বারসাপাড়া ক্রিকেট স্টেডিয়াম, গুয়াহাটি, আসামে অকাল বর্ষা ভেস্তে দিল নতুন বছরের প্রথম ম্যাচ, শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে। 'পিচ কিউরেটর' ও মাঠের কর্মীরা আপ্রাণ চেষ্টা করেও ন্যূনতম পাঁচ-পাঁচ ওভারের খেলা করাতে ব্যর্থ হলেন। আমরা জানি, প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই বৃথা, কিন্তু যা আমাদের সাধ্যে, বা হাতের মধ্যে আছে, সেইটুকু যদি করা যেত, তাহলে স্টেডিয়ামে উপস্থিত প্রায় ৩০ হাজার দর্শককে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরতে হতো না।
বোর্ড অফ কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া (বিসিসিআই) সারা বছরের 'ফিক্সচার' অনেক আগেই তাদের ওয়েবসাইটে দিয়ে দেয়, যাতে কোনও ভেন্যু প্রস্তুতির কোনও ত্রুটি না রাখে। ৫ জানুয়ারি, ২০২০ যে বৃষ্টি বারসাপাড়া স্টেডিয়ামে পড়েছিল, তা ম্যাচ ধুয়ে ভেসে যাওয়ার মতো ছিল না। একটা আন্তর্জাতিক ম্যাচ অনুষ্ঠিত করতে যা যা সামগ্রী লাগে, তার যথেষ্ট অভাব ছিল ভারত বনাম শ্রীলঙ্কার টি-২০ ইন্টারন্যাশনাল সিরিজের প্রথম ম্যাচে।
প্রথমত বড় 'টেস্ট ভেন্যু'র আশেপাশের শহরে ক্রিকেট ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা বিসিসিআই সদাই করে থাকে। এমনিতেও বারসাপাড়ার মতো স্টেডিয়াম, যা দেশের ৪৯ তম আন্তর্জাতিক ভেন্যু, ম্যাচ কম পায় (শেষবার এখানে ম্যাচ হয় ২০১৭ সালে, অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে)। সেই ম্যাচও যদি বৃষ্টিতে ভেস্তে যায়, দর্শকদের হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরতে হয় প্রস্তুতির খামতির জন্য, তা সত্যিই বেদনাদায়ক। এত সুন্দর স্টেডিয়াম, যেখানে অত্যাধুনিক পরিষেবার কোনও খামতি থাকার কথা নয়, সেখানে একটা পুরো মাঠ ঢাকার কভার নেই!
রাত ৯.৫৫ মিনিটে আম্পায়ার অনিল চৌধুরী ও নীতিন মেনন ম্যাচ রেফারি ডেভিড বুনের সঙ্গে আলোচনা করে ম্যাচ আরে করা সম্ভব নয়, এই সিদ্ধান্ত জানাতে বাধ্য হলেন, সঙ্গত কারণেই। কারণ দর্শালেন, "বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়া ভারী ও পিচ্ছিল আউটফিল্ড, ও পিচে জল ঢুকে গিয়ে কয়েকটা জায়গায় খেলার অযোগ্য হয়ে যাওয়া।"
ভুলে গেলে চলবে না, বছর সবে শুরু হয়েছে। চোট-আঘাত জনিত সমস্যা কাটিয়ে সবে দলে ফিরেছেন ছোট ফরম্যাটে বিশ্বের এক নম্বর বোলার জসপ্রীত বুমরা, ও অভিজ্ঞ এবং আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান শিখর ধাওয়ান। শ্রীলঙ্কা দলেও আছেন বেশ কিছু প্রতিশ্রুতিবান যুবা খেলোয়াড়, সঙ্গে আছেন লসিত মালিঙ্গা এবং অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজের মতন অভিজ্ঞ ও বর্ষীয়ান খেলোয়াড়। দুই দলের কেউই এই পিচ্ছিল মাঠে খেলতে রাজি হতো কিনা, সন্দেহ। ভারী ও পিচ্ছিল আউটফিল্ডে বুটের স্পাইকে মাটি ও ঘাস ধরে 'গ্রিপ' করার ক্ষমতা হারায়।
বছরের শেষে মহৎ উদ্দেশ্যকে (অক্টোবরে টি-২০ বিশ্বকাপ) মাথায় রেখেই খেলার অনুপযুক্ত মাঠে না খেলার সিদ্ধান্তকে সমর্থন করতেই হবে। কোনও দলই তাদের খেলোয়াড়দের এতটুকু আঘাতের সম্ভাবনা দেখলে তা থেকে শত যোজন দূরে থাকবে।
আসাম ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের এই ম্যাচ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। এই অত্যাধুনিক স্টেডিয়াম ও পরিষেবা যদি তারা দিতে পারে, তাহলে যে কোনও অনিশ্চয়তার মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। কোটি কোটি টাকা খরচা করেছে তারা, আর শুধু দরকার ছিল পুরো মাঠ ঢাকার একটা কভার মাত্র। তাহলেই বৃষ্টি থামলেই খেলা শুরু হতো, ও হাজার হাজার দর্শক তারিয়ে তারিয়ে তার আস্বাদন নিতেন।
ইতিহাস গড়ছেন লাবুশানে
অন্যদিকে, ইতিহাস সৃষ্টি করে চলেছেন দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্মানো অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার মার্নাস লাবুশানে, যবে থেকে তিনি ক্রিজে আসেন 'কনকাশন রিপ্লেসমেন্ট' হিসেবে, তাঁর 'আইডল' স্টিভ স্মিথের পরিবর্তে, ইংল্যান্ডে তৃতীয় অ্যাশেজ টেস্টে। সম্প্রতি ৬৭ বছরের রেকর্ড ভাঙলেন, নিজেদের মাটিতে পাঁচটি টেস্টে ৮৩৭ রান করে, ১৯৯.৫৭ অ্যাভারেজে। টপকে গেলেন কিংবদন্তী অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান নিল হার্ভেকে। হার্ভে পাঁচটি টেস্টে ১৯৫২-৫৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে করেছিলেন ৮৩৪ রান।
টেস্ট জীবনের শুরুর দিকে এরকম 'পার্পল প্যাচ' খুব কম ব্যাটসম্যানের জীবনেই এসেছে। লাবুশানে এখন তাঁর শেষ সাতটি ইনিংসে করেছেন একটি ডবল সেঞ্চুরি, দুটি দেড়শত রান, দুটি সেঞ্চুরি, এবং দুটি অর্ধশত রান। এর আগে নিল হার্ভে, ইংল্যান্ডের ওয়ালি হ্যামন্ড, ও স্যার ডন ব্র্যাডম্যানই পেরেছিলেন অস্ট্রেলিয়ায় ৮০০ রানের গণ্ডি পেরোতে। বলাই বাহুল্য, স্যার ডন ব্র্যাডম্যান দুবার ৮০০ রানের গণ্ডি পেরোন তাঁর অবিস্মরণীয় টেস্ট কেরিয়ারে।
এই অসামান্য কৃতিত্ব অর্জন করেও ২৫ বছর বয়সী লাবুশানে বলেন, তিনি অত্যন্ত গর্বিত ও সম্মানিত, তাঁর সতীর্থদের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলার সুযোগ পেয়ে। রান তিনি করেছেন ঠিকই, তবে সেটা দলের জন্য, নিজের জন্য নয়। এইসব চিন্তাধারাই বোধহয় সাধারণের থেকে আলাদা হয়ে মহত্বের মার্গে হাঁটতে শেখাচ্ছে মার্নাস লাবুশানেকে।
শরদিন্দু মুখোপাধ্যায়ের নিয়মিত কলাম পড়ুন এখানে