Advertisment

বর্বর গরিষ্ঠতার শক্তি ও নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল

আজকের এই রাজনৈতিক অপরাধ দৃশ্যে যাদের হাতের আঙুলের ছাপ পাওয়া যাচ্ছে, তারা একদা বিজেপি বিরোধিতায় সোচ্চার হত।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
CAB, Indian Constituition

এই আপত্তিকর আইনের জন্য, এই ট্র্যাজিক মুহূর্ত সৃষ্টির জন্য দায়ী বিজেপি, অমিত শাহ নরেন্দ্র মোদীদের ভারতীয় জনতা পার্টি

নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ঐতিহাসিকই বটে। কিন্তু অমিত শাহ যে কারণে একে ঐতিহাসিক বলেছেন, সে কারণে নয়। দেশভাগের ভুল সংশোধনের ছদ্মবেশে, প্রতিবেশী দেশের নিপীড়িত সংখ্যালঘুদের আশ্রয় দেবার নামে নরেন্দ্র মোদী সরকার এই বিষাক্ত বিল সংসদে পাশ করিয়েছে। এর ফলে ভারতের নাগরিকত্বের ধারণাই ধাক্কা খাবে, নাগরকিত্বের মানদণ্ড হয়ে উঠবে ধর্ম।

Advertisment

তিন দেশের ছটি সংখ্যালঘু গোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্তি আইনসিদ্ধ করবার জন্য এই আইন তৈরি হয়নি। এটা আসলে একটা রাজনৈতিক ইঙ্গিত। ভারতের সর্ববৃহৎ সংখ্যালঘুদের খর্ব করার, বাদ দেবার এক ভয়াল ভয়ংকর ইঙ্গিত। মুসলিমদের বলা হচ্ছে, ভারত হিন্দুদের প্রাকৃতিক বাসস্থান বলে পুননির্মিত হচ্ছে। এবং তার ফলে মুসলিমদের কিঞ্চিৎ কম নাগরিকত্ব নিয়ে খুশি থাকতে শিখতে হবে।

আরও পড়ুন, কেন ক্যাব প্রসঙ্গে বারবার উঠছে নেহরু-লিয়াকত চুক্তির কথা?

এই আপত্তিকর আইনের জন্য, এই ট্র্যাজিক মুহূর্ত সৃষ্টির জন্য দায়ী বিজেপি, অমিত শাহ নরেন্দ্র মোদীদের ভারতীয় জনতা পার্টি। এই 'সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস;-এর কথা বলা পার্টিটি জনমতকে খর্ব করেছে। এরা ওই জনমতকে লাইসেন্স ভেবে নিয়েছে। যে লাইসেন্সের মাধ্যমে আসামে এনআরসি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নাগরিকত্বের সংকুচিত এক ধারণা লাগু করেছে তারা, যার ফলে ধর্ম ও জাতিগত বিদ্বেষের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। সেখানকার ভারতীয়রা রাষ্ট্রহীনতার মুখে পড়েছেন। এবার ক্যাবের মাধ্যমে সে আগুনে ফের ঘি দেওয়া হয়েছে। কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের মাধ্যমে সেখানকার মর্যাদাহানি, সেখানকার মানুষকে চুপ করিয়ে রাখা, সেখানকার মানুষদের বিচ্ছিন্ন করে রাখার পর ফের এই নতুন পদক্ষেপ নিয়েছে তারা।

লজ্জার ইতিহাসে শুধু বিজেপি-ই নেই। তাদের অনেক সাথী, যারা একসময়ে ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ, বহুধারণক্ষম চরিত্রের কথা বলত, তারাও সে দলে ভিড়েছে। নীতীশ কুমার- জেডি(ইউ) প্রধান, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর রাজনৈতিক পূর্বজন্মে তিনি ব্যাপকতর জাতীয়তার বিষয়ে সোচ্চার হতেন, উদ্বেগ প্রকাশ করতেন সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে। রাম বিলাস পাসওয়ান, এলজেপির খাটো নির্বাচনী মঞ্চ ছাড়িয়ে শোনা যেত তাঁর স্বর, যিনি একসময়ে রক্তক্ষয়ী গুজরাট দাঙ্গার জন্য বিজেপি নেতৃত্বাধীন মন্ত্রক ছেড়ে গিয়েছিলেন।

আজকের এই রাজনৈতিক অপরাধ দৃশ্যে যাদের হাতের আঙুলের ছাপ পাওয়া যাচ্ছে, তারা একদা বিজেপি বিরোধিতায় সোচ্চার হত। আজ তারা নির্লজ্জের মত এই ভয়ানক সংকোচনের মুহূর্তটির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিচ্ছে।

অমিত শাহ ভারতের মুসলিমদের আশ্বাস দিয়েছেন যে তাঁদের আশঙ্কার কোনও নেই। তিনি এও জানিয়েছেন মুসলিমরা ভারতে নিরাপদেই থাকবেন। ভারতের মুসলিমদের যদি তাঁর কথা বা যে কোনও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এ কথায় বিশ্বাস করতে হয় তাহলে তা ভারতের পক্ষে দঃখজনক দিন। ভারত একটি সাংবিধানিক গণতন্ত্র। একানকার মূল কাঠামোতেই সমস্ত ভারতীয়দের নিরাপদ বৃহত্তর আবাসের নিশ্চয়তা দেওয়া রয়েছে, বিশেষ করে সংখ্যালঘুদের এবং এই কাঠামোটিই মূলত সহনীয় হয়ে থেকেছে।

আইনপ্রণেতাদের উচিত ছিল ২০১৯-এর নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল আটকে দেওয়া, একে পাশ করতে না দেওয়া। এখন সংবিধানের সুরক্ষায় উঠে দাঁড়াতে হবে বিচারবিভাগকে। এ কাজ তারা আগেও করেছে বেশ কয়েকবার। প্রজাতন্ত্রের স্পিরিটকে এবং তার আত্মাকে রক্ষা করার এইই উপায়।

Read the Story in English

bjp Citizenship Bill
Advertisment