এই কলামে গত কয়েকটি পর্বে আমরা দেখেছি কীভাবে আধুনিক চিকিৎসা অগ্নিমূল্য হয়ে উঠেছে (আরও হচ্ছে এবং হবে)। বিজ্ঞান এবং আইন কীভাবে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই মূল্যবৃদ্ধি ঘটানোর অংশীদার, সেই দিকটাও আমরা বিশ্লেষণ করে দেখেছি। দেখা গেছে বড় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রশাসনও স্বাস্থ্য পরিষেবাকে সম্পূর্ণভাবে লাভজনক ব্যবসায় পরিণত করতে আগ্রহী এবং স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বেশ কিছু নীতি ও আইন প্রণয়ন করা হয়েছে এই উদ্দেশ্যেই, তথা সেসব আইনের প্রয়োগ করা হয় স্বাস্থ্যসেবা যাতে বাণিক্যিক হাতকড়া খুলে পালিয়ে যেতে না পারে, সেটা নিশ্চিত করার জন্যই।
ঘটনা হল চিকিৎসার খরচ সত্যিই সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে বা ইতোমধ্যেই চলে গেছে। তাহলে উপায়? হঠাৎ করে আপনার প্রিয়জন গুরুতর অসুস্থ হয়ে কর্পোরেট হাসপাতালে ইন্টেন্সিভ কেয়ার ইউনিটে ভর্তি হলেন আর চিকিৎসান্তে আপনি দেখলেন খরচ হয়েছে তিন সপ্তাহে সাত লক্ষ টাকা। তখন কী করবেন? যে চিকিৎসকের অধীনে আপনার রোগী ভর্তি ছিলেন, তাঁকে অনুরোধ করতে পারেন কিছু সুরাহা করার জন্য। আমাদের দেশে মানুষের পুরনো অভ্যাস এসব ক্ষেত্রে চিকিৎসককে গিয়ে বলা, "ডাক্তারবাবু কিছু করুন।"
বামপন্থা, সাম্য, বিবেকানন্দের ভাবনা এবং আজকের হিন্দুত্ববাদীরা
আগেকার দিনে চিকিৎসকের হাতে কিছু নিয়ন্ত্রণ সত্যিই ছিল। মফস্বলের ছোট নার্সিংহোমে হয়ত আজকেও কিছু সংখ্যক চিকিৎসকের হাতে কিছু ক্ষমতা আছে, কিন্তু বড় শহরের বড় মাপের কর্পোরেট হাসপাতালে চিকিৎসক একজন কর্মচারী মাত্র। আম্বানি গোষ্ঠীর (বা সমপর্যায়ের অন্য ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর) মালিকানাধীন দশ হাজার কোটি টাকা দামের হাসপাতালে নগেন ডাক্তার একটি পুঁটিমাছ মাত্র। তাঁর কথায় হাসপাতালের বাণিজ্যিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় না। হয়ত বছরে দুজন রোগীর বিল ১০% কমানোর সুপারিশ করার অধিকার তাঁকে দেওয়া হতে পারে, যদি তিনি সিনিয়র আর গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসক হন।
ধরা যাক নগেন ডাক্তারের জ্যাঠামশাই ছিলেন আপনার পিতামহের পরিচিত এবং সেই সূত্রে ডাক্তার নিজের ফি ১০০% মকুব করে দিলেন। তাতে আপনার বিল কমবে কুড়ি-বাইশ হাজার টাকা। হ্যাঁ, অতটুকুই। সেটা করার জন্যও নগেনবাবুকে জবাবদিহি করতে হবে, কারণ তাঁর ফি বাবদ নেওয়া অর্থ থেকে কুড়ি শতাংশ হাসপাতাল নিয়ে থাকে সার্ভিস চার্জ বাবদ। তাই তিনি ফি ছেড়ে দিলে হাসপাতালের কিছু লোকসান হয়। নগেনবাবু ছাড়া অন্য যতজন চিকিৎসক কোনো সময়ে রেফার কেস হিসেবে দেখেছিলেন রোগীকে, তাঁরা সকলে যদি নিজেদের সম্পূর্ণ পারিশ্রমিক ছেড়ে দেন, তাহলে আরও হাজার কুড়ি টাকা কমল ধরে নেওয়া যাক। তার পরেও অন্তত সাড়ে ছয় লক্ষ টাকা বাকি রইল। দুম করে অত টাকা আপনি পাবেন কোথায়, যদি খুব ধনী ব্যক্তি না হন?
ঘটি-বাটি বিক্রি করে দেওয়া বা বন্ধক রাখা একটা পথ হতে পারে। কিছু পরিসংখ্যান বলছে যে চিকিৎসার খরচ সামলাতে গিয়ে নাকি প্রতি বছরই বেশ কিছু পরিবার দরিদ্র হয়ে যাচ্ছেন। সংখ্যাটা অবজ্ঞা করার মতো নয়। এই বিপদ থেকে বাঁচার কি কোনো উপায় আছে? এই প্রশ্ন করলে প্রায় সকলেই এখন উত্তর দেন, "ইনশিওরেন্স"।
বিনামূল্যে বা স্বল্প মূল্যে সরকারি চিকিৎসার বন্দোবস্ত থাকা উচিত, এমন কথা সচরাচর কারো মাথায় আসে না। এর কারণ কল্যাণকামী রাষ্ট্রের ধারণাটিকে চ্যালেঞ্জ করা শুরু হয়েছিল বিংশ শতাব্দীর সাতের দশক থেকেই। ক্রমশ সরকার স্বাস্থ্যসেবা থেকে হাত গুটিয়ে নিতে শুরু করে এবং ব্রিটিশদের থেকে পাওয়া রাষ্ট্রীয় তত্ত্বাবধানে জনগণের চিকিৎসার বন্দোবস্তের মডেলটিকে সরিয়ে মার্কিন ব্যাবসায়িক স্বাস্থ্য পরিষেবা তথা ম্যানেজড কেয়ারের মডেলকে জায়গা করে দেবার প্রকল্প শুরু হয়। এই কাজটি করা হয়েছে ধাপে ধাপে, ধীরে ধীরে এবং সুচারুভাবে। প্রতিটি ধাপে অল্প অল্প করে পরিবর্তন করা হয়েছে শুরুর দিকে, যাতে গণবিক্ষোভ না হয়।
মিসাইল, ধানিপটকা এবং ডাণ্ডা – পক্ষবিচার পাঠকের
পাশাপাশি ওয়েলফেয়ার স্টেট বাস্তবে অচল বা টেকসই নয়, বাণিজ্যিক মডেলটিই সঠিক বিকল্প, এই পদ্ধতিতেই উন্নত চিকিৎসা ভারতে আসবে… এইসব কথা মানুষের মাথায় (বিশ্বাসে) ঢুকিয়ে দেবার জন্য বুদ্ধিজীবীদের একাংশকে নিয়মিত দক্ষভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। এঁদের জ্ঞান ও যুক্তি ফেলে দেবার মতো নয়, তাই এঁরা সাফল্যও পেয়েছেন। এর বিপ্রতীপে অন্য কথাটি মানুষকে বোঝানোর জন্য যথেষ্ট বুদ্ধি ও সময় খরচ করা হয়নি। তাই আজ মানুষ মার্কিন মডেলটির বাইরে ভাবতেই পারেন না।
ভাবনা-চিন্তার বর্তমান বাস্তবতার মধ্যে, অতএব, আপনার সামনে খোলা একমাত্র পথ হল ইনশিওরেন্স। কঠিন চিকিৎসার দুর্বহ খরচ বহন করার জন্য তাই মধ্যবিত্তসহ সকলের ভরসা মেডিক্লেম। বর্তমান লেখক নিজেও তা থেকে মুক্ত নন। নিজের মেডিক্লেম ইনশিওরেন্স বাবদ গত সতেরো বছরে লাখ দেড়েক টাকার বেশি প্রিমিয়াম দেওয়া হয়ে গেছে, যদিও আজ অব্দি এক পয়সার সুবিধাও নেওয়া হয়ে ওঠেনি। এর বাইরে আছে পরিবারের অন্যদের ইনশিওরেন্স।
বয়স্কা মায়ের জন্য প্রিমিয়ামের অঙ্ক আরও বেশি, কিন্তু তিনি এক লক্ষের বেশি কভারেজ পেতে পারবেন না এবং বাস্তবে খরচ যতই হোক, গুটি সত্তর হাজারের বেশি কখনোই পাবেন না। স্ত্রী সন্তানের আলাদা ব্যবস্থা। অথবা আপনি পরিবারের জন্য একত্রে একটি ইনশিওরেন্সও কিনতে পারেন, যদি ইনশিওরেন্স নেবার আগেই আপনার পরিবার সম্পূর্ণ হয়। প্রত্যেক ক্ষেত্রেই একই অঙ্কের কভারেজের জন্য বাৎসরিক প্রিমিয়ামের টাকার অঙ্ক ক্রমশ বাড়তে থাকবে। ভবিষ্যতে ক্লেমের টাকা পাবার সম্ভাবনাও কমবে, যদি এই ব্যাপারে বিশ্বের ইতিহাসকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হয়। আপনি যদি কোনো বড় সংস্থায় কাজ করেন, তাহলে সেই সংস্থার তরফে আপনি গ্রুপ মেডিক্লেম ইনশিওরেন্স পেতে পারেন, যাতে ক্লেমের টাকা পাওয়া অপেক্ষাকৃত সহজ, কিন্তু আপনার চাকরি গেলে কী হবে, তা আগে থেকে ভেবে ও বুঝে নেওয়া দরকার।
আমাদের দেশে মেডিক্যাল ইনশিওরেন্সের ইতিহাস পাশ্চাত্যের তুলনায় অর্বাচীন। তিন দশক পেরোলো সবে। ভারতে প্রথম ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিমা চালু হয় ১৯৮৬ সাল নাগাদ। তার আগে জীবন বিমা ছিল, কিন্তু স্বাস্থ্য বিমা ছিল না। চালু হবার সঙ্গে সঙ্গে তা জনপ্রিয় হয়নি। তেমন হলে আজকের বয়স্ক মানুষদের অধিকাংশের বহু বছর ধরে চালু স্বাস্থ্য বিমা থাকত এবং তাঁদের চিকিৎসা সংক্রান্ত অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কিছুটা অন্যরকম হত। বস্তুত সেই সময়ে চিকিৎসার যা ব্যবস্থা এবং খরচ ছিল, তাতে বেশিরভাগ মানুষ বিষয়টিকে গুরুত্ব দেননি। তখনও সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা গ্রহণ করার বিরুদ্ধে মধ্যবিত্ত মনকে বিষিয়ে তোলার কাজটি তেমন দক্ষভাবে করা হয়ে ওঠেনি।
এর কিছুদিন পর থেকেই সেই কাজটি শুরু হয়। আগে ছিল হাতে গোনা কয়েকটি বড় কর্পোরেট হাসপাতাল। তাছাড়া বিভিন্ন শহরে মফস্বলে গুটিকতক ছোট নার্সিংহোম। এর বাইরে সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র, হাসপাতাল বা বিভিন্ন কারখানা বা কোম্পানির কর্মীদের জন্য নিজস্ব হেলথ সেন্টার ও হাসপাতাল। যেমন আমার শৈশবে দুর্গাপুরে থাকাকালীন স্টিল অথরিটি অব ইন্ডিয়ার হেলথ সেন্টার ও হাসপাতালের ওপরেই নির্ভরশীল ছিলাম, যেহেতু আমার বাবা সেখানকার কর্মী ছিলেন। মেডিক্লেমের ধারণা ছিল না। নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে যখন 'সেইল' জানালো যে অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের চিকিৎসার দায়িত্ব তারা সরাসরি না নিয়ে মেডিক্লেমের মাধ্যমে করবে, তখন প্রথম ব্যাপারটা নিয়ে ভাবতে হল। দেখা গেল, এর ফলে দুর্গাপুরের বাইরেও বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা করানো যাবে, ফলে প্রস্তাবটি লোভনীয়। এই তালিকা হাতে নিয়ে বোঝা গেল বেসরকারি হাসপাতালের সংখ্যা হঠাৎই যেন অনেক বেড়ে গেছে।
নব্বইয়ের দশক থেকে সময়টিকে স্বাস্থ্য পরিষেবার বেসরকারিকরণ ও স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বিমার প্রবেশের নিরিখে খেয়াল করলে রোমাঞ্চকর মনে হবে। এই সময় বেসরকারি হাসপাতালগুলো সংখ্যায় বাড়তে শুরু করেছে। তাদের প্রয়োজন আরও বেশি খদ্দের (অর্থাৎ রোগী)। রোগী আসবে কোথা থেকে? সরকারি হাসপাতালমুখো রোগীর স্রোতকে বিপরীত মুখে ঘোরাতে হবে।
নয়া নাগরিকত্ব আইন: ভবঘুরে রাস্তাবাসীদের কী হবে?
এর একটা উপায় হল বিজ্ঞাপন। সরকারি হাসপাতালে কী কী পাওয়া যায় না আর বেসরকারি কর্পোরেট হাসপাতালে কী কী পাওয়া যায়, তার ফিরিস্তি। এই পথটি জরুরি কিন্তু একা যথেষ্ট সফল হতে পারবে না, তা আন্দাজ করা হয়েছিল। তাই পাশাপাশি শুরু হল প্রথম সারির খবরের কাগজগুলোতে নিয়মিতভাবে সরকারি হাসপাতালের নিন্দা।
আউটডোরে কত লম্বা লাইন, সরকারি ওষুধের গুণমান কত খারাপ, কেমনভাবে দুম করে মারা গেলেন কোনো রোগী (সাধারণত রোগের জটিলতার কথা আলোচনা না করে), ওয়ার্ডগুলো কেমন নোংরা আর পূতিগন্ধময়, বাথরুমে কেমন জল জমে থাকে… এসব আখ্যান সকালের কাগজে বছরের পর বছর রোজ পড়তে পড়তে মানুষের মনে ভয় ঢুকে গেল যে সরকারি হাসপাতাল হল নরকের দ্বার, সেখানে গেলে মৃত্যু অবধারিত। অতএব বাঁচতে যদি চাও, সঞ্চয় বগলদাবা করে চলো বেসরকারি হাসপাতালে। সরকারি হাসপাতালগুলোর সম্বন্ধে এসব খবর যে সর্বৈব মিথ্যা ছিল, তা নয়।
সেগুলো ছিল নির্বাচিত সত্যের একপেশে পরিবেশন, যার দ্বারা বেসরকারি স্বাস্থ্য ব্যবসা লাভবান হয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে ক্রমাগত এই জাতীয় প্রচার সংবাদমাধ্যম একেবারে কোনোরকম বাণিজ্যিক বোঝাপড়া ছাড়া, বিনা পারিশ্রমিকে, শুধুমাত্র সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার বেহাল দশার কথা প্রচার করার নৈতিক দায়িত্ব মেনে করে গেছেন, এমনটা হতেই পারে। তবে এমন নাও হতে পারে। তাঁদের উদ্দেশ্য যাই হোক, বেসরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবায় বিনিয়োগকারীরা তাঁদের অবদান কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন।
একই সময়ে কনজিউমার প্রোটেকশন অ্যাক্ট, কিছু বিখ্যাত মামলা ইত্যাদির সাহায্যে চিকিৎসকদেরও বাধ্য করা হয় অধিক খরচসাপেক্ষ চিকিৎসা পদ্ধতি অবলম্বন করতে। এই বিষয়ে আগে আলোচনা করা হয়েছে। আপাতত শুধু সময়টাকে বিশেষভাবে খেয়াল করতে বলছি। এর আগে যখন মূলত সরকারি হাসপাতালভিত্তিক চিকিৎসা ছিল, তখন চিকিৎসকদের ব্যয়সাপেক্ষ পদ্ধতি অবলম্বন করার জন্য আইনি চাপ দিয়ে কারো বাণিজ্যিক লাভ ছিল না, তাই সিপিএ লাগু করার কথা কারো মনে হয়নি। যখন বেসরকারি হাসপাতালগুলো বাড়ছে এবং বিমা কোম্পানিগুলো ভারতের বাজারের দিকে নজর দিতে শুরু করেছে, অর্থাৎ উভয়ের উপার্জনের স্বার্থে চিকিৎসাক্ষেত্রে ব্যয়বৃদ্ধি ঘটানো প্রয়োজন, ঠিক তখনই এতকিছু শুরু হল। অদ্ভুত সমাপতন! তাই না?
যখন মধ্যবিত্ত মানুষ সরকারি স্বাস্থ্যসেবা পরিত্যাগ করে বেসরকারি ক্ষেত্রে চলে যাওয়া শুরু করেন, তখন সরকারও এই স্রোত রোধ করার কোনো চেষ্টা করেনি। বস্তুত সরকার এতে খুশিই ছিল। শিক্ষিত মধ্যবিত্ত মানুষ প্রায়শ চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতি সম্পর্কে কিছুটা ওয়াকিবহাল হন। হাসপাতালে কী ধরণের পরিষেবা পাওয়া উচিত, সে সম্বন্ধে তাঁদের কিছু ধারণা থাকে। তাঁরা তা নিয়ে দাবি পেশ করতে পারেন।
তাই এই শ্রেণিকে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবার আওতায় রাখলে ব্যবস্থাটিকে সঠিকভাবে সচল রাখার এবং নিয়মিতভাবে তার উন্নয়নের চেষ্টা চালিয়ে যেতে হয়। এই শ্রেণি যদি নিজে থেকেই সরকারি পরিষেবা নেওয়া ছেড়ে দেয়, তাহলে তার চেয়ে সুবিধাজনক আর কী হতে পারে? শুধুমাত্র সবচেয়ে দরিদ্র, শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত, বঞ্চনাতেই অভ্যস্ত মানুষেরা যদি সরকারি হাসপাতালে আসেন, তাহলে যাহোক কিছু একটা পরিষেবা দিলেই হয়, কারণ অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে এঁদের টুপি পরানো সহজ। প্রতিবাদ করার বা দাবি জানানোর কেউ থাকবে না। চিকিৎসকদের মধ্যে একটি বিবেকবান অংশ গোলমাল পাকাতে পারে বটে। তাঁদের থামানো যায় নানারকম ভয় দেখিয়ে। পাশাপাশি মানুষের মনে চিকিৎসকদের গণশত্রু হিসেবে চিত্রিত করার কাজ চলেছে তিন দশক ধরে, যাতে চিকিৎসকেরা এসব আন্দোলনে রোগীদের সঙ্গে জোট বাঁধতে না পারেন।
অতএব রইলেন আপনি আর রইল ব্যয়বহুল চিকিৎসা। আপনার ত্রাতা হিসেবে দেখা দিল বিমা কোম্পানি। স্বাস্থ্যবিমা সম্বন্ধে পরবর্তী পর্বে আরও বিস্তৃত আলোচনা করব। আপাতত বেলুনে ছোট আলপিন ফুটিয়ে শেষ করি। বিমার প্রিমিয়াম দেবার সময়ে আপনি ভাবেন যে এতে আপনার চিকিৎসা সংক্রান্ত খরচ কমবে। সব বিমাকারীই তেমন ভাবেন।
অর্থাৎ বিমার সাহায্যে সব মানুষের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ব্যয় কমবে, এমন স্বপ্ন দেখি আমরা। তা কেমন করে সম্ভব? বিমা ব্যবসা পৃথিবীর অন্যতম সেরা লাভজনক ব্যবসা। সকলের খরচ কমবে আর বিমা সংস্থার লাভও বাড়বে? সোনার পাথরবাটি? আসলে বেসরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং বীমা ব্যবসা, দু-দুটো লাভজনক ব্যবসার মুনাফার টাকা আপনি দিচ্ছেন নিজের পকেট থেকে। কিছু ক্ষেত্রে সরকার দিতে শুরু করছেন প্রিমিয়ামের টাকা। সেক্ষেত্রেও সরকার ব্যবসায়ীদের মুনাফার জোগান দিচ্ছেন।
(কৌশিক দত্ত আমরি হাসপাতালের চিকিৎসক, মতামত ব্যক্তিগত)
এই সিরিজের জরুরি লেখাগুলি পড়ুন এই লিংকে