Advertisment

“চাইনিজ ভাইরাস” আসলে ছড়ালো কে?

আসলে সারা বিশ্ব যেন মনেমনে ধরেই নিয়েছে এটা বায়ো-ওয়েপন। একটা দেশকে খুবলে তুলে মুছে দিতে হবে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে, যার নাম চিন।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Corona virus, Chinese Virus

বেলেঘাটা আই ডি হাসপাতালের দেওয়াল লিখন (ছবি- পার্থ পাল)

“কাশির দমক থামলে কিন্তু বাঁচতে ভালবাসি!” তবে মার্কিন মুলুকে আর কদ্দিন চৈনিক মানুষের এই বাঁচার সুযোগ আসবে সে বড় সংশয়ের প্রশ্ন, নিজের অভিজ্ঞতা থেকে জানালেন একজন মহিলা। আমেরিকাগামী ফ্লাইটে সেই মহিলাকে অন্তর্ভুক্ত করে সেলফি তুলে নিজের বন্ধুকে পাঠিয়ে এক আমেরিকান বলছিলন "প্রে ফর মি"।

Advertisment

আশেপাশে চাইনিজ দেখলেই যেন আতঙ্ক এখন! কারণ একজন মহান মেধাবী করোনা ভাইরাসের নতুন নাম দিয়েছেন “চাইনিজ ভাইরাস”। সেই প্যানিক ছড়িয়ে পড়ছে সমস্ত জাতির মধ্যে, একটু একটু করে। চলছে টিপ্পনি পথেঘাটে। খোদ নিউ ইয়র্ক সিটির রাস্তায় মাস্ক পরিহিত একজন চিনা ব্যক্তি রীতিমতো আক্রান্ত হয়েছেন এবং তাঁকে “ডিজিজড” বলে সম্বোধন করা হয়েছে।

নগর পুড়িলে… করোনার সময়ে আমরা

গাড়ির গায়ে লিখে দেওয়া হচ্ছে গালাগালি । লস এঞ্জেলসে জল খেতে গিয়ে কাশি এসে যাওয়ায় একজন এশিয়ান স্টুডেন্টকে ডাক্তারর কাছে পাঠানো হয়েছে।

এই ইতিহাস নতুন নয়।  ১৮৭০ সাল থেকেই ঠিক এমন করেই চাইনিজদের নোংরা এবং অসুস্থ হিসেবেই ভাবা হয়েছে। চায়না টাউনগুলো যেন আবর্জনাময় নরকের দোসর এমনটাই বিশ্বাস।

একটা “ডেঞ্জারাস স্পিচ” কত গভীর ক্ষত তৈরি করেছে ধীরে ধীরে বুঝতে পারছে আমেরিকার চৈনিক জনগোষ্ঠী । তাদের মুখে থুতু অবদি ছিটে এসেছে এমন ঘটনাও শোনা গেছে হালফিলে। ২০ ট্রিলিয়ন ডলারের খেসারতের দাবী নিয়ে চিনের বিরুদ্ধে কেস ঠুকেছে আমেরিকার আইনজীবীরা।

আসলে সারা বিশ্ব যেন মনেমনে ধরেই নিয়েছে এটা বায়ো-ওয়েপন। একটা দেশকে খুবলে তুলে মুছে দিতে হবে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে, যার নাম চিন। রীতিমতো ভাইরাল সব মেসেজ ঘুরছে মোবাইলে, ফেসবুকে।

২১ দিনে হবে না, বলছে বাঙালি বিজ্ঞানীর আন্তর্জাতিক গবেষণা

সব দাবি, সব অভিযোগ যদি প্রমাণের আগেই ধরেওনি সত্যি বলে, তবুও আমরা কি এই করোনা ভাইরাসের আক্রমণ থেকে এখনো কিছুই শিখলামনা? বুঝলামনা যে লড়াই, তর্ক, যুদ্ধ এইসব নিয়ে ব্যস্ত থাকতে থাকতে স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা এত অবহেলিত রয়ে গেছে আজ কেবল ভয় পাওয়া ছাড়া আর কিচ্ছু করার নেই? প্রাণপণে ঘরে লুকিয়ে থাকা শুধু। মোকাবিলা করার ক্ষমতা তো সীমিত ভীষণ। দুর্যোগে গরীব লোকগুলো না খেতে পেয়ে এমনিতেই মরে যাবে, অর্থনৈতিক মন্দায় কত বিত্তবান নেমে এসে দাঁড়াবে পথে সেসব প্রাণঘাতী সমস্যা সামনে ফেলে এখনো  খেয়োখেয়ি, কাদা ঘাটা শেষ হলনা আমাদের। সবকিছু মিটে যাওয়ার পর অন্যকিছু নিয়ে ভাবলে, কৈফিয়ত চাইলে কি এমন ক্ষতি হয়ে যেত জানিনা!

আমাদের তো আসলে ধৈর্য নেই। সহিষ্ণুতা নেই। তাই একটা আকাশচুম্বী সমস্যার পাঁকে ডুবতে ডুবতে নতুন সমস্যা বুনে দিয়ে যাচ্ছি পৃথিবীর বুকে। সূচনা করছি দেশে দেশে থাকা সমস্ত চৈনিক মানুষের প্রতি অকারণ বিদ্বেষমূলক আচরণ। যারা নিজেদের দেশ ছেড়ে অন্য কোথাও শিকড় গেড়েছে, সেখান থেকে তাদের উত্খাত করার আবহাওয়া এখন। যে চাইনিজ ছেলেটি হাই স্কুলে মার খেয়েছে কেবল চাইনিজ বলে সে কিন্তু আদ্যপান্ত আমেরিকান। আমার চিনা গাইডের মেয়েটি যেমন চিনা ভাষা বলতেই পারেনা কারণ তার জন্মকর্ম সবই মার্কিনি মুলুকে।  প্রকৃতির একটা সপাট চড়েও আমরা শুধরে যাইনি এখনো। আরো খুনোখুনি করব। আরো দ্বেষ, ঘেন্না, দূরত্ব ছড়িয়ে দেব। একলা ঘরে বসে দমবন্ধ হয়ে গিয়েও কোন চেতনা উদয় হয়নি কারো। একজোট হয়ে প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে শিখলাম না। এখনো দলাদলি। এখনো বিভেদ। বৃথা চেষ্টা করছেন সব ডাক্তাররা, এমার্জেন্সি সার্ভিসের লোকেরা  প্রাণ হাতে নিয়ে।

“মানুষ বড় সস্তা কেটে ছড়িয়ে দিলেই পারত”।

(ঋতুপর্ণা ভট্টাচার্য আমেরিকার নিউ জার্সির বাসিন্দা, পারডিউ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন পোস্ট ডক্টরাল ফেলো)

coronavirus
Advertisment