আজকাল মাঝে মাঝেই ভক্তি বা ভক্ত শব্দটি শুনতে পাই। বাংলার ক্ষেত্রে ততটা নয়, যতটা সর্বভারতীয় গণমাধ্যমে এবং জনপরিসরে। কেন সে-কথা সহজেই অনুমেয়। অনেকদিন ধরে যেহেতু ভক্তি আমার ভাবনাচিন্তার অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু, তাই এরকম শুনেটুনে খানিক খতিয়ে দেখতে ইচ্ছে করে যে, কে কীভাবে এই শব্দটিকে আজ প্রয়োগ করছে। কোনো বিশেষজ্ঞের দরকার নেই, একটু নেড়েচেড়ে দেখলেই যে-কারোর কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠবে যে ভক্তি বলতে একধরনের প্রশ্নহীন আনুগত্যের ধারণা তৈরি হয়ে আছে চারপাশে।
একটি শব্দের কখন কী মানে তৈরি হবে কোনো সময়ে তা তো আর আমার নিয়ন্ত্রণে নেই, কারো নিয়ন্ত্রণেই নেই, তাই বিমূঢ় হয়ে বসে থাকি। ভাবি যে, ভক্তির কতশত নান্দনিকতার কথা আলোচনা করেছেন আমাদের দেশের রসতাত্ত্বিকেরা, হাজার বছর ধরে ভারত ভূখণ্ডের কতো রকম মানুষ ভক্তিকে বুঝেছেন ভিন্ন ভিন্ন সব অনুষঙ্গে, সে-সবই কীরকম অর্থহীন হয়ে গেল! পক্ষ এবং বিপক্ষের সবাই আজ ভক্তি বলতে বুঝে নিচ্ছেন বিশেষ এক ধরনের মনোবৃত্তি যার মধ্যে সেঁধিয়ে যেতে পারলে পরবর্তী কার্যক্রম আগে থেকেই ঠিক হয়ে আছে। আর কোনো ভাবনার-বিশ্লেষণের-আলোচনার অবকাশও নেই, প্রয়োজনও নেই!
বঙ্গ রাজনীতি থেকে ‘তরমুজ’ কি হারিয়ে গেল!
কিন্তু সত্যিই কি তাই? ভক্তির এরকম ধারণা যদি মেনে নিই, তাহলে ধরুন একজন কবীরদাস, কাশীর একজন মুসলমান জোলা, তাঁকে আর ভক্তি আন্দোলনের মধ্যে ধরা যাবে না। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, কবীরদাসের গুরু ছিলেন রামানন্দ স্বামী। সেই গল্পটি সকলেই জানেন, কবীর ভোর বেলায় শুয়ে ছিলেন গঙ্গার ঘাটে, রামানন্দ স্বামী প্রাতঃস্নান করতে নামছেন, হোঁচট খেয়েছেন কবীরের দেহে। চমকে উঠে যেই না তিনি বলেছেন হে রাম, কবীর লাফিয়ে উঠেছেন – এই তো আমার দীক্ষা হয়ে গেছে, আমি মন্ত্র পেয়ে গেছি। কবীর সত্যিই রামানন্দ স্বামীর দীক্ষিত শিষ্য ছিলেন কি না, বা থাকলেও এই গল্পটি কতোটা সত্যি তা তো বিতর্কের বিষয়।
কিন্তু এই জনশ্রুতি প্রমাণ করে যে, আমাদের জনমানসে বৈষ্ণব মহাত্মা রামানন্দ স্বামীর জোলা শিষ্যকে মেনে নিতে কোনো অসুবিধেই হয়নি। শুধু তো জোলা নন কবীর, তিনি তো হিন্দু মুসলমান সকলকেই অণুবীক্ষণের তলায় ফেলছেন আর প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মমাত্রকেই কঠোর আক্রমণ করছেন। তাঁর রচনা জুড়ে রামের জয়গান, কিন্তু সেই রাম সর্বজনীন –
মোমে তুমে সরব মে জহঁ দেখু তহঁ রাম।
রাম বিনা ছিন এক হী সরৈ ন একো কাম।।
তাই বলে কেউ ভেবে বসবেন না এই রাম রঘুপতি, অযোধ্যায় যাঁর ঠিকানা পাওয়া যাবে। এই রাম আসলে তিনি যিনি সকলের আত্মায় রমণ করছেন। কবীর খুব স্পষ্ট করে সেকথা বলে দিচ্ছেন বারবার –
এক রাম দসরথ ঘর ডোলে এক রাম ঘট ঘট মেঁ বোলৈ।
বিন্দরাম কা সকল পসারা অকঃ রাম হৈঁ সবসে ন্যারা।। ...
নির্গুণ রাম নিরঞ্জন রায়া জিন ওহ সকল সৃষ্টি উপজায়া।
নিগুণ সগুণ দোউ সে ন্যারা কহৈঁ কবীর সো রাম হমারা।।
এই অবধিও ঠিক ছিল। ছোটবেলায় ইতিহাস বইতে আমরা সবাই পড়েছি যে প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের বিভেদ, জাতপাত, লিঙ্গ-বৈষম্য ইত্যাদি সব নিয়েই ভক্ত এবং সন্তদের অনেক বক্তব্য এবং প্রতিবাদ ছিল। কবীর ক্রিটিকাল, সেটা তাই বোঝা যায়। কিন্তু আজ যখন রামায়েৎ বা রামোপাসক সাধুদের ক্ষণে ক্ষণে কবীরের দোহা বীজক সাখী আওড়াতে দেখি আশ্চর্য হয়ে যাই।
আজাদি শ্লোগান: উত্তর-আধুনিক রামধনু স্বর
এই সেদিনও খোদ কলকাতাতেই হেটো-মেঠো মানুষদের রামচরিতমানস পাঠের এক আসরে গিয়ে শুনলাম তুলসীদাসের ব্যাখ্যায় রীতিমত প্রমাণ হিসেবে কবীরবাণী ব্যবহার করছেন ব্যাসাসনে উপবিষ্ট কথকঠাকুর। তাজ্জব নয়? গোস্বামী তুলসীদাস, যিনি কি না ওই কাশীতে বসেই দশরথের পুত্র রামচন্দ্রকে অবতার হিসেবে বর্ণনা করেছেন, তাঁর কাব্যের ব্যাখ্যায় দিব্যি কাজে লেগে যাচ্ছে নির্গুণপন্থী কবীরের পংক্তি! ভক্তি এরকমই হেটেরোজেনাস বা অসমসত্ত্ব এক ব্যাপার যাতে নির্গুণ-সগুণ, সন্ন্যাসী-গেরস্ত, শৈব-শাক্ত-বৈষ্ণব সবারই স্বর শুনতে পাবেন।
এত রকম স্বর আছে বলেই যে খুব চেল্লামেল্লি হচ্ছে আদৌ তা নয়। বিরোধ তো থাকবেই, ভক্তি মোটেও সব-জোড়া লাগানোর ফেভিকল নয় – সেটা কথা নয়, কথাটা হলো, একই পরিসরের মধ্যে এতরকমের কণ্ঠস্বর আপনি শুনতে পাচ্ছেন। শুধু তাও নয়, এই ভিন্ন ভিন্ন স্বরগুলির মধ্যে একটি সংলাপের সম্ভাবনাও থাকছে। আমার কাছে ভক্তি তাই বিশেষ কোনো এক রকম মনোভঙ্গি নয়, নানা রকম মনোভাবের আদানপ্রদানের এক পরিসর।
এই যে পরিসরের কথা বলছি তা তো ধারণার কথা। কিন্তু এমন খোলামেলা পরিসরের আশ্চর্য বাস্তব উদাহরণও হাতের সামনেই রয়েছে, আমাদের দেশেরই এক ধর্মগ্রন্থ। যে-কোনো গুরুদোয়ারায় গেলে দেখবেন তখতের ওপর বসে আছেন গুরু গ্রন্থসাহিব। জানলে অবাক হতে হয় যে, এই গ্রন্থসাহিব দশম গুরু গোবিন্দ সিংহের আদেশ অনুসারে শিখপন্থার গুরুপদবাচ্য। বস্তুত, চোদ্দশোর বেশি পৃষ্ঠাব্যাপী এই গ্রন্থসাহিব ধারণ করে আছে গুরু নানক দেব থেকে গুরু তেগবাহাদুর পর্যন্ত গুরুদের রচনা।
ঋত্বিকের ছবিতে উদ্বাস্তুরা কি কেবলই হিন্দু?
ভারতীয় সাহিত্যের এবং তুলনামূলক সাহিত্যের ছাত্র হিসেবে আমাকে যা আরো বেশি বিস্মিত করে তা হলো – শুধু নিজেদের গুরুদের রচনা সংকলন করেই এর সমাপ্তি নয়, এরপর এতে আছে ভগতবাণী, অর্থাৎ ভক্তদের রচনা। সেই ভক্তদের মধ্যে জয়দেব থেকে আরম্ভ করে রবিদাস, পিপা, ধন্না, সুরদাস, পরমানন্দ, নামদেব, কবীরদাস, বাবা ফরিদ সকলেই আছেন। তারপর আছে ভাট বা ভট্টদের রচনা। রচনা কিন্তু শুধু বহু কবির নয়, বহুভাষিকও – সংস্কৃত, ব্রজভাষা, লহ্ণ্ডা, খড়িবোলি, সিন্ধি, ফার্সি সবই তার বিশাল পরিধির অন্তর্ভুক্ত। তাহলে শুধু নিজের মত আর পথ নয়, যে যেখানে গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন বা কবিতা রচনা করেছেন, যে ধর্মে বা যে-ভাষায়ই তা হোক, গ্রন্থসাহিবে তাঁদের রচনা সাদরে ও সসম্মানে গৃহীত হয়েছে। আজ যখন কথায় কথায় শুনতে পাই ‘মধ্যযুগীয় বর্বরতা’, আমার খুব ইচ্ছে করে গ্রন্থসাহিবের কথা বলতে, কালের বিচারে মধ্যযুগেই তো এই উদার সংকলন সম্পূর্ণ হয়েছে। যারা আমার পক্ষে তারাই শুধু বৈধ, বাকিরা গোল্লায় যাক – এই ‘বর্বরতা’ বোধহয় মধ্যযুগের চেয়ে আমাদের সময়েই বেশি প্রচলিত।
এ তো তাও পঞ্চদশ থেকে সপ্তদশ শতকের কথা হচ্ছে। এরও অনেক আগে, যখন ভক্তি আন্দোলনের উন্মেষপর্ব, দক্ষিণ ভারতের কথা বলছি, মহাদেবী আক্কার কথা ভাবুন। আগুনের মতো সৌন্দর্য নিয়ে মহাদেবী ঘর-সংসার তো ছাড়লেনই, সেই সঙ্গে ত্যাগ করলেন পরনের পোশাক। তাঁর প্রিয় ছিলেন চেন্নামল্লিকার্জুন, শিবেরই আর এক নাম। মহাদেবী চির ভ্রামণিক, ঘুরতে ঘুরতে পৌঁছেছেন এক শৈব মণ্ডপে। সেখানে শরণদের মধ্যে অসন্তোষ – কীরকম ভক্ত! একে মহিলা তায় আবার নগ্নিকা! তখন বাকি ভক্তদের সঙ্গে মহাদেবীর যে কথোপকথন, সেই ডিসকোর্সটি পুরোটাই তুলে দিতে পারলে ভালো হতো। আমরা বুঝতাম যে, বিরোধিতা দেখলেই শুধু অর্থহীন রেষারেষি-জেদাজেদি এবং শেষপর্যন্ত লাঠালাঠি করে তাকে পিষে দিতে হয় না; বিরোধ থেকেই জন্ম নেয় সংলাপের প্রক্রিয়া যার ভেতর অপরকে শোনাও আছে এবং শোনানোও আছে। বস্ত্রত্যাগ নিয়ে তাঁর যুক্তিক্রম, একটুকরো উদাহরণ –
পুরুষ নারী সকলেই কুণ্ঠিত হয়
যখন তাদের লজ্জা ঢেকে রাখা কাপড়ের টুকরোটি আলগা হয়ে যায়।
সব জীবনের প্রভু
যখন ডুবে আছেন, মুখহীন
এই দুনিয়ায়, কীভাবে কেউ ভদ্রসভ্য থাকতে পারে?
এই পৃথিবীর পুরোটাই যখন প্রভুর নয়ন,
সর্বত্র তাঁর দৃষ্টি, কী আর
আড়াল করবে তুমি, কীই বা ঢাকবে?
দেখুন, দ্বাদশ শতকের ভারতীয় সমাজ কাঠামোয় একজন নারী, তিনি সংসার ত্যাগ করেছেন, বস্ত্রও আর ব্যবহার করছেন না। অর্থাৎ তাঁর জন্য সমাজ-নির্দিষ্ট যতরকম ভূমিকা আছে, তার কোনোটিই তিনি মানছেন না। এই একক মানুষকে তো এক ধমকে চুপ করিয়ে দেওয়া যেত। সাধুদেরও তো সমাজ থাকে, সেই সমাজ থেকে বহিষ্কারও করা যেত। অথচ সর্বশক্তিমান সংঘ এই একক মানুষের প্রতিবাদের কারণটি বুঝতে চাইছে। শেষমেষ সংঘ মেনে নিচ্ছে যে, মহাদেবী একলা একজন নারী বলেই তাঁর অনুভূতি মিথ্যে নয়, বরং তাঁর উপলব্ধির গভীরতা বুঝে এবং স্বতন্ত্র পথ স্বীকার ক’রে লিঙ্গায়েত বচনের অন্যতম কবি হিসেবে সম্মান করা হচ্ছে, আক্কা বা দিদি ডাকটির মধ্যে যা সুন্দর ধরা পড়েছে। কাশ্মীরের লল্লার ক্ষেত্রে, রাজপুতানার মীরাবাঈয়ের ক্ষেত্রে বারবার এই রকম সব তুলকালাম কাণ্ড আমরা দেখতে পাই।
ভক্তির মধ্যে এই কথা বলার এবং বিরোধিতা করার পরিসরটুকু আছে। সামাজিক ও ব্যক্তিগত। আছে বলেই বাঁচোয়া। তাই তাকে সহজে প্রাতিষ্ঠানিক করে তোলা যায় না। অনেকে চেষ্টা করেন বটে, কিন্তু সে ঠিক খাপে খাপ হয় না, অনভ্যাসের ফোঁটা চড়চড় করতেই থাকে।
আঁতকে উঠবেন না, এ লড়াই মুসলমানদের
কবীরের রামকে দিয়ে শুরু হয়েছিল, তুলসীদাসের রামকে দিয়ে শেষ করা যাক। তবে এ ঠিক রামের গল্প নয়, ‘ভক্ত’ হনুমানের গল্প। রামচন্দ্র রাবণবধ করে অযোধ্যায় ফিরেছেন, সীতাসহ রাজসিংহাসনে আরোহণ করেছেন, পরিকরেরা সকলেই আছেন। যেমন হয়, রাজা রামের জন্য সবাই উপহার এনেছেন, এবং রাম-সীতাও সকলকে নানা উপহার ইত্যাদি দিচ্ছেন। হনুমানের ওপর যেহেতু খুবই স্নেহ, সুতরাং সীতাদেবী তাকে নিজের মুক্তোর মালাটি দিলেন। তো হনুমান সেই মুক্তোগুলোকে একটা একটা করে দাঁত দিয়ে ভেঙে ফেলছে। উপহারের অমর্যাদা দেখে সবাই যখন বিরক্ত, জিজ্ঞাসায় জানা গেল যে, হনুমান দেখছে ওই মালার কোথাও রাম আছেন না কি। এবং যেহেতু তাতে রাম বা সীতা নেই, ওই মালা সে ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছে। এ থেকেই বোধহয় বাঁদরের গলায় মুক্তোর মালার প্রবাদ।
আস্পর্ধাটা ভাবুন, রাজরানির দেওয়া উপহার ফেরত থুড়ি বাতিল করা! আজকের দিনের রাজা হলে কী হতো বলা যায় না, তবে যেহেতু প্রাচীন কাল, লোকে এত সভ্য হয়নি, সুতরাং রাম ব্যাপারটা খতিয়ে দেখতে চেষ্টা করলেন। এরপর যা হবে সকলেই জানেন, ক্যালেণ্ডার অবধি জানে; চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে হনুমান বুক চিরে দেখাবে যে তার হৃদয়ে সীতারাম সতত আছেন। এই জানা গল্পটি যদি ফিরে একবার পড়ি তাহলে বুঝতে পারব যে, ভক্ত শুধু অন্যদের বিরোধিতা নয়, দরকার পড়লে নিজের প্রিয়তম প্রভুরও বিরোধিতা করতে পারে। গাড়ির পেছনে এত বেশি জঙ্গি দেখতে হনুমানের স্টিকার সাঁটা হচ্ছে আজকাল যে, এই ‘ভক্ত’ হনুমানকে আমরা ভুলতেই বসেছি। ভক্তের ক্ষমতা জঙ্গিপনা থেকে আসে না, তা আসে তার ভক্তি থেকেই। প্রভুর অভিজ্ঞানের চেয়ে নিজের হৃদয়ের ওপর তার ভরসা বেশিই থাকে।
ভক্তির জোরেই ভক্ত স্বয়ং তার ভগবানের সঙ্গেও বিরোধ করতে পারে এমন উদাহরণও অজস্র। ভক্তির তো অনেক অর্থ, তার মধ্যে দাস্য যেমন আছে, তেমনই আবার প্রেমাস্পদের সঙ্গে নিখাদ ঝগড়াও আছে। সেই ঝগড়ায় সময় সময় প্রিয়ের সঙ্গে বাক্যালাপ অবধি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। চৈতন্য মহাপ্রভু একবার গোপীভাবে এমন ভাবিত ছিলেন যে কৃষ্ণনাম পর্যন্ত সহ্য করতে পারছিলেন না। কোনো এক পণ্ডিত তখন তাঁকে কৃষ্ণনামের মহিমা ব্যাখ্যান করতে গিয়ে তাড়া খেয়ে শেষমেষ পালিয়ে বাঁচে! ভাবুন, কৃষ্ণ বলতে যিনি আত্মহারা হয়ে যান, গোপীদের বিরহ দশা ভেবে তিনি খাপ্পা হয়ে আছেন স্বয়ং কৃষ্ণের ওপর! আর তাঁকে বোঝাতে গেছে যে, সে তো ভক্ত নয় পণ্ডিত। তার নতুন ভাবনা নেই, সবই নিয়মমতে নির্দিষ্ট হয়ে আছে আগে থেকেই। সেইজন্যেই সে মূর্তিমান রসভঙ্গ। তবে সে অন্য গল্প।
বিজেপির হিন্দু উদ্বাস্তু প্রেম একটি ব্রাহ্মণ্যবাদী রাষ্ট্রীয় মিথ্যাচার
আপাতত এইটুকু যেন মনে রাখি যে, ভক্ত বলতে বশংবদ আর ভক্তি বলতে মোসাহেবি এই যদি সাব্যস্ত হয়, তবে যথার্থ ভক্ত বা ভক্তির তেমন কিছু যায় আসে না বটে, তবে আজকের অবস্থায় নিন্দার ছলে উলটে প্রশংসাই হয়ে যায়। মানে, যাদের ভক্ত বলে নিছক গাল পাড়তে চাওয়া হচ্ছে, তারা বেশ খানিকটা সম্মান ফাউ হিসেবে পেয়ে যাচ্ছে। কারণ ভক্তের তো অটোনমি বা স্বাতন্ত্র্য আছে কিছু! এরকম পরিস্থিতিতে বরং ‘অতিভক্তি’ শব্দটি প্রয়োগের কথা ভাবা যেতে পারে। যেকোনো বিষয়ের অতিরেকই সেই বিষয়টি থেকে আলাদা, ফলিত অর্থে বিপরীতবোধকও হতে পারে। সুতরাং অতিভক্তিও আসলে ভক্তি নয়, অন্য কিছুর লক্ষণ।
(অভিষেক বসু কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক ভারতীয় ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষক, মতামত ব্যক্তিগত)