Advertisment

দিল্লির অন্ধকার: আমাদের শাসকরা নির্মমতা, বিভাজন, ভয় আর হিংসা ভরা রাষ্ট্র চান

সরকার চাইছে এই বিক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে সংখ্যাগুরুর ভাবাবেগকে সংহত করতে- দেখো, সংখ্যালঘুরা রাস্তা আটকে রেখেছে, হিন্দুদের অধিকারের পথ রোধ করেছে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
delhi, দিল্লি, দিল্লির খবর, delhi news, দিল্লিতে হিংসা, দিল্লিতে অশান্তি, দিল্লি হিংসা, delhi violence latest news, delhi news live, দিল্লি, দিল্লির সব খবর, দিল্লি হিংসা আপডেট, delhi news live today, violence in delhi today, caa, caa protest, caa protest today, caa protest latest news, দিল্লিতে সিএএ বিক্ষোভ, delhi caa protest, caa latest news, delhi caa protest, violence in delhi, দিল্লিতে হিংসার ঘটনায় মৃত্যু, violence in delhi today, violence in delhi today latest news, delhi violence today, maujpur delhi, maujpur delhi latest news, jaffrabad news, jaffrabad news latest news

দিল্লিতে মৃত্যুমিছিল অব্যাহত। ছবি: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

ভারত ভয় আর হতাশার আবহ চলেছে। দিল্লির সাম্প্রতিকতম দাঙ্গা কোনও কৌশলগত সমস্যা নয়। এই পরিস্থিতি দীর্ঘদিন ধরে তৈরি হচ্ছে, শাসক দল আমাদের সহায়তা ও সমর্থনে ভবিষ্যতের প্রতিনিধিত্ব করছে। এরা আমাদের জানা ভারতীয় প্রজাতন্ত্রে কার্পেট বম্বিং করতে চায়, তার জায়গায় এমন একটা জমানা নিয়ে আসতে চায় যা নির্মমতা, শঙ্কা, বিভাজন ও সন্ত্রাস নির্ভর। এমনকি বদলার রাজনীতি শুরু হয়ে যাবার পরেও এইমুহূর্তের বাস্তবতাকে বিস্মরণে না পাঠানো প্রয়োজন।

Advertisment

শুরু থেকে স্পষ্ট , যে সিএএ-র বিষয়টা প্রতিবেশী রাজ্যগুলির অমুসলিম শরণার্থীদের সমস্যা সমাধানের জন্য নয়।  সে উদ্দেশ্য সাধনের জন্য এমন বিল আনা যেতে পারত যেখানে ধর্মের ভিত্তিতে বৈষম্য করা হত না এবং সম্ভাব্য নাগরিকত্বের জন্য ধর্মীয় পরিচয়কে জুড়ে দেওয়া হত না। এনআরসির সঙ্গে সিএএ ও এনপিআরের যোগাযোগ না থাকার কথা একবারও বিশ্বাসযোগ্যতার সঙ্গে উচ্চারিত হয়নি। ডিটেনশন ক্যাম্পের ভূতকে অবজ্ঞা করা যাচ্ছে না। বিক্ষোভ ও হিংসা কমানো তখনও সম্ভব ছিল, এখনও সম্ভব। শুধু সরকারকে এমন আইনের বিষয়ে অঙ্গীকার করতে হবে যে আইন বৈষম্যমূলক নয়, এবং এমন একটা পদ্ধতি য়েখানে ভারতের কোনও বাসিন্দা ঝুঁকি বোধ করবেন না। সরকারের প্রত্যাখ্যানের ফলে সংখ্যালঘুরা লাঞ্ছনাবোধ করছেন এবং ইস্যুটা জ্বলন্ত হয়ে থাকছে।

সুপ্রিম কোর্ট নির্মমতম আঘাতটা করেছে। হেবিয়াস কর্পাসের মত ন্যূনতম অধিকারকে প্রত্যাখ্যান করার স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়ে আদালত সংবিধানকে বরবাদ করে দিয়েছে, যে সংবিধান আমাদের আবদ্ধ রাখে। প্রায় প্রতিটি ইস্যুতে সরকারের পাশে দাঁড়িয়ে, বৈষম্যের মত মৌলিক বিষয়ে শুনানি পিছিয়ে দিয়ে, সাংবিধানিক ন্যায়বাচক ফয়সালার আশা চূর্ণ বিচূর্ণ করে দেওয়া হয়েছে। নাগরিকদের অন্য ধরনের অহিংস বিক্ষোভের পথ নিতেই হয়েছে।

এই অহিংস নাগরিক বিক্ষোভ, যার নেতৃত্বে রয়েছেন মহিলা, সংখ্যালঘু ও ছাত্রছাত্রীরা সাংবিধানিকতা ও অহিংসার ব্যাকরণে নিজেদের আটকে রেখেছেন। ক্রমাগত উসকানি দেওয়া চলছে এবং এটাও ঘটনা যে ভারতে বিক্ষোভ চালানো আইনগত ভাবে অতীব অসুবিধাজনক। দীর্ঘমেয়াদি বিক্ষোভের সঙ্গে আলোচনা না চালালে হিংসাত্মক শক্তিদের সে আন্দোলনের দখল নেবার সম্ভাবনা থাকে। সরকারও চাইছে তেমনটাই ঘটুক।

সবচেয়ে নির্মমতা রয়েছে সরকারের কৌশলে। দিল্লিতে, শাহিনবাগে বিক্ষোভ জারি রাখতে দেওয়া হয়েছে তার কারণ এই নয় যে সরকার এ ব্যাপারে নরম। সরকার চাইছে এই বিক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে সংখ্যাগুরুর ভাবাবেগকে সংহত করতে- দেখো, সংখ্যালঘুরা রাস্তা আটকে রেখেছে, হিন্দুদের অধিকারের পথ রোধ করেছে। দিল্লি ভোটের সময়ে বিজেপির বিষাক্ত প্রচার ছিল ক্যাচ ২২-এর ক্ল্যাসিক উদাহরণ। প্রথমে বৈষম্য করব। তারপর নিশ্চিত করব যেন কোনও প্রাতিষ্ঠানিক নালিশের অবকাশ না থাকে। যদি বিক্ষোভ চলে, তাহলে তাকে সংখ্যালঘু, বুদ্ধিজীবী ও অন্যান্য দেশদ্রোহীদের বিশ্বাসঘাতকতা বলে প্রচার করব। বিজেপি নেতারা এরপর হিংসার ডাক দেবেন, হিংসা যখন শুরু হবে তখন আমরা ওদেরকে হিংসার জন্য দায়ী করব।

ইতিমধ্যে অন্য প্রতিষ্ঠানগুলিও ফেল করেছে। ঘটনাস্থল থেকে রিপোর্ট পাঠানোর জন্য আমাদের কত সাহসী রিপোর্টাররা তাঁদের জীবন বাজি রেখেছেন। কিন্তু সংবাদমাধ্যমের প্রতিষ্ঠান সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা সম্ভবত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভয়ে এতই ভীত যে মৌলিক প্রশ্নগুলিই করে উঠতে পারছে না। বিরোধী দলগুলি এমন ব্যবহার করছে যেন তারা চোখে হেডলাইট পড়া হরিণ। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী রাজঘাটে ফোটো অপ করছেন, বাকি বিরোধীরা টুইটে মন দিয়েছেন।

এই প্রথমবার স্বাধীন ভারতের সংখ্যালঘুরা নির্বাচনী কোনও শক্তির দিকে মুখ ফেরাতে পারবেন না, যাঁরা তাঁদের সুরক্ষা দিতে পারবেন। এ ধরনের গভীর রাজনৈতিক শূন্যতা ভরাট হবে এমন কোনও শক্তি দ্বারা যা আমাদের পক্ষে অননুমেয়।

জাতীয় সংগীত যখন গাওয়া হচ্ছে, তখন বর্বরোচিত হামলা হচ্ছে, মসজিদগুলি দখল করা হচ্ছে। আমার বর্বরতায় ফিরে গিয়েছি। জনতা যখন নাগরিক লড়াইয়ে শামিল হবার কথা বলছে, তখন ভয় দেখানো হচ্ছে তাদের নগ্ন করে দেবার। সাধারণ মানবতার সমস্ত সভ্যতা থেকেই নগ্ন করে দেওয়া এর উদ্দেশ্য, যথন একমাত্র সেই পরিচয়ই বজায় থাকবে যে পরিচয় শরীরে খোদাই হয়ে রয়েছে।

এই বর্বরতার নৈতিক প্রতিরোধও ক্ষীণ। পুলিশও তাদের প্রভুর এই খেলায় শিকার। সন্দেহ নেই যে এ হিংসা রাষ্ট্র চাইলে অনেক আগেই শেষ করে দিতে পারত।

দিল্লির সন্ত্রাস আশা করি স্তব্ধ হবে, কিন্তু এটা একটা বৃহত্তর শৃহ্খলেরই অঙ্গ। দাঙ্গা সম্পর্কিত লেখাপত্র পড়লে বোঝা যাবে দিল্লির দাঙ্গা আসলে এক সুসংগঠিত হত্যাকাণ্ডের ধরতাই, বা অন্তত পক্ষে ঘেটো তৈরির। রাষ্ট্র ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য তৈরি, এবং তারা ঝাঁপিয়ে পড়তে চায় একটি সম্প্রদায়ের উপর, তাদের ব্যবসার উপর, পুলিশ ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান এ সন্ত্রাসের দর্শকমাত্র।

সরকার এখনও একটি সঠিক কাজ করতে পারে- আইন শৃ্ঙ্খলা সুনিশ্চিত করা এবং যে উদ্বেগ তারা তৈরি করেছে, তা নিয়ে কতা বলা। ভারতকে এই বর্বরতার বিরুদ্ধে সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতেই হবে। নাহলে আমাদের প্রজাতন্ত্র আমাদের শাসকরা যেমনটা চায়, তেমনটাই হয়ে উঠবে- মৃতদের হাড়গোড় রাখবার এক আবাসভূমি, যেখানে পচে যাওয়া নৈতিকতাদের বাস, এমন একটা দেশ যাকে পরিমাপ করা যায় তার নিজস্ব নির্মমতার ক্ষমতা দিয়ে।

Advertisment