Advertisment

দ্বিতীয় টেস্টের উইকেটও হবে প্রথম টেস্টের মতোই, ভারত সাবধান!

রোহিত শর্মার মতো অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানের অনুপস্থিতি সত্ত্বেও কী করে দুরন্ত ফর্মে থাকা কে এল রাহুল দলের বাইরে, জানতে চাইলেন ভারতীয় দলের প্রাক্তন ক্রিকেটার শরদিন্দু মুখোপাধ্যায়

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
ind vs nz test

সিরিজের প্রথম টেস্টে ব্যর্থ বিরাট কোহলি।

ব্যবসা বা বাণিজ্যে অনেকসময় লাভের পরিমাণ বা মাপকাঠি কী হতে পারে, তা জানতে কিছুটা পিছিয়ে গিয়ে অঙ্ক কষে এগিয়ে আসতে হয় মূলধন অবধি। যাকে আমরা পরিভাষায় বলে থাকি, 'ব্যাক ক্যাল্কুলেশন'। এই মুহূর্তে চলাকালীন ভারত বনাম নিউজিল্যান্ড সিরিজে টি-২০ আন্তর্জাতিক ম্যাচগুলি ৫-০ হারার পরেও কিউয়িরা অনবদ্য ক্রিকেটই শুধু খেললেন না, ভারতীয় দলের দুর্বল জায়গাগুলিতে অপ্রতিরোধ্য আঘাত করলেন।

Advertisment

অভিজ্ঞ ওপেনিং জুটি না থাকাতে খুব তাড়াতাড়ি ভারতের মিডল অর্ডারে ঢুকে পড়ছেন কিউয়ি বোলাররা, বলের পালিশ থাকতে থাকতেই। অনেকদিন পর অধিনায়ক বিরাট কোহলির ব্যাট থেকে সেরকম বড় ইনিংস দেখতে পাচ্ছি না। ধারাবাহিকতা বিরাটের ব্যাটিংয়ের মূলমন্ত্র। চলতি সিরিজের প্রথম টি-২০ ম্যাচে করেছিলেন ৪৫ রান, তৃতীয় ম্যাচে ৩৮ রান, প্রথম একদিনের আন্তর্জাতিকে করেন ৫১ রান, ও টেস্ট ম্যাচে এখন পর্যন্ত দুই ইনিংসে যথাক্রমে ১৯ এবং ২ রান। অর্থাৎ ন'টি ইনিংসে কোহলির ব্যাট থেকে এসেছে স্রেফ একটি অর্ধশত রান, যা প্রায় অভাবনীয়। বিশ্বের এক নম্বর ব্যাটসম্যান হয়তো বড় রানের ইনিংসের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আছেন, কিন্তু কিউয়িরা অল্প রানে বিরাটকে ফিরিয়ে ভারতের ব্যাটিংয়ের মেরুদণ্ড কার্যত ভেঙে দিচ্ছেন।

ওয়েলিংটন টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ময়াঙ্কের অর্ধশত রান, দুই ইনিংসেই অজিঙ্ক্য রাহানের ইতিবাচক ব্যাটিং, এবং ইশান্ত শর্মার পাঁচ উইকেট এই ম্যাচের প্রাপ্তি। তা সত্ত্বেও প্রথম টেস্টে দশ উইকেটে হার স্বীকার করতে হয়েছে শক্তিশালী ভারতকে। ঘুরে দাঁড়াতেই হবে তাদের।

বোলিং দিয়ে যায় চেনা

একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার, যা ওয়েলিংটন টেস্টে লক্ষণীয় ছিল, তা হলো কিউয়ি বোলারদের লেংথ। মাঝে মাঝে খাটো লেংথের বল, ব্যাটসম্যানকে ব্যাকফুটে ঠেলে রাখার জন্য, তারপর বেশিরভাগ ফুল লেংথের বল, যাতে ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা ড্রাইভ করেন। সেই ফাঁদেই পা দেন ভারতীয়রা। ড্রাইভের ফলে কিছু বাড়তি রান দিতেও প্রস্তুত ছিলেন কিউয়ি বোলাররা।

অধিনায়ক হিসেবে কেন উইলিয়ামসন অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়ে সর্বক্ষণ রেখে দিয়েছিলেন দুজন বা তিনজন স্লিপ ফিল্ডার, যাতে ভারতীয়রা ঠিকঠাক ড্রাইভ করতে না পারলে, এবং ব্যাটের কানায় বল লাগলেই, অপেক্ষা করছেন স্লিপ ফিল্ডাররা। এর ঠিক উল্টোটা করলেন ভারতীয় বোলাররা। 'ব্যাক অফ লেংথে' ও 'হিট দ্য ডেক' বোলিং করলেন, বল উপরে না করে। সুইং করার তেমন সুযোগই হলো না। তার পুরোপুরি ফায়দা তুললেন কিউয়ি ব্যাটসম্যানরা।

শনিবার দ্বিতীয় টেস্টে ক্রাইস্টচার্চেও কিন্তু উইকেট হবে ওয়েলিংটনের মতোই। দুই দলেই হয়তো কিছু পরিবর্তন হবে। মাত্র দুজন বাঁহাতি থাকার ফলে হয়তো রবীন্দ্র জাদেজা দলে আসতে পারেন। চার পেসার নিয়ে খেললে অবশ্যই নভদীপ সাইনি। আপাতদৃষ্টিতে প্রথম টেস্টে ভারতের ভঙ্গুর ব্যাটিং সত্ত্বেও ব্যাটিং লাইন-আপে খুব একটা পরিবর্তন হবে বলে মনে হয় না, যদি না পৃথ্বী শ-এর চোট গুরুতর হয়ে ওঠে। ওদিকে কিউয়িদের হয়ে কাইল জেমিসনের পরিবর্তে হয়তো 'ফার্স্ট চয়েস' বোলার নিল ওয়াগনার দলে আসতে পারেন। টম ব্লান্ডেলের কাঁধে চোট লেগেছিল প্রথম টেস্টে, তবে মনে হচ্ছে তা সারিয়ে উঠে তিনি 'ফিট' হয়ে উঠবেন।

চাপ সম্পূর্ণ ভারতের উপর

ভারতের শক্তিশালী দল বহুবার প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধেই টি-২০ সিরিজের দুটি সুপার ওভার তার সাম্প্রতিক উদাহরণ। তবে অবাক হচ্ছি, রোহিত শর্মার মতো অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানের অনুপস্থিতি সত্ত্বেও কী করে দুরন্ত ফর্মে থাকা কে এল রাহুল দলের বাইরে। চেতেশ্বর পূজারা টেস্টে ক্রিকেটের উপযোগী ব্যাটসম্যান, কিন্তু তাঁকে 'স্ট্রাইক রোটেট' করতে হবে, নাহলে রানও আসে না, অপরদিকের ব্যাটসম্যানের উপর চাপও বাড়ে। নিউজিল্যান্ড সিরিজে 'টেস্ট স্পেশ্যালিস্ট' পূজারা যদি সফল না হন, তাঁর কেরিয়ারের উপর চাপ আসতে পারে, যেখানে রাহুলের মতন ফর্মে থাকা ব্যাটসম্যান দলের বাইরে।

অন্যদিকে নিউজিল্যান্ডের বিশ্বস্ত সৈনিক টিম সাউদির পরপর দুটি সুপার ওভারে বল হাতে রাতারাতি ভিলেন হওয়ার পর ফর্মে প্রত্যাবর্তন কার্যত লোকগাথার সৃষ্টি করেছে। কেন উইলিয়ামসনকে দলের বাইরে যেতে হয় কাঁধের চোটের জন্য। নিউজিল্যান্ডের অধিনায়কত্ব করেন টিম সাউদি। চাপের মুখে টি-২০ আন্তর্জাতিকে দুটি সুপার ওভার বল করেন, ও নিউজিল্যান্ড হারে। তারপরে অসুস্থতা নিয়েই বল করে জেতান ওডিআই সিরিজ, এবং প্রথম টেস্টে মন্থর উইকেটে দুরন্ত সুইং করিয়ে তুলে নেন পাঁচটি উইকেট। নিশ্চিত করেন, কিউয়িরা টেস্ট সিরিজ হারছে না। অভিজ্ঞতা, বোলিং নৈপুণ্য, ও সাহসিকতার এক দারুণ নিদর্শন হয়ে রইলেন এই ফাস্ট বোলার।

চাপ এখন ভারতের উপর। দ্বিতীয় টেস্টে জিততে না পারলে একদিনের সিরিজের মতোই টেস্ট সিরিজও খোয়াবে তারা। ঘুরে দাঁড়ানোর সবরকম রসদ ও মশলা আছে তাদের কাছে। শুধু সিমিং উইকেটে দরকার ঠিকঠাক 'অ্যাপ্লিকেশন'।

সর্বশেষে বলতে চাই যে নিউজিল্যান্ডের 'ব্যাক ক্যাল্কুলেশন' অনুযায়ী, শেষ টেস্ট ম্যাচের পর ওডিআই সিরিজ, এবং টি-২০ সুপার ওভারে হারার পর, কিউয়িরা লাভজনক অবস্থাতেই আছে। অন্যদিকে, বাংলা দল শনিবার কর্ণাটকের সঙ্গে রঞ্জি ট্রফির সেমিফাইনাল খেলতে চলেছে কলকাতায়, দীর্ঘদিন পরে। তাদের জানাই অনেক শুভেচ্ছা এবং 'বেস্ট অফ লাক'।

শরদিন্দু মুখোপাধ্যায়ের নিয়মিত কলাম পড়ুন এখানে

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন https://t.me/iebangla

Cricket Kahon
Advertisment