scorecardresearch

উল্কার গতিতেই কি ‘পতন’ হচ্ছে রাজনীতিক বাবুলের?

Babul Supriyo joins Trinamool Congress days after he ‘quit politics’: তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন বাবুল। রাজনীতিক হিসেবে পুনর্জীবনের খোঁজে। কিন্তু পরিবর্তন-এর দলে গিয়ে নিজেকে যদি অবিকৃত রাখেন এই গায়ক ও মোটরসাইকেল-প্রেমী, তা হলে উল্কার বেগে পতন রোখা যাবে না হয়তো।

babul supriyo third time covid positive
সপরিবারের করোনা পজিটিভ বাবুল।


নীলার্ণব চক্রবর্তী: ভোটের আগে-পরে এ রাজ্যে দল-বদল এক নয়া রাজনৈতিক ইতিহাস রচনা করল। চোখ ও লোক সব লজ্জার মাথা খেয়ে এই দল-বদল, ভাবমূর্তি কিংবা মতাদর্শকে বিদায় জানিয়ে। বাবুল সুপ্রিয়র তৃণমূল যোগ সেই ইতিহাসের একটি পাতা। না, চমকের কিছু নেই এই যোগে। জুলাইয়ের শেষে রাজনীতি থেকে আলবিদা জানিয়ে ফেসবুক পোস্ট করেছিলেন এই বলিউডি প্লেব্যাক সিঙ্গার, কোনও দলে যাবেন না লিখলেও, পরে তা সম্পাদনা করে দিয়ে বাবুল যেন বার্তা দিয়েছিলেন, কোনও একটি দলে তিনি যাচ্ছেন, এবং সেটা যে ‘শূন্য’ পাওয়া সিপিএম-কংগ্রেস হবে না, হবে তৃণমূল, জলের মতো পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল তখনই, ফলে বাবুলের তৃণমূল-যোগ কার্যত সময়ের অপেক্ষা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। বাবুল যতই বলুন না কেন ‘চার দিনে যা হওয়ার হয়েছে’, তা যেন ধোপে টেকে না, তাই তাঁর দল-বদল নিয়ে বেশি কিছু বলার নেই আমাদের। রাজনীতিক হিসেবে বাবুলের কেরিয়ার নিয়ে কিন্তু কিছু কথা বলার রয়েছে। জল্পনাও রয়েছে। সে দিকে আতসকাচ মেলে ধরাও যেতে পারে।

ঝুঁকির প্রতি সুপ্রিয় বড়ালের অসীম আগ্রহ বরাবরই, সেই ঝুঁকির ঝোঁকে তিনি মুম্বই পাড়ি দিয়েছিলেন প্লে-ব্যাক সিঙ্গার হতে। সুর-নির্মাতা কল্যাণজির আশীর্বাদে মিলল বড় ব্রেক। অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা ট্যুরে টাট্টুর মতো ছুটলেন প্রথিতযশা সুরশিল্পী রাইচাঁদ বড়ালের এই নাতি । উল্কার গতিতে সুরের আকাশে তাঁর উত্থান হল। তার পর? ১৪ সালের লোকসভা ভোট তখন আসছে, আবকি বার মোদী সরকারের জোর হাওয়া, যোগগুরু বাবা রামদেবের সঙ্গে বিমানে দেখা বাবুলের, বাবুল মজাচ্ছলে বললেন– ভোটে লড়তে চান, চান টিকিট। তথাস্তু বললেন বাবা। আসানসোলে জিতলেন তার পর, তৃণমূলের দাপুটে নেতা দোলা সেনকে হারিয়ে, যা অকল্পনীয়, নতুন আকাশ, সেখানেও বাবুলের উল্কার গতি– এ কাহিনি অবশ্য বহু দিন ধরেই সর্বজনে চর্চিত, শিশুরাও আজ জানে। কিন্তু রাজনীতি করতে হলে, চড়াইয়ে টেকসই থাকতে গেলে, যে পরিপক্কতা দরকার হয়, তা কি বাবুলের আছে? না, নেই। এটাও বেশ কিছু দিন ধরে এও বলছেন অনেকে।

ফলে উল্কার গতিতে উত্থান হয়েছে তো কি, উত্থানপর্ব প্রলম্বিত করা বাবুলের কাপ অফ টি কিনা সেই জল্পনা ও বিশ্লেষণ বজ্রগর্ভ মেঘের মতো আবারও হাজির। শুরু করা যাক চাকা দিয়ে। বাবুলের উল্কার দুটো চাকা, হ্যাঁ, তাঁর মোটরবাইকের কথা বলছি। রয়্যাল এনফিল্ড থান্ডারবার্ড। দাম মোটামুটি দু’লক্ষ। না বাবুল নিজে কেনেননি, ১৪-র ভোটে জেতার পর, তিনি নাকি এটি গিফট পেয়েছেন। মোটরসাইকেল তো থাকতেই পারে, কিন্তু সেইটি নিয়ে বাবুলের বাড়াবাড়ি আশ্চর্য উচ্চতায় পৌঁছে গেল ওই উল্কার বেগেই। প্রধানমন্ত্রী সাবধানবাণী শুনলেন, যা হয়তো-বা ধমকের রূপান্তর, দুর্ঘটনা ঘটালেন, হাফপ্যান্ট পরে মোটরসাইকেল চড়ে উদ্বোধনে গিয়ে সমালোচনায় জেরবার হলেন। অনেকে বলতে শুরু করলেন, মোটরসাইলেকে সওয়ার গাট্টাগোট্টা বাবুল সুপ্রিয় যেন কোনও এক বাহুবলী। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসেবে একেবারেই যা বেমানান। আর রাজনীতিক হিসেবে এমন ধারা আর-কোথাও চললেও চলতে পারে, এই বাংলায় অচল হাজার টাকার সামিল। এ প্রসঙ্গে একজন কালই আমায় বললেন, যাতে একটু আশ্চর্যই হলাম: বাবুল যেন মিনিয়েচার ফর্মে ইন্দিরা গান্ধির ছোট ছেলে সঞ্জয়। সঞ্জয়কে বিমান শেষ করে দিয়েছে, বাবুলকে বাইক শেষ করছে।

সঞ্জয় শুধু নন, কিশোর কুমারের প্রসঙ্গও তুললেন তিনি। বললেন– বাবুল শিল্পী, সত্যিই। জাত শিল্পী বলা যায়। তাঁর সঙ্গে কোথায় যেন কিশোর কুমারের মিল, না গলায় শুধু নয়, কণ্ঠে তো কিশোরদা আছেনই, পাগলামিতে, কমেডিমাখা আচরণ ও কাজকর্মে– কোথায় যেন কিশোর কুমার লুকিয়ে। কিশোরের পাগলামি মিথের পর্যায়ে, সবাই কুর্নিশ জানিয়েছেন তাতে, এখনও জানিয়ে যাচ্ছেন। তিনি কিশোর কুমার বলেই এটা সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু বাবুল তো আর কিশোর নন। বাবুল প্রতিভাবান হতে পারেন, কিন্তু কিশোর-অনুসারী, জিনিয়াসের জামা তাঁর গায়ে তাই আঁটে না। অতুল পাগলামি তাই অ-গ্রহণীয় হয়ে যায়। রাজনীতিতে তো বিশেষ করে। তবুও বাবুল প্রধানমন্ত্রীর মনজয় করতে পেরেছিলেন বলে, এতগুলো দিন টিকে ছিলেন বিজেপিতে, না হলে অনেক আগে তাঁকে এগজিট রুট ধরতে হত!
এমনও অনেকে বলছেন, রাজনীতিতে তাৎক্ষণিকতা এবং চেনাছকের বাইরে গিয়ে চমকের চতুর্দোলায় চড়ে কেউ কেউ তো এভারেস্ট-শীর্ষে উঠেছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই তো আছেন। তাঁর হাজারো পদক্ষেপে অদ্ভুত অনুভূতি হয়েছে অনেকের। হ্যাঁ, ঠিকই। একশো শতাংশই হয়েছে। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো আর দ্বিতীয় কেউ আছেন কি ভূ-ভারতে?

আরও পড়ুন খেলা হবে, আবার খেলা হবে…

মমতার রাজনৈতিক যোগ্যতা নিয়ে তো শতসহস্র প্রশ্ন উঠেছিল এক সময়ে। কিন্তু তাঁর লড়াই, চোখ ধাঁধানো উত্থানপর্বে তিনি প্রমাণ করেছেন– যে সব পদক্ষেপ উঠতে পারত সাপ, ‘এক ছোবলে ছবি’ করে দিতে পারত, তাই হয়ে উঠেছে তাঁর কাছে– বর। মানে, হাড়ে হাড়ে হারের মুখ থেকে মমতাকে ফিরিয়ে এনেছে সেই প্রবাদ– সাপে বর। আর বাবুল? রাজনীতিতে বড়ালের লড়াইয়ের ভাণ্ডার প্রায় শূন্য। তাঁর আচরণ তাই লড়াইয়ের ওম পায় না স্বাভাবিক ভাবে। গায়ক-নেতা হয়ে থেকে যান, রাজ-নেতা হতে পারেন না। অনেকের মত, সিলিব্রিটির অরা দিয়ে একটা সময় পর্যন্ত রাজনীতিতে মাইলেজ পাওয়া যায় ঠিকই। তার পর, রাজনীতিক হয়ে উঠতে হয়। সেখানে মমতার সঙ্গে ঝালমুড়ি খাওয়া যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর দোহাই দিয়েও অচল, তৃণমূলের প্রতিষ্ঠা দিবসে গান গাওয়াও কিছুতে চলে না। এ সব কিছু উল্কার চাকার হাওয়া হালকা করে দেয়। উল্কা বে-ব্রেক হয়, হুহু করে গোঁত্তা খেয়ে পড়তে থাকে।

তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন বাবুল। রাজনীতিক হিসেবে পুনর্জীবনের খোঁজে। কিন্তু পরিবর্তন-এর দলে গিয়ে নিজেকে যদি অবিকৃত রাখেন এই গায়ক ও মোটরসাইকেল-প্রেমী, তা হলে উল্কার বেগে পতন রোখা যাবে না হয়তো।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

Stay updated with the latest news headlines and all the latest Opinion news download Indian Express Bengali App.

Web Title: Babul supriyo political significance of turn coat politician