Advertisment

জন ও স্বাস্থ্য: আয়ুষ চিকিৎসক, অ্যালোপ্যাথি ও দেশ

আধুনিক চিকিৎসা প্রদানকারী হাসপাতালগুলিতে হোমিওপ্যাথি বা আয়ুর্বেদ চিকিৎসকদের ডিউটি দিয়ে, তাঁদের দিয়ে জরুরি বিভাগে হার্ট অ্যাটাকের অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ লেখানোর মধ্যে এক ধরণের লোক ঠকানো আছে, যা সরকার করতে পারেন না। এর বদলে সর্বত্র আয়ুষ হাসপাতাল খোলা যায়, জরুরি পরিষেবা সমেত।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

ভারতের জনস্বাস্থ্য, বিশেষত চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে আলোচনা বা পরিকল্পনা করতে গেলে বড় যে সমস্যাগুলি চোখে পড়ে, তার মধ্যে অন্যতম হল রোগীর অনুপাতে চিকিৎসকের সংখ্যার স্বল্পতা। বিশেষত গ্রামাঞ্চলে এই সমস্যা সত্যিই গুরুতর। সকলের জন্য চিকিৎসা পরিষেবা নিশ্চিত করতে চাইলে এই ক্ষেত্রে ভারসাম্য আনা জরুরি। গত পর্বে আমরা এই বিষয়ে কিছুটা আলোচনা করেছি। প্রসঙ্গত এসেছে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশন বিল এবং সেই বিলের বত্রিশ নম্বর ধারার কথা। এই সমস্যার চটজলদি সংখ্যাতাত্ত্বিক সমাধান করে ফেলে খাতা পরিষ্কার রাখার তাগিদে জাতীয় সরকার কী ভাবে স্বল্প প্রশিক্ষণে গ্রামীণ ভারতের জন্য চিকিৎসক তৈরি করতে (বা না তৈরি করে ছাড়পত্র দিতে) চাইছেন, তা নিয়ে কথা হয়েছে। গত পর্বে আমরা আলোচনা সীমাবদ্ধ রেখেছিলাম তথাকথিত 'গ্রামীণ চিকিৎসক'দের প্রসঙ্গটিতেই, অর্থাৎ যাঁরা কোনরকম স্বীকৃত প্রশিক্ষণ ছাড়া স্বাধীনভাবে চিকিৎসা ব্যবসা করে থাকেন, তাঁদের কাজকে আইনানুগ ছাড়পত্র দেওয়ার বিষয়টুকুতে। আয়ুষ চিকিৎসকেরা আধুনিক চিকিৎসায় না হলেও অন্য বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতিতে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত। তাই তাঁদের বিষয়ে আলাদা ভাবে কথা বলা উচিত। আজ তা নিয়ে দু-চার কথা।
ভারত সরকারের "আয়ুষ" তালিকার অন্তর্ভুক্ত চিকিৎসা পদ্ধতিগুলো হল আয়ুর্বেদ, যোগ, ন্যাচুরোপ্যাথি, ইউনানি, সিদ্ধ, হোমিওপ্যাথি ও সোয়া রিগপা। আয়ুর্বেদ, সিদ্ধ, ইউনানি, সোয়া রিগপা ইত্যাদি চিকিৎসা পদ্ধতি প্রাচীন ও মধ্য যুগে বিভিন্ন দেশে (মূলত এশীয় দেশে) জন্ম ও বিকাশ লাভ করেছে। আফ্রিকা, আমেরিকার জনজাতিগুলির মধ্যেও প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতি ছিল, কিন্তু সেগুলোর সঙ্গে আমরা তেমনভাবে পরিচিত নই এবং ভারতে প্রথাগুলির বিশেষ প্রচলন নেই, তাই সরকারি তালিকায় তাদের থাকার প্রশ্ন ওঠে না।

Advertisment

আয়ুর্বেদ ও সিদ্ধ প্রাচীন ভারতীয় চিকিৎসা পদ্ধতি। আয়ুর্বেদ প্রাচীন ভারতে লক্ষ্যণীয় উন্নতি করেছিল। ত্রিধাতু (বাত, পিত্ত, কফ), সাত প্রকার কলা (রস, রক্ত, মাংস, মেদ, অস্থি, মজ্জা, শুক্র) এবং ত্রি-বর্জ্য (মল, মূত্র, স্বেদ)... এই নিয়ে শরীরের গঠন কল্পনা করা হয়েছিল। না, কল্পনা নয়, বহু পর্যবেক্ষণ, অনুসন্ধান ও বিশ্লেষণের দ্বারা এই অব্দি ধারণা করা সম্ভব হয়েছিল। পঞ্চভূতের গুরুত্ব ছিল ব্রহ্মাণ্ডের সবকিছুর মতোই শরীরের গঠন বিশ্লেষণেও। খাদ্য, পরিপাক, আত্তীকরণ, বিক্রিয়া, মানসিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ইত্যাদিকে স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হত। সবকিছুর মধ্যে এক সাম্যাবস্থা (balance বা homeostasis) বজায় রাখতে পারাকে স্বাস্থ্যের শর্ত মনে করা হত। সাম্যাবস্থা নষ্ট হলে রোগ। আয়ুর্বেদের রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা পদ্ধতি প্রাচীন হলেও তার মধ্যে বৈজ্ঞানিক মননের ছাপ ছিল এবং একটা সময় অব্দি তা ক্রমাগত পরিশীলিত হতে থেকেছে।

আরও পড়ুন, জন ও স্বাস্থ্য: গ্রামীণ চিকিৎসক

সমসময়ে (বা আরও আগে থেকে) দক্ষিণ ভারতে (মূলত মদ্রদেশে, অর্থাৎ বর্তমান তামিলনাড়ু অঞ্চলে) অষ্টাদশ সিদ্ধারের (সিদ্ধিপ্রাপ্ত ঋষির) শিক্ষা অবলম্বনে 'সিদ্ধ' (সিদ্ধা) চিকিৎসা পদ্ধতি গড়ে ওঠে, যাকে দক্ষিণের আয়ুর্বেদ বললে সহজে খানিকটা বোঝা যাবে। এই চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত গবেষকেরা ভেষজের পাশাপাশি রসায়ন সম্বন্ধে অসামান্য জ্ঞান অর্জন করেছিলেন। রাসায়নিক গবেষণার উন্নতি এই চিকিৎসা পদ্ধতির এক অতি প্রশংসনীয় দিক।

সোয়া রিগপা তিব্বতি পদ্ধতি, যা উপমহাদেশে জনপ্রিয়। প্রাচীন ভারতীয় (মূলত আয়ুর্বেদিক) চিকিৎসা পদ্ধতির সঙ্গে এর অনেক মিল আছে। খ্রিষ্টীয় তৃতীয় শতক থেকে আয়ুর্বেদের যে প্রভাব তিব্বতে পড়তে শুরু করে, সপ্তম শতকে বৌদ্ধ পণ্ডিতদের হাতে তার ব্যাপক প্রসার হয়। এর সঙ্গে স্থানীয়, চৈনিক, গ্রীক ইত্যাদি বিভিন্ন চিকিৎসার মিলনে তিব্বতি চিকিৎসা বিকাশ লাভ করে।
ইউনানি আরবী ও পারসিকদের হাত ধরে ভারতে এসে মধ্যযুগে যথেষ্ট জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। পদ্ধতিটির জন্ম গ্রীস দেশে হিপোক্র‍্যাটেসের হাতে (যাঁর নামে আধুনিক অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসকেরাও শপথ নেন)। আজও হিপোক্রেটেসের চতুর্ধাতু তত্ত্ব (four humor theory) এই পদ্ধতির ভিত্তি (হিউমারগুলি 'আখলত' নামে পরিচিত), কিন্তু ইউনানি চিকিৎসা পদ্ধতিকে বাঁচিয়ে রাখা ও উন্নত করার কৃতিত্ব আরবদের প্রাপ্য। অভিসেনার মতো ব্যক্তিত্ব এই চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা করেছেন। পঞ্চভূতের মধ্যে ব্যোম ব্যতীত বাকি চারটিকে এই চিকিৎসার অন্যতম ভিত্তি ধরা হয়। প্রতিটি ভূত বা দ্রব্যের সঙ্গে একেকরকম 'মিজাজ'-এর যোগ ধরে নেওয়া হয়। এই পদ্ধতির মধ্যে মানসিকতা (মিজাজ), ক্ষমতা বা শক্তি (কুয়া), ক্রিয়া (অফাল) ইত্যাদির গুরুত্ব স্বীকৃত। আর আছে 'রূহ', যাকে জীবনীশক্তি বলা যায়।

লক্ষ্য করলে দেখা যায়, এই প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতিগুলির মধ্যে কিছু ধারণাগত মিল আছে। প্রাচীন চীনে জন্ম নেওয়া আকুপাংচার চিকিৎসাতেও জীবনীশক্তি (চি) গুরুত্বপূর্ণ, যদিও পদ্ধতিগত পার্থক্য বিরাট। এই পদ্ধতি আজও চীনে জনপ্রিয় এবং ডক্টর কোর্টনিস ও তার সঙ্গীদের সৌজন্যে ভারতের কিছু প্রদেশেও প্রচলিত। তবু কেন্দ্রীয় সরকারের আয়ুষ তালিকায় এর উল্লেখ নেই, সম্ভবত ভারতব্যাপী জনপ্রিয়তা নেই বলে, অতি আধুনিক সময়ে চীন থেকে শিখে ভারতে প্রথম ব্যবহার করার চেষ্টা হয়েছে বলে, অথবা এর গায়ে কিছুটা বামপন্থী রাজনীতির গন্ধ লেগে আছে বলে।

যোগ কেবলমাত্র একটি চিকিৎসা পদ্ধতি নয়, বরং শরীর মনের এক সার্বিক সাধনা। অষ্টাঙ্গ যোগ ছিল জীবনশৈলী ও বিভিন্ন আসন প্রাণায়াম ও মনের ব্যয়ামের মাধ্যমে যাবতীয় শোকের কারণ থেকে মুক্তি পাবার এক চেষ্টা। তার দার্শনিক দিকগুলো বাদ দিলেও যথাসম্ভব নীরোগ জীবন যাপনের পদ্ধতি হিসেবে তার ব্যবহার হতেই পারে, এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে রোগের চিকিৎসা হিসেবে। আধুনিক ভারতে যোগ বলতে যেহেতু আমরা শুধু আসন-ব্যায়াম বুঝি, তাই এর সম্পর্ক এখন মূলত শারীরিক স্বাস্থ্যের সঙ্গেই।
ন্যাচুরোপ্যাথি অপেক্ষাকৃত নতুন এবং মূল বইটি জার্মান সাহেব লুই কুনের লেখা। তা সত্ত্বেও ভারত সরকারের আয়ুষ তালিকায় এর স্থান পাবার কারণ এই যে ন্যাচুরোপ্যাথি একপ্রকার ভেষজ ও প্রকৃতিভিত্তিক চিকিৎসা পদ্ধতি, যার সঙ্গে আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের নীতিগুলির গভীর মিল আছে। এই পদ্ধতি স্বয়ং গান্ধীজীর স্নেহধন্য এবং ব্রিটিশ আমল থেকেই ভারতে জনপ্রিয়।

আরও পড়ুন, জয়া মিত্রের কলাম জল মাটি: পৃথিবীর পোশাক

আরেক জার্মান সাহেব স্যামুয়েল হ্যানিম্যান প্রাচীন গ্রীসের "সিমিলিয়া সিমিলিবাস কিউরান্টার" তত্ত্বের প্রভাবে যে রোগলক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা পদ্ধতির প্রচলন করেন, তা হোমিওপ্যাথি নামে পরিচিত এবং পৃথিবীর অন্য কিছু দেশের মতো ভারতেও বিশেষ জনপ্রিয়। কয়েকটি ইউরোপীয় দেশে এই চিকিৎসা অবৈজ্ঞানিক হিসেবে ঘোষিত এবং নিষিদ্ধ তালিকাভুক্ত হলেও ভারতে তা সরকার স্বীকৃত এবং আইনসিদ্ধ। এই চিকিৎসা পদ্ধতির সঙ্গে প্রাচীন ভারতীয় চিকিৎসা পদ্ধতি বা আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের কোনো মিল না থাকায় এই পদ্ধতির বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ করা বা কার্যকারিতা বোঝা খুব কঠিন। তবে জনপ্রিয়তার নিরিখে এর গুরুত্ব অনস্বীকার্য।

এইসব প্রথা বর্তমান যুগের বিজ্ঞানের ধারণা অনুযায়ী কতটা বৈজ্ঞানিক, তা এক আলাদা তর্ক। বাস্তব হল, ভারতে সরকার স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানে এসব চিকিৎসা পদ্ধতির প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা আছে। যাঁরা এসব পদ্ধতির চিকিৎসক হিসেবে সরকারি তালিকাভুক্ত, তাঁরা নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রশিক্ষিত। তাঁদের কোনোমতেই 'হাতুড়ে' বলা যায় না। সরকার হঠাৎই তাঁদের একএকটি প্রথার পূর্ণ প্রশিক্ষিত চিকিৎসক থেকে অন্য একটি প্রথার অর্ধশিক্ষিত চিকিৎসা প্রদানকারীতে পরিণত করতে উদ্যোগী হয়েছেন নিজেদের পরিসংখ্যানের খাতায় হিসেব মিলিয়ে ফেলার উদ্দেশ্যে।

অতি সংক্ষিপ্ত ব্রিজ কোর্স করিয়ে আয়ুষ চিকিৎসকদের অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসকে পরিণত করার প্রকল্প যখন ঘোষিত হয়, তখন প্রচুর প্রতিবাদ হয়েছিল চিকিৎসক এবং রোগীদের তরফ থেকে। মূল যুক্তি ছিল এভাবে এঁরা কখনওই আধুনিক চিকিৎসার উন্নত পরিষেবা দিতে সক্ষম হবেন না, অতএব রোগীদের ঠকানো হবে। গ্রামীণ চিকিৎসকদের ক্ষেত্রে যা বলা হয়েছিল, সেই একই যুক্তি এঁদের ক্ষেত্রেও প্রযুক্ত হয়েছে। যুক্তিটি সঠিক, কিন্তু আমার সংশয় অন্য জায়গায়। সেই কারণেই এঁদের বিষয়ে পৃথক আলোচনা করার প্রয়োজন হল। আয়ুষ চিকিৎসকদের অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসকে পরিণত করে সরকার কী বার্তা দিতে চাইছেন? জনমনে যে বার্তাটি পৌঁছচ্ছে, তা হল এই যে আয়ুষ চিকিৎসা পরিষেবাগুলির সাহায্যে জনস্বাস্থ্যের উন্নতি সম্ভব নয়, তাই এঁদের দিয়ে অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসাই করাতে হবে। এভাবে কি সরকার আয়ুষভুক্ত চিকিৎসা পদ্ধতিগুলিকে অপমান করছেন না? শরীর সম্বন্ধে প্রত্যেকটি ধারার নিজস্ব মৌলিক ধারণা আছে, যা আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের থেকে আলাদা। এঁদের চিকিৎসা পদ্ধতিও ভিন্ন। হোমিওপ্যাথির ক্ষেত্রে আধুনিক চিকিৎসার সঙ্গে সরাসরি পদ্ধতিগত বিরোধ বা বৈপরীত্য আছে, যার কথা এঁরা এতদিন জোর গলায় বলে এসেছেন। যে পদ্ধতিকে এঁরা দর্শনগতভাবেই ভুল বলে মনে করেন, আজ হঠাৎ সেই কাজটিই এঁদের করতে বাধ্য করা কি এঁদের প্রতি অন্যায় নয়?

আরও পড়ুন, জন ও স্বাস্থ্য: ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশন বিল

সরকার যদি আয়ুষ তালিকাভুক্ত চিকিৎসা পদ্ধতিগুলির উপর আস্থা হারিয়ে থাকেন, তবে তা সরাসরি বলুন। তা না হলে এই পদ্ধতিগুলোকেই জনস্বাস্থ্যের উন্নতিতে ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। আয়ুষ চিকিৎসাগুলির উন্নতিকল্পে গবেষণার ব্যবস্থা করা যায়। আধুনিক চিকিৎসা প্রদানকারী হাসপাতালগুলিতে হোমিওপ্যাথি বা আয়ুর্বেদ চিকিৎসকদের ডিউটি দিয়ে, তাঁদের দিয়ে জরুরি বিভাগে হার্ট অ্যাটাকের অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ লেখানোর মধ্যে এক ধরণের লোক ঠকানো আছে, যা সরকার করতে পারেন না। এর বদলে সর্বত্র আয়ুষ হাসপাতাল খোলা যায়, জরুরি পরিষেবা সমেত। সেখানে যাঁরা যাবেন, তাঁরা সচেতনভাবে ওই পরিষেবা বেছে নেবেন এবং নিজের পছন্দ অনুযায়ী আয়ুর্বেদ, ইউনানি বা হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে নিজেদের রোগের চিকিৎসা (আপৎকালীন চিকিৎসা সমেত) করাবেন। এই পদ্ধতির মধ্যে স্বচ্ছতা থাকবে।

প্রতিযুক্তি হিসেবে অনেকেই বলবেন, এই প্রাচীন বা অপ্রমাণিত চিকিৎসা পদ্ধতিগুলির পিছনে জনগণের করের টাকা ব্যয় করে তাদের আরও ব্যাপ্ত করার চেষ্টা সমর্থনযোগ্য নয়। সরকার নিজেও কি তাই মনে করেন? তবে কি বর্তমান আয়ুষ চিকিৎসকদের অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসকে পরিণত করে ভবিষ্যতে এইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে বন্ধ করে দেবার এবং তাদের পরিকাঠামো ব্যবহার করে আধুনিক চিকিৎসার নতুন মেডিক্যাল কলেজ খোলার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে? নাকি প্রতি বছর হোমিওপ্যাথি মেডিক্যাল কলেজ নতুন ছাত্র ভর্তি করতে থাকবে এবং পাশ করার পর তাঁদের হোমিওপ্যাথি ভুলিয়ে অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসকে পরিণত করা হবে? তাহলে অতদিন ধরে হোমিওপ্যাথি শিখিয়ে লাভ কী হল? বদলে 'নিট' পরীক্ষার মেধাতালিকা থেকে আরও বেশি সংখ্যক ছাত্রছাত্রী  নিয়ে তাঁদের প্রথম থেকে আধুনিক চিকিৎসার প্রশিক্ষণ দিলেই হয়।

এ নিয়ে আলোচনা হোক, তর্ক হোক এবং একটা সিদ্ধান্তে আসা যাক। সরকারি নীতিতে স্বচ্ছতা এবং পারম্পর্য থাকা প্রয়োজন। হয় আয়ুষ চিকিৎসাগুলিকে সম্মান দিয়ে এগুলিকে জনসেবায় ব্যবহার করুন, অথবা এসব পদ্ধতির প্রতি অনাস্থা স্পষ্ট করে সর্বত্র আধুনিক চিকিৎসার প্রসার করুন সঠিক পদ্ধতিতে। সোনার পাথরবাটি তৈরির চেষ্টা কোনো দায়িত্বশীল সরকারের প্রকল্প হতে পারে না।

(কৌশিক দত্ত আমরি হাসপাতালের চিকিৎসক, মতামত ব্যক্তিগত)

Jon O Swasthyo
Advertisment