Advertisment

কোন পথে হাঁটছে ভারতের গণতন্ত্র?

২০১৭ সালে পিউ গ্লোবাল অ্যাটিচুউড সমীক্ষা হয়। এই সমীক্ষা থেকে জানা যাচ্ছে, শতকরা ৫৫ ভাগ ভারতীয় মনে করছেন, ভারতের সমস্যা দূর করার জন্য প্রয়োজন একজন শক্তিশালী নেতার, যিনি নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নেবেন। 

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
india democracy

ভারত কি নিঃশব্দে, এক-ব্যক্তিনির্ভর প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রের পথে হাঁটছে?

ভারতে গণতন্ত্রর চরিত্র কি দ্রুত বদলাচ্ছে? ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম। সে স্বাধীনতায় দেশভাগের যন্ত্রণা ছিল, তবুও আমরা ব্রিটিশ শাসকদের বিতাড়িত করে স্বাধীন সার্বভৌম এক রাষ্ট্র গঠন করেছিলাম। ভারত তার নিজের সংবিধান রচনা করল। তারপর ৭০ বছর ধরে গণতন্ত্রের এক দীর্ঘ পথচলা। প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ভারতীয় সংবিধানের সংশোধন করে ভারতকে সমাজতান্ত্রিক এবং ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ঘোষণা করেন। সেই সংবিধানের অভিমুখে কোন নাটকীয় পরিবর্তন হয় নি।

Advertisment

কিন্তু ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতাসীন হওয়ার পর এই ছয় বছরে ভারতীয় গণতন্ত্রের চরিত্রে এক প্রকৃতিগত রূপান্তর চোখে পড়ছে। এতদিন গণতন্ত্র মানেই আমরা জানতাম উদারবাদ। সেই অ্যাডাম স্মিথ -এর লেসি ফেয়ার অর্থনীতি, অর্থাৎ অবাধ বাণিজ্য নীতির সঙ্গে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ বিকশিত হয় পশ্চিমি দুনিয়ায়। আমরা পুঁজিবাদের বিকাশের সঙ্গে এই উদার গণতন্ত্রের বারবার সংযোগ স্থাপন করে এসেছি।

তবে শুধু ভারত নয়, শুধু নরেন্দ্র মোদী বলে নয়, গোটা দুনিয়া জুড়েই গণতন্ত্রের ধারণায় এসেছে এক ব্যাপক পরিবর্তন। ২০১৭ সালে পিউ গ্লোবাল অ্যাটিচুউড সমীক্ষা হয়। এই সমীক্ষা থেকে জানা যাচ্ছে, শতকরা ৫৫ ভাগ ভারতীয় মনে করছেন, ভারতের সমস্যা দূর করার জন্য প্রয়োজন একজন শক্তিশালী নেতার, যিনি নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নেবেন। সংসদ এবং আদালত এই নেতাকে পদে পদে সিদ্ধান্ত নিতে বাধা দেবে না। আবার শতকরা ৫৩ ভাগ ভারতীয় মনে করেন যে সামরিক শাসন দেশের জন্য ভালো। এমনটা কিছুদিন আগেও আমরা ভাবতে পারতাম না।

আসলে উদারবাদী গণতন্ত্রের পরীক্ষা-নিরীক্ষা দীর্ঘদিন ধরে হওয়ার পর দেখা যাচ্ছে,  আজও ভারতীয় গণতন্ত্র খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছে। এত বছর পরও ভারতে আর্থ-সামাজিক বৈষম্য বেড়েছে বই কমেনি।  মানবাধিকার রক্ষা করতে গিয়ে সন্ত্রাস বেড়েছে দেশের নানা প্রান্তে। কাশ্মীর থেকে উত্তর-পূর্বাঞ্চল, সর্বত্র নাশকতামুলক কাজকর্ম বাড়ছে বই কমছে না। এ অবস্থায় নরেন্দ্র মোদী কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা অবলুপ্ত করার মতো এক জবরদস্ত সিদ্ধান্ত নিলেন। গোটা দেশজুড়ে এর প্রতিবাদ কোথায়? বিরোধী দলগুলো এখনও কেন এ ব্যাপারে সোচ্চার হতে পারল না?

সমীক্ষা বলছে, বেশিরভাগ ভারতীয়, দেশের নানা প্রান্তে বসবাসকারী, মনে করছেন কাশ্মীরে নাগরিক অধিকার সাময়িকভাবে ‘সাসপেন্ড’ করে দেওয়াটা কাশ্মীর সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য জরুরী। ভারতের কাশ্মীর সীমান্ত তথা উত্তর সীমান্তকে নিরাপদ করতে, এবং নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা রক্ষা করতে, এই সিদ্ধান্ত বিশেষভাবে জরুরি। এই যে মোবাইল ফোনের সংযোগ কিছুদিনের জন্য বন্ধ করে রাখা হলো, তা নিরাপত্তার জন্য 'স্মল প্রাইস'। গোটা দেশের মানুষ এই মূল্যটুকু দিতে প্রস্তুত।

আসলে গণতন্ত্র ক্রমশ পরোক্ষ থেকে প্রত্যক্ষ হয়ে ওঠার প্রক্রিয়া। মানুষ মনে করছেন, নানান নাগরিক জাতীয় এবং স্থানীয় বিষয়ে তাঁরা সরাসরি সিদ্ধান্ত নেবেন, একেই বলা যায় প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রের প্রবণতা। আসলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যেরকম রাষ্ট্রপতি শাসনের মডেল, পৃথিবীর আরও বেশ কিছু দেশে আছে, ভারত কি ধীরে ধীরে, নিঃশব্দে, সেরকম এক-ব্যক্তিনির্ভর প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রের পথে হাঁটছে?

গণতন্ত্র যখন ভিড়ের শাসনে পরিণত হয়, মানে যাকে বলা হয় মবোক্রেসি, তখন মানুষ সেই গণতন্ত্রের মডেল সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। দেখা যায়, গণতন্ত্রের নামাবলীতে আসলে রাজ্যে তৈরি হচ্ছে দলতন্ত্র। আবার দলতন্ত্র নামে শাসকদলের এক অভিজাততন্ত্র। কোনও একটা সিদ্ধান্ত নিতে গেলেই সংসদে বিরোধীরা তার বিরোধিতা করে ভোটের রাজনীতির ফায়দা নিতে চায়। তাই রিটেল ব্যবসায় কংগ্রেস যখন বিলগ্নীকরণ করে, কংগ্রেস শাসক দল হিসেবে যখন জিএসটির কথা বলেছিল, তখন বিজেপি তার বিরোধিতা করে। আবার বিজেপি শাসক দল হিসেবে ক্ষমতাসীন হয়ে জিএসটি থেকে রিটেল ব্যবসার বিলগ্নীকরণ করার উদ্যোগ নেয়। যেমন জমি অধিগ্রহণ বিল। সেই ট্রাডিশন সমানে চলেছে।

গোটা পৃথিবী জুড়েই অবশ্য গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। ডেভিড র‍্যাঞ্চম্যানের (David Ranchman) ‘How Democracy Ends’ নামক বইটি অধুনা খুব জনপ্রিয় হয়েছে। এই বইতে তিনি অবশ্য উদারবাদী সাবেকি গণতন্ত্রের পক্ষেই সওয়াল করেছেন। তাঁর শঙ্কা, গোটা দুনিয়া জুড়ে আব্রাহাম লিংকনের সেই গণতন্ত্র আজ ধুলোয় লুণ্ঠিত। কিন্তু একটা জিনিস তিনি দেখেছেন, আসলে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলিতে অগণতান্ত্রিক মৌরসী পাট্টা।

narendra modi
Advertisment