ভারতীয় গরুর কুঁজে সোনা আছে। তাই গরুর দুধের রঙ হলুদ। ভারতীয় জনতা পার্টির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের এই বক্তব্য নিয়ে শুধু রাজনৈতিক মহল নয় সাধারণ মানুষের মধ্যেও চর্চা অব্যাহত। সোশ্যাল সাইটগুলোতে এই নিয়ে একের পর এক মিম ছড়িয়ে পড়েছে। গরুতে সোনা আছে বলে পোল্যান্ডের একটি গবেষণা রিপোর্ট দেখে কেউ প্রমাণ করতে তৎপর সত্যি গরুর দুধের সোনা রয়েছে। কিন্তু কেন এই ধরনের কথা বলেন দিলীপ ঘোষ। এমনকি যারা রাস্তায় দাঁড়িয়ে গরুর মাংস খেয়েছে তারা কুকুরের মাংস খান বলেও বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন দিলীপবাবু। তাতেও তোলপাড় হয়েছে বাংলা।
এই ধরনের বিতর্কিত মন্তব্য হামেশাই করেন মেদিনীপুরের সাংসদ। কেন এমন মন্তব্য করেন তার ব্যাখ্যাও তিনি এর আগে দিয়েছেন। এমনকি মাঝেমধ্যে হুমকিও দেন বিরোধী দলের উদ্দেশে। নিজেই জবাব দিয়েছেন এসব না বললে তিনি এত তাড়াতাড়ি লাইমলাইটে আসতে পারতেন না। তবুও কিন্তু বঙ্গ রাজনীতি তার যে কোন কথাতেই তোলপাড় হয়ে যায়। তিনি বলে বলে গুগলি দিচ্ছেন। স্মৃতিভ্রংশ বাঙালি তবু তাঁর বক্তৃতা নিয়ে সময় ব্যয় করছেন।
আরও পড়ুন কুকুরের মাংস খান, শ্লেষ দিলীপ ঘোষের
দিলীপবাবুর কথা সাধারণ মানুষ এত ভাবেন যে নিজেদের সমস্যা নিয়ে কিন্তু ভাবার আর কারোর সময় থাকে না। অনেকেই বলবেন সাংসদ মানেই দায়িত্বশীল। তা অবশ্যই ঠিক। তবে তিনি যে এখন পোড়খাওয়া রাজনীতিক হয়ে উঠেছেন এটাও মনে রাখা দরকার। ওয়াকিবহাল মহল মনে করে, বিজেপির মত দলে যে ভাবে এই রাজ্যে নিজের আধিপত্য কায়েম করে রেখেছেন দিলীপ ঘোষ তা সহজ কথা নয়। তিনি সংঘের লোক হলেও বঙ্গ রাজনীতিতে নিজেকে ভালই খাপ খাইয়ে নিয়েছেন। দিলীপ ঘোষ সরাসরি রাজ্য রাজনীতিতে এসেছেন খুব বেশি দিন হয়নি। তাঁর থেকে অনেক পোড়খাওয়া রাজনীতিক রয়েছেন বঙ্গ বিজেপিতে।
কেন্দ্রীয় সরকার ব্যাংকিং ক্ষেত্রে যে নীতি নিয়ে চলেছে তাতে সাধারণ মানষ বেজায় দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা তুলে নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। যা সাধারণ মানুষের স্বার্থের পরিপন্থী। সেই সব নিয়ে ভাবনার সময় পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ। তাঁরা কিন্তু দিলীপবাবুর বক্তব্য নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত। ভারতের টাকা ও বাংলাদেশের টাকার মূল্য মান এখন প্রায় কাছাকাছি রয়েছে। সর্বভারতীয় জিডিপির অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। অর্থনৈতিক দিক থেকে ভারতের হাল তলানিতে গিয়েছে। না এসব নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই। নোট বাতিল কিন্তু অর্থনীতির কাজে আসেনি। আলোচনা চলছে দিলীপবাবুর বক্তব্য নিয়ে।
আরও পড়ুন গরুর দুধে সোনা আছে, বিজ্ঞান না বুঝেই সমালোচনা হচ্ছে: দিলীপ
বিদ্বজনেদের একাংশ বলছেন, দিলীপবাবুর বোধহয় কোনো বোধশক্তি নেই। তিনি কিছু জানেন না। রাজনৈতিক মহলের মতে, আজকের রাজনীতিতে এসব বক্তব্যই মূল্যবান। বিতর্কিত কথা আলোচনা করে সময় নষ্ট করলে আখেরে লাভ কিন্তু গেরুয়া শিবিরের। প্রথমত এসব নিয়ে আলোচনা করলে দেশের যে মূল সমস্যা তা কারও মাথায় থাকছে না। যেসব বক্তব্য তিনি বলছেন তাতে সাধারণ মানুষের লাভ বা ক্ষতি কিছুই হবে না, কিছু মজা ছাড়া। এটা ভাবার কোন কারন নেই এসব আলোচনা নির্বাচনে কোনও প্রভাব পড়বে। এর আগেও কিন্তু তা প্রমাণ হয়েছে। এখন তো অনেক সময় মিডিয়ায় খবর হওয়ার আগেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়।
আরও পড়ুন সোনা কিতনা সোনা হে! দিলীপকে নিয়ে ঠাট্টায় মশগুল সোশাল
এর আগে বহুবার দিলীপ ঘোষ হুমকি দিতে গিয়ে বলেছেন মাথা ফাটিয়ে ফেলব। কিন্তু তিনি কি নিজে মারপিট করবেন! বিরোধিরা বলেন তিনি উসকানি দিচ্ছেন। তবু কিন্তু তিনি সব বলাও বন্ধ করেনননি। এসব কেন বলেন তার জবাবে কিন্তু দিলীপবাবু একাধিক বার বলেছেন এরকম না বললে কেউ দিলীপ ঘোষকে কী চিনত! তবু তিনি বারে বারে নানা বিতর্কিত কথা বলেন তা চর্চা করতে থাকেন সকলেই। অভিজ্ঞ মহলের মত, দেশে বেকারত্বর হাল কী তা কখন ভাববে আমজনতা। তনে এটাও ঠিক শুধু বিজেপির দিলীপ ঘোষ নয় এমন নেতা অনেক দলেই আছেন। তাঁরা অহেতুক বিতর্ক সৃষ্টি করেন নানা বক্তব্যের মাধ্যমে। কেন এসব বলেন তা অন্যরা স্বীকার করেন না। ব্যতিক্রম দিলীপ ঘোষ।