‘ভারতের কোভিড অতিমারির জন্য আমরা নিজেরাই দায়ী’

ভোট উৎসবে কোভিড সুরক্ষা শিকেয় তুলে জনগণ মাতল। কিন্তু কারণ শুধু এটাই নয়। আমাদের বিবাচনা বোধের অভাবও সেখানে রয়েছে।

‘ভারতের কোভিড অতিমারির জন্য আমরা নিজেরাই দায়ী’

গত ২৪ ঘন্টায় ভারতে তিন লক্ষেরও বেশি কোভিড -১৯ আক্রান্ত হয়েছে। গত দেড় মাস আগে, এখানে প্রতিদিন প্রায় ১৪ হাজার করে সংক্রমিত হয়েছে। বর্তমানে দেশে মারাত্মকভাবে বেড়ে চলেছে সংক্রমণ ও অক্সিজেন চাহিদা। হাসপাতালে অক্সিজেন, ওষুধ, বেডের তীব্র ঘাটতি দেখা দিয়েছে। গোটা পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তিত বিশ্বের একাধিক দেশ। এই লড়াই জয় করার ক্ষেত্রে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে অনেকেই।

এই মুহুর্তে করোনার দ্বিতীয় ঢেউএর কারণ হিসেবে আমরা আমাদের রাজনৈতিক নেতাদের উপর সমস্ত দোষ চাপিয়ে দিয়েই ক্ষান্ত হচ্ছি। কিন্তু এখন সেই মুহূর্ত আত্ম-উপলব্ধির। যখন আমরা চারপাশের কোভিডের এক ভয়ানক তীব্রতা প্রত্যক্ষ করছি। আমাদের এক মুহুর্তের জন্য থামতে হবে এবং ভাবতে হবে – বর্তমান পরিস্থিতির কারণ আমরা নিজেরাই নই তো? এই দায় আমাদের নিজস্ব নয় তো?

আরও পড়ুন, ‘ঘরে নেই অক্সিজেন, হাসপাতালে নেই বেড’, চোখের সামনেই মৃত্যু দেখছে দেশ

রাজনীতি তো রয়েছেই। এত প্রাবল্যর মধ্যেও নির্বাচন চলল সমানতালে। বড় বড় সমাবেশ হল। ভোট উৎসবে কোভিড সুরক্ষা শিকেয় তুলে জনগণ মাতল। কিন্তু কারণ শুধু এটাই নয়। আমাদের বিবাচনা বোধের অভাবও সেখানে রয়েছে। আনলক পর্যায়ে যে যথেচ্ছাচার আমরা করেছি, তার দায় আমাদের আজ নিতে হচ্ছে। লকডাউনে বন্দী জীবনকে মুক্তি দেওয়ার আনন্দে আমরা অজান্তেই ডেকে এনেছি এই বিপদ।

সরকার তো নির্দেশিকা জারি রেখেছিল। বলা হয়েছিল করোনা শেষ হয়নি। মাস্ক থেকে স্যানিটাইজেশন, সামাজিক দূরত্ব মানতে বলা হয়েছিল সবই। কিন্তু প্রশ্ন হল আমরা কি তা মেনেছিলাম? বরং সেই নির্দেশিকা অমান্য করেই ছুটির গন্তব্যে দৌড় কিংবা পিকনিক পরিকল্পনায় ব্যস্ত ছিলাম। অনুষ্ঠান, পার্টি, উৎসব মাতোয়ারা ছিলাম। ভেবে দেখেনি বাতাসে তখনও রয়েছে ভাইরাস। সবাই ভেবে নিয়েছিলাম সবই তো ঠিক আছে। কোভিড লড়াই থেকে জিতে এসেছি। কিন্তু অতিমারি জয় সহজ নয়! তা আবারও বুঝিয়ে দিল করোনা।

আরও পড়ুন, ‘কত হাজার মরলে তবে মানবে তুমি শেষে?’ নির্বাচনী রাজ্যের পরিস্থিতি কতটা উদ্বেগজনক?

কিছুদিন আগেও মাস্ক পরায় অনীহা ছিল সকলের। কারুর পকেটে, কেউ বা নাক থেকে মাস্ক নামিয়েই জীবন চালাচ্ছিলেন। স্যানিটাইজেশন তো উঠে গিয়েছিল আনলকের পরেই। আর সামাজিক দূরত্ব? সেকথা নাই বা বলা হল। এবার বোধহয় সেই উপলব্ধির প্রয়োজন। এটি নিছক দায়িত্বজ্ঞানহীনতা এবং অসাবধানতা, যার ফলস্বরূপ এই পরিস্থিতি ডেকে এনেছি আমরা। মৃত্যু ডেকেছি অজান্তেই। রাজনৈতিক সমাবেশ এবং ধর্মীয় সমাবেশের অনুমতি দিয়ে কেন্দ্র কিংবা রাজ্য সরকাররাও কম দোষ। কিন্তু দোষ কারো একার নয়।

আজ হয়ত নবারুণ ভট্টাচার্য জীবিত থাকলে আরেকবার মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে কবিতাটি বলে যেতেন। সে মঞ্চ রাজনৈতিক নয়, ধর্মীয় নয়। কেবল মনুষ্যত্বের। পাঠ করতেন সেই প্রাসঙ্গিক লেখা-

“এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না
এই জল্লাদের উল্লাস মঞ্চ আমার দেশ না
এই বিস্তীর্ণ শ্মশান আমার দেশ না
এই রক্তস্নাত কসাইখানা আমার দেশ না”

Written by Dipit Sahu 

অনুলিখন- পল্লবী দে

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

Stay updated with the latest news headlines and all the latest Opinion news download Indian Express Bengali App.

Web Title: For indias devastating second wave we are all responsible

Exit mobile version