মাস্ক নেই, স্যানিটাইজার নেই, হ্যান্ড গ্লাভস নেই। করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের উপকরণই অমিল। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক নির্দেশিকা দিয়েছে, বাড়ির বাইরে বের হলে মাস্ক বাধ্যতামূলক। এখনও পর্যন্ত রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে এমনকী পশ্চিম মেদিনীপুরের নিজামপুরের মত পুরো কোয়ারেন্টাইন গ্রামেও কর্মরত পুলিশ কর্মীরা মুখে রুমাল বেঁধে রয়েছেন। তাঁদের জন্য একটা মাস্কও বরাদ্দ হয়নি। খোদ স্বাস্থ্য দফতরের নার্স ও কর্মীরা বিক্ষোভ দেখিয়েছে। এদিকে ত্রাণ তহবিলের বহর বাড়ছে। লকডাউন দুসপ্তাহ পার হয়ে গেল, এখনও জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্তদের জন্য মাস্ক, স্যানিটাইজার, হ্যান্ড গ্লাভস সরবরাহ করতে পারল না সরকার। সেক্ষেত্রে দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন তো ওঠেই।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করোনা মোকাবিলায় রাস্তায় নেমেছেন অত্যাবশ্যকীয় পণ্য সরবরাহ ঠিক রাখতে। ঘুরেছেন হাসপাতালে হাসপাতালে। তৃণমূল নেতৃত্ব নানা জায়গায় ত্রান বিলি করেছেন। তৃণমূল নেতৃত্ব দাবি করতে থাকে সামনে থেকে করোনা মোকাবিলায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিকে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী ও কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান রেরে করে ওঠেন। তাঁদের বক্তব্য, "এভাবে লকডাউনের সময় খোদ মুখ্যমন্ত্রী নামলে ভুল বার্তা যাবে।" নবান্নে সর্বদলীয় বৈঠকে কংগ্রেস ও সিপিএম অকুন্ঠ সমর্থন করেছিল মুখ্যমন্ত্রীর নানা পদক্ষেপকে। এমনকী নানা প্রস্তাবও দিয়েছেন এই দুই দলের নেতৃত্ব। তাঁদের মুখে শোনা গিয়েছিল এখন এক হয়ে লড়াই করার সময়। যাই হোক সময় যত গড়াচ্ছে করোনা-রাজনীতির ঝাঁঝ তত বাড়ছে।
এরপর বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব অভিযোগ করেছেন তাঁদের ত্রাণ দিতে গেলে বাধা দিচ্ছে পুলিশ। মমতার বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা সাংসদ দিলীপ ঘোষ। তাঁর অভিযোগ, "রেশন দেওয়ার প্রচারই সার।" সঠিক কোন পরিকল্পনা নেই বলে দিলীপবাবু মন্তব্য করেছেন। বিজেপির মহিলা মোর্চার সভানেত্রী তথা হুগলির সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে তীব্র বাক্য সংঘাতে জড়িয়েছেন শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। এরই মাঝে রবিবার রাত ৯টায় ঘরের আলো নিভিয়ে মোমবাতি, মোবাইল বা টর্চ জ্বালাতে আবেদন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দেশের একাংশ তাতে শামিলও হয়েছে। অবশ্য তা নিয়েও সংঘাত চলেছে।
মোদীর এই আবেদনে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে তামাম বিরোধী শিবির। মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া, "আপনার যা মন চায় করবেন, আমি ঘুমাব।" কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরীও তীব্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, "মোমবাতি জ্বালানো নরেন্দ্র মোদির রাজনৈতিক খেলা। এর সঙ্গে করোনা প্রতিরোধের কোনও সম্পর্ক নেই।" করোনা এখন এ দেশে রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত হয়ে গিয়েছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। ২০২১-এ রয়েছে রাজ্য বিধানসভার নির্বাচন।
কিন্তু এখনও কেন করোনা মোকাবিলায় কর্তব্যরতদের প্রয়োজনীয় উপকরণ মিলছে না? গরীব মানুষের প্রত্যহ মুখে অন্ন তুলে দেওয়া নিশ্চিত হচ্ছে না? কেন এত ঘোষণার পর এ রাজ্যে রেশন নিয়ে অভিযোগ উঠছে? কেন পরিযায়ী শ্রমিকদের হাজার হাজার কিলোমিটার হাটতে হয়েছে? কেন রাস্তায় তাঁদের খাবার জোটেনি? অভিজ্ঞ মহলের মতে, এখন রাজনীতি বন্ধ রাখাই শ্রেয়। শুধু মুখের বুলি আউড়ে নয় মানুষের পাশে দাঁড়ানো প্রয়োজন।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন