এনআরসি আপডেটের জন্য, গত চার বছর ধরে সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে ১৬০০ কোটি টাকা খরচ কার্যত জলে গিয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ বুধবার সংসদে বলেছেন, সারা দেশে শীঘ্রই এনআরসি লাগু করা হবে, আসামেও নতুন করে এই প্রক্রিয়া হবে। আসামে আপডেটেড এনআরসি ৩১ অগাস্ট পাশ হয়েছে। ১৯ লক্ষ মানুষ রাষ্ট্রহীন হয়েছেন। তাঁরা রেজিস্টার থেকে বাদ যাবার পর আবেদন করতে পারবেন, এবং তাতেও অসফল হলে ডিটেনশন ক্যাম্প তাঁদের ভবিতব্য।
উত্তরপূর্বের রাজ্যগুলিতে এর ফলে অশান্তি দেখা গিয়েছে। রিপোর্ট অনুসারে বহু হিন্দুরা বাদ পড়েছেন। এবং তার প্রতিক্রিয়ায় বিজেপি এই নাগরিকপঞ্জি প্রত্যাখ্যান করেছে। সুপ্রিম কোর্ট এই প্রক্রিয়া অনুমোদন করা সত্ত্বেও এমনটা ঘটেছে। সমস্ত দিক থেকে আসামে এনআরসি ব্যর্থ হয়েছে। একে জনগণের কোনও অংশ খুশি হয়নি, ধর্ম, ভাষা এবং জাতিগত বিষয়ে বিভিন্ন খারাপ দিকগুলি সামনে এনে দিয়েছে, লক্ষ লক্ষ মানুষ খাদের ধারে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। খুবই আতঙ্কের যে এই বিভেদকামী এবং প্যাঁচালো প্রক্রিয়ার মুখে এবার সমস্ত দেশবাসীকেই ফেলতে চায় সরকার।
আরও পড়ুন, আসাম এনআরসি নিয়ে কেন অসন্তুষ্ট বিজেপি, কেন তারা আগে ক্যাব চায়?
অমিত শাহ নিজে বেশ কিছুদিন ধরে এনআরসি নিয়ে মেতে রয়েছেন, ভোট প্রচারে তিনি সারা ভারতে এনআরসি লাগু করার হুমকি দিয়েছেন। এটা স্পষ্ট যে বিজেপির শীর্ষমহল এনআরসি-র ইতিহাস সম্পর্কে কিছু জানেন না। দেশভাগের পর আসামে যে জনবিন্যাসের ব্যাপক বদল হয়েছিল তার সাপেক্ষে ১৯৫১ সালে এনআরসি লাগু হয়। ১৯৮৫ সালের রাজীব গান্ধী এবং আসাম আন্দোলনের অন্যতম শক্তিগুলির মধ্যে আসাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হবার পর তা নতুন জীবন পায়। সুপ্রিম কোর্ট ২০১৩ সালে রাজ্য সরকারকে এ প্রক্রিয়া শুরু করতে বলে এবং ২০১৫ সালে তার তত্ত্বাবধান শুরু করে।
আরও পড়ুন: এনআরসি নিয়ে নতুন ফর্মুলা এল ত্রিপুরা রাজপরিবার থেকে
আসামের রাজনৈতিক নেতারা তাঁদের নির্দিষ্ট উদ্বেগের জায়গা থেকে এনআরসি দাবি করেছিলেন। তাঁদের রাজনৈতিক ভাবনা ছিল নাগরিকত্বের ব্যাপকতর ভাবনার জায়গায় স্থান দেওয়া হবে জাতি-ভাষাগত পরিচয়। জনগণের আন্দোলন থেকে গড়ে ওঠা সমাজ সম্পর্কিত ধারণা তাঁরা প্রত্যাখ্যান করছিলেন। ক্ষোভের এই রাজনীতির কেন্দ্রে ছিল ভয়, বহিরাগতদের ভয়। এবং এ থেকে যে হিংসা ও সশস্ত্র বিদ্রোহের জন্ম হবে তা খুব আশ্চর্যের নয়। গত কয়েক বছরে আসাম হিংসার বদ্ধ জলাশয় থেকে উঠে দাঁড়িয়ে অর্থনীতি পুনর্গঠনের চেষ্টায় রত। কিন্তু এনআরসি এবং তার হাত ধরে আসা নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পুরনো কথা মনে পড়িয়ে দিচ্ছে, মনে পড়িয়ে দিচ্ছে সেই পশ্চাৎগতির কথা। অতীতে যা সমাজের একাংশকে অন্যদের বিরুদ্ধে লড়িয়ে দিয়েছিল।
ধারণা হিসেবে এনআরসি যে কতটা ভ্রমাত্মক দিক এবং তার সীমাবদ্ধতা কতদূর, আসাম তা স্পষ্ট করে দিয়েছে। ভারতের মত দেশ, যেখানে ইচ্ছাকৃত ভাবেই হোক বা কৃত্রিম ভাবেই হোক, অভিবাসন ঘটেছে ব্যাপক পরিমাণে, সেখানে বংশগতির মাধ্যমে পরিচয় স্থাপনের প্রক্রিয়ার ব্যর্থতা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। অমিত শাহ এবং অন্যদের এই মনোবিকার থেকে বেরিয়ে আসা উচিত। কারণ এর সাম্প্রদায়িক দিকটি নতুন আশঙ্কা ও উদ্বেগের জন্ম ছাড়া আর কিছু দেবে না।
Read the Full Story in English