উত্তর প্রদেশের বিজেপি বিধায়ক বিক্রম সিং সাইনি বীরবিক্রমে বলেছেন, তিনি বিজেপি কর্মীদের কাশ্মীরে জমিজায়গা কিনতে সাহায্য করবেন। এতদিন ৩৭০ ও ৩৫এ ধারা-বলে জম্মু-কাশ্মীরের স্থায়ী কারও জন্য তার অনুমতি মিলত না। এবার সেই ধারার বিলোপ ঘটায় তথাকথিত 'ভারতের মূল ভূখণ্ডের' মানুষ সেই অধিকার পেল। এবার ভূস্বর্গ কাশ্মীর, যেখানে সবকিছু সুন্দর, তা সবার নাগালের মধ্যে চলে এল। আহা কী আনন্দ। কাশ্মীরে শুধু রাজনৈতিক অধিকারের আইন গোল্লায় গেল, তা নয়। তা 'আমাদের দেশ'-এর পাল্লায় পড়ল।
বিক্রম সিং পৌরুষের বিক্রমে আরও একটা কথা বলেছেন, তিনি 'ব্যাচেলর' বিজেপি কর্মীদের কাশ্মীরী সুন্দরীদের বিয়ে করতে সাহায্য করবেন। যা নাকি এতদিন সম্ভব ছিল না। তিনি সর্বৈব ভুল কথা বলেছেন। কাশ্মীরী কন্যাদের মূল ভারতীয় ভূখণ্ডের পুরুষকে বিয়ে করার ব্যাপারে আদৌ কোনও কথা এই আইনে লেখা নেই। কাজেই শুধুমাত্র 'এখন থেকে' তা সম্ভব, এটা ভ্রান্ত ধারণা। এই ভ্রান্ত ধারণা দেখা যাচ্ছে অনেকেই পোষণ করেন। শুধু তাঁদের বিক্রম অপেক্ষাকৃত কম। তাঁদের মাথার ওপর যোগী আদিত্যনাথের আশীর্বাদ নেই।
আসল ব্যাপার হলো ওই কথাটি, কাশ্মীরের সবই সুন্দর। সুন্দর সেখানকার নিসর্গ, সুন্দর সেখানকার অধিবাসী। বিশেষ করে নারীরা তো অপরূপা। তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল নয়, বরং দরিদ্রই, কিন্তু রূপে সেখানকার মানুষ ঐশ্বর্যশালী। মেয়েরা তো যেন পরী। কিন্তু আমাদের আলোচনা রূপকথার পরী নিয়ে নয়, বাস্তবের সাধারণ নারীদের নিয়ে। চতুর্দিকে কাশ্মীর নিয়ে যত কথা বলা হচ্ছে, তা হলো সেই নারীদের লাভ করা। না, লাভ নয়, দখল করা। যেভাবে জমিজায়গা দখল করা যায়, সেভাবেই নারীদেরও দখল করা যাবে। কেননা, নারীরাও জমিজায়গার মতো স্থাবর সম্পত্তি। ভোগের বস্তু। তাছাড়া আর কিছুই নয়। ৩৭০ ও ৩৫এ বিলোপ করে কাশ্মীর দিল্লির আওতায় এল। এতে অনেকেই আনন্দিত। আনন্দিত কাশ্মীরী নারীদের ওপর 'অধিকার' পেয়ে। আগেই বলেছি, এতে কোনোদিনই কোনও বাধা ছিল না। তফাৎ হয়তো একটাই, আগে কাশ্মীরী নারীদের বাইরের পুরুষ সম্মানের সঙ্গে নারী ও সহধর্মিণী হিসেবে ভাবত, এখন তারা পুরোটাই ভোগের সামগ্রী।
উত্তর প্রদেশের ওই মূর্খ বিধায়ক আরও বলেছেন, তাঁর পার্টির লোকজন কাশ্মীরের 'ফর্সা ফর্সা' মেয়েদের লাভ করতে পারবে। অর্থাৎ গায়ের রঙ একটা সৌন্দর্যের মাপকাঠি। এটা একদিক থেকে দেখতে গেলে একটা চূড়ান্ত রেসিস্ট কমেন্ট। বর্ণবৈষম্যমূলক মন্তব্য। বিজেপির মতো মৌলবাদী দলের পক্ষে এটা আশ্চর্য কিছু নয়। তারা শুধুই যে কোনোরকম বৈষম্য ও বিভাজনে বিশ্বাসী। তাঁর বক্তব্যের মানে এটা দাঁড়ায়, আগে ভারতীয় ছেলেরা কালো বউ বিয়ে করতে বাধ্য হতো, এবার ইচ্ছেমত 'গোরি' হুরীপরীদের ওপর অধিকার কায়েম করতে পারবে। এটা বর্ণবৈষম্যের পাশাপাশি নারীর পণ্যায়ণও বটে। দেখেশুনে গালে চিমটি কেটে দেখো কার গাল কতটা লাল হলো, তারপর বেছে নাও। তোমার সেই শরীরের ওপর অধিকার আছে, হৃদয় তো গৌণ।
মুসলমান ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন, এ জন্মে ভালো কাজ করলে, পুণ্য করলে, বেহেশতে গিয়ে তাঁরা যথেচ্ছ হুরীপরীদের সঙ্গ করতে পারবেন। সেই ভালো কাজের ধরন নানারকম হতে পারে। শান্তি হতে পারে, ধ্বংসও হতে পারে। কিন্তু এখন থেকে তাঁরা এ জীবনেই সে সুযোগ পেয়ে যাচ্ছেন। বিক্রম সিং বলছেন, তাঁদের দলের মুসলিম কর্মীদের এ কারণে বিশেষ করে খুশি হওয়া উচিত।
কিন্তু শুধু কি মুসলিম পুরুষেরা? কাশ্মীরী রূপসীদের পাওয়ার লোভে লোভান্বিত সব পুরুষই। এখানে পুরুষের পৌরুষ, তার কামনা, তার যৌন আকাঙ্ক্ষা ছাড়া আর কোনও ধর্ম নেই। পুরুষের যেন কামই একমাত্র ধর্ম। তার এক্ষেত্রে আর ধর্মে ধর্মে বিভেদ নেই, হিন্দু মুসলমানে বিরোধ নেই। উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের এক সভায় জনৈক দলীয় নেতা বলেছিলেন, মুসলমান নারীদের কবর থেকে তুলে এনে ধর্ষণ করা উচিত। কী ভয়ানক যৌন বিকৃতি, নেক্রোফিলিয়া। তো সেই পচাগলা দেহকে ধর্ষণ করার চাইতে জ্যান্ত নারী ধর্ষণ করে তো বেশি সুখ, তাই না? নাও, শুরু করো। ছিঃ! লজ্জা করে না তোমার নগ্নতায়? নারীর শরীর অনাবৃত করছ, আর অনাবৃত হচ্ছে তোমার বিকৃত মন। কোনটায় লজ্জা বেশি?
আসলে যে কোনও ভৌগোলিক আগ্রাসনে নারী একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আগেই বলেছি, ভূমির মতোই নারীরাও সম্পত্তি হিসেবে পরিগণিত। সে কর্ষণযোগ্য, ধর্ষণযোগ্য। তাকে সহজেই আক্রমণ করা যায়। সে সফট টার্গেট। পুরুষের যুদ্ধাস্ত্রের মধ্যে একটি সাংঘাতিক অস্ত্র তার শিশ্নু। এর ব্যবহারে সে একটা জনজাতিকে দখলে আনতে পারে। নারীর গর্ভে সন্তান উৎপাদন করে সে ধ্বংস করতে পারে এক একটি জনজাতির স্বতন্ত্র অস্তিত্ব। যাতে পরবর্তী প্রজন্ম 'বেজন্মা' হয়ে যায়। তৈরি হয় এক একটি উপনিবেশ। যে উপনিবেশে আধিপত্য করে আক্রমণকারী আগ্রাসনকারীদের সংস্কৃতি এবং ভাষা। এক একটা পুরাতন সভ্যতা ধ্বংস করে তার ওপর তৈরি হয় নতুন সমাজ। ধ্বংস হয়ে যায় এতদিনের লালিত জীবনের ধারা। ধর্মবিশ্বাস, জনজাতির ঐতিহ্য, ভাষা, সংস্কৃতি, এমনকি তার খাদ্যাভ্যাস। তারা নিজেরাও ক্রমে বিস্মৃত হয় তাদের আবহমানের ইতিহাস। আগ্রাসন সফল হয়।
কবি লিখেছেন 'শক-হূন-দল-পাঠান-মোগল এক দেহে হলো লীন'। কিন্তু ভেবে দেখতে হবে তা হলো কীভাবে, রাক্ষস বিবাহ ছাড়া! ধর্ষণ, অবাধ ধর্ষণ ছাড়া। এক দেহে লীন হতে গেলে শরীরের মিলন হতে হয়। এবং সাধারণত, তা বলপ্রয়োগের দ্বারাই। পরবর্তীকালে মুসলিম শাসনে বা ইংরেজ উপনিবেশেও এই অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। ইংরেজরা স্পেনীয়দের মতো অত কামোন্মাদ নয়, তবু ভারতে তৈরি হয়েছে অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান সমাজ, যা মূলস্রোত থেকে বরাবরই ব্রাত্য।
উল্লেখ করলাম স্পেনীয়দের কথা। দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের আন্দেজ পর্বতমালায় আজকের পেরুতে গড়ে উঠেছিল ইনকা সভ্যতা। খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চদশ থেকে চতুর্দশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়কালে এই সভ্যতার বিকাশ ঘটে। তারও আগে সারা দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকা জুড়ে বিকশিত হয়েছিল আরও বেশ কিছু সভ্যতা, যার মধ্যে অ্যাজটেক ও মায়া সভ্যতা পড়ে। এই সভ্যতাগুলি ওই মহাদেশে বিশাল সাম্রাজ্য স্থাপন করেছিল, কিন্তু ব্যাপার হলো, বহু ঐতিহাসিক ভূখণ্ড এই সাম্রাজ্যের মধ্যে পড়লেও, কোনও কোনও ক্ষেত্রে তাদের স্বাতন্ত্র্য বজায় ছিল। যেমন কোথাও মুদ্রার ব্যবহার ছিল যখন মূল শহরে কেনাবেচা হতো বিনিময় প্রথায়।
এই সমস্ত কিছু ধ্বংস হয়ে যায় স্পেনীয় আক্রমণে। এই আক্রমণ ছিল সাংঘাতিক নির্মম ও দুর্দান্ত। শুধু রাজনৈতিকভাবে নয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকেও তা ছিল চরম আগ্রাসী। পুরাতন একটি ঐতিহ্যের ঐতিহাসিক সভ্যতা সমূলে উৎপাটন করে স্পেনীয়রা সমাজের সর্বস্তরে নিজেদের আধিপত্য প্রোথিত করেছিল। অবাধে ধর্ষণ করে আদি অধিবাসী নারীদের গর্ভে জন্ম দিয়েছিল দো-আঁশলা শিশু। তারা বড় হয়েছিল সর্বগ্রাসী স্পেনীয় প্রভাবে। তারা স্পেনীয় ভাষা বলত, স্পেনীয়দের চালচলন আয়ত্ত করেছিল। পূর্বপরিচয় সম্বন্ধে অবহিত না থেকে তারাও স্পেনীয় হয়ে উঠেছিল। এইভাবে দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকার বিশাল অঞ্চল (কিছু অংশ, প্রধানত ব্রাজিলে, পর্তুগিজদের দ্বারাও) ক্রমশ ইউরোপীয় হয়ে উঠেছিল। উঠেছে। সেখানকার আদি অধিবাসীগণ প্রায়াবলুপ্ত ও কোণঠাসা। স্পেনীয়দের কথা বিশেষ করে বললাম কেননা তারাই ছিল নারীদের ওপর সবচেয়ে বেশি আক্রমনাত্মক।
এছাড়া আফ্রিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিস্তৃত অঞ্চলও তো ইংরেজ ও ফরাসী আক্রমণকারীদের ছাঁচে ঢালাই হয়ে গেছে। আমাদের দেশের ইতিহাসও প্রায় এক। খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম অথবা মতান্তরে চতুর্থ সহস্রাব্দের দ্রাবিড় সভ্যতায় খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ নাগাদ আর্যদের আগ্রাসন ঘটলেও তাতে নারীধর্ষণ অবশ্যই ছিল, কিন্তু সেকথা বিশেষ চর্চিত নয়। আর বিশেষ করে বলতে হয় বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের কথা। সেখানেও নারীদের ব্যবহার করা হয়েছিল জাতির অস্তিত্ব বিলুপ্ত করার জন্য। সেখানে শিশ্নুই ছিল নারী শিকারের বেয়োনেট। মুক্তিযুদ্ধ মিউজিয়মে ছবি আছে এক নগ্ন ধর্ষিত নারীর, যে খোলা চুলে তার সারা শরীর ঢেকে ভয়ে ও লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে বসে আছে। বাংলাদেশ শেষমেশ তাদের পৃথক স্বাধীন সত্ত্বা বজায় রাখতে পেরেছে, এ তার গর্বের ইতিহাস। কিন্তু সেখানেও যে তরুণ শহীদকে নিয়ে পরিবার পরিজন কষ্টে ও গর্বে আপ্লুত, তার পাশের ঘরে দরজা লাগিয়ে তার ধর্ষিত বোন যখন পাখা থেকে ঝুলে পড়ছে, সে কিন্তু শহীদের মর্যাদা পায় নি, পায় না। নারী শুধু নারীই। তার জীবনও কিছু নয়, তার মৃত্যুও কিছু নয়। সে সভ্যতার পায়ে বলিপ্রদত্ত, যদিও সভ্যতার বাহিকা সেই।
হচ্ছিল আমাদের কাশ্মীরের মেয়েদের কথা। কাশ্মীরে অন্যায়ভাবে ৩৭০ ধারা বাতিল করে দিল্লি সেখানে যা করল, তাকে আগ্রাসনই বলা যায়। তাকে এমনকি আর পাঁচটা রাজ্যের মতো সম্মান ও অধিকারও দেওয়া হলো না, করা হলো রাষ্ট্রপতির শাসনাধীন ইউনিয়ন টেরিটরি। গা-জোয়ারি দখলদারি খাটানো। কাশ্মীর আমার হলো, কাশ্মীরিরা নয়। কাশ্মীরের শরীর আমার হলো, হয়তো তার হৃদয় নয়। রাতারাতি সেই রাজ্যের বিধানসভার সঙ্গে আলোচনা না করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সংসদে এই প্রশ্ন ওঠায় শাসক বলেছে, ওখানে তো বিধানসভারই আর কোনও অস্তিত্ব নেই। কিন্তু সেই বিধানসভা যখন অস্তিত্বহীন হয়েছে, তার আগেই এই বিষয় নিয়ে কথা বলার সুযোগ ছিল। বিধানসভা ভাঙব কিনা, এ বিষয়ে আলোচনার অবকাশ ছিল। তা মানা হলো না। কাশ্মীরকে তার কনসেন্ট ছাড়াই ধর্ষণ করা হলো। হ্যাঁ, তাকে ধর্ষণ করা হলো।
এই প্রধানমন্ত্রী যখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী, ২০০২-তে সেখানে যে মারাত্মক ধর্মীয় দাঙ্গা বেঁধেছিল, যেখানে প্রথম তিনদিন সেই দাঙ্গা থামাতে প্রশাসন কোনও পদক্ষেপ নেয় নি, আমরা তখনই বুঝেছিলাম ওই অমানবিক শাসকের প্রকৃত পরিচয়। বিধর্মীদের মেরে শেষ করে দাও। শেষ করে দাও একটি জনজাতির অস্তিত্ব। যাকে বলে এথনিক ক্লেনজিং। হিটলারি ফ্যাসিবাদের চূড়ান্ত। আমরা জানি, সেখানে রাস্তায় ফেলে নারীকে উলঙ্গ করে ধর্ষণ করা চলেছে। অবাধে। যাতে সেই গর্ভের শিশু আরএসএস হয়ে জন্মায়। নারীধর্ষণের ক্ষেত্রে কোনও বাছবিচার চলে না। নারীর নিয়তি ধর্ষিতা হওয়ার। পুরুষের কর্তব্য ধর্ষণ করা। এমনকি নারীর গর্ভে ভ্রূণকেও ছিঁড়ে এনে তাকে বল্লমের ডগায় গেঁথে দাঙ্গাকারীরা পৈশাচিক উল্লাসে মেতেছে। কী দোষ ছিল সেই নারীর? শুধুমাত্র "বিধর্মী" শিশু জন্ম দেওয়া? এদেশে বিজেপি এবং আরএসএস-এর একমাত্র লক্ষ্য, দেশকে হিন্দুতে ভরিয়ে দাও, তাকে হিন্দু রাষ্ট্র করো। বিধর্মীদের সব অধিকার কেড়ে নাও। কেড়ে নাও তার নারীদের। যুদ্ধের অস্ত্রচালনায় যেটুকু পরিশ্রম হয়, তা পুষিয়ে নাও ভোগে। নারী না থাকলে এমন যুদ্ধের মজা পুরুষ কী করে পাবে? আহা যুদ্ধেরও কী আহ্লাদ, কী বিকৃত চরিতার্থতা।
কাশ্মীরও সম্ভবত তার শিকার হতে চলেছে। হিন্দু পুরুষের সঙ্গে বিবাহ হলে সেই মুসলমান তরুণীকে কি ধর্মান্তরিত করা হবে? সেসব নিয়ে তো ধর্মোন্মাদ পুরুষপুঙ্গবদের কোনও কথা শুনছি না। তবে কী? শুধুই সহবাস? শরীরের ক্ষিদে, শরীরের লোভ? ঠিক কাশ্মীর ভূখণ্ডের ওপর আমাদের লোভ যতখানি? তাহলে তো বিষয় আরও গুরুতর। কিশোর থেকে বৃদ্ধ সব 'ভারতীয়' পুরুষে মিলে কাশ্মীরী নারীদের শুধু ভোগ করবে। হয়তো বিবাহের মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোগ করবে। করে ফেলে দেবে। ফেলে চলে যাবে। তখন আবার হয়তো তাকে ভোগ করবে অন্য এক পুরুষ। দরিদ্র, সরল ও নিষ্পাপ এই মেয়েগুলি এইভাবে গণধর্ষিত হবে। হয়তো বা শিকার হবে নারীপাচার চক্রের। সুন্দরী বালিকা-কিশোরী-যুবতীদের চড়া দামে বিক্রি করবে দেশে ও বিদেশে। তারা দিনাতিপাত করবে যৌনদাসী হয়ে। এই কি তাদের ভবিতব্য! রূপের বিনিময়ে জীবনযন্ত্রণা। রূপের অপরাধে শাস্তি। রূপের দোষে ভূস্বর্গ পরিণত হবে নারীর নরকে! নাহ। আর ভাবতে পারছি না।
বারবার বলছি, ৩৭০ ও ৩৫এ ধারায় কোথাও কাশ্মীর ভূখণ্ডের স্থায়ী অধিবাসী ছাড়া সেখানকার নারীদের বিয়ে করা যাবে না, এমন কথা বলা নেই। তবে এখন কেন এই নিয়ে এত চর্চা, এত আলোচনা, এত উস্কানি, এত উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রেরণা! কারণ ওই একটাই। কাশ্মীরকে আমার করো, কাশ্মীরের ওপর বলপ্রয়োগ করো। করো বলাৎকার। সভ্যতার পর সভ্যতা ধরে যে উদ্দেশ্যের রাজনৈতিক ও সামাজিক আগ্রাসনে নারী ব্যবহৃত হচ্ছে, তার প্রয়োগ শেখো। তবেই ক্ষমতা কুক্ষিগত হবে।
এর বিরুদ্ধে মোকাবিলা করার জন্য নারীর হাতে কোনও অস্ত্র আছে কি? গণধর্ষণের মতো হিংস্র আক্রমণ সে ঠেকাবে কী করে? সভ্যতা কীভাবে বাঁচিয়ে রাখবে নিজের অস্তিত্ব! সভ্যতা ধ্বংস হয়ে গেলেও তো নারীরা বয়ে যাবে পরবর্তী আরেক সভ্যতায়, আবারও বিপন্ন হবে, আক্রান্ত হবে, আর্ত হবে। নারী? তুমি পুরুষের উপনিবেশ। তোমার শরীর পুরুষের উপনিবেশ, তোমার হৃদয় নয়। নিজের সন্তানকে তুমি নিজের মতো গড়ে তোলো, তাকে তার দুর্বৃত্ত জন্মদাতার কাছ থেকে আগলে রাখো। তাকে তোমার নিজের ভাষায় "মা" বলে ডাকতে শেখাও। নিজের দেশের উপকথা বলে কোলে নিয়ে ঘুম পাড়াও। ঘুম থেকে জাগিয়ে তাকে নিজের দেশের ইতিহাস বলে বড় করো।
তবেই ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচবে নদীমাতৃক সভ্যতার প্রবাহ।