Advertisment

'দিল্লি পুলিশ জিন্দাবাদ' ধ্বনিতে অবাক হওয়ার কিছু নেই

পুলিশের গাড়িতে ওঠার আগে বন্দুকবাজ নিজেকে "রামভক্ত" পরিচয় দিয়ে স্লোগান তোলে, "দিল্লি পুলিশ জিন্দাবাদ"। কিন্তু এতে স্তম্ভিত বা লজ্জিত হওয়ার কিছু নেই। এ হওয়ার ছিল।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
jamia firing

বৃহস্পতিবার যখন দিল্লির বিশিষ্টজনেরা মহাত্মা গান্ধীর সমাধিতে তাঁর প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করতে রাজঘাট অভিমুখী, ঠিক তখনই এক যুবক, যার বয়স ১৮ পূর্ণ হতে এখনও দুমাস বাকি, জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের রাস্তায় দাঁড়িয়ে "ইয়ে লো আজাদি" বলে সটান গুলি ছুড়ল প্রতিবাদকারী পড়ুয়াদের দিকে। ব্যারিকেডের ওপার থেকে। তারপর ঘুরে গিয়ে সে হেঁটে চলে গেল ঘটনাস্থলে মোতায়েন দিল্লি পুলিশের বাহিনীর দিকে, যারা এতক্ষণ দাঁড়িয়ে সব দেখছিল।

Advertisment

নাবালক হওয়ার কারণে যুবকের নাম প্রকাশ করা যাচ্ছে না, কিন্তু পুলিশের গাড়িতে ওঠার আগে সে নিজেকে "রামভক্ত" পরিচয় দিয়ে স্লোগান তোলে, "দিল্লি পুলিশ জিন্দাবাদ"। কিন্তু এতে স্তম্ভিত বা লজ্জিত হওয়ার কিছু নেই। এ হওয়ার ছিল।

মাস দেড়েক আগে এই একই এলাকায় নিরস্ত্র পড়ুয়াদের ওপর হামলা চালায় দিল্লি পুলিশ, ঢুকে পড়ে তাদের লাইব্রেরি এবং হোস্টেলেও। তারও দু'সপ্তাহ পরে একদল সশস্ত্র গুণ্ডাবাহিনী রীতিমত তাণ্ডব চালায় জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে, মেয়েদের হোস্টেলে ছাত্রীদের আক্রমণও করে। এই তাণ্ডবেরও সাক্ষী হয়ে থাকে দিল্লি পুলিশ, নীরব থেকে যেন উৎসাহ যোগায় গুণ্ডাবাহিনীকে।

আরও পড়ুন: স্কুলে সিএএ বিরোধী নাটক, গ্রেফতার প্রধান শিক্ষিকা-শিশুর মা

হামলাকারীদের মধ্যে একাধিককে চিহ্নিত করা হয়েছে আরএসএস-এর ছাত্র সংগঠন এবিভিপি-র সদস্য হিসেবে, যদিও একজনও গ্রেফতার হয় নি অদ্যাবধি। ঘটনায় একটিমাত্র এফআইআর দায়ের হয়েছে, তা জেএনইউ-এর ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ঐশী ঘোষের নামে, হামলায় যার মাথা মেরে ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

অথচ সেই একই দিল্লি পুলিশ কী অসীম ক্ষিপ্রতায় খুঁজে বের করে করে গ্রেফতার করে ফেলল শারজিল ইমামকে, তার তথাকথিত দেশদ্রোহী মন্তব্যের ভিত্তিতে। 'রামভক্ত' বন্দুকবাজের 'দিল্লি পুলিশ জিন্দাবাদ' স্লোগান একটি নির্দিষ্ট উপলব্ধির প্রতিফলন মাত্র।

কিন্তু শুধু দিল্লি পুলিশের দোষ দেখলে ছবিটা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। জামিয়া এবং জেএনইউ, উভয় জায়গাতেই হিংসা-পূর্ববর্তী সময়ে দীর্ঘদিন ধরে চলেছে কুৎসা রটানোর পালা, যেখানে একাধিক দক্ষিণপন্থী হিন্দুত্ববাদী সংগঠন এবং শীর্ষ বিজেপি নেতা, যাঁদের মধ্যে অনেকেই মন্ত্রীও বটে, সোৎসাহে আস্কারা দিয়েছেন তাঁদের গুণ্ডা সমর্থকদের, যুবসমাজ এবং ছাত্রদের ওপর হামলা করতে। যেসব ক্যাম্পাস নিয়ে দেশের গর্ব বোধ করা উচিত, সেগুলির গায়ে সাঁটা হয়েছে "শহুরে নক্সাল" এবং "জেহাদি" আস্তানার তকমা।

আরও পড়ুন: ‘জামিয়ার বন্দুকবাজকে কে টাকা দিয়েছিল?’ প্রশ্ন রাহুলের

বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর এবং বিজেপি সাংসদ প্রবেশ সাহিব সিং ভার্মার দিল্লিতে নির্বাচনী প্রচারের ওপর নিষেধাজ্ঞা বসায় নির্বাচন কমিশন, কিন্তু তা বড় রকমের বাধা হবে বলে মনে হয় না। জামিয়ার বন্দুকবাজের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার কয়েকঘণ্টার মধ্যেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এক নির্বাচনী জনসভায় বলেন, দিল্লির এই নির্বাচন হলো পাকিস্তানকে শায়েস্তা করা প্রধানমন্ত্রী বনাম শাহিন বাগকে যাঁরা সমর্থন করেন, তাঁদের লড়াই। অতীতেও একাধিক নির্বাচনে পাকিস্তানের হাত দেখেছেন শাহ, কিন্তু আজ তাঁর মন্ত্রকই দিল্লি পুলিশের নিয়ন্ত্রক।

অতএব সদ্য মেয়াদ বাড়ানো দিল্লির নগরপাল অমূল্য পট্টনায়কের কাছে তাঁর বাহিনীর লজ্জাজনক আচরণের একটিই সম্ভাব্য অজুহাত রয়েছে, তিনি বা তাঁর ফোর্স কীই বা করতে পারেন, যেখানে উন্মত্ত জনতাকে 'গোলি মারো সালো কো' বলে উদ্বুদ্ধ করেন তাঁরই রাজনৈতিক প্রভুরা, বা আশা প্রকাশ করেন যে শাহিন বাগের মধ্যে দিয়ে "কারেন্ট" বয়ে যাবে?

Advertisment