সাবস্ক্রাইব
  • প্রতিবেদন
  • পশ্চিমবঙ্গ
  • খেলা
  • Tech-পুর
  • রাশিফল
  • বিনোদন
  • রাজনীতি
  • কী-কেন?
  • সাতকাহন
  • পড়াশোনার খবর
  • ওয়েব গল্প
  • Photos
  • Videos
ad_close_btn
  • খেলা
  • সিনেমা-টিনেমা
  • Photos
  • পশ্চিমবঙ্গ
  • সাতকাহন
  • Tech-পুর
  • Share নিকেতন
  • রাজনীতি
  • Explained
  • কলেজ স্ট্রিট

Powered by :

আপনি সফলভাবে নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করেছেন.
সম্পাদকীয়

করোনাভাইরাস: ব্যক্তি স্বাধীনতা ও জনস্বাস্থ্য

Written by IE Bangla Web Desk
author-image
IE Bangla Web Desk
16 Mar 2020 13:41 IST

Follow Us

New Update
Coronavirus, Covid 19

করোনাভাইরাসের মারণক্ষমতা খুব বেশি না হলেও হাল্কা চালে নেবার অবকাশ নেই (গ্রাফিক্স- অভিজিত বিশ্বাস)

গত সপ্তাহে আমরা বলেছিলাম COVID-19-এর মতো মহামারী থেকে পাওয়া কিছু শিক্ষার কথা। এই প্রেক্ষিতে আলোচনার যোগ্য আরও একটি বিষয় হল ব্যক্তিস্বাধীনতা। আধুনিক সমাজে ব্যক্তিস্বাধীনতা গুরুত্বপূর্ণ একটি দাবি। জনস্বাস্থ্যের সঙ্গে ব্যক্তিস্বাধীনতার সম্পর্ক কীরকম? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে পাঠক হাসবেন কিনা ভেবে যখন দ্বিধান্বিত ছিলাম, তখনই চোখে পড়ল এমন কিছু খবর, যাতে লেখাটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল।

Advertisment

শুরুতেই মনে রাখতে হবে যে জনস্বাস্থ্য এবং ব্যক্তিস্বাধীনতা, দুটোই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অন্তত গণতান্ত্রিক পরিসরে থেকে একটির জন্য আরেকটিকে বলি দিয়ে দেওয়া বা দেবার সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়। দক্ষিণ বা বাম দিকে অতিরিক্ত হেলে পড়লে দৃষ্টিভঙ্গি খানিক বদলে যেতে পারে অবশ্য। ভারতের মতো বেশিরভাগ দেশ বর্তমানে কাগজে কলমে গণতান্ত্রিক হওয়ায় এই দুয়ের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ এবং সেই সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন  আমরা আগেও বহুবার হয়েছি। বর্তমান মহামারী তা নিয়ে কথা বলার সুযোগ দিল।

ময়লা ফেলার মাটি

স্বাধীন আধুনিক মানুষের, বিশেষত তরুণ প্রজন্মের, সবচেয়ে অপছন্দের শব্দবন্ধগুলোর একটা হল "বিধিনিষেধ"। প্রতিষ্ঠান (পরিবার, শিক্ষাঙ্গন, অফিস, সরকার, সমাজ) সর্বদা নানা বিধিনিষেধ চাপিয়ে জীবনকে খর্ব করে। প্রায়শই এসব বিধিনিষেধ গোঁড়ামিতে পর্যবসিত হয় এবং ব্যক্তি মানুষের নাভিশ্বাস উঠে যায়। যেহেতু এসব বিধি ও প্রথা মূলত পুরনো ধ্যানধারণার ভিত্তিতে চলে (বস্তুত চলে না, স্থবির থাকে), তাই প্রাণচঞ্চল তরুণদের সমস্যা হয় সবচেয়ে বেশি। বিধি ভাঙতে চাওয়া তাই তারুণ্যের লক্ষণ। যখন সমাজ তরুণ হয়, তখন তা সামাজিক লক্ষণও বটে। আবার কিছু সমাজ এমনও আছে, যেখানে ধর্মীয় গোঁড়ামি প্রচুর থাকলেও আইন বা সাধারণ সামাজিক নিয়মকানুনকে তোয়াক্কা না করাই রেওয়াজ। এই ধরণের সমাজ তরুণ নয়, নিতান্ত নাবালক। প্রাচীন সভ্যতার উত্তরাধিকার সত্ত্বেও ভারতীয় সমাজ তেমনই এক শিশু-সমাজ।

Advertisment

শিশুরা কথা শোনে ভয় পেয়ে গেলে। শুধু কথাই শোনে না, মায়ের আঁচলের তলায় লুকিয়ে পড়ে। ভাইরাসের আতঙ্ক সেভাবেই আমাদের গ্রাস করেছে। সকলে লুকিয়ে পড়ছেন এবং পাশের মানুষকে ভয় দেখাচ্ছেন। এরকম সময়ে আমাদের দেশে নানা মহৌষধি বেরোয়। ডেঙ্গির সময় ছাগলের দুধ বা পেঁপের রস, করোনায় গোমূত্র। সেসব আজকের আলোচ্য নয়, কিন্তু এসব আসলে বিপদকালে সবার কথাকে গুরুত্ব দেবার এবং সকলের আজ্ঞা পালন করার প্রবণতাকে সূচিত করে।

শিক্ষিত মানুষেরাও নিজেদের মতো করে কথা শুনছেন। মাস্ক এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার কিনছেন সুযোগ পেলেই। এগুলো প্রশংসনীয়, যদিও এসব প্রয়োজনীয় সামগ্রীর অপচয় ও কালোবাজারি বন্ধ হওয়া দরকার। সাবান আর জল দিয়ে অন্তত কুড়ি সেকেণ্ড হাত ধুতে পারলে তা অ্যালকোহলযুক্ত পরিশোধকের চেয়ে বেশি কার্যকরী। মাস্ক ব্যবহার করবেন হাঁচি-কাশিতে আক্রান্ত ব্যক্তি এবং সেরকম রোগীর পরিচর্যায় নিযুক্ত ব্যক্তি। এই নিয়মগুলো মানলে অপচয় রোধ করা সম্ভব এবং যাঁদের সত্যিই প্রয়োজন, তাঁরা জিনিসগুলো পেতে পারেন। আতঙ্কের পরিবেশে এই নিয়মটা সকলে মানবেন, সামনে মাস্ক দেখতে পাওয়ামাত্র তা হস্তগত করবেন না, এতটা আশা করি না, কিন্তু স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় বিধিনিষেধ মানতে অনেকেই এই মুহূর্তে রাজি।

দীনেশ বাজাজকে দাঁড় করিয়ে অযথা বদনামের ঝুঁকি নিল তৃণমূল

ভেবে দেখুন, করোনাভাইরাস শুধু অসুস্থতা আর মৃত্যুভয় (কিছুটা ফাঁপানো, কিন্তু একেবারে অমূলক নয়) নিয়ে আসেনি, সঙ্গে এনেছে বিবিধ নিষেধাজ্ঞা। হাত দিয়েছে স্বাস্থ্যের পাশাপাশি আমার-আপনার স্বাধীনতাতেও। আপনার অবাধ বিচরণের স্বাধীনতা, যেখানে খুশি হাত দেবার, পিক ফেলার, ভিড় বাসে নাক-মুখ আড়াল না করে হাঁচার বা কাশার স্বাধীনতা ইতোমধ্যে খর্ব হতে শুরু করেছে, কদিন পর আরও হবে। বেশিরভাগ শিক্ষিত স্বাধীনচেতা মানুষ এখন পর্যন্ত এই বিধিনিষেধ মেনে নিচ্ছেন। সাধারণ দিনে এক টাকা খুচরো ফেরত পেতে মরিয়া অনেককেই দেখলাম সিনেমার বা প্লেনের টিকিট কাটা থাকা সত্ত্বেও ব্যবহার করতে না পারার জন্য হওয়া লোকসান তীব্র প্রতিবাদ ছাড়াই মেনে নিচ্ছেন। আইপিএল, কনফারেন্স বা অফিসের ট্যুর পিছিয়ে যাবার জন্য কাউকে দুষছেন না। আসলে প্রাণ বাঁচানোর স্বার্থে কিছু নিষেধ মেনে চলার প্রয়োজনীয়তা তাঁরা বুঝছেন। তাত্ত্বিকভাবে ব্যক্তিস্বাধীনতা ব্যাপারটাকে অনেকে আপোষহীন 'অ্যাবসোল্যুট' বলে দাবি করলেও বাস্তব আচরণে তার প্রতিফলন ঘটাচ্ছেন না বেশিরভাগ সুস্থ চিন্তার মানুষ। এটা পরিণত বুদ্ধির পরিচয়। তবে বাস্তবে যা করতে পারছেন না, তা নিয়ে যুক্তিতর্ক করার অধিকার কিন্তু তাঁদের থাকে, বস্তুত থাকা দরকার, কারণ তর্কটুকুও বাদ গেলে ব্যক্তিস্বাধীনতার ভাবনাটাই চাপা পড়ে যাবে। শুধু প্রয়োগের ক্ষেত্রে পরিমিতিবোধটুকু থাকলেই হল।

পরিমিতিবোধ বা নীতিবোধ যে সকলেরই থাকবে, তেমন নেই। বাকস্বাধীনতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে এখনো করোনাভাইরাস নিয়ে বিভ্রান্তিকর গুজব ছড়ানো চলছে এবং তাতে অংশ নিচ্ছেন বহু শহুরে শিক্ষিত মানুষ। তার চেয়েও মারাত্মক ব্যক্তিগত হঠকারিতার দ্বারা গুজবের বদলে স্বয়ং ভাইরাসকেই ছড়িয়ে দেওয়া। বিবাহসূত্রে বেঙ্গালুরুবাসী এক ভদ্রমহিলা ইউরোপে হনিমুনে গিয়ে করোনাভাইরাস শরীরে নিয়ে ফেরেন। বেঙ্গালুরুতে তাঁর স্বামীর রোগলক্ষণ দেখা দেয় এবং শরীরে ভাইরাসটি পাওয়া যায়। ভদ্রমহিলাকেও কোয়ারান্টাইন করার চেষ্টা করা হয়। তিনি সেখান থেকে পালিয়ে প্লেনে দিল্লি যান এবং সেখান থেকে ট্রেনে আগ্রা। পথে কতজনকে তিনি জীবাণু উপহার দিলেন, তা অনুমেয়। আগ্রার স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্মীরা যখন তাঁকে খুঁজতে তাঁর পিত্রালয়ে যান, তখন তাঁর বাবা একজন ইঞ্জিনিয়ার হওয়া সত্ত্বেও স্বাস্থ্যকর্মীদের বিভ্রান্ত করে মেয়েকে লুকিয়ে রাখতে চেষ্টা করেন।

বেঙ্গালুরু শহর শিরোনামে আসে যখন ভারতে করোনাভাইরাস ঘটিত রোগে প্রথম মারা যান কালবুরগীর বাসিন্দা এক বৃদ্ধ। শোনা যাচ্ছে, তাঁর পরিজনেরাও চিকিৎসকদের পরামর্শ অমান্য করে তাঁকে নিয়ে একাধিক শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে ঘোরাঘুরি করেন এবং আইসোলেশন, ইন্টেন্সিভ কেয়ার ইত্যাদির প্রশ্নে হাসপাতালের সঙ্গে অসহযোগিতা করেন। এমন না হলে হয়ত তিনি বাঁচতেন।

আমাদের অভিজ্ঞতাতেও দেখছি যে হাসপাতালে ঢোকার মুখে সকলের হাতে স্যানিটাইজার ঢেলে দেবার সময় অধিকাংশ ব্যক্তি খুশি মনে সহযোগিতা করলেও দু-একজন এতেও বিরক্ত হন। এবার সরকারের নির্দেশমতো সব ভিজিটরকে সর্দিকাশি ও জ্বরের ব্যাপারে প্রশ্ন করা, ইনফ্রারেড থার্মোমিটার দিয়ে দেহের তাপমাত্রা মাপা, প্রয়োজনে মুখোশ সরবরাহ করা এবং রোগীদের নিরাপত্তার স্বার্থে দর্শনার্থীদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা শুরু হচ্ছে হাসপাতালে। এগুলো করতে গিয়ে আরেকটু বেশি প্রতিরোধ ও উষ্মার মুখোমুখি হতে হবে। কিছুদিন পরে সংক্রমণ যদি তৃতীয় (অর্থাৎ এক্সপোনেশিয়াল) পর্বে পৌঁছে যায় এবং রোগটি এদেশেও প্রকৃত মহামারীর আকার নেয়, তখন আরও বেশি কড়া না হয়ে সরকারের গতি থাকবে না। তখনই হবে ভারতীয় নাগরিকদের মানসিকতার প্রকৃত পরীক্ষা। নিয়ম মানতে অনভ্যস্ত একটি জনগোষ্ঠীকে হঠাৎ স্বাস্থ্যের নিয়ম মানাতে গিয়ে সরকারের পরীক্ষাও নেহাৎ কম হবে না৷

শাহিনবাগের দাদিরা লিখছেন ফেমিনিজমের চতুর্থ অধ্যায়

বেঙ্গালুরুর ঘটনাগুলো সম্বন্ধে বেশিরভাগ পাঠকই বলবেন, এমন আচরণ অনভিপ্রেত। আমরাও তাই বলব, কারণ এমন চলতে থাকলে মহামারী ঠেকানো যাবে না। করোনাভাইরাসের মারণক্ষমতা খুব বেশি না হলেও হাল্কা চালে নেবার অবকাশ নেই। ভারতের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকে যদি জীবাণু সংক্রামিত হয়, তাহলে ৩.৪% হারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় দুই কোটি। সুতরাং চিকিৎসক হিসেবে এই মৃত্যু রোখার জন্য সরকারি নির্দেশিকা অনুসারে নিয়মগুলো সকলকেই মেনে চলতে বলব এবং প্রয়োজনে নিয়মগুলো লাগু করার জন্য কোনো হাসপাতাল বা স্বাস্থ্য আধিকারিক পুলিশের সাহায্য নিলে তা সমর্থনও করব।

একথা বলে ফেলার পরমুহূর্তেই কিন্তু ভাবতে হবে, সত্যিই কি এত সহজে এত জোরের সঙ্গে একথা বলা যায়? আমরা যে আচরণকে অনভিপ্রেত বলছি, করোনাভাইরাসের আতঙ্কটুকু না থাকলে কি তা বলতাম? নিজের চিকিৎসা কখন, কোথায়, কীভাবে করাবেন বা চিকিৎসা নিতে অস্বীকার করবেন কিনা, সেই সিদ্ধান্ত নেবার অধিকার তো রোগীর আছে। যেকোনো অপারেশন করার আগে, এমনকি সূচ ঢুকিয়ে ছোট মাপের বায়োপসি করার বা খানিক ঝুঁকিপূর্ণ কোনো ওষুধ দেবার আগেও রোগীর বা তাঁর অভিভাবকের লিখিত অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক। বেসরকারি হাসপাতালে আজকাল সিটি স্ক্যান জাতীয় পরীক্ষা করার আগেও রোগীর বা আত্মীয়ের অনুমতি নেওয়া হয়। তাঁরা অনুমতি না দিলে কাজগুলো স্থগিত থাকে। রোগী যদি স্বেচ্ছায় বন্ডে সই করে হাসপাতাল ছেড়ে চলে যেতে চান, তবে আটকানোর উপায় নেই। ৯৯.৯৯% ক্ষেত্রে নিজের চিকিৎসা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবার অধিকার রোগীর হাতে দেওয়াকে আমি সর্বান্তকরণে সমর্থন করি, তার ফলে বহু বাস্তব অসুবিধা হওয়া সত্ত্বেও। হঠাৎ তার বিপরীত অবস্থান নেওয়া খুব সহজ নয়। এই যে পুলিশের সাহায্য নেওয়াকে সমর্থন করলাম, তাতে নিজেরই আশ্চর্য লাগছে। একদিক থেকে দেখলে রাষ্ট্রকে ব্যক্তিগত পরিসরে ডেকে এনে মানুষের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার কেড়ে নেওয়াকে সমর্থন করে ফেললাম। ব্যক্তিস্বাধীনতার ধারণার একেবারে গোড়ায় আঘাত করা হয়ে যাচ্ছে এভাবে এবং সেটা নিজেও জানি।

সব জেনেও এতবড় দার্শনিক ও রাজনৈতিক অন্যায় করায় সম্মত হলাম ওই দুই কোটি (বিশ্ব জুড়ে আরও কয়েক কোটি) প্রাণ বাঁচানোর জন্যে। বহুজন হিতায়। আসলে স্বাধীনতা শব্দটির অর্থ উচ্ছৃঙ্খলতা নয়, স্ব-অধীনতা (self discipline), তাই স্বাধীনতার সঙ্গে আসে দায়িত্ব। নিজের পাশাপাশি অপরের স্বার্থ ও অধিকার রক্ষায় সাধ্যমতো সচেষ্ট হবার দায়িত্ব। স্বাধীনতা পরিণত মানসিকতা দাবী করে। গণতন্ত্র তাই সাবালক সমাজের উপযুক্ত। নাবালকের হাতে তা তুলে দিলে হয় তাকে নষ্ট করে, নয় হারিয়ে ফেলে। দুইয়েরই ফল হয় মারাত্মক।

আজ করোনাভাইরাস মহামারীর আতঙ্ক থাকায় এসব সিদ্ধান্তে সহজে পৌঁছানো যাচ্ছে। কাল এই আতঙ্ক চলে গেলে আবারও রোগীর আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের দাবিতেই লড়ব। এই দুই পরিস্থিতিতে দুরকম সিদ্ধান্ত নেবার কারণ কী? এ কি মৌলিক নীতির অভাব, নাকি দুয়ের মধ্যেই রয়েছে একটি মূল নীতি? স্বাধীনতা আর দায়িত্ববোধের সংজ্ঞায় ফিরে যেতে হবে। নিজের রোগের ব্যাপারে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নেবার অধিকার আমার হাতে থাকতেই পারে, যদি আমি নিজের সিদ্ধান্তগুলোর দায়ভার নিজে নিতে রাজি থাকি এবং যদি রোগটি সম্পূর্ণভাবে আমার হয়, অর্থাৎ তার দ্বারা অন্য কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। COVID-19 এর মতো সংক্রামক ব্যাধির ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সঙ্গে অসহযোগিতা করলে বাস্তবে গণহত্যায় অংশ নেওয়া হয়। হয়ত আপনি দশজন বৃদ্ধের মধ্যে রোগটি ছড়িয়ে দিলেন, যাঁদের মধ্যে একজন মারা যাবেন। তাঁদের থেকে আরও ছড়াবে রোগ তাঁদের অজান্তেই। সুতরাং এখানে আপনার শরীরে থাকা ভাইরাস আপনার ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয় এবং ভাইরাস বিলি করার অধিকার ব্যক্তিস্বাধীনতার আওতায় পড়ে না, ঠিক যেমন কাউকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করা বা দাঙ্গায় উসকানি দেওয়া বাকস্বাধীনতা নয়।

সরকারের হাতে অতিরিক্ত দায়িত্ব ও ক্ষমতা দিলে জনস্বাস্থ্য রক্ষায় সরকারের আচরণ কিছু ক্ষেত্রে রীতিমতো অগণতান্ত্রিক হতে পারে। যেমন চীনের কিছু আক্রান্ত রোগীদের বাড়ি থেকে বেরোনো আটকাতে বাড়ির দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। উত্তর কোরিয়ায় ঘটেছে হাড় হিম করা ঘটনা। করোনা আক্রান্ত রোগীকে সেখানে গুলি করে মারা হয়েছে বলে খবর, যার সত্যতা সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়া খুবই কঠিন । আবার গণতান্ত্রিক দেশেও রোগের প্রকোপ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে এবং রসদে টান পড়লে সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারে, যা হৃদয়বিদারক। যেমন ইতালির সরকার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন যে রোগীর চাপ অতিরিক্ত বাড়লে আশি বছরের বেশি বয়স্কদের আর ইন্টেন্সিভ কেয়ার ইউনিট বা ভেণ্টিলেটরের সুবিধা দেওয়া হবে না। করোনাভাইরাসের সঙ্গে অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীদের সম্বন্ধেও একই সিদ্ধান্ত। সরকার তাঁদের জন্যই রসদ খরচ করতে চান, যাঁদের বাঁচার সম্ভাবনা বেশি। যাঁরা বঞ্চিত হবেন, তাঁদের অনেককেই হয়ত অসহায়ভাবে মরে যেতে হবে। মৃত্যুর আগে শেষ লড়াইটা তাঁদের তরফে কেউ লড়বে না। এসব নানা কথা মাথায় রেখে ব্যক্তির অধিকারের পক্ষে সওয়াল জারি রাখাও একইভাবে জরুরি, যাতে সমষ্টির চাপে ব্যক্তি একেবারে অদৃশ্য না হয়ে যায়।

করোনাভাইরাস চলে গেলেই এই দ্বন্দ্ব মিটে যাবে, তা ভাববেন না। জনস্বাস্থ্য বনাম ব্যক্তিস্বাধীনতার দ্বন্দ্ব তখনও থাকবে। যক্ষার উদাহরণটাই ধরা যাক। যক্ষা সংক্রামক। মাল্টিড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট (MDR) এবং এক্সটেন্ডেড স্পেক্ট্রাম ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট (XDR, অর্থাৎ MDR-এর চেয়েও বেশি ওষুধের বিরুদ্ধে বেপরোয়া) যক্ষার জীবাণু ভবিষ্যতে যক্ষাকে আবার পুরনো দিনের মতো রাজরোগে পরিণত করতে সক্ষম। তেমন হলে বহু আক্রান্ত রোগীর মেঘে ঢাকা তারা হয়ে আর্ত বিলাপটুকু লুটিয়ে মিলিয়ে যাওয়া ছাড়া কিছু করার থাকবে না। এই সম্ভাবনার কথা জানার পর যক্ষার চিকিৎসায় অবহেলা করার অধিকারকে রোগীর ব্যক্তিস্বাধীনতা বলে স্বীকার করবেন কি? কেউ একমাস সরকার স্বীকৃত আধুনিক চিকিৎসা করে হঠাৎ ঠিক করলেন যে আর এসব ওষুধ খাবেন না, কারণ কেউ তাঁকে বলেছেন যে অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ খারাপ জিনিস। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন যে জলপড়া সেবন বা সমগোত্রীয় কিছু বস্তু বাজার থেকে কিনে ওষুধ হিসেবে খাবেন। তিনি নিজের হৃদরোগের চিকিৎসা এভাবে করলে মনের দুঃখ মনে চেপে রাখা যেত, কিন্তু এক্ষেত্রে তিনি অনেকের মধ্যে জীবাণু ছড়াবেন এবং মাঝপথে চিকিৎসা বন্ধ করার ফলে MDR/XDR জীবাণুদের বাড়তি সাহায্য করবেন। এটা জনস্বাস্থ্যের উপর আঘাত এবং জনস্বার্থের বিরোধী। এই ব্যক্তির সিদ্ধান্ত নেবার স্বাধীনতা আর আশেপাশের অন্য মানুষদের বেঁচে থাকার অধিকার একত্রে রক্ষা করা কঠিন কাজ। দুটোর মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করার দায়িত্ব সরকারের একার হাতে দিলে সরকারের কার্যপ্রণালী অগণতান্ত্রিক হয়ে উঠতে পারে। তাই মানুষের সচেতনতা ও স্বতঃস্ফূর্ত যোগদান গুরুত্বপূর্ণ। না, ভাববেন না যে টিবি হয়নি বলে আপনি আলোচনার বাইরে। দোকান থেকে পছন্দমতো অ্যান্টিবায়োটিক কিনে খেয়ে, ঘনঘন বা অপ্রয়োজনীয় অ্যাণ্টিবায়োটিক খেয়ে বা অর্ধেক কোর্স করে আমরা অনেকেই প্রতিরোধী জীবাণু তৈরি করার কাজে দোষী, যার ফলে অদূর ভবিষ্যতে আমরা হয়ত ফিরে যাব ঊনবিংশ শতাব্দীর অ্যান্টিবায়োটিক-পূর্ব দিনগুলোতে। সংক্রামক ব্যাধিতে মৃত্যু বাড়বে হুহু করে আর কমে যাবে মানুষের গড় আয়ু। একসময় হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরা হয়ত হয়ে দাঁড়াবে চাঁদে যাওয়ার চেয়েও বেশি কঠিন। তার জন্য দায়ী থাকবে আমাদের স্বেচ্ছাচারিতা, যাকে আমরা স্বাধীনতা বলে ভেবেছি।

ব্যক্তি ও সমষ্টির স্বাস্থ্য ও স্বার্থ সুরক্ষিত রাখা এবং কষ্টার্জিত গণতান্ত্রিক পরিসরটিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য গণচেতনার জাগরণ প্রয়োজন। এর বিকল্প নেই।

এই কলামের গুরুত্বপূর্ণ লেখাগুলি পড়তে ক্লিক করুন এই লিংকে

coronavirus Jon O Swasthyo
আমাদের নিউজলেটার সদস্যতা! একচেটিয়া অফার এবং সর্বশেষ খবর পেতে প্রথম হন
logo

সম্পর্কিত প্রবন্ধ
পরবর্তী প্রবন্ধ পড়ুন
সর্বশেষ গল্প
আমাদের নিউজলেটার সদস্যতা! একচেটিয়া অফার এবং সর্বশেষ খবর পেতে প্রথম হন

Powered by


Subscribe to our Newsletter!




Powered by
ভাষা নির্বাচন কর
Bangla

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন

আপনি যদি এই নিবন্ধটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন
তারা পরে আপনাকে ধন্যবাদ জানাবে

ফেসবুক
Twitter
Whatsapp

কপি করা হয়েছে!