সাবাশ কাঞ্চন মল্লিক! সাবাশ শ্রীময়ী চট্টরাজ! এই না হলে সাহেবিয়ানা। ব্রিটিশরা একসময় ভারতীয়দের সঙ্গে যে ব্যবহার করতেন, তারই পুনরাবৃত্তি করে নিজেদের ক্লাস দেখিয়ে দিলেন আপনারা। সম্প্রতি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন আপনারা। তার জন্য আপনাদের অনেক শুভেচ্ছা, আগামী জীবনের জন্য অনেক শুভকামনা। আর সেই সঙ্গে ৬ মার্চ রিসেপশনে যে ভদ্রতাটা আপনারা দেখিয়েছেন সংবাদমাধ্যমের কর্মী, সুরক্ষাকর্মী এবং গাড়িচালকদের জন্য তার জন্য বলব, আপনাদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক।
বিষয়টা একটু খোলসা করে বলি। গতকাল বউভাত ছিল কাঞ্চন-শ্রীময়ীর। সেখানে রিসেপশনের ভেন্যুর বাইরে গোদা গোদা অক্ষরে তাঁরা লিখে দিয়েছিলেন, সংবাদমাধ্যম, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা রক্ষী এবং গাড়ির চালকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। হ্যাঁ, ঠিকই পড়েছেন। যার জেরে ছিঃ ছিঃ পড়ে গিয়েছে গোটা সুশীল সমাজে। একুশ শতকে এসে এই সাহেবি মেজাজে শ্রেণিবৈষম্যের চরম উদাহরণ পেশ করেছেন তাঁরা। যা নিয়ে নিন্দামুখর সবাই। সাহেবি মেজাজ বলছি কারণ, স্বাধীনতার আগে ব্রিটিশরাও ঠিক এইভাবেই তাঁদের অনুষ্ঠানে লিখে রাখতেন, ভারতীয় এবং সারমেয়দের প্রবেশ নিষিদ্ধ। তাই সাহেবিয়ানা বললাম।
আপনারা বিয়ে করেছেন, ভাল কথা। আপনাদের বিয়ের অনুষ্ঠানে কাদের নিমন্ত্রণ করবেন বা করবেন না সেটা আপনাদের ব্যক্তিগত বিষয়। কিন্তু কীভাবে সদর্পে শ্রেণিবৈষম্যের নমুনা দিলেন আপনারা! সংবাদমাধ্যমের কথা না হয় বাদ দিলাম। বলিউডি কায়দায় আপনারা চান না সংবাদমাধ্যমে আপনাদের রিসেপশনের ছবি উঠুক। তাই বলে ব্যক্তিগত সুরক্ষাকর্মী এবং গাড়ির চালকদের অপমান করার সাহস কে দিল আপনাদের? আপনারা কী তাঁদের মানুষ বলে মনে করেন না, নাকি খ্যাতির শীর্ষে উঠে মাটিতে পা পড়ছে না আপনাদের?
আবার মনে পড়ে, এই কাঞ্চন মল্লিকই কাজের প্রতি নিষ্ঠার কীরূপ জলজ্যান্ত উদাহরণ দিয়েছিলেন করোনাকালে। সদ্যপ্রয়াত মায়ের মুখাগ্নি করে ধরাকাছা পরেই শুটিংয়ে ফিরে গিয়েছিলেন। তখন বলেছিলেন, কাজের প্রতি নিষ্ঠাবান আপনি। তাই প্রিয়জনকে হারিয়েও কর্তব্যে অবিচল আপনি। কয়েক বছরের মধ্যেই এত অসংবেদনশীল হয়ে পড়লেন কীভাবে ভাবতেই অবাক লাগছে। হয়তো তৃতীয়বার বিয়ে পিঁড়িতে বসার 'আনন্দে' অনুভূতি হারিয়েছেন।
আপনার দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্সের পর প্রেমিকা শ্রীময়ী চট্টরাজের সঙ্গে খুনসুটি, আইবুড়ো ভাতের ছবি, বিয়ের পর খাবারের থালা হাতে আপনার নাচের ছবি-ভিডিও সমাজমাধ্যমে ভাইরাল। যদি সংবাদমাধ্যমকে কাঞ্চন আপনার এতই অপছন্দ তাহলে ঘটা করে এই ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি-ভিডিও পোস্ট না করলেই পারেন। লোককে দেখাচ্ছেন আপনি কত খুশি, অথচ রিসেপশনে সংবাদমাধ্যম আপনার পছন্দ নয়।
কাঞ্চন, আপনি অভিনেতার পাশাপাশি একজন জনপ্রতিনিধিও। সংবিধানের দিব্যি খেয়ে বিধায়ক পদে শপথ নিয়েছিলেন, যে কোনও শ্রেণি, বর্ণ, ধর্মের মানুষের প্রতি আপনি দায়বদ্ধ এবং শ্রদ্ধাশীল থাকবেন। তাহলে নিজের জীবনের এমন আনন্দঘন মুহূর্তে কেন সমাজের নিম্নবিত্ত শ্রেণির প্রতি এত অসংবেদনশীল হয়ে পড়লেন আপনি, বুঝতে পারলাম না। বহু বছর আগে টেলিভিশনের পর্দায় 'জনতা এক্সপ্রেস' রিয়ালিটি শো থেকে মানুষের নয়নের মণি হয়েছিলেন আপনি। ভিড় রাস্তায় সমস্ত শ্রেণির মানুষকে আপন করে নিতেন খেলার ছলে। আজ এত বছর বাদে আপনি এতটা পাল্টে গেলেন, ভাবতে অবাক লাগছে। খ্যাতি মানুষকে উপরে তোলে, আবার নীচেও আছড়ে ফেলে। আপনার আগামী জীবন সুখের হোক, এবং আশা করব আপনার সদ্বুদ্ধিরও উদয় হোক…