আজ ১২ জুন সকাল ৯ টা থেকে রাত নটা পর্যন্ত আউটডোর বন্ধের ডাক দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের ডাক্তারদের যুক্ত মঞ্চ। ১০ তারিখ রাতে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে এক মৃত রোগীর আত্মীয়রা হামলা করে কর্তব্যরত জুনিয়র ডাক্তারদের উপর।
চিকিৎসক পরিবহ মুখোপাধ্যায় মাথায় ইটের আঘাত পেয়ে অজ্ঞান হয়ে যান। খিঁচুনি হতে থাকে। সিটি স্ক্যান করে দেখা যায় তাঁর মাথার হাড়ে ফ্র্যাকচার হয়েছে। অপারেশন করতে হয় তাকে।
ডাক্তার বা চিকিৎসা কর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা এই প্রথম নয়। গত দুই বছরে ১৯৩ টি ঘটনায় ডাক্তার বা চিকিৎসা কর্মী আক্রান্ত হয়েছেন। যদিও রাজ্য পুলিশের হিসেবে একটিও নাকি আক্রমণের ঘটনা ঘটেনি।
দু বছর আগে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এক খাপ পঞ্চায়েত বসিয়ে বেসরকারি হাসপাতাল গুলির ম্যানেজমেন্টকে তুলোধোনা করেছিলেন। তারপর এল এক নতুন ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট অ্যাক্ট। এই আইনের কথিত লক্ষ্য ছিল বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা। শেষে দেখা গেল সমস্ত ঘটনার জন্য দায়ী করা হচ্ছে ডাক্তারদের।
আরও পড়ুন: ‘বন্ধ’ এনআরএস, প্রতিবাদের আঁচ অন্য হাসপাতালেও, রাজ্যজুড়ে রোগীদের হাহাকার
প্রাইভেট প্র্য়াকটিস করেন, এমন বহু চিকিৎসকও আজ কর্মবিরতি ঘোষণা করেছেন (ছবি- ফেসবুক)
গত দু বছরে ঘটা হিংসার ঘটনাগুলোর বেশিরভাগটাই কিন্তু হয়েছে সরকারি হাসপাতালে। মানুষ চিকিৎসা পেতে সরকারি হাসপাতালে যান। সেখানে নীল সাদা বাড়ি রয়েছে, কর্মী নেই, যন্ত্রপাতি নেই।
যথাযথ চিকিৎসা না পাওয়ার জন্য মানুষের যে ক্ষোভ তা অনেক ক্ষেত্রেই তারা উগড়ে দেন ডাক্তার নার্স বা অন্য স্বাস্থ্য কর্মীদের ওপর। দায়ী সরকার অথচ দায়ভার বহন করতে হয় চিকিৎসা কর্মীদের।
এছাড়া মানুষের ক্ষোভের সুযোগ নিয়ে একদল দুষ্কৃতী আক্রমণ নামিয়ে আনে। গত দু বছরে আমরা দেখেছি অনেক ক্ষেত্রেই এই দুষ্কৃতীদের নেতা শাসক দলের লোক। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাদের কোন শাস্তি হয়নি।
আউটডোর বন্ধ রাখলে সাধারণ মানুষকে অসীম দুর্দশার মধ্যে পড়তে হয় তা ঠিক। কিন্তু করার আর কিছু নেই। মানুষের দুর্ভোগ কমানোর জন্য জরুরি পরিষেবা চালু রাখা হয়েছে। আশা যে এবার সরকারি পরিকাঠামোর সত্যিকারের উন্নয়ন ঘটিয়ে মানুষের ক্ষোভের নিরসন করবে সরকার। আশা, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে হিংসার ঘটনা রোধ করার জন্য মেডিকেয়ার আইন ২০০৯- এর যথাযথ প্রয়োগ করা হবে।
(পুণ্য়ব্রত গুণ জনস্বাস্থ্য় আন্দোলনের সংগঠক)