বিগত কয়েক সপ্তাহে আমরা দেখতে চেষ্টা করেছি আধুনিক চিকিৎসার বৈজ্ঞানিক চরিত্রটি কেমনভাবে তাকে অমানবিক করে তোলে, তার অর্থনৈতিক দিকগুলো কেমন, কেমন করে সরল পদ্ধতিতে চিকিৎসা করা অসম্ভব হয়ে উঠল, কীভাবে চিকিৎসক ও রোগী উভয়েই ক্রমশ ক্ষমতাহীন হয়ে পড়ছেন এবং ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ হচ্ছে বৃহৎ কর্পোরেট পুঁজির হাতে। গত পর্বে আমরা উদাহরণের সাহায্যে বুঝতে চেষ্টা করেছি কোথায় কীভাবে অত্যাধুনিক হাসপাতালের সেরা চিকিৎসা অগ্নিমূল্য হয়ে ওঠে এবং সেই গোত্রের চিকিৎসাকেই স্ট্যান্ডার্ড বানিয়ে তোলা হয়।
আজ দেখার চেষ্টা করব, বিকল্প পদ্ধতিতে (কিছুটা পুরনো বা চিকিৎসকের ক্লিনিক্যাল স্কিল ও অনুমানের ভিত্তিতে) সাধারণ মানুষের জন্য স্বল্পমূল্যে চিকিৎসাকে মূলধারার চিকিৎসা ব্যবস্থার মধ্যে অসম্ভব করে তোলার লক্ষ্যে আইন, প্রশাসন ও রাজনীতি কীভাবে কাজ করে। মনে করিয়ে দিই যে আগেই আমরা দেখেছি যে চিকিৎসাকে একটি সম্পূর্ণরূপে বিক্রয়যোগ্য ও লাভজনক পণ্যে পরিণত করার এবং রোগীমাত্রকেই অসহায় ক্রেতায় পরিণত করার এই লক্ষ্যটি পূরণ করার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হল চিকিৎসকদের ক্ষমতাহীন ও আতঙ্কিত করে তোলা এবং রোগী-চিকিৎসক সম্পর্ককে ধ্বংস করা। কীভাবে তা করা হয়, তার কিছু অংশ আলোচিত হয়ে, যার পুনরাবৃত্তি করব না। অন্য দিকগুলোর কথা আলোচনা করা যাক।
নিশ্চয় খেয়াল করেছেন যে গত দুই দশকে জেনারেল প্র্যাকটিস ব্যাপারটার চরিত্র বদলে গেছে, তার দাম বেড়েছে এবং স্থানীয় চিকিৎসকের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক আলগা হয়ে গেছে। এর শুরুটা ভাবুন। অভিজাত পাড়ার কিছু চিকিৎসক হয়ত আগেও বড় অফিসঘর বা চেম্বারের মালিক ছিলেন, কিন্তু বেশিরভাগ জেনারেল ফিজিশিয়ান এবং নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে প্র্যাকটিস করা বেশ কিছু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও গ্যারেজ ঘর বা ওষুধের দোকান সংলগ্ন ছোট চেম্বারে রোগী দেখতেন। এরকম জায়গায় ডাক্তার দেখানো অবশ্যই ফাইভ স্টার অভিজ্ঞতা নয়, কিন্তু আপনার কাজ হয়ে যেত এবং খরচ পড়ত সামান্য।
আমি নিজে এইরকম ব্যবস্থায় ত্রিশ টাকা ভিজিটে রোগী দেখতাম এবং সমসাময়িক অন্য অনেকেই তেমন করতেন। ওষুধের দোকানগুলো চিকিৎসকের ভিজিট থেকে পনেরো-কুড়ি শতাংশ নিত ভাড়া হিসেবে এবং প্রত্যাশা করত ডাক্তার দেখানোর পর বেশিরভাগ রোগী তাদের কাছ থেকে ওষুধ কিনবে। ব্যবসায়িক বন্দোবস্ত হওয়া সত্ত্বেও সমগ্র ব্যাপারটি ছিল অনাড়ম্বর, প্রয়োজনভিত্তিক এবং সাধারণের নাগালের মধ্যে।
এরপর আইন করে এই জাতীয় ব্যবস্থাগুলোকে নিষিদ্ধ করে দেওয়া হল। চেম্বারের ন্যূনতম আয়তন কতটা হবে, কেমন মাপের বসার ঘর থাকবে, পুরুষ ও মহিলাদের আলাদা বাথরুম সহ আর কীকী সুবিধা রাখতে হবে ইত্যাদি নির্দিষ্ট করা হল, যা পরিষেবার আভিজাত্য বাড়ালেও চিকিৎসার গুণমানকে কোনোভাবে উন্নত করে না। তাছাড়া লাইসেন্স বাবদ কিছু সরকারি বা আধা-সরকারি সংস্থাকে বিবিধ ফিজ দেবার ব্যবস্থা চালু হবার পাশাপাশি এইসব সংস্থা ও আঞ্চলিক রাজনৈতিক নেতাদের হাতে অনেকটা ক্ষমতা তুলে দেওয়া হল, যাতে তাঁরা চাপ দিয়ে চিকিৎসকদের কাছ থেকে মোটা টাকা আদায় করতে পারেন হিসেববহির্ভূতভাবে এবং চিকিৎসকদের দিয়ে নিজেদের পছন্দের কাজ করিয়ে নিতে পারেন।
দেখা গেল, একজন নবীন চিকিৎসককে শহর বা মফস্বলে নিয়ম মেনে চেম্বার খুলতে গেলে প্রথমেই ত্রিশ থেকে পঞ্চাশ লাখ টাকা ব্যয় করতে হবে, অন্যথায় রাজনৈতিক নেতাদের হাতের পুতুল হয়ে থাকতে হবে। অনেকেই দুটোর একটাও পারবেন না জেনে কর্পোরেট হাসপাতালের বাঁধা মাইনের চাকরি বেছে নিলেন অথবা প্র্যাকটিস করার সুযোগের জন্য বাণিজ্যিক পলিক্লিনিকগুলোর দ্বারস্থ হতে বাধ্য হলেন।
পলিক্লিনিকগুলো প্রথমেই জানিয়ে দিল যে কনসাল্টেশন ফি অন্তত দেড় - দু'শ টাকা না হলে তারা বসতেই দেবে না, কারণ তাতে ব্র্যাণ্ডের মূল্য কমে যাবে এবং রোগী পিছু পঁচিশ শতাংশ হারে অন্তত পঞ্চাশ টাকা করে না পেলে তারা ক্লিনিকের খরচ তুলতে পারবে না। আমাদের মতো অনেকের ক্ষেত্রেই অতএব ফি বেড়ে গেল এক লাফে পাঁচ-ছয় গুণ। তার সঙ্গে বদলে গেল চিকিৎসার পরিবেশ, ব্যাহত হল চিকিৎসক-রোগীর সরাসরি সম্পর্ক। এভাবে চিরতরে বদলে গেল জেনারেল প্র্যাকটিসের চরিত্র।
শুধু জেনারেল প্র্যাকটিস নয়, সবধরনের ডাক্তারি প্র্যাক্টিসের চরিত্র এভাবে বদলাতে শুরু করল। একই সময়ে কনজিউমার প্রোটেকশন অ্যাক্টের জুজু, সেই সংক্রান্ত উকিলি পরামর্শ, চিকিৎসক ও হাসপাতালগুলির জন্য মহার্ঘ্য ইনশিওরেন্সের কবচ ইত্যাদি এই পরিবর্তনকে দৃঢ় এবং অনমনীয় করে তুলল। হাসপাতাল এবং বড় পলিক্লিনিকগুলো চিকিৎসকদের ওপর একপ্রকার নির্দেশিকা জারি করা শুরু করল, তাদের সংস্থায় রোগী দেখতে গেলে কী জাতীয় প্রোটোকল মেনে চলতে হবে।
চিকিৎসার বিধিবদ্ধ প্রোটোকল থাকা খুবই ভালো, যাতে বেশিরভাগ চিকিৎসক বেশিরভাগ সময়ে তা থেকে একটা রূপরেখা পেতে পারেন, কিন্তু শাস্তির জুজু দেখিয়ে তৈরি এইসব প্রোটোকল প্রায়শই আইনত নিরাপদ থাকার লক্ষ্যে তৈরি, ফলে তাতে রোগীর কথা কম ভাবা হয়, হাসপাতালের নিরাপত্তার কথা বেশি। যেহেতু এই আইন বাঁচানোর প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন ইনভেস্টিগেশনের মাত্রা অনেক বেড়ে যায়, তাই তা বেসরকারি হাসপাতালের পক্ষে লাভজনকও বটে। মাঝখান থেকে চিকিৎসার খরচ বেড়ে হয় তিনগুণ।
পাশাপাশি চিকিৎসা সংক্রান্ত কমিউনিকেশনের ধরণটাও বদলে গেল। চরম অসুস্থ বাচ্চা কোলে ক্রন্দনরত মাকে আগে একসময় বলা হত, "ভয় নেই, আমরা তো আছি।" হয়ত চিকিৎসক নিজেও ভয় পাচ্ছেন, কিন্তু তাঁরা মায়ের আতঙ্ক কমানোকে বেশি গুরুত্ব দিতেন। শিশুটির বাঁচা অসম্ভব হলে পরে ধীরে ধীরে মাকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করা হত ধাক্কা সহ্য করার জন্য। সেই যুগ শেষ। কেন বাচ্চার মাকে প্রথমেই বলা হয়নি যে শিশুটি বাঁচবে না, তা ভাঙচুর এবং আইনি শাস্তির অন্যতম কারণ। অতএব পরের কষ্ট ভুলে আগে নিজেকে বাঁচাও। একটু খারাপ কিছু দেখলেই বলে দাও, "খুব খারাপ আছে। নাও বাঁচতে পারে। অন্যত্র নিয়ে যেতে পারেন।" ঠিক এই কথাগুলো একসময় আমাদের সকলকেই বলতে শেখানো হয়েছে আইনজ্ঞদের পরামর্শে। আন্তরিকতা আর সহমর্মিতার কবরের ওপর ফুটেছে নিরাপদ কথাবার্তার ফুল।
অনেকে মনে করেন চিকিৎসাক্ষেত্রে কনজিউমার প্রোটেকশন অ্যাক্ট জাতীয় আইনকানুনের প্রয়োগ চিকিৎসকদের শায়েস্তা করে চিকিৎসার মানোন্নয়ন এবং ক্রেতা হিসেবে রোগীর অধিকার সুরক্ষিত করার লক্ষ্যেই করা হয়েছিল এবং সেই প্রয়োগ সফল। স্পষ্টত তাঁরা সেই কথাগুলোই বিশ্বাস করেছেন যা অফিসিয়াল বক্তব্যে (বা বিজ্ঞাপনে) লেখা ছিল। তাঁদের সারল্যকে সম্মান জানাই। একসময় আমরাও সরলভাবে এটাই বিশ্বাস করতে চেয়েছিলাম।
অথচ অভিজ্ঞতায় দেখা গেল রোগী আর চিকিৎসকের মধ্যে সন্দেহের বাতাবরণ সৃষ্টি করার দ্বারা বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষা, যন্ত্র-নির্ভরতা, সহজে ভয় পেয়ে আইটিইউ বা বড় নার্সিংহোমে রোগীকে স্থানান্তরিত করার প্রবণতা এবং সামান্য উপসর্গ দেখলেই নিজে সেটার চিকিৎসা না করে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে (যেমন রোগী অম্বলের কথা বলামাত্র গ্যাস্ট্রোএণ্টেরোলজিস্টের কাছে) রেফার করে দেবার প্রবণতা কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেওয়াই এই আইনের একমাত্র সুফল। এই সুফলের উপভোক্তা বাণিজ্য জগৎ। এভাবে বেড়েছে যন্ত্রপাতি ও নানা রাসায়নিকের বিক্রি, বেড়েছে চিকিৎসার ব্যয় আর সেই সুযোগে বেড়েছে ইন্সিওরেন্সের রমরমা।
কার ভালোর জন্য এসব আইন প্রণীত ও ব্যবহৃত হয়, তা নিয়ে ভাবার প্রয়োজন আছে বৈকি। আদালত মহামান্য এবং বিচারের ঊর্ধ্বে, কিন্তু সাম্প্রতিক অতীতে বিচারব্যবস্থার নিরপেক্ষতা ও জনহিতৈষণা অন্তত মনের গভীরে আর প্রশ্নের ঊর্ধ্বে নয়। তবু আইন আদালতের উপর বিশ্বাস রাখতে চাইব অবশ্যই, কারণ তাতে শান্তি হয়, কিন্তু বেশ কিছু রায়ের উদাহরণ এবং তা থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা মন থেকে মুছে ফেলা কঠিন।
প্লুরাল ইফিউশন অর্থাৎ ফুসফুসের চারপাশের পর্দার মধ্যে জল জমে যাওয়া একটি অতি সাধারণ (কমন, অর্থাৎ অনেকের হয়, এই অর্থে) রোগলক্ষণ। স্টেথোস্কোপ দিয়ে এবং দু'হাতের আঙুল দিয়ে ঠোকাঠুকি করে (পার্কাশন) একটু ভালোমতো পরীক্ষা করলেই বলে দেওয়া যায় মোটামুটি কোন জায়গায় কী পরিমাণ জল জমেছে। এরপর এক্স রে করলেই অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্পষ্ট হয়ে যায় জলের অবস্থান ও পরিমাণ। সূঁচ ও সিরিঞ্জের সাহায্যে কিছুটা জল বের করে নিলে শ্বাসকষ্ট কমার পাশাপাশি জলটি পরীক্ষা করে জীবাণুর সংক্রমণের চরিত্র, ক্যান্সারের উপস্থিতি ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে বেশ কিছু তথ্য জানা যায়। সূঁচ দিয়ে পিঠ থেকে জল বের করার এই কাজটি আমরা প্রায় সকলেই বহুবার করেছি রোগীর শয্যার পাশে দাঁড়িয়ে এবং প্রায় কোনো বাড়তি খরচ ছাড়া (সার্জিক্যাল গজ, আয়োডিন ইত্যাদির খরচটুকু বাদ দিলে)। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হয় না। ছোট ইফিউশনের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা হতে পারে বলে সেসব ক্ষেত্রে আল্ট্রাসাউন্ড যন্ত্রের ব্যবহার সঙ্গত এবং ২০০৮ সাল নাগাদ সেই মর্মে কিছু গাইডলাইন আসে। সেই গাইডলাইন আসার এক বছর আগে রোগীর স্বার্থে মুম্বাইয়ের এক চিকিৎসক বিনা আল্ট্রাসাউণ্ডে এক রোগীর বুকে জমা জল বের করে দিয়েছিলেন। মাননীয় আদালত সেই চিকিৎসককে জরিমানা করেন একচল্লিশ লক্ষ টাকা।
ধরে নিচ্ছি সাবধান হবার জন্য সকলকে সচেতন করতে আদালত একটি ন্যায্য রায় দিয়েছেন, কিন্তু দেখা যাক এই সাবধানতার ফল কী হবে? আপনার পয়সা বাঁচানোর চেষ্টা করতে গিয়ে আমি সর্বস্বান্ত হতে পারি জানার পর আমরা কেউ আর সাহস করে কাজটিতে হাত দেব না, কারণ এখন এই সামান্য কাজটির মাথায় বনের মোষের মতো মস্ত দুটো সিং। ইণ্টারভেনশনাল রেডিওলজিস্টকে রেফার করা হবে। তিনি আল্ট্রাসাউন্ড যন্ত্র ব্যবহার করে যত্ন করে কাজটি করবেন। শুধু তাই নয় সাম্প্রতিক অন্যান্য রায়ে ভয় পেয়ে তিনি কাজটি করার আগে ইসিজি, ইকোকার্ডিওগ্রাম এবং কিছু রক্তের পরীক্ষাও চাইবেন। (এগুলো দশজনের মধ্যে দুজনের ক্ষেত্রে সত্যিই জরুরি অবশ্য।) সব মিলিয়ে বেসরকারি ক্ষেত্রে এই একটি কাজ করাতে আপনার খরচ বাড়বে কুড়ি-পঁচিশ হাজার টাকা এবং অন্তত একদিনের বাড়তি হাসপাতাল-বাস। কর্মভারাক্রান্ত সরকারি হাসপাতালগুলিতে দীর্ঘতর হবে ওয়েটিং লিস্ট এবং দেরি হবে চিকিৎসায়। শেষ অব্দি কোনো সরকারি চিকিৎসককে হয়ত আইন অমান্য করে রোগীর প্রাণ বাঁচাতে হবে, কিন্তু সেই চিকিৎসককে বাঁচাতে সরকার কিছু করবে না।
১৯৯০-এর দশকের শুরুর দিকে এক স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ এক প্রসূতির সিজারিয়ান সেকশন অপারেশন করেছিলেন মফস্বলের একটি নার্সিংহোমে, যেখানে আইটিইউ ছিল না। মনে করে দেখুন, সেই সময়ে মফস্বলের খুব নার্সিংহোমেই আইটিইউ ছিল এবং প্রসব সংক্রান্ত বা বন্ধ্যাকরণের অপারেশন, অ্যাপেন্ডিক্স অপারেশন, ফোঁড়া কাটা জাতীয় ছোট অপারেশন সাধারণত নির্ঝঞ্ঝাট বলে কম খরচে ছোট নার্সিংহোম বা হাসপাতালে করতেই বেশিরভাগ রোগী ও চিকিৎসক স্বচ্ছন্দ। অথচ সেই কাজটি করার অপরাধে চিকিৎসককে শাস্তি দেন মাননীয় আদালত অপরাধের দুই দশক পরে। কোন সময়ে? যখন অজস্র আইটিইউ গজিয়ে উঠেছে এবং প্রায়শই সেগুলো ফাঁকা থাকছে, ফলে ব্যবসা মার খাচ্ছে। জরিমানার অঙ্ক সামান্য, লাখ পাঁচেক। চিকিৎসক সেটা দিয়ে দেবেন, কিন্তু যে বার্তা দেওয়া হল, তা মারাত্মক। যে নার্সিংহোমে বা হাসপাতালে আইটিইউ নেই, সেখানে তাহলে ছোট-বড় কোনো অপারেশনই করা যাবে না। এই নিয়মে সরকারি সাব-ডিভিশন হাসপাতালগুলোতেও শল্যচিকিৎসা নিষিদ্ধ হয়ে যায়। সব রোগীকে অতএব রেফার করে দিতে হবে আইটিইউ-ওয়ালা বড় হাসপাতাল বা নার্সিংহোমে। সরকারি ক্ষেত্রে তার সংখ্যা কম, তাই বেসরকারি ক্ষেত্রেই ভিড় বাড়বে। আইটিইউ যেহেতু বুক করা থাকবে রোগীর জন্য, তাই ছোট অপারেশনের পরেও একদিন আইটিইউতে রেখে দেবার প্রবণতা বাড়বে। আপনার খরচ কত বাড়বে?
এরকম বেশ কিছু রায় দেখে খানিকটা অবাক হয়ে ভাবতে হয়, এসবের দ্বারা সাধারণ মানুষের কোনোরকম উপকার হওয়া আদৌ কীভাবে সম্ভব? এবার এর সঙ্গে আরও কয়েকটা বিষয় মিলিয়ে ভাবুন… স্বাস্থ্যসেবা থেকে ক্রমশ সরকারের হাত গুটিয়ে নেওয়া, বেসরকারি ক্ষেত্রে বৃহৎ কর্পোরেট পুঁজির বাড়বাড়ন্ত, সুবৃহৎ ইনশিওরেন্স কোম্পানিগুলোর বাজার বাড়ানো এবং সরকারের তরফেও বেসরকারি ইনশিওরেন্সকেই ত্রাতা বানানোর চেষ্টা ইত্যাদি। এবার সামগ্রিক কার্যকলাপের অভিমুখ কিছুটা স্পষ্ট লাগছে না? হ্যাঁ। ঠিক বুঝেছেন। বাণিজ্যে বসতে ব্রহ্ম।
(কৌশিক দত্ত আমরি হাসপাতালের চিকিৎসক, মতামত ব্যক্তিগত)
এই সিরিজের জরুরি লেখাগুলি পড়ুন এই লিংকে