ঘরের ছেলে কি ঘরে ফিরছে! দিদির কাছে ফোঁটা নিয়ে ভেঙেছে মান-অভিমান। রাজনৈতিক মহলে জোর গুঞ্জন, শোভন চট্টোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেসে ফেরা স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। বিজেপি রাজ্য সভাপতিও শোভনের ওয়াই ক্যাটেগরি নিরাপত্তা ফিরে পাওয়া প্রসঙ্গে তির্যক মন্তব্য করেছেন। কিন্তু বিজেপি ছেড়ে আসাও কী খুব সহজ! এই আলোচনাও চলছে সমানতালে।
প্রথমে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেড় ঘণ্টা আলোচনা। তারপর ভাইফোঁটার দিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালীঘাটের বাড়িতে গিয়ে শোভন-বৈশাখীর হাজির হওয়া। এরপর শোভনকে ওয়াই ক্যাটেগরির নিরাপত্তা ব্যবস্থা ফিরিয়ে দেওয়া। শনিবার দিলীপ ঘোষের মন্তব্য। ঘটনা পরম্পরা যে একটা নির্দিষ্ট বার্তা দিচ্ছে তা অনেকটাই স্পষ্ট। তৃণমূল কংগ্রেসে জল্পনা, ফের শোভন চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বেই আগামী ২০২০ কলকাতা পুরসভার নির্বাচনে ঝাঁপাতে পারে ঘাসফুল। পাশাপাশি তৃণমূলে ফিরে পেতে পারেন মন্ত্রীত্বও।
আরও পড়ুন: উপনির্বাচনে কংগ্রেসকে সমর্থন, বামেদের নজরে রাজ্যসভার আসন
১৪ অগাস্ট তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন কলকাতার প্রাক্তন মেয়র ও বিধায়ক শোভন চট্টোপাধ্যায়। তাঁর সঙ্গে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ও। কিন্তু প্রথম দিনের বিতর্ক পিছু ছাড়েনি শোভন ও বৈশাখীর। সেদিন দিল্লিতে বিজেপির সদর দফতরে হাজির হয়ে গিয়েছিলেন রায়দিঘির তৃণমূল বিধায়ক দেবশ্রী চৌধুরী। দলে যোগ দেওয়ার পর শোভনকে বিজেপির মিছিল-মিটিংয়েও সেভাবে দেখা যায়নি। বরং তাঁদেরকে নিয়ে বিজেপি নেতাদের মন্তব্যে বিতর্ক বেড়েছে দলের অভ্যন্তরে। বিড়ম্বনা বেড়েছে দলের। তাহলে সত্যিই কি তিনি চলতি মাসে তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন? এই আলোচনা ঘুরপাক খাচ্ছে বঙ্গ রাজনীতিতে।
আরও পড়ুন: উপনির্বাচনে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা বিজেপির
নারদা কাণ্ডে আগেই নাম জড়িয়েছে বিধায়ক শোভন চট্টোপাধ্যায়ের। সম্প্রতি সারদা চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে সিবিআই জিজ্ঞাসাবাদ করেছে এই বিজেপি নেতাকে। বিজেপি সিবিআইকে রাজনৈতিক প্রতিহংসার জন্য ব্যবহার করে এই অভিযোগ নতুন নয়। তৃণমূল কংগ্রেস এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে একাধিকবার রাস্তায় নেমে আন্দোলন করেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গেরুয়া শিবিরের এক নেতার মন্তব্য, শোভন চট্টোপাধ্যায়ের গলায় খাঁড়া ঝুলছে। তৃণমূলে যাওয়ার ঝুঁকি নেবেন! দলে যোগ দেওয়ার পর বিজেপি জানিয়ে দিয়েছিল কেলেঙ্কারি থেকে মুক্ত হওয়ার দায় শোভনের। বস্তুত, বিজেপিতে যোগ দিলেও সিবিআই তলবের ভুত তাড়া করে বেড়াচ্ছে অনেককেই।
বিজেপির তাবড় কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে পৃথক ভাবে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন শোভন ও বৈশাখী। তাতেও রফা সূত্র মেলেনি। বিজেপিতে যোগ দিলেও কোনও পদ পাননি শোভন। রাজনৈতিক কারবারিদের মতে, তৃণমূলে যে ধরনের স্বাধীনতা ভোগ করে রাজনীতি করা যায়, তা বিজেপির মত দলে কোনও ভাবেই সম্ভব নয়। তা সর্বজনবিদিত। তৃণমূল থেকে যে সব তাবড় নেতৃত্ব বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন তাঁরা তা ভালই টের পাচ্ছেন। শোভনের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম ছিল না। এখন শুধু একটু সময়ের অপেক্ষা।