ঐন্দ্রিলাদের ছুটি নেই, ওঁরা বাঁচেন তারাদের দেশেই, মৃত্যুর পরেও নিরন্তর চর্চায় অভিনেত্রী

মৃত্যুর পরেও ঐন্দ্রিলাকে নিয়ে চর্চার শেষ নেই। বছর চব্বিশের মেয়েটার লড়াই যেন গেঁথে গিয়েছে বাঙালি মননে।

Aindrila Sharma, Aindrila Sharma death, Priyanka Bhattacharjee, Olokkhij in Goa, Aindrila Sharma web series, ঐন্দ্রিলা শর্মা, প্রিয়াঙ্কা ভট্টাচার্য, অলক্ষ্মীজ ইন গোয়া, ঐন্দ্রিলা শর্মা ওয়েব সিরিজ, টলিউডের খবর
ঐন্দ্রিলা শর্মার পরিবর্তে দেখা যাবে এই টলি নায়িকাকে

ঐন্দ্রিলা শর্মা, এই নামটার সঙ্গে গত কয়েকদিনে ওতোপ্রোতোভাবে জড়িয়ে গিয়েছে বাঙালি। শুধু বাঙালিই কেন, বঙ্গের গণ্ডি পেরিয়ে ঐন্দ্রিলার বেঁচে থাকার চেষ্টার এই নিদারুণ লড়াই-কাহিনী অন্যত্রও জোর চর্চায়। এর আগেও মারণ ক্যান্সার প্রাণ কেড়েছে একাধিক অভিনেতা-অভিনেত্রী-সহ প্রতিষ্ঠিত বহু মানুষের। তবে এন্দ্রিলার এই লড়াই যেন চর্চায় রয়েই গিয়েছে।

আট থেকে আশি গত কয়েক সপ্তাহে চব্বিশ বছরের এই মেয়েটার নাম জানে না এমন লোক পাওয়াই বিরল। ঐন্দ্রিলার এই অসময়ে চলে যাওয়াটা যেন মেনে নিতেই বেশ কষ্ট হচ্ছে। তাই তো রবিবার প্রাণোচ্ছল ওই মেয়েটার তারাদের দেশে পাড়ি দেওয়ার পর থেকেও চর্চা যেন থামছেই না। সোশ্যাল দুনিয়ায় বারবার ফিরে আসছে ঐন্দ্রিলার নানা মুহূর্তের ছবি-ভিডিও। বিদ্যুৎ গতিতে চলছে সেই ছবি-ভিডিও-র শেয়ার, সঙ্গে কমেন্টের ধুম। অভিনয় জগতে তেমন তাবড় নাম কোনওদিনই ছিলেন না ঐন্দ্রিলা। তবু তাঁর এই চলে যাওয়ার পর্বটা কেন ভুলতেই পারছে না আম বাঙালি? মনোবিদ মৌমিতা গাঙ্গুলী এর পিছনে বেশ কয়েকটি কারণ ব্যাখ্যা করেছেন।

ঐন্দ্রিলা সম্পর্কে দু-চার কথা:

বরাবরই লড়ে গিয়েছেন ঐন্দ্রিলা। মাত্র ১৭ বছর বয়সেই মারণ ক্যান্সার থাবা বসিয়েছিল তাঁর শরীরে। বোন-ম্যারো ক্যান্সার ধরা পড়েছিল তাঁর। সেই সময়ে দিল্লিতে গিয়ে চিকিৎসা করিয়েছিলন তিনি। দাঁতে দাঁত চেপে রাজরোগের সঙ্গে লড়াই চালিয়েছিল ছোট্ট মেয়েটা। একের পর কেমোথেরাপি শরীরটাকে পিষে দিয়েছিল। তাতেও দমেনি সেদিনের সেই মেয়েটা। কার্যত মৃত্যুমুখ থেকে ফিরে এসে ২০১৭ সালে প্রায় সুস্থই হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। টলি পাড়ার প্রতিনিধি হওয়ার স্বপ্ন দেখা মেয়েটা ওই বছরেই ‘ঝুমুর’ নামে একটি বাংলা সিরিয়ালের হাত ধরে টালিগঞ্জের অলিন্দে নজর কাড়তে শুরু করেন। ওই সিরিয়ালের মাধ্যমেই পরিচয় হয় বন্ধু সব্যসাচী চৌধুরীর সঙ্গে। এরপর পরপর কয়েকটি সিরিয়াল, ওয়েব সিরিজেও অভিনয় করেছেন ঐন্দ্রিলা শর্মা।

সব কিছু ঠিকঠাকই চলছিল। তবে তাল কাটে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে। অসুস্থ হলে স্ক্যান করানো হয় তাঁর। দেখা যায় ঐন্দ্রিলার ডানদিকের ফুসফুসে টিউমার রয়েছে। চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচারের কথা জানালেও তাতে ঘোর আশঙ্কার ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন। তবে এতেও দমেননি ঐন্দ্রিলা। কারণ, তাঁর লড়াইয়ে পাশে যেমন ছিলেন তাঁর বাবা-মা-দিদি-সহ অন্য আত্মীয়রা, তেমনই ততদিনে পাশে পেয়ে গিয়েছিলেন বন্ধু তথা প্রেমিক সব্যসাচী চৌধুরীকেও। ঐন্দ্রিলার বেঁচে থাকার লড়াই এঁদের ছাড়া ভাবা সম্ভবই ছিল না।

ঝুঁকি নিয়েই এরপর হয় অস্ত্রোপচার। অপারেশনের ধকলটাও সয়ে নিয়েছিল মেয়েটা। সুস্থ হয়ে নতুন করে ঢুকে পড়েন টলি পাড়ায়। ফের শুরু হয় অভিনয় জীবন। কিন্তু শেষমেশ গত সপ্তাহে মঙ্গলবার রাতে ফের ব্রেন স্ট্রোক। তড়িঘড়ি ভর্তি করানো হয় হাসপাতালে। এবারটায় আর শেষ রক্ষা হয়নি। মৃত্যুর সঙ্গে সেয়ানে-সেয়ানে টক্কর দিয়ে গিয়েছিল চব্বিশ বছরের মেয়েটা। তবে এই লড়াইয়ে আর জিত হয়নি। বাঙালি মননে বেঁচে থাকার অদম্য লড়াই কাহিনী গেঁথে দিয়ে তারাদের দেশে পাড়ি জমিয়েছেন ঐন্দ্রিলা শর্মা।

ঐন্দ্রিলাদের মৃত্যু হয় না, ওঁরা তারাদের দেশে গিয়েও বেঁচেই থাকেন, এমন ভাবনাতেই তাঁর চলে যাওয়ার পর্ব এখনও আঁকড়ে রেখেছে সোশ্যাল দুনিয়া। ট্রেনে, বাসে তাঁকে নিয়ে এখনও চর্চা জারি রয়েছে। ক্যান্সারে তো এর আগেও অনেক সেলিব্রিটি মারা গিয়েছেন, মৃত্যুর পর তাঁদের নিয়ে কিন্তু এমন চর্চা প্রায় বিরল। তাহলে ঐন্দ্রিলাকে নিয়ে কেন এত চর্চা, কেন এত আলোচনা?

মনোবিদ মৌমিতা গাঙ্গুলীর কথায়, ”বয়স এক্ষেত্রে একটা কারণ হতে পারে। এত কম বয়সে এত বড় একটা রোগ। এরই পাশাপাশি হাসিমুখে এমনভাবে ওই কঠিন রোগের মোকাবিলা সে করেছিল, তাতেই ও নজর কেড়েছে। মেয়েটির অনেক আগে থেকেই ক্যান্সার ছিল। এতদিন দিন এভাবে লড়াই চালিয়ে যাওয়াটা ওকে নিয়ে এখনও এত চর্চার অন্যতম কারণ হতে পারে।”

বারবার ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে জিতে ফিরে এসেছিলেন ঐন্দ্রিলা। তবুও শেষ রক্ষা হল না। ঐন্দ্রিলার এই বেঁচে থাকার লড়াইটাই কি প্রত্যেককে বড্ড বেশি নাড়া দিয়েছে? ঐন্দ্রিলা যেমন একজন সেলিব্রিটি ছিলেন, তেমনি তাঁর প্রেমিক সব্যসাচী চৌধুরীও একজন সেলিব্রিটি। ঐন্দ্রিলাকে নিয়ে সোশ্যাল দুনিয়ায় নেটিজেনদের এত লেখালেখি-কৌতূহলের পিছনে এগুলোও কি অন্যতম কারণ?

এক্ষেত্রে মনোবিদ মৌমিতা গাঙ্গুলী মনে করেন, ”বারবার মৃত্যু মুখ থেকে বেঁচে ফিরে এসেছে মেয়েটা। ওঁকে নিয়ে চর্চার এটা তো বড় কারণ। এছাড়াও এখনকার জেনারেশনে ভালো বন্ধু খুঁজে পাওয়াটা বেশ কষ্টের। এটা প্রায়ই শোনা যায়। অনেক সম্পর্কও এখন বেশ টালমাটাল অবস্থায় রয়েছে। সেখানে সব্যসাচীর মতো এমন একটা বন্ধু পাওয়া যে এতটা দায়িত্ব নিতে পারে, বিয়ে না করেও তাঁর এই কর্তব্য-পালনের কাহিনী ঐন্দ্রিলা-পর্বের চর্চার অন্যতম কারণ হতে পারে।”

Stay updated with the latest news headlines and all the latest Opinion news download Indian Express Bengali App.

Web Title: Even after her death curiosity and discussion about aindrila sharma continues

Exit mobile version