Advertisment

Elite Cinema Closed: বন্ধ এলিট, বাঙালি আর সাব অলটার্ন নয়

দূরদর্শনে ফার্স্ট চ্যানেল-সেকেন্ড চ্যানেল দেখতে দেখতে যাঁরা মানুষ হয়েছেন সাদাকালো গৃহস্থবাড়িতে, তাঁদের স্মার্টফোনেই এখন নেটফ্লিক্স কিংবা অ্যামাজন প্রাইম।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Elite Cinema , এলিট সিনেমা

ক'দিন আগেই বন্ধ হয়ে গেল এলিট সিনেমা। ছবি- পার্থ পাল, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

শহর বা শহরতলির বাঙালি এখন অ্যাপ ক্যাব চড়েন, মাল্টিপ্লেক্সে যান

Advertisment

তাপস দাশ

ফুটনানি ম্যানসন চেনেন? সেখানে একটা বাটার দোকান রয়েছে জানেন? মেট্রো সিনেমার নিচে শো রুম তৈরি হওয়ার অনেক আগে, এ অঞ্চলে ওটাই ছিল অন্যতম বড় বাটার দোকান। মফস্বল থেকে ধর্মতলাগামী বাসে উঠে বড় বাটার দোকানে যেতে গেলে বছর বিশেক আগে তরুণরা বলত, এলিট বাটায় নামব। এলিট নামক জুতো কোম্পানি তখনও দোকান খুলে উঠতে পারেনি। ফলে এলিট বাটা বুঝতে কারোরই অসুবিধে হত না। উল্টোদিকেই সোসাইটি সিনেমা হল। সেখানে একটু উষ্ণ ছবির গতায়াত। ফলে লোকসমক্ষে সোসাইটি বলা যেত না। এলিট-ই বলতে হত। সোসাইটি আর এলিট। চমৎকার নাম মাহাত্ম্যের মধ্যেও অন্তর্বস্তুতে তারা তখন ধারণ করে বৈপরীত্য।

Society Cinema Hall at Esplanade সোসাইটি অবশ্য এখনও আছে (এক্সপ্রেস ফোটো - শশী ঘোষ)

এলিটে অবশ্য খুব এলিট ছবি চলত না। সে চলত মেট্রোয়। ওই ধর্মতলা চত্বরেই। প্যাসেজ টু ইন্ডিয়ার মত উচ্চবর্গীয় ছবি দেখানো হত সেখানে। এলিট ছিল মধ্যমানের, অগ্নিপথ মুক্তি পেল, কিংবা তব্বুর কোন 'বই'। বরং ওই এলাকায় ইংরেজি সিনেমা-বুভুক্ষুরা ভিড় জমাতেন লাইটহাউস-গ্লোবে। একটু বেশি ইংরেজি উষ্ণতার খোঁজে যমুনাগমন ঘটত কলেজপালানো যুবকদের। ছিল চ্যাপলিন, বাম সরকারের সময়ে নতুন করে তৈরি হওয়া, যেখানে ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের ছবি দেখানো হত।

কালের গর্ভে মেট্রো-সহ বাকিরা বিলীন হয়েছে। সময়ের হিসেবে মহাকালিক কিছু নয়, তবে দূরদর্শনে ফার্স্ট চ্যানেল-সেকেন্ড চ্যানেল দেখতে দেখতে যাঁরা মানুষ হয়েছেন সাদাকালো গৃহস্থবাড়িতে, তাঁদের স্মার্টফোনেই এখন নেটফ্লিক্স কিংবা অ্যামাজন প্রাইম। ভরভরন্ত নাগের বাজার মোড়ে দাঁড়িয়ে তাঁরা অ্যাপ ক্যাব বুক করে গাড়ি আসার সময়ের আগে কানে ইয়ারফোন গুঁজে দেখে নিতে থাকেন সিনেমার কিছুটা অংশ। গাড়ি এলে শহরতলির দিকে রওনা দিয়ে দেখতে থাকবেন বাকিটুকু, যে শহরতলি থেকে কিছু বছর আগে তিনি রওনা দিতেন এলিটের দিকে, এলাকায় না পৌঁছনো সিনেমা দেখতে। এলিটকে তাঁর আর প্রয়োজন নেই।

Closure Notice at elite cinema hall ৭৮ বছর পর ক্লোজার নোটিস পড়ল এলিট সিনেমা হলে (এক্সপ্রেস ফোটো - শশী ঘোষ)

প্রয়োজন অবশ্য ছিল কিছু মানুষের। তাঁদের সংখ্যা নেহাতই হাতে গোনা। ৩০ মে তারিখ সম্বলিত একটি নোটিস টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে এলিটের দেওয়ালে। মোদি প্রাইভেট লিমিটেডের দেওয়া ওই ক্লোজার নোটিসে জানানো হয়েছে, শুক্রবার পয়লা জুন থেকে ব্যবসায়িক ক্ষতির জন্য বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে ওই হল। এবং হলের সমস্ত কর্মচারীদের ওই দিন থেকেই চাকরি থাকছে না। এ জন্য তাঁদের অবশ্য একমাসের বেতন দেওয়া হবে, আইন মেনেই। এলিটে আর তাঁদের চাকরি নেই। তাঁরা সাব অলটার্ন হলেন।

অন্যদিকে, কয়েক দশকের ব্যবধানে শহর কলকাতা ও তস্য শহরতলির বাঙালি আর সাব অলটার্ন থাকলেন না। এলিটের মত হলে আর সিনেমা দেখেন না তাঁরা। তাঁদের আছে মাল্টিপ্লেক্স। মুড়ি ও মিছরি সেখানে একইসঙ্গে চলে, আলাদা স্ক্রিনে। পপকর্ন অবশ্য একটাই কোম্পানির।

Single Screen
Advertisment