/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2020/02/new-budget-health.jpg)
দেশ জুড়ে দশ কোটি পরিবারের বিমা সরকার করিয়ে দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং বাকি পঁচাত্তর কোটি মানুষকে নিজেদের জন্য বিমা কিনতে বলা হচ্ছে
আধুনিক চিকিৎসা পরিষেবার প্রবল মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে কয়েক পর্বে যে আলোচনা চলছিল, গত পর্বে তা শেষ হয়েছে। বিজ্ঞানের চরিত্রের মধ্যেই কীভাবে লুকিয়ে আছে আপাত অমানবিকতার বীজ, তা থেকে শুরু করে শহরকেন্দ্রিক বেসরকারি উচ্চ মূল্যের উন্নত হাসপাতাল নির্ভর চিকিৎসার সমস্যা, স্বাস্থ্য-বিমার নানা দিক, সরকার ও আইনের ভূমিকা হয়ে পরিশেষে সরকারের তরফে নিম্নবিত্তের হয়ে বিমার প্রিমিয়াম দিয়ে জোড়াতালি পদ্ধতিতে সমস্যা মেটানোর (অথবা চাপা দেবার) চেষ্টা ইত্যাদি বিষয়ে আমরা কথাবার্তা বলেছি। এসব বিষয়ে আরও বেশ কিছু কথা আলোচনা করা বাকি। তার আগে একটু ভাবা যাক এর বিকল্প কী হতে পারত বা পারে? সরকার কী করতে পারেন এই দেশের আর্থসামাজিক বাস্তবতা এবং বিবিধ সীমাবদ্ধতাকে অস্বীকার না করে? তারও আগে সমস্যার সংক্ষিপ্তসার দেখে নেওয়া যাক একবার।
পূর্ববর্তী আলোচনায় কয়েকটি বিষয় আমাদের কাছে পরিষ্কার হয়েছে।
১) আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান এবং "এভিডেন্স বেসড মেডিসিন" নামক দর্শনের চরিত্র এমন, যে তা যন্ত্র এবং পরীক্ষানিরীক্ষার (ইনভেস্টিগেশন) ওপর নির্ভরশীলতা বাড়াবে এবং তথাকথিত "ক্লিনিক্যাল মেডিসিন"কে ক্রমশ পিছনে ঠেলে দেবে।
দীঘিপুকুরের আয়নায় জীবন
২) যেহেতু আমাদের (পৃথিবী জুড়েই) বর্তমান অর্থনৈতিক কাঠামোটি মূলত ধনতান্ত্রিক বা বাজার ভিত্তিক, তাই চিকিৎসা বিজ্ঞানের এই চরিত্রকে বাণিজ্যিক স্বার্থে ব্যবহার করা হবে অবধারিতভাবে।
৩) কর্পোরেট পুঁজির প্রবেশে বড় বড় হাসপাতাল তৈরি হবে, তাতে উন্নত যন্ত্রপাতি থাকবে এবং উচ্চ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসকদের নিয়োগ করে সর্বশেষ গাইডলাইন অনুসারে উন্নত চিকিৎসা দেবার চেষ্টা হবে, এটা প্রত্যাশিত এবং এই প্রত্যাশাতেই লোকে বড় বেসরকারি হাসপাতালে যান। এর ফলে মৃত্যুর হার কিছুটা কমবে, রোগের আরোগ্যের হার কিছুটা বাড়বে, কিন্তু পাশাপাশি খরচ বাড়বে হুহু করে। খরচ আর প্রত্যাশা অতিরিক্ত বেড়ে যাবার ফলে আগের চেয়ে কিছু উন্নত চিকিৎসা এবং ভালো ফল পেলেও মানুষ খুশি হতে পারবেন না, কারণ সব মৃত্যু প্রতিরোধযোগ্য নয় বা সব রোগ সারে না, এদিকে বিল মেটাতে ঘাম ছুটে যায় রোগ সারুক বা না সারুক।
৪) যেহেতু চিকিৎসা ক্ষেত্রে কর্পোরেটগুলির বিনিয়োগ বিপুল, তাই ক্ষেত্রটিকে লাভজনক করে তোলার জন্য সাধারণ মানুষের মধ্যে বিজ্ঞাপনের পাশাপাশি চিকিৎসকদের ওপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করা এবং রাজনৈতিক মহলে 'লবিইং' করা তাদের পক্ষে স্বাভাবিক। দেখা গেছে প্রশাসন এবং আইন এমনভাবেই কাজ করছে, যাতে চিকিৎসকেরা চাপে পড়ে নতুন প্রযুক্তি, দামী ওষুধ, বড় হাসপাতাল, প্রচুর পরীক্ষা ইত্যাদির কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হন।
৫) ক্ষমতা ক্রমশ রোগী ও চিকিৎসক/ চিকিৎসাকর্মীদের হাত থেকে সরিয়ে বণিকদের হাতে দেবার চেষ্টা চলছে প্রবলভাবে।
হর্নশূন্য আইজল, কলকাতা কি সপ্তাহে একটা দিনও হর্নশূন্য হতে পারে?
৬) সরকার ক্রমশ চিকিৎসা পরিষেবার দায়িত্ব থেকে হাত গুটিয়ে নিচ্ছে বেশ কিছু সময় ধরেই৷ মূলত সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থাকে শিথিল করে বেসরকারি পরিষেবাকেই কেন্দ্রে আনার চেষ্টা চলছে।
৭) পাশাপাশি এটাও বোঝা যাচ্ছে যে ভারতের মতো দেশে বেশিরভাগ মানুষ নিজের খরচে এই মহার্ঘ্য বেসরকারি পরিষেবা কিনতে সক্ষম নন। চিকিৎসা বিমাকেই সমাধান হিসেবে তুলে ধরা হল। দেখা গেল অনেকেই বিমা কেনার ব্যাপারে সচেতন নন এবং অনেকে নিয়মিত নিজের পকেট থেকে প্রিমিয়ামের টাকা দিতে সক্ষম নন।
৮) একথা সাধারণ মানুষ এবং রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা সহজেই বুঝেছেন যে স্বাস্থ্যসেবা থেকে সরকার একেবারে সরে দাঁড়ালে গরিষ্ঠ সংখ্যক মানুষ বিনা চিকিৎসায় মারা যাবেন, স্বাস্থ্য পরিষেবা ভেঙে পড়বে এবং ব্যাপক গণ-অসন্তোষের ফলে প্রশাসন বিপর্যস্ত হবে। অতএব সরকারকে কিছু দায়িত্ব নিতেই হবে, অন্তত দায়িত্ব নেবার ভান করতে হবে।
৯) এই খানিক দায়িত্ব নেবার পদ্ধতি হিসেবে সরকারও বেছে নিয়েছে বিমাকেই। অর্থাৎ বিমার প্রিমিয়াম সরকার দেবে। কেন্দ্রীয় সরকার ও বিভিন্ন রাজ্য সরকার একই পথে হাঁটছে। আপাতদৃষ্টিতে এটাকে ভালো উদ্যোগ বলা চলে কিন্তু এর মধ্যে সমস্যা অনেক। এই সরকারি বিমা-ভিত্তিক প্রকল্পগুলো নিয়ে প্রবল দুর্নীতি ছাড়াও কিছু মৌলিক সমস্যা আছে। সরকার নিজ ব্যবস্থাপনায় মানুষকে যা চিকিৎসা দিতে পারে, সেই মানের চিকিৎসা এই পদ্ধতিতে দিতে গেলে সরকারের খরচ হবে অনেক বেশি (এমনকি সব দুর্নীতি বন্ধ হলেও), কারণ বেসরকারি হাসপাতাল এবং বেসরকারি বিমা কোম্পানি, উভয়ের মুনাফার টাকা জোগান দিতে হবে সরকারকে এবং তা আসবে জনগণের ট্যাক্সের টাকা থেকে। অর্থাৎ এই পদ্ধতিতে ট্যাক্সের টাকা সরকারের ঘর থেকে কিছু ব্যবসায়ীর ঘরে চালান হয়।
১০) যেহেতু এই ধরণের প্রকল্পে সাধারণত আউটডোর চিকিৎসার খরচ দেওয়া হয় না, তাই চিকিৎসা বাবদ খরচের একটা বড় অংশ রোগীকেই করতে হয় এধরনের সরকারি প্রকল্পের আওতায় এলেও। সব মিলিয়ে এই বিমা-ভিত্তিক প্রকল্পগুলো স্বাস্থ্য পরিষেবা সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান নয়।
মনোরঞ্জন ব্যাপারী ও অরুন্ধতী রায়, শেষ পর্যন্ত দুজনেই…
সুতরাং জনস্বাস্থ্যের হাল ফেরাতে এই মডেলটি আমাদের দেশের পক্ষে সঠিক নয়। এর বিকল্প ভাবা দরকার, এখনই। সরকারকে ভাবতে হবে, সুস্থতর দেশের লক্ষ্যে কীভাবে কোষাগারের অর্থ খরচ করা উচিত। স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি সেই অর্থের সদর্থক ব্যয়ের ব্যবস্থা করাও সরকারের কর্তব্য। আমাদের ধারণা, সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থাটিকে পুনরুজ্জীবিত করে তোলা, তার বিভিন্ন স্তরের দিকে সমানভাবে নজর দেওয়া, কয়েকটি বড় শহরের হাতে গোনা নামি হাসপাতালের মধ্যে আটকে না থেকে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা জেলাস্তরে ছড়িয়ে দেওয়া, প্রাথমিক চিকিৎসার দিকে বিশেষভাবে নজর দেওয়া এবং বড় হাসপাতালে রোগী রেফার করার ব্যাপারে একটি সুপরিকল্পিত কার্যকর নিয়ম তৈরি করার মাধ্যমে এই লক্ষ্যের অভিমুখে বেশ কিছুটা এগোনো সম্ভব। অর্থের অপচয় রোধ করতে পারলে বিপুল খরচ ছাড়াই এসব করা সম্ভব।
কেন্দ্রীয় সরকারের "আয়ুষ্মান ভারত" প্রকল্পটির কথা গত পর্বেই আলোচনা করেছিলাম। মূলত এই প্রকল্পের বিমা-ভিত্তিক চিকিৎসার দিকটিই আলোচিত হয়েছে, কিন্তু বিমাই প্রকল্পটির একমাত্র দিক নয়। আরও কিছু পরিকল্পনা আছে, যেমন এই প্রকল্পের আওতায় ভারত জুড়ে দেড় লক্ষ সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র বা হেলথ অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টার তৈরি হবে। মূলত উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোর উন্নয়নের মাধ্যমে এই কেন্দ্রগুলো গঠন করা হচ্ছে। আমাদের রাজ্যেও বেশ কিছু উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র এই স্তরে উন্নীত হয়েছে। এই ধরণের পদক্ষেপ বরং অনেক বেশি গঠনমূলক এবং দীর্ঘ মেয়াদে ফলপ্রসূ।
সরকার কোন পথে এগোতে চায় তা আন্দাজ করার জন্য স্বাভাবিকভাবেই ২০২০ সালের বাজেট নিয়ে কৌতূহল ছিল স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসকদের। যা দেখা গেল, তাতে স্বাস্থ্য বিষয়ে সরকারের কোনো সুচিন্তিত পরিকল্পনা আছে বলে মনে হল না, তবে সামগ্রিকভাবে অভিমুখ যে বেসরকারিকরণের দিকে, তা স্পষ্ট৷ গতবারের বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ ছিল জিডিপির ১.২ শতাংশ। এবার তা সামান্য বেড়ে প্রায় ১.৩ শতাংশের কাছাকাছি হয়েছে, যদিও এই বর্ধিত বরাদ্দও ন্যূনতম প্রয়োজনের অর্ধেক মাত্র। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণের জন্য ৬৯,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী। এতে একটু খুশি অন্তত হওয়াই যেত, যদিও গতবারের মতো এবারেও হয়ত অর্থাভাবের কারণ দেখিয়ে সরকার এর থেকে বেশ খানিকটা ছেঁটে দেবে অদূর ভবিষ্যতে। একটু ভালো করে দেখলে কিন্তু খুশি হবার আগে দুবার ঢোঁক গিলতে হবে।
প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ ৪,৭১,৩৭৮ কোটি টাকা, যা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বাবদ বরাদ্দের সাত গুণ। অর্থাৎ দেশের একশ পঁচিশ কোটি মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য সরকার (আর্থিকভাবে) যতটা আগ্রহী, তা সীমান্ত রক্ষার আকুতির চোদ্দ শতাংশ মাত্র। এই তারতম্য দেশের মানচিত্রের পক্ষে শুভ, কিন্তু দেশবাসীর পক্ষে নয়। যেহেতু অসুস্থ জাতির কর্মক্ষমতা কম হয়, তাই দেশের অর্থনীতির পক্ষেও তা শুভ নয়। প্রধানমন্ত্রীর এসপিজি নিরাপত্তার খাতেই বরাদ্দ ৬০০ কোটি টাকা। সীমান্ত নিরন্ধ্র করার বিপুল আয়োজনের পরেও দেশের অভ্যন্তরে সদ্য দ্বিতীয়বার নির্বাচিত জনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রীর ভয় কার থেকে, সেই প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে বলা যায় যে এই হারে খরচ ধরলে একশ পঁচিশ কোটি মানুষের জীবন রক্ষার জন্য বরাদ্দ অর্থে মাত্র একশ জন বড় মাপের ভিআইপিকে নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব। অর্থাৎ একজন বড় রাজনেতার জীবনের মূল্য অন্তত এক কোটি নাগরিকের জীবনের মূল্যের চেয়ে বেশি।
স্বাস্থ্য খাতের এই বরাদ্দের প্রায় এগারো শতাংশ মাত্র ছয়টি নামজাদা কেন্দ্রীয় হাসপাতালের জন্য বরাদ্দ। একদিক থেকে দেখলে এতে আপত্তি করার উপায় নেই কারণ এগুলো সেন্টার অফ একসেলেন্স। তবু প্রশ্ন থাকে এই মুহূর্তে চিকিৎসা ছড়িয়ে দেওয়া, প্রাথমিক স্বাস্থ্যের উন্নতি এবং বিভিন্ন চালু স্বাস্থ্য প্রকল্পকে অক্সিজেন জোগানোর দিকে আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল কিনা। সেন্টার অফ এক্সেলেন্সগুলো আমাদের জাতীয় গৌরব, কিন্তু চিকিৎসা মূলত রোগী কেন্দ্রিক এবং মানুষের জীবন ও সুস্বাস্থ্য রক্ষাই তার মূল লক্ষ্য। কোনো সংস্থা বা চিকিৎসকের গরিমা তার চেয়ে বেশি দামী নয়।
চিকিৎসাকে ছড়িয়ে দেবার কথা অবশ্য বলা হয়েছে এক জায়গায়। জেলা হাসপাতালগুলোকে উন্নত করে মেডিক্যাল কলেজে পরিণত করা বা কলেজের সঙ্গে সংযুক্ত করার প্রস্তাব আছে, কিন্তু তা প্রাইভেট পাব্লিক পার্টনারশিপ (পিপিপি) মডেলে। অর্থাৎ জেলা হাসপাতালগুলোকে ব্যবসায়িক সংস্থাগুলোর কাছে আইনত উন্মুক্ত করার প্রক্রিয়া এবং চিকিৎসা শিক্ষার অঙ্গনে বাণিজ্যিক সংস্থার উপস্থিতি বৃদ্ধির প্রক্রিয়া শুরু হল। এলআইসি বিলগ্নিকরণের অর্থনৈতিক ভাবনার খুবই মানানসই এই পরিকল্পনা। এরপর এরকম জেলা হাসপালে বেসরকারি সংস্থা যখন একটি নতুন এক্স রে মেশিন বসাবে, তার দুই মাস পরে সরকারের পুরনো মেশিনটি কাজ করা বন্ধ করবে এবং ধীরে ধীরে সব রোগীকেই এই নতুন বেসরকারি মেশিনে এক্স রে করাতে হবে এবং সরকার আর নতুনক যন্ত্র নিজে কিনবে না। ফলে যারা বিনা পয়সায় বা খুব কম দামে এক্স রে করাতে পারছিল, তাদের এবার কিছু খরচ করতে হবে, যা কর্পোরেট হাসপাতালের খরচের চেয়ে কম কিন্তু সরকারি হাসপাতালে আগে যা খরচ হত, তার থেকে বেশি। এভাবে বহুরকম পরীক্ষা ও চিকিৎসার খরচ বাড়বে। ডাক্তারি পড়ার খরচাও বাড়বে। অর্থাৎ জেলা হাসপাতালগুলির উন্নয়নের আড়ালে বিনামূল্যে বা সামান্য মূল্যে চিকিৎসা পাবার বা স্বল্প খরচে ডাক্তারি পড়ার সুযোগ শেষ হয়ে যাবে। মধ্যবিত্তরা এই পরিবর্তন হজম করে নিলেও দরিদ্ররা বিপাকে পড়বেন।
এখন যা সরকারি হাসপাতাল, কাল যদি সেখানেও পয়সা দিয়ে চিকিৎসা কিনতে হয়, তাহলে উপায়? সরকার বলবেন উপায় হল বিমা। দেশ জুড়ে দশ কোটি পরিবারের (অর্থাৎ প্রায় পঞ্চাশ কোটি মানুষের) বিমা সরকার করিয়ে দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং বাকি পঁচাত্তর কোটি মানুষকে নিজেদের জন্য বিমা কিনতে বলা হচ্ছে। আশ্চর্য ব্যাপার নতুন আয়কর কাঠামোয় স্বাস্থ্য বিমা বাবদ ব্যয়ের জন্য কোনো কর ছাড় নেই! অর্থাৎ সরকার চিকিৎসা দেবেন না এবং চিকিৎসা খাতে ব্যয়ের জন্য কোনো কর ছাড়ও দেবেন না। যে পঞ্চাশ কোটি মানুষ আয়ুষ্মান ভারতের বিমার আওতায় আসবেন, তাঁরাও কিন্তু সুবিধাটি পাবেন ভর্তি হয়ে চিকিৎসার ক্ষেত্রে। আউটডোর ভিত্তিতে যে চিকিৎসা তাঁরা হয়ত বিনামূল্যে এতদিন পাচ্ছিলেন সরকারি হাসপাতালে, অদূর ভবিষ্যতে তার জন্য তাঁদের কিছু খরচ করতে হবে। এই ব্যবস্থাটি গা সওয়া হয়ে গেলে পিপিপি মডেলের পরিষেবার মূল্য বৃদ্ধি পাবার সম্ভাবনা প্রবল।
স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও রাজ্যের যৌথ বিষয়। আমাদের রাজ্যে যেমন এই মুহূর্তে সরকারি হাসপাতালে প্রায় সবরকম চিকিৎসা বিনামূল্যে পাওয়া যায়, যদিও তার গুণমান নিয়ে অনেকেই অসন্তুষ্ট। এমতাবস্থায় এই উন্নয়নের মডেলটি কীভাবে লাগু হবে এবং তা কতটা গ্রহণযোগ্য হবে, তা নিয়ে সংঘাত শুরু হয়েছে। দুঃখের বিষয় এই বিতণ্ডাটি উভয় তরফেই রাজনৈতিক তরজা মাত্র, গঠনমূলক আলোচনার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
পিপিপি মডেল চালু করার পক্ষে যাঁরা, তাঁদের সকলেরই বক্তব্য যে এর ফলে পরিষেবার মানোন্নয়ন হবে এবং প্রফেশনালিজম বাড়বে। সরকারি হাসপাতালে কেন মানোন্নয়ন হতে পারে না বা সরকারি চিকিৎসার সঙ্গে প্রফেশনালিজমের শত্রুতা কোথায়, তা আজও বুঝলাম না৷ সরকারি হাসপাতালে ঢুকলেই সবাই নিজের কাজকে ভালবাসতে ভুলে যাবেন, এমনটা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় মনে হয়নি। বরং এর বিপরীত সম্ভাবনাও আছে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় উপযুক্ত পরিকাঠামো পেলে, শান্তিতে ভালো কাজ করার সুযোগ পেলে বহু চিকিৎসক এবং অধিকাংশ টেকনিশিয়ান, নার্স বেসরকারি হাসপাতাল ছেড়ে সরকারি হাসপাতালে কাজ করতে আগ্রহী হবেন। এঁদের কাজে লাগিয়ে যদি সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবাকে জনগণের প্রথম পছন্দে পরিণত করা যায়, তাহলে বেসরকারি ক্ষেত্রের গুরুত্ব নিজে থেকেই কমে যাবে এবং মূল্য নিয়ন্ত্রণ সহজতর হবে প্রতিযোগিতামূলক অর্থনীতির নিয়মেই। আসল সমস্যা হল, সরকার তা চান না। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার স্বাস্থ্যোদ্ধার নয়, পরিকাঠামোটির বেসরকারিকরণই তাঁদের লক্ষ্য।
এই কলামের গুরুত্বপূর্ণ লেখাগুলি পড়তে ক্লিক করুন এই লিংকে