Advertisment

ভারতের পক্ষে 'কিউই শিকার' বড় সহজ নাও হতে পারে

পূর্ণ শক্তিতে না থাকা সত্ত্বেও সহজে হার মানার টিম নয় নিউজিল্যান্ড, যদিও অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সিরিজ জয়ে উদ্বুদ্ধ ভারত, লিখছেন ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটার শরদিন্দু মুখোপাধ্যায়।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
ind vs nzl series

তাদের নিজেদের মাটিতে যথেষ্ট শক্তিশালী দল নিউজিল্যান্ড, যদিও তাদের বেশ কিছু সামনের সারির বোলার, যেমন ট্রেন্ট বোল্ট, ম্যাট হেনরি, এবং লকি ফারগুসন, চোট-আঘাত জনিত সমস্যায় দলের বাইরে। তারা ফিরিয়ে এনেছে 'সুপার স্ম্যাশ', অর্থাৎ তাদের টি-২০ টুর্নামেন্টে দারুণ ফর্মে থাকা হেমিশ বেনেটকে, ২০১৭ সালের পরে। আর আছেন অভিজ্ঞ টিম সাউদি। সুতরাং কেন উইলিয়ামসন এবার নেতৃত্ব দেবেন যুব খেলোয়াড় ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একটি দলকে।

Advertisment

টম ব্রুস, ড্যারিল মিচেল, টিম সাইফার্ট, ব্লেয়ার টিকনারের সঙ্গে অবশ্যই থাকবেন রস টেলর, মার্টিন গাপটিল, কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম, মিচেল স্যান্টনার, কলিন মানরো, স্কট কুগেলাইনের মতো পোক্ত টি-২০ খেলোয়াড়রা। ফিল্ডিং তাদের বিশ্বমানের।

নিউজিল্যান্ডে পাঁচটি টি-২০, তিনটি ওডিআই, ও দুটি টেস্ট খেলবে ভারতীয়রা। পূর্ণ শক্তিতে না থাকা সত্ত্বেও সহজে হার মানার টিম নয় নিউজিল্যান্ড। যদিও অস্ট্রেলিয়ার কাছে টেস্ট সিরিজ ৩-০ ফলে হারে কিউইরা, তবুও একটা হাড্ডাহাড্ডি লড়াই আশা করব এই সিরিজে।

চিন্নাস্বামীতে যে রাতে অনায়াসে অস্ট্রেলিয়াকে সাত উইকেটে হারিয়ে সিরিজ জিতল ভারত, সেই দিনই মধ্যরাতে তারা উড়ে গেল কিউই বধ করতে। নিউজিল্যান্ডে অর্জুনের চোখ (পড়ুন কোহলিদের চোখ) এখন তাদের মাটিতেই কিউই শিকার।

লড়াইয়ের আগের লড়াই

ওয়াংখেড়েতে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ১০ উইকেটে হারটাকে খুব সহজভাবে নিতে পারেন নি অধিনায়ক বিরাট কোহলি ও ভারতীয় ক্রিকেট দল। ম্যাচের পর সাক্ষাৎকারে বিরাট যতই বলুন যে তাঁর দল এখনও গবেষণার পর্যায়ে রয়েছে, অস্ট্রেলিয়ার কাছে মাথা নত করা তাঁদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিঁধেছিল সেদিন। শত্রুর চোখে চোখ রেখে লড়াই করা যাঁর অভ্যাস, তাঁর পক্ষে এত সহজে হার স্বীকার করা, ও ভারতীয় সমর্থকদের মনে একটা চিন্তার উদ্রেক হওয়া, কিঞ্চিৎ হলেও তাঁর কপালে ফেলেছিল চিন্তার ভ্রূকুটি।

বিরাট কোহলি হলেন একজন গর্বিত খেলোয়াড়, ও অধিনায়ক, যিনি খেলেন হৃদয় দিয়ে। সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া তাঁর পছন্দ। লড়াই তাঁর রক্তে। সেইদিন খেলার পর জনমানবশূন্য ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের সাজঘরের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে তাঁর নির্মম নিষ্ঠুর রূপটা হয়তো দেখেছিলেন ভারতীয় খেলোয়াড়রা। পরের দুটি ম্যাচে নিজেদের শেষ বিন্দু অবধি নিংড়ে দেওয়ার অঙ্গীকারবদ্ধ করে তবেই সাজঘর ছাড়েন দলের সেনাপতি। রাজকোট ও বেঙ্গালুরুতে এক অন্য ভারতীয় দলকে দেখতে পেলাম আমরা, যার সঙ্গে এক সূচ্যগ্রও মিল ছিল না ওয়াংখেড়ের সেই ভারতীয় দলের।

রাজকোটে টসে হেরে প্রথমে ব্যাট করে 'কম্ফর্ট জোনের' বাইরে গিয়ে ভারত করল রানের পাহাড়। পুরোনো শিখর ধাওয়ানকে কিছুটা খুঁজে পাওয়া গেল তাঁর ৯০ বলে ৯৬-এর মধ্যে দিয়ে। রোহিত শর্মা ৪৪ বলে ৪২ করে বুঝিয়ে দিলেন, বড় রান না এলেও ফর্মে আছেন তিনি। অধিনায়ক বিরাট দেখিয়ে দিলেন কেন তিনি ছোট ফরম্যাটে বিশ্বের এক নম্বর ব্যাটসম্যান। ৭৮ রান করলেন ৭৬ বলে, আর কে এল রাহুল মিডল অর্ডারে ব্যাট করে ৫২ বলে ঝকঝকে ৮০ রানের ইনিংস খেলে জানান দিলেন যে তিনি ওপেনিং এবং মিডল অর্ডারে একইভাবে স্বচ্ছন্দ। তাঁর ইনিংসের প্রতিটি শট 'ক্লাস' শব্দটি অনায়াসে ব্যবহারযোগ্য।

বোলিংয়ের সময় বুমরা, শামি, সাইনিরা বাউন্সার ও ইয়র্কারের অগ্নিবাণ ছোটালেন। একমাত্র স্টিভ স্মিথ এবং অস্ট্রেলিয়ার নতুন তারকা মার্নাস লাবুশানের ৯৬ রানের পার্টনারশিপ অজিদের কিছুটা আশা জাগিয়েছিল। ওয়াংখেড়েতে ভারত হারার পর কার্যত সিরিজের বাকি দুটি ম্যাচই ফাইনাল ম্যাচের মতো হয়ে গিয়েছিল। চাপের মুখে রাজকোট ও বেঙ্গালুরুতে ভারতীয় দল যা ক্রিকেট খেলল, তা সত্যিই বাহবার যোগ্য। দুটি ম্যাচেই অস্ট্রেলিয়াকে পর্যুদস্ত করে হারিয়ে শুধু সিরিজই জিতল না, সমগ্র ক্রিকেট দুনিয়াকেও দেখাল তাদের পিছিয়ে পড়ে ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতা।

বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধেও ভারত পিছিয়ে পড়ে সিরিজ জেতে। তবে পূর্ণশক্তির অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে পিছিয়ে পড়ে সিরিজ জেতার পর ভারতীয় দলের আত্মবিশ্বাস নিশ্চিত বাড়বে। এতদিন আমরা দেখে আসছিলাম অস্ট্রেলিয়ার ফাস্ট বোলারদের আগুন ঝরানো বোলিং। শর্ট পিচ বোলিং করে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের কোণঠাসা করার চেষ্টা। এই সিরিজে দেখলাম ঠিক উল্টোটা হতে। ভারতীয় জোরে বোলারদের শর্ট পিচ বল ও ইয়র্কারে একেবারে বিব্রত অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানরা। সত্যি গর্বিত লাগল যখন দেখা গেল, টেস্ট ক্রিকেটের এক নম্বর র‍্যাঙ্কিং বোলার প্যাট্রিক কামিন্স, ও বাঁহাতি ভয়ঙ্কর মিচেল স্টার্ক পরপর দুটি ম্যাচে একটিও উইকেট পেলেন না, এবং তার ওপর বেশ কিছু রানও দিয়ে ফেললেন।

ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের ফাস্ট বোলিং খেলার দক্ষতার কাছে মুখ থুবড়ে পড়ল অস্ট্রেলিয়ান বোলিং। কিছুটা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেলেন অস্ট্রেলিয়ান বোলাররা। এতদিন যে জোরে বোলিংয়ের রণকৌশলে জব্দ করে আসছিলেন ভারতীয় দলকে, সেই কৌশল আজ নিস্ফল। যে পেশাদারিত্ব আমরা অস্ট্রেলিয়ার দলগুলির মধ্যে দেখে থাকি, সেই দলের বোলিংয়ের 'প্ল্যান বি' ছিল না। শেষ দুটো ম্যাচে ভারতের লড়াকু মেজাজের কাছে তাঁরা সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ করলেন।

শরদিন্দু মুখোপাধ্যায়ের নিয়মিত কলাম পড়ুন এখানে

Cricket Kahon
Advertisment