Advertisment

ভারতের নাগরিকত্ব পেতে কী করতে হয় জানেন?

গোটা অসম জুড়ে এখন অস্বস্তির আবহাওয়া। ৪০ লক্ষের এন আর সি-তে নাম না থাকা নিয়ে রাজনৈতিক শোরগোল শুরু হয়েছে। নাগরিকপঞ্জীতে নাম তোলার জন্যে ৩.২৯ কোটি মানুষ আবেদন জমা দিয়েছিলেন।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

গোটা অসম জুড়ে এখন অস্বস্তির আবহাওয়া। ৪০ লক্ষ মানুষের জাতীয় নাগরিক পঞ্জি বা NRC-তে নাম না থাকা নিয়ে রাজনৈতিক শোরগোল শুরু হয়েছে। নাগরিক পঞ্জিতে নাম তোলার জন্যে ৩.২৯ কোটি মানুষ আবেদন জমা দিয়েছিলেন। তবে তাঁদের মধ্যে ২.৮৯ কোটির নাম উঠেছে তালিকায়। সরকারের তরফ থেকে এই পরিস্থিতির ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে, এই ৪০ লক্ষের কাউকেই ফরেন ট্রাইবুনালে বা ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানো হচ্ছে না।

Advertisment

ভারতের নাগরিকত্ব কিভাবে নির্ধারিত হয়?

ভারতীয় নাগরিকত্ব সাধারণত জন্ম এবং বংশপরম্পরা দ্বারাই অর্জিত হয়। ১৯৪৯ সালের ২৯ নভেম্বরে লাগু হওয়া ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী, যদি কোনও ব্যক্তির বাবা অথবা মা ভারতে জন্মগ্রহন করেন বা পাঁচ বছরের বেশি সময় সেই ব্যক্তি ভারতে থাকেন, তিনি ভারতের নাগরিক হিসাবে চিহ্নিত হতে পারেন। ১৯৫৫-র নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী, জন্মের তারিখের নিরিখেও নাগরিকত্ব দেওয়া হয়। ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি থেকে ১৯৮৭ সালের ১ জুলাই-এ ভারতে যাঁদের জন্ম তাঁদের জন্মসূত্রে ভারতীয় বিবেচনা করা হয়েছে । ২০০৪-এর ৩ ডিসেম্বরের মধ্যে জন্মগ্রহণ করেছেন এমন ব্যক্তির বাবা অথমা মা কেউ একজন ভারতীয় হলেই তাঁকে ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।

ভারতের সঙ্গে বিবাহ সূত্রে বা বংশ পরম্পরা সূত্রে সম্পর্কযুক্ত কোনও বিদেশী কি ভারতের নাগরিক হতে পারেন?

এই নাগরিকত্ব স্বাভাবিকভাবেই প্রদান করা হয়। কোনও বিদেশী যদি অবৈধভাবে ভারতে না এসে থাকেন, সেক্ষেত্রে তিনি নাগরিকত্ব অর্জন করতে পারেন।

এই নাগরিকত্ব কি স্থায়ী?

১৯৫৫ সালের আইনের ৯ (১) ধারা অনুযায়ী, কোনও ব্যক্তি স্বেচ্ছায় অন্য দেশের নাগরিকত্ব পেতে চাইলে বা ভারত ছাড়তে চাইলে এই নাগরিকত্ব প্রত্যাহার করতে পারেন। এক্ষেত্রে ভারত দ্বৈত নাগরিকত্ব অনুমোদন করে না। ১০নং ধারা অনুযায়ী, যদি কেউ ভারতীয় নাগরিককে বিবাহ করে ভারতের নাগরিক হন, সেক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক চাইলেই তাঁর নাগরিকত্ব বাতিল করতে পারে।

publive-image গুয়াহাটিতে এনআরসি সেবা কেন্দ্রে নিজেদের নামের খোঁজে মানুষ। ফাইল ছবি, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

আসামে নাগরিকত্ব প্রদান আলাদা কিভাবে?
এই বদল মূলত ইতিহাসের কারণেই। ব্রিটিশ শাসনের সময়, প্রশাসনিক কাজের উদ্দেশ্যে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির সঙ্গে আসামকে একত্রিত করা হয়। ১৮২৬ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত চা চাষের জন্য কম পারিশ্রমিকে কর্মীদের নিয়ে আসা হত, তবে দুটি পরিবর্তনের জোয়ার এসেছিল ব্রিটিশ শাসনের পরই - পূর্ব পাকিস্তান (এখন বাংলাদেশ) ভাগ হওয়ার পর এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পর। ১৯৭৯-৮৫ সালে অসম ছাত্র সংগঠনের আন্দোলনটি সমস্ত আন্দোলনকে উৎসাহ দিতে এক বিশাল ভূমিকা পালন করেছিল। ১৯৮৫-তে রাজিব গান্ধী সরকারের সঙ্গে একটি চুক্তিপত্র সই করে আসাম। এই চুক্তির দ্বারা অবৈধ বসবাসকারীদের চিহ্নিত করে নির্বাসন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

আরও পড়ুন: NRC-তে নাম না থাকলেই ভোটার তালিকা থেকে বাদ নয়

আসামের নাগরিকত্বের বিধান কী কী?

দুটি তারিখের নিরিখে এই নাগরিকত্ব ঠিক করা হয় - ১ জানুয়ারি, ১৯৬৬ এবং ২৫ মার্চ, ১৯৭১। ১৯৬৬-র  ১ জানুয়ারির আগে আসামে থাকলে তিনি আসামের নাগরিক বলে বিবেচিত হবেন। পাশাপাশি যাঁরা এই দুটি তারিখের মধ্যে আসামে প্রবেশ করেছেন এবং সেখানেই থেকেছেন, তাঁদের ফরেন ট্রাইব্যুনালে নিজেদের বিশদ নথিভুক্ত করেই নাগরিকত্ব পেতে হয়েছে। এবং এই নথিভুক্তকরণের পর থেকে ১০ বছর পর্যন্ত ভোটাধিকার ছাড়া নাগরিকের সমস্ত অধিকারই থাকবে। ১০ বছর শেষ হলে, এই মেয়াদও ফুরিয়ে যাবে। তবে যাঁরা ২৫ মার্চ, ১৯৭১-এর পর আসামে এসেছেন তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে না।

এন আর সি-র ক্ষেত্রে সময়সীমা কি একই?

একই তারিখ প্রযোজ্য ভারতের ক্ষেত্রেও। অন্তর্ভুক্তির জন্য আবেদনকারীদের প্রমাণ করতে হবে যে তাঁদের বাবা-মা অথবা পূর্বসুরীরা ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের আগে ভারতের নাগরিক ছিলেন। যাঁরা এই প্রমাণ দিতে পারেননি, তাঁদের এবং তাঁদের উত্তরসূরিদের নাগরিকত্বের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। আসামে ইতিমধ্যেই একটি এনআরসি রয়েছে, যা ১৯৫১ সালের ৮০ লক্ষ নাগরিককে (সেই বছরের গণনা ভিত্তিতে) নিয়ে প্রস্তুত করা হয়েছে। ২০০৩ সালে এই নিয়ম সংশোধন করা হয়।

অভিবাসীদের সনাক্তকরণের প্রক্রিয়াটি আগে কী ছিল?

ইন্দিরা গান্ধীর প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন অবৈধ নাগরিকদের জন্য একটি আইন চালু করেন। যা কেবল আসামেই প্রযোজ্য ছিল। মূলত বিদেশিদের বিরুদ্ধেই এই আইন প্রয়োগ করা হয়েছিল। ২০০৫ সালে সুপ্রিম কোর্ট আই এম ডি টি আইনটি খারিজ করেন।

আরও পড়ুন: NRC নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী আইনি কর্মসূচীর পরিকল্পনা মতুয়া সম্প্রদায়ের

এনআরসি সংশোধনের আগে আসাম সিটিজেনশিপ সংশোধনী বিলের বিরোধিতায় বিক্ষোভ দেখানো হয়েছিল। এর কারণ কী ছিল?

২০১৬ সালে কেন্দ্র সরকার পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান থেকে ভারতে আসা সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্বের সময়সীমা কমাতে এই আইন সংশোধন করে। ১০ বছর থেকে কমিয়ে এর বৈধতা করা হয় ৬ বছর পর্যন্ত। এতেই বিক্ষোভের সৃষ্টি হয়। বিলটি এখনও পাশ হয়নি।

অন্য কোন রাষ্ট্রে অভিবাসীদের জন্য এমন একটি পরিস্থিতি আছে কি?

অরুণাচল প্রদেশে চাকমার নাগরিকত্বের দাবি গত কয়েক দশক ধরে স্থগিত রয়েছে। যদিও কেন্দ্র তাদের নাগরিকত্ব দিতে আগ্রহী, তবে এক্ষেত্রে রাজ্য সরকার বিষয়টির বিরোধিতা করছে। কাশ্মীরে পশ্চিম পাকিস্তানের রিফিউজিরা জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন, কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনে ভোট দেওয়ার অনুমতি নেই তাঁদের।

Advertisment