নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন এবং এনআরসি বিক্ষোভে উত্তাল রাজ্য। বহু জায়গায় বন্ধ ট্রেন চলাচল। অবরুদ্ধ সড়কপথ। তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে আন্দোলন। পরিস্থিতি যে পর্যায়ে এগোচ্ছে তাতে সোমবার থেকে জনজীবনে আরও বড় ধরনের প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আপাতত তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। এবার কর্মসূচি ঘোষণা করার পালা গেরুয়া শিবিরের। রয়েছে বাম-কংগ্রেস। মোদ্দা কথা শীতের উৎসবের মরসুমে আরও ভারী হতে চলেছে রাজ্যরাজনীতি।
যাঁরা নিয়মিত সবজির বাজারে যান তাঁরা কখনও ভেবে দেখেছেন ডিসেম্বর মাসেও কেন সব আনাজে কিনতে গেলেই পুড়ছে হাত? ঝাঁঝের বদনাম শুধু পেঁয়াজের, কিন্তু বাকি সবজি কিনতেও কালঘাম ছুটে যাচ্ছে আমআদমির। বাজারের ঝুলি ভরলেও এক ধাক্কায় পকেট ফাঁকা খাদ্যরসিক সম্প্রদায়ের। যদিও এ ব্যাপারে কোনও হেলদোল নেই রাজনৈতিক দলগুলোর। নেই কোনও তাপ-উত্তাপও। শুধু একে অপরের ওপর দায় চাপিয়ে যেতে পারলেই যেন মিটে যায় সব কাজ।
আরও পড়ুন: বাংলায় রাষ্ট্রপতি শাসন জারির হুঁশিয়ারি বিজেপির
তবে নাগরিক সংশোধনী আইনের ঘটনার সঙ্গে সবজির বাজারের দামের প্রসঙ্গ পড়ে অনেকেই হয়তো হোঁচট খেতে পারেন। সব মহলেই প্রশ্ন উঠছে, সাধারণ মানুষ খেয়ে-পড়ে কীভাবে বেঁচে থাকবে তার জন্য চিন্তা করবে না কোনও সরকার? কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে না? কোনও উপায় বের করবে না? ওয়াকিবহাল মহলের মতে, নাগরিক সংশোধনী আইন নিয়ে আন্দোলন হবে, পাল্টা আন্দোলন হবে। অর্থাৎ বাকি কোনও ইস্যুকে আর রাজ্যবাসীর সামনে আনা যাবে না। জিডিপি পড়বে, কমতে থাকবে টাকার মূল্যায়ণ। অন্যদিকে ধর্ম, রাজনীতি, শিল্প-সাহিত্যমহল এই নাগরিকত্ব ইস্যুতে সব মিলে মিশে একাকার হয়ে যাবে। অবশ্য কেউ প্রশ্ন করতে পারবেন না।
সংখ্যাগরিষ্ঠ ক্ষমতায় লোকসভা ও রাজ্যসভায় নাগরিক সংশোধনী বিল পাশ করিয়ে আইনে পরিণত করেছে পদ্মশিবির। যদিও বিভিন্ন রাজ্য এই আইন মানবে না বলে ঘোষণাও করে দিয়েছে। বিলের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেও পড়েছে এই রাজ্যের বিক্ষোভকারীরাও। ট্রেনে অগ্নি সংযোগ, বাস পোড়ানোর মত ঘটনা ঘটে চলেছে এখনও। যদিও এর পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি খাঁড়া করে চলেছে দুই পক্ষই। প্রচার-অপপ্রচারের বন্যা বয়ে চলেছে সোশাল মিডিয়ায়। পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হচ্ছে। আর এই ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমে পড়েছেন অনেকেই। অবশ্যই তাঁদের সামনে থেকে চোখে দেখা দুষ্কর। মেঘের আড়ালে মেঘনাদ হয়ে থাকাটাই তাঁদের লক্ষ্য।
আন্দোলন করা গণতান্ত্রিক অধিকার, একথা স্বীকার্য। তবে যে দেশে গণতন্ত্র অধিকারের শ্রেষ্ট স্থান নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়েই প্রশ্ন ওঠে সেখানে গণতন্ত্র কতটা সার্বিক রূপ পায়, সেই প্রশ্ন থেকে যায়। একটা সরকার নির্বাচিত হয় যে ভোট ব্যবস্থার মাধ্যমে, তা নিয়ে উঠছে হাজারও প্রশ্ন। আদৌ কবে এই সব সমস্যার সমাধান হবে তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। ১৩০ কোটির দেশে আন্দোলনে আগুন জ্বলছে এই ঘটনাও নতুন নয়। তবে একটা মহল প্রশ্ন তুলেছে এর ফলে জাতীয় সম্পত্তির ক্ষতি হচ্ছে। অবশ্য পাল্টা যুক্তিও খাঁড়া করছে অনেকে। তাঁদের বক্তব্য, ক্ষোভ ঠিক কোন পর্যায়ে গেলে নিজের দেশের সম্পত্তির ক্ষতিসাধন করা যায় সেই জায়গাতেই পৌঁছেছে দেশের অবস্থা।
আরও পড়ুন: হাওড়া, মুর্শিদাবাদ-সহ রাজ্যের বেশ কয়েকটি জেলায় বন্ধ হচ্ছে ইন্টারনেট পরিষেবা
এবার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে একাধিক ব্যবস্থা নেবে রাজ্য সরকার। প্রথমে বন্ধ করা হল ইন্টারনেট যোগাযোগ ব্যবস্থা। ডিজিটাল যুগে ব্যাঙ্কিং থেকে পোস্ট অফিস বা বেসরকারি অফিস সব ক্ষেত্রেই ইন্টারনেট সিস্টেম ছাড়া অচল ব্যবস্থা। অর্থাৎ ফের কাজ যাবে আমজনতার, টান পড়বে পেটেও। এমন একাধিক সমস্যায় পড়বেন মানুষজন। ডিসেম্বরে যখন পিকনিকের আমেজে মেতে থাকার কথা, তখন উত্তপ্ত রাজ্যে কতোটা স্বস্তি দেবে রাজ্যবাসীকে, প্রশ্ন সেখানেই।