Advertisment

দেবেশ রায়ের কলম: নিরাজনীতি (দ্বিতীয় পর্ব)

বিজেপির কোনো স্থায়ী ও নির্ভরযোগ্য সঙ্গী পার্টি নেই। সবচেয়ে কাছের যে শিবসেনা তারা রাজ্যে ও কেন্দ্রে সরকারের ভিতরে থেকেই বিজেপি সরকারের কড়া সমালোচক। ২০১৯-এর ভোটের আগেই বিজেপি নিঃসঙ্গ।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

অলংকরণ- অরিত্র দে

(সাহিত্যিক-সমাজবেত্তা দেবেশ রায়ের কলম শুরু হয়েছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলায়। এ লেখায় তাঁর বানানবিধি একেবারেই নিজস্ব, তাঁর মতামতের মতোই।)

Advertisment

জরুরি অবস্থা ঘোষণার ৪৩তম বর্ষপালন উপলক্ষে বিজেপির মুম্বাই শাখা আহুত সভায় প্রধানমন্ত্রীর পদাধিকার বলে বিজেপির একচ্ছত্র নেতা নরেন্দ্র মোদী আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে বিজেপি-র প্রধান শ্লোগান ঘোষণা করে দিলেন - এটা ধরে নেয়া যায়। তাঁর একমাত্র লক্ষ কংগ্রেস ও কংগ্রেস বলতে তিনি বুঝিয়েছেন জরুরি অবস্থা ও সঞ্জয় গান্ধীর উত্থান। সঞ্জয় গান্ধীর উত্থানকে তিনি পরিবারতন্ত্রের সবচেয়ে বড় উদাহরণ হিশেবে উপস্থাপন করেছেন।

একই সময়ে ব্লগে অরুণ জেটলি বিভিন্ন পার্টির বিজেপি-বিরোধী জোটের সম্ভাবনার আরতা প্রমাণের জন্য সোস্যালিটদের সঙ্গে কংগ্রেসের পুরনো বিরোধের কথা - বিশ শতকের চল্লিশ দশকের কথা - তুলেছেন। কমিউনিস্ট পার্টিগুলির সঙ্গে কংগ্রেসের সম্পর্কের কথাও তুলেছেন।

এই সব তর্কাতর্কিতে ভুল তথ্যের নির্বাধ প্রয়োগ ঘটে থাকে ও ঘটছেও। সে-কথা পরে। কিন্তু সাধারণ নির্বাচনের জন্য এই লক্ষ নির্ধারণ করে বিজেপি বুঝিয়ে ফেলল - তারা ভয় পেয়েছে ও বিজেপি-বিরোধী জাতীয় জোটের সম্ভাবনা তারাই অনেকটা নিশ্চিত করে দিচ্ছে। ইতিমধ্যে জম্মুকাশ্মীরে সেনাবাহিনীকে পূর্ণ ক্ষমতা দিয়েও ২৬জন ঘোষিত উগ্রপন্থীর নামের তালিকা ঘোষণা করে ভারতীয় নাগরিকদের ওপর ভারতীয় সেনাবাহিনীকে নিয়োগ করা হয়েছে। আর, নীতীশ লালুকে ফোন করেছেন। জম্মু-কাশ্মীর ভারতের মুসলিম-প্রধান একটি রাজ্য। এমন ভয় অকারণ নাও হতে পারে - পাকিস্তানের জঙ্গিদের কোনো প্ররোচনায় কাশ্মীরে অমিত সাহের ধর্মের ভিত্তিতে মেরুকরণের প্রক্রিয়া সামরিক সংঘর্ষের আকার নেবে ও সেই উপলক্ষটাকে হিন্দু জাতীয়তাবাদ বৃহত্তর ভারতের সাধারণ নির্বাচনে হিন্দুভোট এককাট্টা করার কাজে আসবে।

এমন একটা হিশেবের প্রধান ভুল এই জায়গায় যে ভারতের বেশির ভাগ রাজ্যে আঞ্চলিক দলেরই প্রাধান্য। তার কারণ খুব সোজা। আঞ্চলিক দলের জোরে অঞ্চলের মধ্যে যে অভ্যন্তরীণ আরো ছোট ছোট অঞ্চল আছে, সেই সব উপ-অঞ্চলের নানা রকম ছোটখাটো দীর্ঘস্থায়ী দাবি আদায় করা সহজ। বিজেপি কিছু রাজ্যে এই আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গে ঘোঁট পাকিয়ে সরকার তৈরি করেছে। উদ্দেশ্য এটা জাহির করা যে তারাই দেশের সবচেয়ে বেশি রাজ্যের ‘সেলাম সরকার’।

আরও পড়ুন, দেবেশ রায়ের কলম: নিরাজনীতি

আসলে তো এই সরকারগুলির ঘোঁট ফাঁকা। বিজেপি-বিরোধী জাতীয় জোট তৈরি হলে এই ঘোঁটগুলি ভিতর থেকে ভাঙতে শুরু করে। বিজেপি-বিরোধী জোটের একজনমাত্র প্রার্থী - এই নীতি স্বীকৃত হলে সেই প্রার্থী হওয়ার জন্য এই ঘোঁটগুলি ভেঙে যাবে।

বিজেপি জোট করে ও উত্তরপ্রদেশে দাঙ্গা বাধিয়ে কেন্দ্রে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল। সে সংখ্যাগরিষ্ঠতা চার বছরেই ভেঙে গেছে। রাজ্যসভায় কখনোই বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠ হতে পারে নি। বিজেপির কোনো স্থায়ী ও নির্ভরযোগ্য সঙ্গী পার্টি নেই। সবচেয়ে কাছের যে শিবসেনা তারা রাজ্যে ও কেন্দ্রে সরকারের ভিতরে থেকেই বিজেপি সরকারের কড়া সমালোচক। ২০১৯-এর ভোটের আগেই বিজেপি নিঃসঙ্গ। অথচ সে নিঃসঙ্গতা তাকে ভারতব্যাপী জাতীয় পার্টির মর্যাদা দিচ্ছে না।

সেই কারণেই নরেন্দ্র মোদী জরুরি অবস্থার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছেন - পঞ্চতন্ত্রের সেই বাঘ আর ছাগলের গল্প বলে। ভুলে যেও না - ঐ বাঘের গুহায় ছাগলের ঢোকার পায়ের ছাপ আছে, বেরবার পায়ের ছাপ নেই। কংগ্রেস একটা পরিবার। সেই পরিবারতন্ত্র তোমাদের জ্যান্ত খাবে।

এই গল্প শুনছে যারা, তারা ঠিক উল্টোটা ভাবছে। এই গলা যত ছড়াবে, তারা তত উল্টো ভাববে।

‘আরে, ইন্দিরা গান্ধীকর তো তাও জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে হয়েছিল, তোমার তো তেমন ঘোষণারও দরকার পড়ছে না। জরুরি অবস্থা ছাড়াই যদি তোমার রাজত্বের গুপ্ত হিন্দু সন্ত্রাসবাদী দল গুলি করে গৌরী লঙ্কেশদের মত তিনজনকে খুন করতে পারে, ও আরো খুনের জন্য তৈরি হতে পারে (তোমারই পুলিশ রিপোর্ট অনুযায়ী), মানুষকে খুঁচিয়ে মেরে তার ভিডিও ছড়াতে পারে, তা হলে তোমাকে ফিরিয়ে আনলে তুমি তো রাতারাতি সংবিধান সংশোধন করে একধর্ম-একজাতি-একনেতা কায়েম করবে। ইন্দিরা গান্ধী না-হয় তার ছেলের জন্য পরিবারতন্ত্র করেছিল। তোমার তো পরিবারও নেই - তোমার তো এক তুমি আছো। তুমি তো তাহলে একতন্ত্র বানাবে। দোহাই ঠাকুর। প্রবাদ আছে না, একা মানুষ, একা হাতি আর একা আগুনকে বিশ্বাস নেই।’

একেই বলছি - নিরাজনীতি। রাজনীতি যখন নিজের ক্ষেতের আল ভেঙে ফেলে। এ নৈরাজ্যবাদের এক উল্টো প্রয়োগ। যা বলে, তার মানে উল্টে যায়।

Debes Ray Nirajniti
Advertisment