আধুনিক চিকিৎসা পরিষেবার মূল্যবৃদ্ধি, চিকিৎসা বিমা ও স্বাস্থ্য বিমার প্রবেশ, বাজার বৃদ্ধি, প্রয়োজনীয়তা এবং সীমাবদ্ধতা ইত্যাদি সম্বন্ধে আমরা আলোচনা করেছি গত কয়েক পর্বে। এই ব্যাপারে সরকারের তরফে কী ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা এবার দেখা যাক।
স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে ভারতে সরকারের ভূমিকা একেবারে শূন্য হয়ে যায়নি অবশ্যই, কিন্তু আমরা লক্ষ্য করেছি যে সরকারের উদ্যোগ কমে আসছে বেশ কিছু বছর ধরে। যেন হাত তুলে নেবার প্রবণতা। সরকারি হাসপাতাল, প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ইত্যাদি চালু আছে ঠিকই, তবু ক্রমশ স্বাস্থ্য পরিষেবার নিয়ন্ত্রণ বেসরকারি হাতে ছেড়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে নিপুণভাবে। বেসরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা বাণিজ্যিক। স্বভাবতই সেখানে উন্নত পরিষেবা অগ্নিমূল্য। সেই পরিষেবা কিনতে সাধারণ মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত মানুষ যদি বাধ্য হন, তাহলে হয় ধার-দেনা করতে হবে অথবা মোটা অংকের বিমা কিনতে হবে। বিমা কেনার পরেও যেসব সমস্যা হতে পারে, তা নিয়ে আগের পর্বে আলোচনা করা হয়েছে, কিন্তু বিপুল সংখ্যক ভারতবাসীকে বিমার আওতায় আনাও কঠিন কাজ। বিমার প্রিমিয়াম জমা করাও অনেকের পক্ষে দুঃসাধ্য। এই ক্ষেত্রে কিছু সরকারি প্রকল্পের কথা উল্লেখ করা প্রয়োজন।
প্রজাতন্ত্র-৭০: দলীয় সত্যের সঙ্গে মানবধর্মের মতো চিরসত্যের সংঘাত
ভারতে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য-বিমা ১৯৮৬ সাল নাগাদ শুরু হয়। প্রথম দিকে সরকারি বা সরকার অধিগৃহীত সংস্থার হাতে ছিল এইসব বিমা। বিংশ শতাব্দীর শেষ এক-দুই বছরে বেসরকারি বিমা কোম্পানি এই ব্যবসায় প্রবেশ করে। ক্রমশ যখন চিকিৎসার খরচ সামলানোর জন্য বিমাকেই সঠিক পদ্ধতি ভাবার প্রবণতা বাড়ল, তখন এটাও বোঝা গেল যে এই পদ্ধতিতে জাতীয় স্তরে স্বাস্থ্য পরিষেবায় সাফল্য পেতে চাইলে অধিকাংশ নাগরিককে বিমার আওতায় আনতে হবে। ক্রমশ টের পাওয়া গেল যে অনেকেই এই ব্যাপারে অজ্ঞ, অক্ষম বা অলস, অর্থাৎ সরকারকে তাঁদের হয়ে দায়িত্ব নিতে হবে। তাছাড়া কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের ভাবমূর্তিটা রাতারাতি ঝেড়ে ফেলার রাজনৈতিক অসুবিধার কারণে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যের দায়িত্ব থেকে সম্পূর্ণ চোখ ফিরিয়ে নেওয়া সরকারের পক্ষেও সহজ ছিল না। কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারগুলোর তরফে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে, যার মধ্যে বেশ কিছু বিমা-ভিত্তিক। আজ সেগুলোর কথাই বলব।
২০০৩ সালে কর্ণাটক সরকার প্রথম উদ্যোগী হয়ে "যশস্বিনী হেলথ ইনশিওরেন্স স্কিম" নামক একটি প্রকল্প চালু করেন। কর্ণাটকের বিভিন্ন কোঅপারেটিভ সোসাইটির সদস্য ভাগচাষীদের জন্য এই প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। এর চার বছর পর ২০০৭ সালে পার্শ্ববর্তী অন্ধ্রপ্রদেশ চালু করে দারিদ্র্যসীমার নীচে থাকা মানুষদের জন্য "রাজীব আরোগ্যশ্রী প্রকল্প"। ২০১৪ তে অন্ধ্রপ্রদেশ ভাগ হয়ে যাবার পর প্রকল্পটি তেলেঙ্গানা সরকারের হাতে আসে। ২০০৯ সালে তামিলনাড়ুতে শুরু হয় "চিফ মিনিস্টার কলাইনারস ইনশিওরেন্স স্কিম ফর লাইফ সেভিং ট্রিটমেন্টস " প্রকল্প। ক্রমশ অন্য বিভিন্ন রাজ্য এই পথে পা বাড়ায়। পশ্চিমবঙ্গে "স্বাস্থ্য সাথী" প্রকল্প চালু হয়েছে ২০১৬ সালে। জাতীয় স্তরে ভারত সরকার ২০০৮ সালে ঘোষণা করে "রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনা" (আর এস বি ওয়াই)। ২০১৮ সালে এই আর এস বি ওয়াই"-এর পরিবর্তন এবং পরিবর্ধন করে চালু হয় "আয়ুষ্মান ভারত" প্রকল্প।
গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলো নিয়ে সংক্ষেপে কথা বলা যাক। যশস্বিনী হেলথ স্কিম কৃষকদের মধ্যে কোঅপারেটিভ ভিত্তিতে চলত। ৮০৩ রকম অপারেশনের খরচ দেওয়া হত। পরবর্তী বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে রোগীদের ওষুধ কিনতে হত নগদ টাকায় এবং আউটডোর ভিত্তিতে বিভিন্ন খরচ করতে হত নিজেদেরই।
নাগরিক সরকার নির্বাচন করে, না সরকার নাগরিক?
অন্ধ্রপ্রদেশ সরকারের রাজীব আরোগ্যশ্রী প্রকল্পের কভারেজ ছিল আরও বেশি। রেশন কার্ডের ভিত্তিতে বিপিএল তালিকাভুক্ত মানুষদের চিহ্নিত করে প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। ক্যাশলেস ভিত্তিতে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা বাবদ প্রতি পরিবারকে বছরে দেড় লক্ষ টাকা অব্দি দেওয়া হয়। কিছু ক্ষেত্রে আরও পঞ্চাশ হাজার টাকা দেবার 'বাফার' ব্যবস্থা রাখা হয়। কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট-এর জন্য সাড়ে ছয় লক্ষ টাকা অব্দি দেবার সংস্থান ছিল মূল প্রকল্পে। বিভিন্ন অতি খরচ সাপেক্ষ চিকিৎসাকে এর বাইরে রাখা হয়। যেমন হাঁটু বা হিপ জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট, হৃদপিণ্ড, যকৃত, অস্থিমজ্জার বদল (ট্রান্সপ্লান্ট) এবং হার্ট ফেইলিওরের চিকিৎসার 'অ্যাসিস্টেড ডিভাইস' সমূহ। এছাড়া বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রকল্পের অধীনে থাকা রোগ, যাদের চিকিৎসার দায়িত্ব রাষ্ট্রের হাতেই আছে (যেমন যক্ষা, এইচ আই ভি), সেগুলোকে প্রকল্পের বাইরে রাখা হয়। অনেক হাসপাতালে স্কিমটির অপব্যবহার হয় বলে শোনা গেছে।
তামিলনাড়ুতে কলাইনারের প্রকল্পটি চালু হয় স্টার হেলথ নামক বেসরকারি বিমা কোম্পানির মাধ্যমে। এক কোটি দরিদ্র পরিবারকে (বাৎসরিক পারিবারিক আয় বাহাত্তর হাজার টাকার কম) একান্ন রকম রোগের স্পেশালিষ্ট চিকিৎসার জন্য পরিবার পিছু বছরে এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত সুবিধা দেবার কথা ঘোষণা করা হয়। সরকারকে পরিবার প্রতি ৪৯৯ টাকা প্রিমিয়াম এবং বাড়তি সার্ভিস ট্যাক্স দিতে হত। বেসরকারি বিমা সংস্থার মাধ্যমে প্রকল্পটি চালু করার জন্য সমালোচনাও হয়েছিল এবং প্রশ্ন উঠেছিল এর দ্বারা আসলে স্বাস্থ্যের দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে চাইছে? সরকার প্রকল্পটি ঘোষণা করার পর ফ্রণ্টলাইন পত্রিকায় এস দোরাইরাজ লেখেন, "The Tamil Nadu government’s new health insurance scheme is seen as diluting the very purpose of a welfare state." হয়ত একটু কড়া সমালোচনা এবং আলাদাভাবে তামিলনাড়ু সরকারের এই সমালোচনা প্রাপ্য নয়, কিন্তু সামগ্রিকভাবে এই বক্তব্য ভেবে দেখার মতো।
কলাইনারের আগেই ভারত সরকার চালু করেছিল রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনা। দারিদ্র্যসীমার নীচে থাকা অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের জন্য ২০০৮ সালের পয়লা এপ্রিল চালু হয় এই প্রকল্প। হলুদ রেশন কার্ডের ভিত্তিতে দরিদ্র পরিবারগুলিকে চিহ্নিত করে ত্রিশ টাকার বিনিময়ে রেজিস্ট্রেশন করিয়ে একটি স্মার্ট কার্ড দেওয়া শুরু হয়। প্রতি পরিবারের পাঁচজন এর আওতাভুক্ত। চিকিৎসার খরচ বাবদ বছরে ত্রিশ হাজার টাকা পর্যন্ত দেবার সংস্থান ছিল। শুরুতে শ্রম মন্ত্রকের অধীনে থাকলেও পরে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের হাতে চলে যায় প্রকল্পটি। এই প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় খরচের ষাট শতাংশ কেন্দ্রীয় সরকারের আর চল্লিশ শতাংশ রাজ্য সরকারের।
দারিদ্র্যসীমার নীচে থাকা সব পরিবারকে এর আওতায় আনার কথা ছিল। তেন্দুলকার কমিটির বক্তব্য অনুসারে ভারতের মোট জনসংখ্যার ৩৭.৫% বিপিএল। প্রথম তিন বছরে মাত্র ১০% পরিবার আর এস বি ওয়াই-তে নথিভুক্ত হয়। পরে ২০১৪ সালের হিসেবে দেখা যায় প্রায় তিন কোটি ষাট লক্ষ পরিবার এর অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। প্রকল্পটির সীমাবদ্ধতা ছিল, যেমন ত্রিশ হাজার টাকায় বেসরকারি ক্ষেত্রে বড় চিকিৎসা পাওয়া সম্ভব নয়, কিন্তু প্রকল্পটি বিশ্ব দরবারে প্রশংসাও পেয়েছে। জার্মানি তাদের ঐতিহ্যশালী সোশাল সিকিউরিটি ব্যবস্থায় প্রচলিত ভাউচার ব্যবস্থার বিলোপ ঘটিয়ে স্মার্ট কার্ড চালু করার আগ্রহ দেখায়। এই প্রকল্পের আরেকটি সুফল দেখা গেছে। এর আগে বড় মাপের হাসপাতাল মূলত বড় শহরগুলোতেই সীমাবদ্ধ ছিল। এই প্রকল্প চালু হবার পর বেশি রোগী পাবার আশায় জেলা স্তরে কিছু বড় কর্পোরেট ধরণের হাসপাতাল তৈরি হতে শুরু করে, যারা শহরের চেয়ে কম খরচে চিকিৎসা দেবে কিন্তু মফস্বলের ছোট নার্সিংহোমগুলোর তুলনায় অনেক ভালো পরিকাঠামো থাকবে। দুর্ভাগ্যক্রমে বাড়িগুলো দেখতে যত সুন্দর, পরিষেবা নিয়ে স্থানীয় মানুষের সন্তুষ্টি সেই মাপের নয়।
২০১৮ সালে আর এস বি ওয়াই প্রকল্পটির মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ঘটিয়ে এবং 'সিনিয়র সিটেজন্স হেলথ ইনশিওরেন্স স্কিম', 'সেন্ট্রাল গভর্ণমেন্ট হেলথ স্কিম' (CGHS), 'এমপ্লয়িজ স্টেট ইনশিওরেন্স স্কিম' (ESIS) ইত্যাদিকেও এক ছাতার তলায় এনে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের অধীনে চালু করা হয় 'আয়ুষ্মান ভারত যোজনা' বা 'প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনা'। বিভিন্ন রাজ্যে চলতে থাকা সরকারি স্বাস্থ্য প্রকল্পগুলোকে এর সঙ্গে যুক্ত করার কথা। এই যোজনার আওতায় আসবে দেশের দশ কোটি পরিবার। প্রতি পরিবারের পাঁচজন সদস্যকে তালিকাভুক্ত করা যাবে। একটি পরিবার সেই পাঁচজনের হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসার খরচ বাবদ বছরে পাঁচ লক্ষ টাকা পর্যন্ত পাবার অধিকারী। খরচের ষাট শতাংশ কেন্দ্রীয় সরকার এবং চল্লিশ শতাংশ রাজ্য সরকার দেবে। এই প্রকল্লের আওতায় বিমা ছাড়াও আরও কিছু আছে, যা গুরুত্বপূর্ণ এবং পরে আলোচিত হবে।
এর আগেই ২০১৬ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার চালু করেছিল স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্প। আরএসবিওয়াই প্রকল্পের তালিকাভুক্ত দরিদ্র মানুষ, আইসিডিএস ও আশা কর্মী, সিভিক ভলেন্টিয়ার, শিক্ষক এবং অশিক্ষক কর্মীবৃন্দ এবং বিভিন্ন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যদের জন্য প্রকল্পটি ঘোষিত হয়। এখানেও প্রত্যেক পরিবার হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসার জন্য বছরে পাঁচ লক্ষ টাকা পর্যন্ত পাবে। পঁয়তাল্লিশ লক্ষ পরিবার এই প্রকল্পের সুবিধা পান।
কথামতো স্বাস্থ্য সাথী আর আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প সংযুক্ত হয়েছিল, কিন্তু সরকারি প্রকল্প থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর ফায়দা তোলার তীব্র বাসনার ফলে এই গাঁটছড়া অচিরেই ছিঁড়ে গেল। আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পভুক্ত পরিবারগুলোর কাছে নরেন্দ্র মোদীর ছবিসহ চিঠি যাচ্ছিল, যাতে স্বভাবতই তৃণমূল কংগ্রেসের রাজত্বে বিজেপির প্রচারের কাজ হচ্ছিল। এই কারণে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন এবং স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্প এককভাবে চলতে থাকে।
নাগরিকদের চিকিৎসার জন্য সরকারের কিছু দায়িত্ব আছে, একথা এই প্রকল্পগুলোতে স্বীকৃত, যা ভালো, কিন্তু পদ্ধতিগুলো সমস্যাজনক। একদিকে এই প্রকল্পগুলোর লোভ দেখিয়ে রোগী ধরার জন্য ইতস্তত ব্যাঙের ছাতার মতো কিছু বেসরকারি হাসপাতাল গড়ে উঠছে, যারা গ্রামাঞ্চলের মানুষদের অপ্রয়োজনীয় ও নিম্নমানের চিকিৎসা দিয়ে, এমনকি মিথ্যা বিল পেশ করে সরকারের কাছ থেকে টাকা হাতানোর চেষ্টা করছে। অন্যদিকে বড় কর্পোরেট হাসপাতালগুলো এর চেয়ে ভালো চিকিৎসা দিলেও সেখানে খরচ অনেক বেশি। খরচ কিছুটা বেঁধে না দিলে সেখানে এই প্রকল্পের অধীনে থাকা মানুষদের চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া কঠিন। আবার খরচ একেবারে কষে বেঁধে দিতে চেষ্টা করলে এই বড় হাসপাতালগুলো বেঁকে বসছে, কারণ উন্নততর চিকিৎসা চালাতে তাদের নিজেদের ব্যয় বেশি হয়। সুতরাং অপেক্ষাকৃত নিম্নমানের ব্যবস্থাযুক্ত নার্সিংহোমে যে দামে চিকিৎসা করা সম্ভব, সেই একই দামে তার চেয়ে অনেক বেশি ব্যয়সাধ্য চিকিৎসা দিতে হলে হাসপাতালগুলোর লোকসান হবে। সেক্ষেত্রে তারা এসব প্রকল্পের রোগীর চিকিৎসায় আগ্রহ দেখাবে না এবং রোগীকে যেতে হবে কম নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠানে। এই পরিস্থিতিতে দুদিকের ভারসাম্য রক্ষা করে আলোচনার ভিত্তিতে কিছু নীতি গ্রহণ করা জরুরি। মিথ্যা বিল পেশ করা হাসপাতালগুলোর শাস্তি হওয়া প্রয়োজন, যাতে এই প্রবণতা বন্ধ হয়, কিন্তু রাজনৈতিক যোগসাজশের কারণে তা হবার সম্ভাবনা কম।
এসব সমস্যার সমাধান করা গেলেও কিছু মৌলিক সমস্যা থাকবে। চিকিৎসা বাবদ মোট ব্যয়ের বেশিরভাগ হয় আউটডোর ভিত্তিতে, যার খরচ পাওয়া যাবে না এসব প্রকল্পে। অনেক রোগী অকারণে ভর্তি হতে চাইবেন এবং চিকিৎসককে চাপ দেবেন, যা সামলাতে বেগ পেতে হয়। তাছাড়া বেসরকারি হাসপাতাল এবং বেসরকারি ইনশিওরেন্স কোম্পানির উপর নির্ভর করার অর্থ হল এদের মুনাফার টাকাও সরকার জোগাবে মানুষের দেওয়া করের টাকা থেকে। এই মুনাফার অংশ বাদ দিলে যা থাকে, সেই খরচে, অর্থাৎ বিমা-ভিত্তিক এই ব্যবস্থার থেকে কম খরচে সমমানের চিকিৎসা দেওয়া তাই সরকারের পক্ষে সম্ভব। তার দ্বারা বাস্তবে আরও বেশি উপকার হতে পারে মানুষের। এই দিকগুলো নিয়ে ভাবা প্রয়োজন।
(কৌশিক দত্ত আমরি হাসপাতালের চিকিৎসক, মতামত ব্যক্তিগত)
এই কলামের জরুরি লেখাগুলি পড়ুন এই লিংকে ক্লিক করে