বিজয় দশমীর অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ নোবেলভূষণ কৈলাশ সত্যার্থীকে দিয়ে নাগপুরে ভারতমাতার বন্দনাগান গাওয়াতে চেয়েছিল। সঙ্ঘকে অসুখী না-করে সত্যার্থী ভারতমাতার পায়ে অর্ঘ্য দিয়েছেন ঠিকই। কিন্তু, সেই অর্ঘ্য যেন চাঁদ সদাগরের মনসাকে ফুল দেওয়ার মতোই। কেননা, দেশের শিশুসুরক্ষার ভার তিনি অর্পণ করেছেন ভারতমাতার সন্তানসন্ততির উপর, যাদের অনেকেই দেশের সাম্প্রতিক নারী ও শিশুনিগ্রহে অভিযুক্ত। সত্যার্থীর এই সারসত্য সঙ্ঘের কতটা হৃদয়ঙ্গম হল, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে, সঙ্ঘের মহাপরিচালক মোহন ভাগবত কখনওই নরেন্দ্র মোদীর মতো বেখেয়ালি নন। তিনি দুর্গাপুজোর শুভেচ্ছায় কালীচিত্র টুইট করেন না। ফলে, সত্যার্থীর নিহিত-সত্যোচ্চারণটি তিনি বুঝবেন না, তা নয়। কিন্তু, আপাতত তাঁরা প্রকাশ্যে সত্যার্থীর তথাকথিত ভারতমাতাবন্দনায় উদ্বাহু হবেন। যেমন হয়েছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়ের বক্তৃতার পরে। এই চৈতন্যভাবটি তাঁদের দেখাতেই হবে। তাঁরা নিরুপায়। কিন্তু, আমরা বুঝি, সত্যার্থীর সত্য-ইঙ্গিত সঙ্ঘের উদ্দেশে সমুচিত হয়েছে। সঙ্ঘের মঞ্চে দাঁড়িয়ে তথ্যভিত্তিক অভিযোগে সত্যার্থী বুঝিয়ে দিয়েছেন, নিজের পূর্ব-অবস্থান থেকে এক-চুলও সরেননি তিনি। কয়েক মাস আগে সত্যার্থী নিজের শিশুকল্যাণসংস্থার বার্ষিক অনুষ্ঠানে জানাতে দ্বিধা করেননি যে, দেশে নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে ‘জরুরি অবস্থা’ চলছে। আর, সেই শোচনীয় পরিস্থিতির অংশভাক্ সঙ্ঘের কার্যকর্তারাও। সঙ্ঘের মঞ্চে সত্যার্থীর ভাষণ সেই সত্যের পরিপূরকমাত্র।
সঙ্ঘ এই নিষ্ফলা আত্মঘাতী খেলাটি শুরু করেছিল প্রণব মুখোপাধ্যায়কে দিয়ে। সমাজজীবনে নিজেদের ভাবমূর্তি দৃশ্যত গণতান্ত্রিক ও কোমল করার চেষ্টায় প্রণববাবুর মতো নিখাদ-কংগ্রেসিকে দিয়ে নাগপুরের মঞ্চে সঙ্ঘসপক্ষে কিছু বলিয়ে নিতে চেয়েছিলেন ভাগবত। প্রণববাবুও আমন্ত্রণগ্রহণে তাঁকে নিরাশ করেননি। শেষপর্যন্ত প্রণববাবুর মতো ধীমান রাজনীতিক যে তাঁর বক্তৃতায় পরোক্ষে বিঁধেছেন সঙ্ঘকেই, তা স্বস্তি দিয়েছিল দেশবাসীকে। কেননা, সঙ্ঘের মঞ্চে দাঁড়িয়েই তিনি ভারতীয় সংস্কৃতির বহুত্ববাদের কথা মনে করিয়েছিলেন হিন্দুত্ববাদী কট্টর সংগঠনটিকে। নাগপুর আপাতভাবে তা গায়ে মাখেনি। গায়ে মাখলে তাদের চলে না। তারা বরং বিষয়টিকে নিজেদের সাফল্য হিসাবেই দেখিয়েছে।
আরও পড়ুন, #Me Too: আকবরের মামলায় তীব্রতর মিটু-র অভিঘাত
বাঘ যেমন রক্তের স্বাদ পায়, সঙ্ঘও তেমন পেয়েছে প্রণববাবুকে কাছে টেনে। সে-কারণেই তাদের দ্বিতীয় প্রয়াস কৈলাশ সত্যার্থী, যাঁকে তারা কোনওদিনই বিশেষ সুনজরে দেখেনি। ২০১৪ সালে শিশুসুরক্ষাধিকারের সুবাদে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পরেও যে সঙ্ঘ ও কেন্দ্র তাঁকে নিয়ে বিশেষ উচ্ছ্বসিত হয়েছে, তা নয়। কেননা, সত্যার্থী চিরকালই মুক্ত-বামপন্থী হিসাবে চিহ্নিত। পৃথিবীতে দলবিহীন যে-কোনও মুক্তচিন্তককেই আধিপত্যবাদী রাজনৈতিক দল ও রাষ্ট্র সুনজরে দেখে না। বরং সন্দেহই করে। নোবেলভূষণ অমর্ত্য সেনকে যেমন, সত্যার্থীকেও তেমনই সন্দেহভাজন-চোখে দেখেছে তারা। অমর্ত্যকে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরালেও, সত্যার্থী সম্পর্কে তারা এতদিন ব্যবহার করেছে নীরবতার অস্ত্রই। বিজেপি যখন রাজ্যস্তরে বিদ্যাজীবীদের নিজেদের ছাতার নীচে আনতে সক্রিয় হয়েছে, তখন সঙ্ঘও বৃহত্তর পরিসরে সেই কাজটি করাতে চেয়েছে প্রণববাবু বা সত্যার্থীকে দিয়ে। রাজ্যে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় যেমন প্রত্যাখ্যান করেছেন রাহুল সিংহদের সেই উদ্দেশ্য, তেমনই সত্যার্থীও স্বভাবসিদ্ধ কোমলতায় কমলের কাঁটা চিনিয়ে দিয়েছেন ভাগবতদের।
সত্যার্থী সঙ্ঘের মঞ্চে বলেছেন, দেশের কোটি-কোটি ভারতকন্যা আজ গৃহে, কর্মক্ষেত্রে, বিদ্যালয়ে, মাঠে, ঘাটে প্রতি-মুহূর্তে অবমাননার শিকার। ভারতমাতার পক্ষে তা এক শোচনীয় অসম্মান।দেশের প্রতিটি গ্রামে-গ্রামান্তরে যখন সঙ্ঘের নানা শক্তিশালী গণসংগঠন রয়েছে, তখন সেইসব সংগঠনের কার্যকর্তা-কর্ত্রীরাই শিশুকন্যা ও নারীরক্ষায় হয়ে উঠতে পারেন অগ্নিপ্রাচীর। কেননা, তাঁরা সকলেই ভারতমাতার পূজারি, নিবেদিতপ্রাণ। তারা যদি সেই দায়িত্ব সুচারুভাবে পালন করে, তাহলে তা-ই হবে ভারতমাতার শ্রেষ্ঠ পাদপদ্ম। শিশুসুসহ-দেশ গড়তে সঙ্ঘের বজরংদল ও দুর্গাবাহিনীকে আহ্বান জানিয়েছেন দেশের প্রধানতম শিশুরক্ষক কৈলাশ সত্যার্থী।
সত্যার্থী বলেছেন, ‘আরএসএসের তরুণদের আমি অনুরোধ করি, তারা যেন ভবিষ্যতের মাতৃভূমি গঠনের এই ব্রতে পথিকৃতের ভূমিকা নেয়। দেশের প্রতিটি গ্রামেই যদি সঙ্ঘের শাখাপ্রশাখা থাকে, তাহলে এই কাজটি তাদের পক্ষে মোটেই কঠিন হবে না। আমি আশাবাদী, দেশে যখন রোজ প্রতি-মুহূর্তে শিশুকন্যা ও নারীরা লাঞ্ছিত ও খুন হচ্ছে, তখন তাদের রক্ষাই ভারতমাতার সন্তানদের প্রধান লক্ষ্য হওয়া সমুচিত। তারা হয়ে উঠবে ভবিষ্যৎ-ভারতমাতাদের অগ্নিপ্রাচীর। সঙ্ঘকর্মীরা দেশের এই প্রজন্মের শিশুকন্যাদের রক্ষায় এগিয়ে এলে, ভবিষ্যতে ওই শিশুকন্যারাই ভারতমাতা হয়ে আত্মরক্ষা ও দেশরক্ষা করতে সক্ষম হবে। সেই উদ্দেশ্যে ভারতমাতার শ্রীচরণে যে-পাঁচটি পদ্ম নিবেদন করা জরুরি, তা হল, সমানাধিকার, সহমর্মিতা, নিরাপত্তা, নিশ্চয়তা, আত্মসম্মান। সহমর্মিতা ছাড়া কোনও দায়বদ্ধ সমাজ গড়ে ওঠে না। সহমর্মিতাবিহীন রাজনীতি, অর্থনীতি ও সমাজ হয়ে ওঠে প্রাণবিহীন দেহ। একজন অর্থনীতিক মাথাপিছু আয়ের নিরিখে দেশের অগ্রগতি নির্ধারণ করেন। আমার কাছে উন্নয়নের পরিমাপ হাজারো আদিবাসী শিশুশ্রমদাস বা পাথরখাদানের শিশুশ্রমিকের হাসির ঝিলিকটুকু, যাদের সারাক্ষণ ঘিরে রেখেছে হুমকি আতঙ্ক আর নিরাপত্তাহীনতা। কিন্তু, পরিতাপের বিষয়, মেয়েদের নিগ্রহ, পাচার, ধর্ষণ ও খুনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে সমাজের দায়িত্ববান অংশই। অপব্যবহার ঘটছে ক্ষমতা ও দায়বদ্ধতার। নিগ্রহ, ধর্ষণ, খুনের সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে অনেকানেক কার্যকর্তার নামও।’
আরও পড়ুন, যৌনকলঙ্ক ঢাকতেই কি নাদিয়াকে নোবেল
সত্যার্থীর এই সত্যভাষণে আমাদের মনে পড়ে উত্তরপ্রদেশের বিজেপি-বিধায়ক কুলদীপ সিং সেঙ্গার, গুজরাতের দলীয় সহ-সভাপতি জয়ন্তী ভানুশালী থেকে দলীয় সাংসদ-মন্ত্রী এম জে আকবরের মতো রাঘববোয়ালের নাম। মনে পড়ে, কুলদীপের মতো এক খুন-ধর্ষণে-অভিযুক্ত বিধায়কের পক্ষে জলুশ বের করেছিল রাজ্যের বিজেপি-কর্মীরা। নীরবতায় কুলদীপের প্রতি সমর্থন বুঝিয়েছিলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ যোগী ও দলের সভাপতি অমিত শাহ। আদালতে নিগৃহীতা হয়েছিলেন ধর্ষিতা-দলিতকন্যার মহিলা-আইনজীবী, পুলিশকে চার্জশিট দিতে দেয়নি দলীয় কর্মীরা। কুলদীপকে গ্রেফতার করতে পুলিশ অদৃশ্য সবুজসংকেতের অপেক্ষা করেছিল।জম্মুর উন্নাওয়ে জনজাতি-বালিকাকে ধর্ষণ ও খুন করেছিল হিন্দুত্ববাদী পুরোহিত ও পুলিশকর্মী। সরকার তাদের বিরুদ্ধে সক্রিয় না-হয়ে ধর্ষিতার ছবি প্রকাশ করায় জরিমানা করেছে সংবাদমাধ্যমকে। সম্প্রতি শাসকের একই মানসিকতা দেখেছি এককালের বাঘা-সাংবাদিক এম জে আকবরের কর্মক্ষেত্রে নারীনিগ্রহের অভিযোগে। প্রধানমন্ত্রী এবারও মৌন। অমিত শাহ তাঁর হয়ে ব্যাট করতে নেমে অভিযোগকারিণীদেরই আদালতের জুজু দেখিয়েছেন। আকবরও প্রাথমিকভাবে চলেছেন চিত্রনাট্য মেনেই। কিন্তু, শেষরক্ষা হয়নি। অবশেষে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগই করতে হয়েছে (গত-সপ্তাহে এই কলামে তেমন ইঙ্গিতই ছিল) এককালের কাগুজে বাঘকে। শবরীমালা মন্দিরে ঋতুমতী নারীর প্রবেশাধিকারে সুপ্রিম কোর্ট সিলমোহর দেওয়ার পরেও, সঙ্ঘীরা মেয়েদের জন্য মন্দিরের পথ রুদ্ধ করে দিয়েছে, নিগ্রহ করেছে মহিলা-সাংবাদিককেও। কেন্দ্র নীরব। নিরাসক্ত কেরলের বামপন্থী সরকারও।
সঙ্ঘের মঞ্চে দাঁড়িয়ে সুচিন্তিত ও সুস্পষ্ট বক্তৃতায় সত্যার্থী এই সব ঘটনাগুলিই নতুন করে মনে করিয়ে দিলেন। বলা যায়, সুবক্তা প্রণববাবুকেও ছাপিয়ে গেলেন সত্যার্থী। তিনি পদ্মাসীন ভারতমাতার চরণে যা নিবেদন করলেন, তা আসলে পদ্মকণ্টক। ভাগবতরা নিজেদের যতই করিৎকর্মা ও সুচতুর মনে করুন, সত্য সত্যই। সত্যের কোনও মিথ্যা হয় না। কোনও মিথ্যাই সত্যকে ঢেকে রাখতে পারে না। সত্য বারবার নিজের শক্তি বাড়িয়ে ফিরে আসে। হিটলার-মুসোলিনিরা অনুকূল সত্যনির্মাণের অঢেল চেষ্টা করেছিলেন, পারেননি। ভাগবত সে-ক্ষেত্রে নিছকই অর্বাচীন।
আসলে, শক্তিধররা বারবার এই ভুলটিই করেন। অতিরিক্ত-আত্মবিশ্বাসে তাঁরা বিনয় ও মেধাকে মনে করেন শক্তিহীনতা। ভাগবতও তেমন ভেবেছিলেন সত্যার্থী সম্পর্কে। তিনি সত্যার্থীর বিনয়, মেধা, দায়বদ্ধতার স্বরূপ বোঝেননি। তিনি হয় বিস্মৃত হয়েছিলেন, বা আমল দেননি সত্যার্থীর কয়েকমাস আগের ভাষণ ও তাঁর সংস্থার নৈর্ব্যক্তিক প্রতিবেদন।
যখন কাঠুয়া, উন্নাও, সুরাত, সাসারামে একাদিক্রম-শিশুধর্ষণে কেঁপে উঠেছিল দেশের অন্তরাত্মা, তখন (১৭ এপ্রিল) ‘কৈলাশ সত্যার্থী চিলড্রেন’স ফাউনডেশন’-এর বার্ষিক অনুষ্ঠানে সত্যার্থী বলেছিলেন, শিশুধর্ষণের বিরতিবিহীন সংবাদে মনে হয়, শিশুকন্যাদের জন্য দেশে ‘জাতীয় জরুরি-অবস্থা’ চলছে। দেশের প্রতিটি রাজনৈতিক দলের কাছে তিনি আর্জি জানিয়েছিলেন, যে-কোনও সংসদীয়-অধিবেশনের একটি গোটা-দিন শিশুকন্যাদের নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা-আইন বলবৎ করা হোক। সে-জন্য সংসদে ‘জাতীয় বাজেটভিত্তিক কর্মসূচি’ প্রণয়ন করার আশু-আবশ্যিকতার কথাও বলেছিলেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘মনে রাখা দরকার দেশে প্রতিদিন পঞ্চান্নটি শিশু বলাৎকারের শিকার হচ্ছে। আমাদের শিশুরা অরক্ষিত থাকলে প্রগতিশীল দেশগঠনের ভাবনা কখনওই ফলপ্রসূ হবে না। হিংসার বলি শিশুরা সুবিচার না-পেলে দেশের অগ্রগতিও থমকে যাবে।’
দেশে শিশুনিগ্রহের প্রকার ও প্রকৃতি-বিষয়ক প্রতিবেদন ‘শিশুরা অপেক্ষা করতে পারে না’ প্রকাশের ওই অনুষ্ঠানে সত্যার্থী বলেছিলেন, ‘দেশের যে-কোনও প্রান্তে যখনই কোনও শিশুকন্যা ধর্ষিত ও খুন হয়, তখন আসলে ধর্ষিত ও খুন হয় দেশেরই অন্তরাত্মা।’ ফাউনডেশনের প্রতিবেদনে দেশে শিশুসন্ত্রাসের বিস্তৃত-বিবরণ প্রকাশ করে তিনি একটি ‘জাতীয় শিশুরক্ষা ট্রাইবুনাল’ গঠনেরও প্রস্তাব দিয়েছিলেন। স্বাভাবিক-সুবিচার ত্বরান্বিত করতে পকসো-আইনের ভিত্তিতে দ্রুতনিষ্পত্তি-আদালতের সক্রিয়তায় গুরুত্বারোপ করেছেন তিনি। কিন্তু, সবটাই শেষপর্যন্ত অরণ্যরোদনে পর্যবসিত হয়েছে।
আরও পড়ুন, সুপ্রিম কোর্টই ভরসা স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে
সত্যার্থীর ওই সত্য আরও সম্প্রসারিত হয়েছিল অচিরেই। আন্তর্জাতিক সংবাদসংস্থা থমসন-রয়টার্স ফাউন্ডেশনের (২৬ জুন) প্রতিবেদনে জানানো হয়েছিল, কেবল শিশুহিংসাই নয়, পৃথিবীতে সার্বিক-নারীহিংসায়ও ভারতই প্রথম-স্থানাধিকারী। বিশেষত, নরেন্দ্র মোদীর প্রধানমন্ত্রিত্বে সংখ্যাটি ক্রমবর্ধমান। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভারতের এই ‘অগ্রগতি’-র কারণ, নারীহিংসা-মোকাবিলায় রাষ্ট্রের ভ্রুক্ষেপহীন অবস্থান। দিল্লির নির্ভয়াহিংসার পরে যেখানে বিয়য়টিকে জাতীয়-অগ্রাধিকার হিসাবে গণ্য করা উচিত ছিল, সেখানে ঘটনাটি নিয়ে যত রাজনৈতিক-টানাপোড়েন হয়েছে, সে-তুলনায় আইনি-অগ্রগতি তেমনকিছু হয়নি। মেয়েদের প্রতি শ্রদ্ধাসম্মানহীনতা, রাজনৈতিক আধিপত্য, লিঙ্গবৈষম্য, কালক্ষেপ ও মূল্যবোধের অবনমনের প্রকাশ হিসাবেই দেশে অবিরাম ঘটে চলেছে ধর্ষণ ও নারীপাচারের মতো ভয়াবহ-অপরাধ। তারই চূড়ান্ত রূপ নির্ভয়া থেকে উন্নাওয়ের ঘটনা।
এই প্রেক্ষিতে নাগপুর হয়তো সত্যার্থীকে দিয়ে বিষয়টি মসৃণ করতে সচেষ্ট হয়েছিল। কিন্তু, সত্যের বিপদটি আঁচ করেনি তারা। তারা ভাবেনি, সকলেই যে আত্মস্বার্থে শাসকের কাছে শিরদাঁড়া বন্দক দেয় না, দায়বদ্ধতা ও বিনয়ও যে অনেকেরই শাণিত প্রতিবাদশক্তি, নাগপুরের মঞ্চে কৈলাশ সত্যার্থী তা নতুন করে প্রমাণ করবেন। এরপর সঙ্ঘ নিশ্চয়ই ব্ক্তা-নির্বাচনে আরও-সতর্ক হবে। তবে, মিথ্যা, শঠতা, ক্ষমতা কখনওই নিরঙ্কুশ ও চিরস্থায়ী হতে পারে না। নাগপুরনিরপেক্ষভাবেই সরব হবেন দেশের অগণিত সত্যার্থী। ইতিহাস তেমনই বলে।