙালিও জয় শ্রীরাম স্লোগান দিচ্ছে এখন। পশ্চিমবঙ্গে শতকরা ৩০ মুসলমান ভোট, দিল্লিতে তা ১০ থেকে১২ভাগ।
বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ ও নাগরিকত্ব বিল পশ্চিমবঙ্গেই সবচেয়ে বেশি কার্যকর হবে বলে মনে করা হয়েছিল কিন্তু মমতা যেভাবে এই ইস্যুর বিরোধিতা করার পাশাপাশি উদ্বাস্তু হিন্দুদের ও তার আন্দোলন শামিল করেছেন, এবং 'নব হিন্দুত্ব' যেমন কেজরিওয়াল করেছেন হনুমান চালিশা পাঠ করে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তো তার চেয়েও বেশি করেন ভোটের অনেক আগে থেকেই। তিনি তো সভায় চণ্ডী আবৃত্তি করেন মুখস্থ। দুর্গা পূজার সময় প্রতিমার উদ্বোধন করেন শয়ে শয়ে। কালী পূজো থেকে জগন্নাথ পূজো তিনি তো বাড়িতেই করেন। এতো কোন গোপন ঘটনা নয়। এমনকি তৃণমূল সুত্র বলছে, বেলুড়মঠ তথা রামকৃষ্ণ মিশনের জন্য তিনি যা করেছেন তা তো আগে হয়নি। নিউ টাউনে রামকৃষ্ণ মিশনের মূল্য বোধ অধ্যয়নের জন্য নতুন সংস্থা গঠনের জন্য জমি দেওয়া থেকে শুরু করে বাগবাজারে মায়ের বাড়ির সামনে বসবাসকারী মানুষদের পুর্নবাসনের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা তো রাজ্য সরকারই করেছে।এজন্য বিজেপির শীর্ষ নেতারা অনেকে মনে করেছেন উগ্র হিন্দুত্বের বদলে সিন্ডিকেট রাজ থেকে অনুন্নয়নকে ইস্যু করা উচিত।
বিজেপির রাজ্য নেতা জেলাওয়ারি সফরে বারবার বলেছেন, আইন শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে এবং রাজ্যে উন্নয়ন স্তব্ধ। বিজেপির শীর্ষ নেতারা বলেছেন এখন উচিত মোদীর নেতৃত্বে পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়নের জোয়ারের বইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি। আর এসএস প্রমুখ মোহন ভাগবৎ দিল্লি আসছেন ১৭-১৮ ফেব্রুয়ারি। তিনি শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলবেন। দিল্লির ভোটের একদিন আগে আরএসএস নেতা ভাইয়াজি জোশি বলেন বিজেপি নেতা কে সমর্থন করা মানে আরএসএস কে সমর্থন করা নয়, আবার কেউ যদি আরএসএস সমর্থন করেন তার মানে এই নয় যে তাঁকে বিজেপি সমর্থক হতেই হবে। আরএসএস অরাজনৈতিক সংগঠন। সমাজসেবা ও নৈতিকতার ভিত্তিতে রাষ্ট্র গঠন তার লক্ষ্য।
মোদীর ঘনিষ্ঠ নেতারা অনেকেই বলেছেন২০১৪ সালের ভোটেও মোদী হিন্দু হৃদয়ের সম্রাট হন কিন্তু তার অগ্ৰাধিকার ছিল উন্নয়ন। গুজরাট মডেল অনুসরণ করে দেশের উন্নয়ন কিন্তু আর্থিক সঙ্কট উন্নয়নকে পিছনেফেলে উগ্র হিন্দুত্বের ভিত্তিতে মেরুকরণের রাজনীতি প্রধান উপজীব্য হয়ে উঠেছে।
পশ্চিমবাংলায় মমতার বিরোধিতার জন্য তাই শাহিনবাগ কৌশল চলবে না তাতে উল্টে মমতার লাভ হয়ে যেতে পারে। বিশেষত অনুরাগ ঠাকুর যোগী আদিত্য নাথ এবং গিরিরাজ কিশোরের মত নেতাদের বক্তব্য অবাঞ্ছিত। প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় ভাবছে রাজ্যে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক রেলের জমিতে অবিলম্বে কেন্দ্রে নতুন কিছু একটা ঘোষণা করা হোক যাতে বহু বাঙালির চাকরি হয় যেমন, পানাগড়ে হারকিউলিসের প্রযুক্তিগত কারখানা নির্মাণ, জলপাইগুড়ির হাসিমারা এয়ার বেসে রাফেলের প্রযুক্তি অনুষঙ্গ নির্মাণের কারখানা তৈরী এবং লক হিড কর্পোরেশনকে দিয়ে অন্য কোনো সেনা জমিতে কোন প্রকল্প নির্মাণের কথা হচ্ছে।
অনেকে মনে করছেন উন্নয়নকে সামনে রেখে হিন্দুত্বকে প্রেক্ষাপটে নিয়ে যাওয়া বোধহয় বাংলার জন্য ভালো। তার উল্টো অভিমতও আছে। অনেকে বলছেন এটা কলকাতা শহরের জন্য ভাল, কিন্ত জেলায় জেলায় তাহলে দিলীপ ঘোষের মন্তব্যে বিজেপি সমর্থকরা কেন উৎসাহিত হচ্ছে, তাও দেখতে হবে। এই বির্তকে এখন বেশ ফ্যাসাদে পড়ে গেছে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব।