সোমবার ২৫ নভেম্বর রাজ্যের ৩ বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন। অন্যবারের উপনির্বাচনের থেকে এবারের উপনির্বাচনকে রাজনৈতিক দলগুলো অনেক বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। মাত্র দেড় বছরের জন্য এই তিন বিধায়ক নির্বাচিত হবেন। কিন্তু তার জন্য যেভাবে প্রচারে ঝড় তুলেছে প্রতিটি রাজনৈতিক দল তা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন, ২০২১ বিধানসভা ও তার আগে ২০২০ রাজ্যের পৌরসভার নির্বাচন। সেক্ষেত্রে এই তিন বিধানসভার ফল অনেকটাই বাড়তি গুরুত্ব দাবি করছে বাংলার রাজনীতিতে। তবে পরীক্ষা শুধু তৃণমূল বা বিজেপির নয়। ভয়ঙ্কর অগ্নিপরীক্ষা দিলীপ ঘোষ, মুকুল রায় ও প্রশান্ত কিশোরেরও। কংগ্রেস ও বামেদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই।
নিশ্চিতভাবে এটা বলা যায় যে তিন বিধানসভা আসনে ভালো ফল করলে হয়তো কিছুটা স্বস্তি পেতে পারে রাজনৈতিক দলগুলো। রাজনীতির কারবারিদের একাংশ মনে করেন, প্রথমত ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনের পর এই উপনির্বাচনে অফিসিয়ালভাবে বাম ও কংগ্রেসের মধ্যে নির্বাচনী জোট হয়েছে। শুধু তাই নয়, তাঁরা একযোগে তৃণমূল ও বিজেপির বিরুদ্ধে এই রাজ্যে আন্দোলন করবে বলেও সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু নির্বাচনে আশানুরূপ ফল না হলে দলীয় কর্মীদের মনোবল ফের তলানিতে গিয়ে ঠেকবে। সবার পিছনে থেকে শুরু করলেও ভাল ফল করার চাপে আছে বাম ও কংগ্রেস জোট। তা নাহলে জোট নিয়ে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য।
আরও পড়ুন: ‘আমি এনসিপিরই লোক’ অজিতের বিবৃতি ভুয়ো এবং বিভ্রান্তিকর, প্রত্যুত্তর শরদ পাওয়ারের
খড়গপুর বিধানসভা কেন্দ্রে ২০১৯ মেদিনীপুর লোকসভার ফলাফলের নিরিখে বিজেপি অন্যদের থেকে এগিয়ে রয়েছে প্রায় ৪৫ হাজার ভোটে। লোকসভা ভোটের নিরিখে উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জে বিজেপি এগিয়ে রয়েছে প্রায় ৫৭ হাজার ভোটে। অন্যদিকে করিমপুর বিধানসভায় ২০১৯ লোকসভা ভোটের নিরিখে তৃণমূল কংগ্রেস এগিয়ে সাড়ে ১৩ হাজার ভোটে। আগের নির্বাচনে ভোটের ব্যবধান এক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, মাত্র ৬ মাসের মধ্যে মানুষের মনে কতটা রাজনৈতিক পরিবর্তন এসেছে সেটাও একটা বিবেচ্য বিষয়।
এই নির্বাচনে তৃণমূল ও বিজেপি মূল প্রতিদ্বন্দ্বী সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তবে রাজ্যে নিজেদের প্রাসঙ্গিকতা ধরে রাখতে গেলে কংগ্রেস ও বামেদের কাছে ভোটের ভাল ফলাফল অবশ্যই জরুরি হয়ে পড়েছে। তাই জোটের বাধ্যবাধকতাতেই এই উপনির্বাচনে এক সঙ্গে লড়াই করছে বাম ও কংগ্রেস। খড়গপুর ও কালিয়াগঞ্জ কেন্দ্রে প্রার্থী দিয়েছে কংগ্রেস। সিপিএম লড়ছে করিমপুরে। একসময় খড়্গপুর ছিল কংগ্রেসের ঘাঁটি। কিন্তু গত ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে সেই কংগ্রেসগড় থেকে জয়লাভ করেছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তেমনই সিপিএমের শক্ত ঘাঁটি ছিল করিমপুর। করিমপুরের মাটির সঙ্গে যোগ ছিল বাংলার রাজনীতির একসময়ের চাণক্য সিপিএম নেতা অনিল বিশ্বাসের।
আরও পড়ুন: উপনির্বাচনে তৃণমূল ও বিজেপিকে বেগ দেবে বাম-কংগ্রেস
তবে এবারের এই উপনির্বাচনে মর্যাদার লড়াই দিলীপ ঘোষ, মুকুল রায় ও ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোরের। বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের গড় খড়্গপুর কি ধরে রাখতে পারবে পদ্মশিবির? কালিয়াগঞ্জ এবং করিমপুর কেন্দ্রে বিজেপির জাতীয় কর্ম সমিতির সদস্য মুকুল রায় মাটি কামড়ে পড়ে রয়েছেন। দেখার বিষয় মুকুল রায়ের কূটকৌশলে করিমপুর কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী জয় পায় কি না! রাজনৈতিক মহলের খবর, লোকসভা নির্বাচনের আগে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছেন মুকুল রায়। দমদমের নাগের বাজারে এক সিপিএম নেতার সঙ্গে এমনই এক বৈঠক করার সময় তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা বিক্ষোভও দেখিয়ে ছিল। যদিও মুকুলবাবু ব্যক্তিগত সম্পর্কের কথা বলেছিলেন। তবে করিমপুরে এমন কোনও ঘটনা এখনও প্রকাশ্যে আসেনি। কিন্তু অন্য রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবিষয়ে চিন্তায় রয়েছে বলে খবর।
করিমপুর কেন্দ্রে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় কংগ্রেস ও সিপিএম জোট হওয়ার ফলে করিমপুর কেন্দ্রের একটা বড় সংখ্যক মুসলিম ভোট কোন দিকে যাবে? তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে রাজনৈতিক মহলে। করিমপুরের বিধায়ক মহুয়া মৈত্র কৃষ্ণনগরের সাংসদ হওয়ার পর কেন্দ্রটি ফাঁকা হয়। সেক্ষেত্রে কৃষ্ণনগরের সাংসদেরও এটা একপ্রকার সম্মানের লড়াই।
অন্যদিকে পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়গপুর কেন্দ্রে ভোট প্রচারে তৃণমূল প্রথম থেকেই ঝড় তুলেছে। তবে ঘরের অন্দরমহলে আরএসএস ও বিজেপির প্রচার অন্য মাত্রা যোগ করেছে। পাশাপাশি এই কেন্দ্রে তেলেগু ও অবাঙালি ভোটার বাঙালি ভোটারের থেকে দ্বিগুন। সে ক্ষেত্রে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ খড়গপুর কেন্দ্রটি। এই শহরে রেলের জায়গার পরিসর অনেকটাই। রেল ও পুরসভার উন্নয়ন নিয়ে তরজাও চলে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে৷ সেই দিক থেকে বাংলায় জাতপাতের ভোট কাটাকুটির অভিযোগ এই কেন্দ্রে বেশি।
লোকসভা নির্বাচনে এরাজ্যে ৩৪ থেকে ২২ টি আসন পাওয়ার পর তৃণমূল কংগ্রেস ভোটগুরু প্রশান্ত কিশোরকে নিয়োগ করে। রাজ্যে নিয়োগ হওয়ার পর এই তিন বিধানসভা উপনির্বাচনে ঝাঁপিয়ে পড়ে কাজ করছে পিকের টিম। এবার দেখার বিষয় কতটা কাজে লাগে পিকের রাজনৈতিক টোটকা। এই তিন কেন্দ্রে ভোটের ফলাফলের ওপর অনেকটাই নির্ভর করছে পিকের ভাগ্য। বস্তুত বিজেপির দিলীপ ঘোষ ও মুকুল রায়, অন্যদিকে প্রশান্ত কিশোর। এই তিনজনের অগ্নিপরীক্ষা এই তিন বিধানসভার উপনির্বাচনে।