Advertisment

Anurag Kashyap: অনুরাগের 'ছোঁয়ায়' বাংলা ছবির অধঃপতনের হাল-হকিকত

গ্যাংস অফ ওয়াসেপুর, ব্ল্যাক ফ্রাইডে থেকে সাম্প্রতিক কালের কেনেডির মতো ছবির নির্মাতা কেন এত খড়গহস্ত হলেন বাংলা সিনেমার জন্য? সে প্রশ্ন আপনার মনে জাগতেই পারে। আমারও মনে জেগেছিল। অনুরাগের ব্যাখ্যা ছিল, 'একটা সময়ে বাংলা সিনেমা এভারেস্টের উচ্চতায় ছিল। হিন্দি সিনেমার মানও পড়েছে। কিন্তু সেটা সেকেন্ড ফ্লোর থেকে নিচে পড়েছে। আর বাংলা এভারেস্ট থেকে নিচে পড়েছে, দুটোর মধ্যে পার্থক্য আছে।'

author-image
Subhamay Mandal
New Update
Anurag Kashyap, Bengali Cinema

বাংলা সিনেমাকে জঘন্য বলে বিতর্কে বিখ্যাত বলিউড নির্মাতা অনুরাগ কাশ্যপ।

ঘটিয়া! হিন্দি এই শব্দের বাংলা তর্জমা করলে মানে দাঁড়ায় জঘন্য! বাংলা সিনেমার জন্য ঠিক এই শব্দটাই ব্যবহার করেছেন বিখ্যাত বলিউড পরিচালক অনুরাগ কাশ্যপ। হ্যাঁ, ঠিকই পড়েছেন। বাংলা সিনেমা জঘন্য। তবে বর্তমান সময়ের বাংলা সিনেমার কথা বলেছেন পরিচালক। গত রবিবার ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট হলে পড়ুয়াদের দ্বারা আয়োজিত একটি প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন তিনি। অনুষ্ঠানটির নাম ছিল 'নিপীড়িতের জগঝম্প'।

Advertisment

সেখানেই এমন কথা বলেন অনুরাগ। গ্যাংস অফ ওয়াসেপুর, ব্ল্যাক ফ্রাইডে থেকে সাম্প্রতিক কালের কেনেডির মতো ছবির নির্মাতা কেন এত খড়গহস্ত হলেন বাংলা সিনেমার জন্য? সে প্রশ্ন আপনার মনে জাগতেই পারে। আমারও মনে জেগেছিল। অনুরাগের ব্যাখ্যা ছিল, 'একটা সময়ে বাংলা সিনেমা এভারেস্টের উচ্চতায় ছিল। হিন্দি সিনেমার মানও পড়েছে। কিন্তু সেটা সেকেন্ড ফ্লোর থেকে নিচে পড়েছে। আর বাংলা এভারেস্ট থেকে নিচে পড়েছে, দুটোর মধ্যে পার্থক্য আছে।'

হোক না কোনও আলোচনা সভা, হোক না শ্রোতা যেখানে পড়ুয়ারা। কিন্তু কোথাও যেন বাংলার ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আয়না দেখিয়ে গেলেন বলিউড পরিচালক। এই পড়ুয়াদের মধ্য়েই কেউ না কেউ কয়েকদিন বাদে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে পা রাখবেন। কেউ পরিচালক হিসাবে, কেউ বা অভিনেতা-অভিনেত্রী বা আবার কেউ কলাকুশলী হিসাবে। কিন্তু কোথাও যেন অনুরাগের মন্তব্য তাঁদের ভাবাবে। বা ভাবতে বাধ্য করল। এই যে ইদানীং একটা কথা প্রচলিত রয়েছে টলিপাড়ায়, বাংলা সিনেমার পাশে দাঁড়ান। সেই আপ্তবাক্য নিয়ে এখন সামাজিক মাধ্যমে, ব্লগাররা (একজন আবার অভিনয় জগতে পা রেখেছেন সদ্য), মায় বাংলা ছবির তারকারাও (বলতে হয়) হাসি-ঠাট্টা করছেন। কনটেন্ট বানাচ্ছেন, আর নিজেরাই বাংলা সিনেমার খিল্লি করছেন। সেখানে বলিউড নির্মাতা অনুরাগের কথা কতকটা সত্যিই নয় কী!

আচ্ছা, এই বাংলা ছবির জন্যই বিশ্ববরেন্য হয়েছেন সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, ঋত্বিক ঘটকরা। সেকথা অনুরাগ নিজেও স্বীকার করেছেন। আবার এও বলছেন, 'এখন আর সেই সব ছবি কোথায় হয়। যেদিন থেকে রিমেক বানানো শুরু করেছে সেদিন থেকেই দুর্দিন শুরু হয়েছে।' বিশেষত, তামিল-তেলুগু ছবির রিমেকে এখন ভরে গিয়েছে বাংলা চলচ্চিত্র জগৎ। অনুরাগ শেষে বাংলা ছবি দেখেছেন, পদাতিক। মৃণাল সেনের কালজয়ী ছবি। একটা সময়ে বাংলা ছবিতে দিলীপ কুমার থেকে শুরু করে অমিতাভ বচ্চন, নাসিরুদ্দিন শাহ, শাবানা আজমি, স্মিতা পাটিল, কিরণ খেরের মতো তুখড় অভিনেতা-অভিনেত্রীরা কাজ করেছেন। যে বাংলা ছবির রিমেক হতো বলিউড, মারাঠি, তামিল, তেলুগু ইন্ডাস্ট্রিতে। আর এখন আঞ্চলিক হিট সিনেমার রিমেক বানিয়েই নিজেদের বাহবা দিচ্ছেন বাংলা ছবির নির্মাতারা।

ছবির মান নিয়ে অনুরাগ বলেছেন। কিন্তু তাতেও দক্ষিণী সিনেমা এমন কিছু আছে যা খারাপ মানের হয়েও বিপুল লক্ষ্মীলাভ করেছে, বা এখনও করছে। সেখানেও তো গোল খাচ্ছে বাংলা সিনেমা। বর্তমানে প্রসেনজিৎ, দেব বা জিতের ছবি কিছুদিন হাউসফুল গেলেই ছবি হিটের তকমা পেয়ে যাচ্ছে। কয়েক কোটি কামালেই সুপারহিট। দেখুন গিয়ে দক্ষিণী ছবির পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করা তারকাও তার থেকে বেশি পারিশ্রমিক নেন। তাহলে ধারে-ভারে কোনওভাবেই দক্ষিণী ছবির সঙ্গে পেরে ওঠার মতো জায়গায় আছে কি বাংলা ছবি?

আরও পড়ুন ঐন্দ্রিলাদের ছুটি নেই, ওঁরা বাঁচেন তারাদের দেশেই, মৃত্যুর পরেও নিরন্তর চর্চায় অভিনেত্রী

আচ্ছা ব্যবসার কথা না হয় বাদ দেওয়া যাক। বাংলা ছবি গুণে-মানে সেরার সেরা ছিল। ব্যবসা দিয়ে যাচাই করার কথা কেউ বলছে না। কিন্তু মানও তো পড়েছে। জাতীয় ক্ষেত্রও বাংলা ছবি নিয়ে বা বাংলা ছবির তারকাদের নিয়ে কত আলোচনা হয়? যেখানে তামিল, তেলুগু, কন্নড়, মালয়ালম ভাষার ছবি নিয়ে অনেক চর্চা হয়। সেখানকার তারকাদের নিয়েও। মালয়ালম ছবি ভারত থেকে অস্কারের জন্য বিবেচিত হয়। শেষ কবে বাংলা ছবি নিয়ে কেউ ভেবেছে জাতীয় ক্ষেত্রে? এখনকার বাংলা ছবির পরিচালকরা তাঁদের ছবি হলে মেরেকেটে ৫০ দিন থাকলেই নিজের পিঠ নিজেই চাপড়ান। ব্যবসা ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানোর কথা তো বাদই দিলাম।

অনুরাগের কথায় আতে ঘা লাগতে পারে টলিপাড়ার। লাগাই স্বাভাবিক। তাবড় ব্যক্তিত্বরা তো সোশ্যাল মিডিয়ায় অনুরাগকে গালমন্দ পাড়তে শুরু করেছেন। অনেকে বলছেন, অনুরাগ শেষ কবে হিট ছবি করেছেন? এখন তো নিজেই সি-গ্রেড ছবিতে অভিনয় করছেন। তাঁর ব্যাখ্যাও আগেই দিয়ে রেখেছেন অনুরাগ। বলেছেন, মেয়ে বড় হচ্ছে। তাঁর ভবিষ্যতের কথা ভেবে পেটের জন্য করতে হয় এমন সব ছবি।

তবে বাংলা ইন্ডাস্ট্রির এত গোঁসা করার প্রয়োজন নেই। একজন নির্মাতা হিসাবে তিনি সমালোচনা করতেই পারেন। বাঙালিও তো কফি হাউস ধোঁয়া ওটা চায়ের পেয়ালার সামনে গোদার, ফ্রঁসোয়া ত্রুফোর সমালোচনা করতে পারে। তাহলে অনুরাগ করলে দোষ কোথায়? তবে এবার সত্যি ভাবার সময় এসেছে বাংলা সিনেমার রক্ষাকর্তাদের, যাঁরা মাঝেমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় বাংলা ছবির পাশে দাঁড়ানোর আবেদন জানান। বোঝার সময় এসেছে, আগে গুণমান বাড়াতে হবে। ছবি ভাল হলেই দর্শক হলে ফিরবে। এবং কিছু কিছু ছবির ক্ষেত্রে তা দেখাও গেছে। কোভিড পরবর্তী সময়ে বেশ কিছু ছবি ভাল লেগেছে দর্শকদের। তবে সেটা চালিয়ে যেতে হবে। যাতে আবার কোনও বলিউড পরিচালক এসে না বলেন অনুরাগের মতো, বাংলা সিনেমা 'ঘটিয়া'! সে দায়িত্বটা পালন করতে হবে অন্যের সমালোচনা করার আগে।

tollywood Bengali Cinema Anurag Kashyap bollywood Entertainment News
Advertisment