Advertisment

মন্দিরের অব্যবহৃত ভান্ডারই হোক কেরালার পুনর্নিমানের ভীত

বর্তমানে এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আবারও মন্দিরের ধনভাণ্ডারের ব্যবহার করে পুনর্নির্মাণের সুযোগ রয়েছে। অন্যত্র তহবিলের সন্ধানের পরিবর্তে, মন্দির তহবিল ব্যবহার করা উচিত রাজ্য সরকারের।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

চলতি বছর যে ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে কেরালা, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। অতিমাত্রায় বৃষ্টিপাতে বিধ্বংশী বন্যার কবলে পড়ে সে রাজ্য। যে পরিমাণ মানুষের মৃত্যু এবং ধ্বংসের কবলে পড়েছে কেরালা, সেখান থেকে আবারও ঘুড়ে দাঁড়াতে বেশ কিছুটা সময় লাগবে। তবে কেরালার প্রতিটি মানুষের অদম্য উৎসাহ তাঁদের এই পরিস্থিতির সঙ্গে দ্রুত লড়তে সহায়তা করেছে। পাশাপাশি সমগ্র পৃথিবী থেকে বহু মানুষ যেভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন সেই ঘটনাও যথেষ্ট তা‌‌ৎপর্যপূর্ণ। ইতিমধ্য়েই একাধিক অভিনব পদ্ধতিতে ত্রান শিবির পৌঁছে গিয়েছে তাঁদের কাছে।

Advertisment

আশা করা যায়, সরকারের প্রতিনিধিরা এই সম্পূর্ণ পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নিয়ে তা বিভিন্ন গণমাধ্যমের মধ্যে দিয়ে দেশের ভিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে দেবেন। কেরালার মানুষের বীরত্ব, বুদ্ধিমত্তা এবং সংহতির গল্প সংগ্রহ করে তা ছড়িয়ে যাক প্রতিটা মানুষের মধ্যে। পাশাপাশি কেরালার বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর উচিৎ, ঠিক কী কারণে এই সমস্যার উৎপত্তি হয়েছে, কেনই বা হয়েছে, তার মূল্যায়ন করে ভবিষ্যতের যেকোনও সমস্যার জন্য প্রস্তুত থাকা প্রয়োজন।

বৃষ্টিপাতে ভেসে গিয়েছে সমগ্র রাজ্য। এই মুহূর্তে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা এবং পুনর্নির্মাণের চেষ্টা শুরু করাই সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। তবে এ ক্ষেত্রে শুধু আর্থিক ত্রান সংগ্রহ নয়, মানুষের কর্মক্ষমতা এবং কাঁচামালের উৎসের খোঁজ চিহ্নিত করাও গুরুত্বপূর্ণ। যা বেশ অনেকেটাই সময় সাপেক্ষ।

আরও পড়ুন: চলচ্চিত্র উৎসবসহ স্কুল ফেস্ট বাতিল কেরালায়

তবে কেরালাকে পুনর্নির্মাণের জন্য যা প্রয়োজন তার যথেষ্ট জোগান নেই বলেই মনে করা হচ্ছে। তাহলে ভগবানের দেশকে পুনর্নির্মাণের জন্য কী করা হবে? সব থেকে ধনী মন্দিরগুলির মধ্যে বেশ কিছু রয়েছে কেরালাতে, যেমন পদ্মনাভ মন্দির, গুরুভায়ুর মন্দির, সাবরিমালা মন্দির ইত্যাদি। বহু শতাব্দী ধরে এই মন্দিরগুলি পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এই মন্দিরের তহবিলে দান করে এসেছেন। মানুষের বিশ্বাস, শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য দেবতার কাছে গহনা, স্বর্ণ, মূল্যবান পাথর, নগদ ও অন্যান্য বহু সম্পদ দান করেছেন তাঁরা। সমষ্টিগতভাবে বিচার করলে বর্তমানে এই তিনটি মন্দিরের বর্তমান সম্পদ ভান্ডারে রয়েছে ১ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি অর্থ। বর্তমানে কেরালার যে সকল মানুষ এই ভয়াবহ দুর্যোগের মুখোমুখি হয়েছেন, কার্যত তাঁদের পূর্বপরুষরাই বহু বছর ধরে এই মন্দিরের ত্রান তহবিলে দান করে আসছেন।

অতীতে বিভিন্ন সংকটজনক পরিস্থিতির সঙ্গেই মোকাবিলা করতে ব্যবহৃত হত মন্দিরের এই সম্পদ। মূলত খাদ্য সঙ্কটের সময় দুর্গতদের ত্রাণে ঝাঁপিয়ে পড়াই ছিল এই সম্পদের মূল উদ্দেশ্য। এই সময় মন্দিরের দানের অর্থ দিয়ে খাদ্যশস্য কেনা হত। এমন কী এর স্বপক্ষে বেশ কিছু নথিও মিলেছে। এ ছাড়াও লঙ্গরখানা এবং ভোগের আয়োজনে ভবিষ্যতের নজির এটাই প্রমান করেছে যে জনগণের কল্যাণের জন্যই বরাদ্দ ছিল এই মন্দিরের সম্পদ।

তবে, গণতান্ত্রিক সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে কঠিন সময়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে কাজ করা টিকাকরণের দায়িত্বের মতোই প্রয়োজনীয়। এ ক্ষেত্রে, মন্দিরের ভাণ্ডারগুলির সংগ্রহ এভাবেই অব্যাহত থাকত এবং এই পুঁজি ধীরে ধীরে জমে অব্যবহৃত সম্পদে পরিণত হয়, যা এই রাজ্যের জনসাধারণেরই টাকা।

আরও পড়ুন: বন্যায় ক্ষতির অঙ্ক রাজ্যের বার্ষিক পরিকল্পনা খাতের থেকেও বেশি: কেরালার মুখ্যমন্ত্রী

বর্তমানে এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আবারও মন্দিরের ধনভাণ্ডারের ব্যবহার করে রাষ্ট্রের পুনর্নির্মাণের সুযোগ রয়েছে। এখন অন্যত্র তহবিলের সন্ধানের পরিবর্তে মন্দির তহবিল ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত রাজ্য সরকারের। এই ধরনের সিদ্ধান্তে কারো কোনও আপত্তি থাকা একেবারেই উচিত নয়।

বলার অপেক্ষা রাখে না, সর্বাধিক স্বাক্ষরতার হার, সর্বনিম্ন শিশুমৃত্যুর হার, সর্বোচ্চ যৌন অনুপাত, বিদেশ থেকে সর্বোচ্চ প্রেরণ, ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রেই ছক ভেঙে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে কেরালা। এখন আরও এক ছক ভাঙার পালা। সামাজিক রীতিনীতি ভেঙে মন্দিরের অব্যবহৃত, নিষ্ক্রিয় ভান্ডারকে কাজে লাগিয়ে আবারও নতুন করে শুরুর সময় এসেছে। কে বলতে পারে, মানুষের প্রতি এই ধরনের ভালবাসা কেরালার জনগণের মধ্যে আরও দায়িত্ববোধ গড়ে তুলবে, পাশাপাশি কৃতজ্ঞতা স্বরূপ মন্দিরের তহবিলে আরও দান করে ভবিষ্যতের দুর্দিনের সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য মজবুত করবে রাজ্যের ভিত?

kerala
Advertisment