নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে দুটি রোমহর্ষক (টি-২০ এবং একদিনের আন্তর্জাতিক) সিরিজ খেলার পর ভারতীয় দল প্রস্তুত দুই টেস্টের সিরিজ খেলার জন্য। সকলেরই মনে থাকবে, ভারত টি-২০ সিরিজ জেতে ৫-০ ফলাফলে, এবং একদিনের সিরিজ হারে ৩-০ ফলাফলে। তবে এই স্কোর দেখলে বোঝা যাবে না, দুই সিরিজেই কী হড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে দু'দলের মধ্যে, বিশেষ করে টি-২০ সিরিজে।
যে দল ৫-০ ব্যবধানে সিরিজ হেরেও কাগজে কলমে অনেক বেশি শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে ৩-০ হারিয়ে ঘুরে দাঁড়ায়, তারা যে টেস্ট সিরিজে সাতটি টেস্ট খেলে ৩৬০ পয়েন্ট পেয়ে তালিকার শীর্ষে থাকা ভারতকে বেশ বেগ দেবে, তা বলাই বাহুল্য।
এর আগের লেখায় বারংবার উল্লেখ করেছি, নিউজিল্যান্ড তাদের নিজেদের মাটিতে যথেষ্ট শক্ত প্রতিপক্ষ। এই দুই টেস্টে যদি তাদের হারানো যায়, তবে ভারত আইসিসি-র টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের দিকে বেশ কিছুটা এগিয়ে যাবে। নিউজিল্যান্ডের পয়েন্ট যদিও পাঁচটি টেস্ট খেলে ৬০, তবু ভারতকে হারিয়ে টেস্ট সিরিজ জিততে তারা মরিয়া হয়ে থাকবে। অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৩-০ হারলেও, ভারতকে হারালে আসবে কিছু মূল্যবান পয়েন্ট, এবং অবশ্যই কিছু বাড়তি আত্মবিশ্বাস।
নিউজিল্যান্ডের পেসই ভরসা
নিউজিল্যান্ড দলে ওয়েলিংটনের বেসিন রিজার্ভ স্টেডিয়ামে ট্রেন্ট বোল্ট, নিল ওয়াগনার, ও কাইল জেমিসন ফিরে আসাতে ওদের বোলিং যথেষ্ট শক্তিশালী হয়েছে। ওয়াগনার স্টিভ স্মিথের মতো ধারাবাহিক ব্যাটসম্যানকেও বেশ কয়েকবার আউট করেছেন। টম ব্লান্ডেল, বি জে ওয়াটলিং, টম লেথাম, হেনরি নিকলস-এর সঙ্গে আছেন দুই 'ওয়ার্ল্ড ক্লাস' ব্যাটসম্যান কেন উইলিয়ামসন ও রস টেলর।
মিডল অর্ডার ব্যাটিংয়ের স্তম্ভ টেলর খেলতে চলেছেন তাঁর শততম টেস্ট ম্যাচ। তিনটি ফরম্যাটেই চুটিয়ে খেলে চলেছেন এই কিউয়ি তারকা। স্টিফেন ফ্লেমিং, ব্রেন্ডন ম্যাকালাম, এবং ড্যানিয়েল ভেত্তরির পর চতুর্থ কিউয়ি হিসেবে এই মাইলফলক ছোঁবেন টেলর।
যদি বাড়তি স্পিনার দরকার হয়, তবে বাঁহাতি আজাজ প্যাটেল আছেন। বি জে ওয়াটলিং উইকেটকিপার হলেও ছ'নম্বরে দুর্দান্ত ব্যাট করেন। তাঁর সঙ্গে থাকবেন কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম, তাঁর অল-রাউন্ড দক্ষতার জন্য। তবে নিউজিল্যান্ডের শক্তি নির্ভর করে মূলত তাদের সিম ও জোরে বোলিংয়ের ওপর। ওরা যদি ব্যাটিং উইকেট বা ঘূর্ণি উইকেটে খেলার চেষ্টা করে, তবে ভারতকে হারানো শক্ত হবে। কিউয়িদের 'সিমিং' উইকেটে ভারতের বিরুদ্ধে আঘাত হানার চেষ্টা করতে হবে, ওটাই তাদের অস্ত্র। এখন পর্যন্ত উইকেটের যা হাবভাব, তাতে চারজন পেসার খেলারই সম্ভাবনা বেশি - অর্থাৎ বোল্ট, ওয়াগনার, সাউদি, এবং জেমিসন।
ভারতের সামনে প্রশ্ন
অবশ্য ভারতও 'সিমিং' উইকেটে নিউজিল্যান্ডকে ধরাশায়ী করার মতো বেশ কিছু বোলার আছে। জসপ্রীত বুমরা, মহম্মদ শামির পাশাপাশি খেলতে পারেন ইশান্ত শর্মা কিংবা উমেশ যাদব। যদি চারজন পেসার খেলানো হয়, তবে নভদীপ সাইনি। নাহলে রবীন্দ্র জাদেজা অথবা রবিচন্দ্রন অশ্বিনের মধ্যে একজন খেলবেন, উইকেটের চরিত্রের উওপর নির্ভর করে। ময়াঙ্ক আগরওয়াল শেষ মুহূর্তে ওয়ার্ম-আপ ম্যাচে ফর্মে ফিরে ওপেন করবেন পৃথ্বী শ'এর সঙ্গে। তিন নম্বরে চেতেশ্বর পূজারা, চারে অধিনায়ক বিরাট কোহলি, পাঁচে অজিঙ্ক্য রাহানে, ছ'য়ে হনুমা বিহারী, সাতে ঋদ্ধিমান সাহা, এবং তারপর চারজন বোলার।
এবার দেখার বিষয়, দুর্দান্ত ফর্মে থাকা শুভমান গিলকে খেলাবে কিনা ভারত, তথা বিরাট কোহলি। নিউজিল্যান্ড 'এ' দলের বিরুদ্ধে ২০৪ ও ৮০-র ঊর্ধ্বে ইনিংসগুলি তাঁর দাবি জোরদার করেছে। অস্ট্রেলিয়া দশটি টেস্টে ২৯৬ পয়েন্ট পেয়ে ভারতের পয়েন্টের কাছাকাছি চলে এসেছে। তবু ভারত অজিদের চেয়ে তিনটি টেস্ট কম খেলে প্রায় ৬০ পয়েন্টে এগিয়ে আছে। অস্ট্রেলিয়া এই মুহূর্তে খেলেছে ইংল্যান্ড, পাকিস্তান, ও নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে। সেই তুলনায় ভারত খেলেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, শ্রীলঙ্কা, ও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। ভারতের কঠিন পরীক্ষা শুরু হবে ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে।
মনস্তাত্বিক চাপ সৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে ইতিমধ্যেই, ট্রেন্ট বোল্টের মাধ্যমে। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, তিনি চান বিরাট কোহলির উইকেট, অধিনায়ক 'সেট' হয়ে যাওয়ার আগেই। তবে পয়েন্টের নিরিখে এগিয়ে থাকা এবং এই টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফলাফলের ভিত্তিতে নিশ্চয়ই কিছুটা হলেও এগিয়ে থাকবে ভারত। তবে আত্মবিশ্বাসী থাকলেও, আত্মতুষ্টির কোনও জায়গা নেই।
শরদিন্দু মুখোপাধ্যায়ের নিয়মিত কলাম পড়ুন এখানে
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন https://t.me/iebangla