কৌশিক দত্ত
কীভাবে অকারণে একটি ছাত্র আন্দোলনের জন্ম দিতে হয় এবং কেমন করে তাকে গণ আন্দোলনে পরিণত করতে হয়, তার উদাহরণ সৃষ্টি করলেন কোলকাতা মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। কলেজের শৃঙলা রক্ষার ভার যাঁদের হাতে, তাঁরাই অনিয়ম করলেন। তারপর ন্যায্য দাবি অগ্রাহ্য করা, প্রতিবাদে কর্ণপাত না করা, অপ্রত্যাশিত ঔদ্ধত্য প্রদর্শন এবং ছাত্রদের প্রতি অবিশ্বাস্য নিষ্ঠুর আচরণের দ্বারা ক্রমশ বাড়িয়ে তুললেন উত্তাপ।
মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রদের সমস্যা ছিল হস্টেলের অপ্রতুলতা। এই মুহূর্তে সমস্যার কেন্দ্রে নবনির্মিত এগারো তলা হস্টেল। যা হতে পারত সরকারের সদিচ্ছার বিজ্ঞাপন, অধ্যক্ষের অবিমৃশ্যকারিতায় তা এখন আন্দোলনের অনুঘটক। হস্টেলের সিট বিতরণ করার কিছু নিয়ম আছে। কলেজ থেকে ছাত্রের বাড়ির দূরত্ব এবং সিনিয়রিটির ভিত্তিতে নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে কাউন্সেলিং করে বোর্ডারের তালিকা প্রকাশ করার কথা। অথচ প্রিন্সিপাল দূরবর্তী জেলার ছেলেদের অবজ্ঞা করে কোলকাতার ছেলেদের (এমনকি অনাগ্রহীদেরও) প্রায় জোর করে হোস্টেলে ঢোকালেন এবং ঘোষণা করলেন প্রথম বর্ষের ছাত্র ছাড়া আর কাউকে সেখানে জায়গা দেওয়া হবে না। অনেক জায়গা ফাঁকা পড়ে থাকবে, তাও দেওয়া হবে না।
কাদের দেওয়া হবে না? উত্তরবঙ্গ, পুরুলিয়ার গ্রাম-মফস্বল থেকে আসা নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের যেসব ছাত্র তিন বছরেও থাকার জায়গা পায়নি, পড়াশুনা আর খাওয়ার খরচ চালানোর পাশাপাশি মাসে আট-দশ হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া গুনতে যাদের বাবামায়েদের নাভিশ্বাস উঠছে, তাদের। জরাজীর্ণ মেইন হস্টেলের যেসব ছাত্রের মাথায় ছাদ থেকে সিমেন্টের চাঙড় খসে পড়ছে, তাদেরও দেওয়া হবে না। ভাঙা ছাদের কথা অধ্যক্ষকে জানাতে তিনি নির্বিকার চিত্তে বললেন, ছাদ মাথায় পড়লে নতুন হস্টেল দিয়ে কী হবে, স্ট্রেচার পাঠিয়ে ইমার্জেন্সিতে আনা হবে। এই কথা শুনে স্তম্ভিত হবেন যেকোনো সুস্থ বুদ্ধির মানুষ। ছাত্রদের নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব যাঁর, তিনিই তাদের মৃত্যুভয় নিয়ে নিষ্করুণ রসিকতা করছেন!
শুরুতে ছাত্রদের একমাত্র দাবি ছিল, কলেজের সাংবিধানিক নিয়ম মেনে হস্টেলের কাউন্সেলিং করুন প্রিন্সিপাল। তাতে যাদের সুযোগ আসবে, তাদেরই হস্টেলে ঘর দেওয়া হোক। ঘর মানে নিজস্ব আরামকক্ষ নয়, কয়েকজন মিলে একটা ঘরে রাত কাটানোর জায়গা। আমরা যখন পড়তাম, আমাদের দেওয়া হয়েছিল একটি ঘরের এক কোণে আনুমানিক ত্রিশ বর্গফুট জায়গায় একটি কাঠের চৌকি আর একটি টেবিল। এটুকু পেলেই হবু ডাক্তারেরা তুষ্ট থাকে। এই সামান্য দাবিকে উড়িয়ে দিলেন অধ্যক্ষ। প্রথমে মিথ্যে যুক্তি দেখানোর চেষ্টা করলেন, যে মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার (এমসিআই) নিয়ম মেনে তিনি নাকি র্যাগিং রোধের জন্য এই পদক্ষেপ নিচ্ছেন। অন্তত গত পঞ্চাশ বছরে মেডিক্যাল কলেজে কেউ কোনোদিন র্যাগিং দেখেনি। দেশের অনেক খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানে যখন ভয়াবহ র্যাগিং চলত, তখন আমি এবং আমরা সবাই সিনিয়রদের সঙ্গে এক ঘরে কাটিয়েছি কলেজের প্রথম বর্ষ। বিশুদ্ধ ভালবাসা ছাড়া আর কিছু পাইনি। তৃপ্তি এবং গর্বের সঙ্গে বলা যায় যে কোলকাতার সব মেডিক্যাল কলেজ সম্বন্ধেই এই কথা মোটামুটি সত্যি। এই কলেজের প্রাক্তন ছাত্র হিসেবে বর্তমান অধ্যক্ষ একথা নিশ্চিতভাবে জানেন।
ধরে নিলাম, এমসিআই এসব জানে না। দেখা যাক, এমসিআই-এর বক্তব্য। বলা আছে, র্যাগিং-এর সম্ভাবনা থাকলে প্রথম বর্ষের ছাত্রদের হস্টেলে আলাদা ব্লকে রাখতে হবে। অর্থাৎ তিন তলার উত্তরের ব্লকে যদি প্রথম বর্ষ স্থান পায়, তবে অন্যান্য বর্ষের ছাত্রেরা থাকতে পারবে দক্ষিণ বা পূর্বদিকের ব্লকে। হস্টেলকে সেনাবাহিনী দিয়ে ঘিরে ফেলার কথা বলা হয়নি। ব্লক শব্দটির এমন কদার্থ শুনে ভয় লাগে, হয়ত রামনগর এক নম্বর ব্লকের একজন ছাত্র কোনো কলেজের প্রথম বর্ষে ভর্তি হলে সেই ব্লকের বাকি সব অধিবাসীকে কাঁথিতে সরিয়ে দেওয়া হবে।
এমসিআই একথাও বলেছেন কলেজের ৭৫% ছাত্রছাত্রীর জন্য হস্টেলের বন্দোবস্ত রাখতে হবে। সেই ব্যবস্থা কোথায়? এই নিয়মও নিশ্চয় কর্তৃপক্ষ মানতে আগ্রহী হবেন। এতগুলো ছেলে তাহলে তিনবছর পরেও বেঘর কেন? কী করা হচ্ছে তাদের জন্য?
এসব আইনের কথা অধ্যক্ষকে জানাতেই তিনি (কু)যুক্তির রাস্তা ছেড়ে সরাসরি ক্ষমতার আস্ফালনের পথ ধরলেন। জানিয়ে দিলেন, তিনি যা ইচ্ছে করতে পারেন। একটি দায়িত্বশীল পদে থেকে এরকম কথা বলা যায় না, তা মনে করানোয় একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের প্রতি দায়বদ্ধতা ঘোষণা করে তিনি জানান যে তাঁর সিদ্ধান্ত কিছুতেই বদলাবে না। অতীতেও আমরা অধ্যক্ষদের ভুল কাজ করতে দেখেছি, তাঁদেরও রাজনৈতিক পক্ষপাত ছিল এবং উপর মহলের চাপে তাঁরাও অনেক কিছু করেছেন, কিন্তু কেউ এভাবে সত্যকে বেআব্রু করে অধ্যক্ষের চেয়ারটির সম্মান ধুলোয় মিশিয়ে দেননি।
নতুন হস্টেলের সুপারিন্টেন্ডেন্ট নিয়োগের ক্ষেত্রেও অধ্যক্ষ অনিয়ম করেছেন। কমপক্ষে সহকারী অধ্যাপক পদমর্যাদার কেউ সুপারিন্টেনডেন্ট হতে পারেন। কিন্তু নিয়মের তোয়াক্কা না করে সদ্য পাশ করা এক তরুণকিশোরকে হস্টেলের দায়িত্বে বসিয়ে দিলেন। শোনা যায় তিনি একটি রাজনৈতিক দলের হয়ে পেশী প্রদর্শন করে খ্যাতি লাভ করেছেন। সে করুন, কিন্তু হাউজ স্টাফ হবার বয়সে শুধুমাত্র শারীরিক শক্তিতে সুপারিন্টেনডেন্টের গুরুদায়িত্ব কী করে সামলাবেন তিনি কোনো অভিজ্ঞতা ছাড়া? সেই হস্টেলে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ছাত্রীদের জায়গা দেওয়া হয়েছে ইতিমধ্যে, যাঁদের অনেকেই বয়সে এবং শিক্ষাগত যোগ্যতায় সুপারিন্টেনডেন্ট সাহেবের চেয়ে বড়। এতে সমস্যা হবে না? নিয়মগুলো তো একেবারে অকারণে তৈরি হয়নি। সেগুলো মানলে ক্ষতি কী?
এই ধরণের দুর্ব্যবহার পেয়ে ক্ষুব্ধ এবং অসহায় ছাত্ররা অধ্যক্ষের ঘরের বাইরে শান্তিপূর্ণ অবস্থান করার সিদ্ধান্ত নেয়। যাদবপুর বা প্রেসিডেন্সির উপাচার্যরা যখন দীর্ঘক্ষণ ঘেরাও হয়ে থেকেও ধৈর্য ধরা শিখে ফেলেছেন (সম্ভবত যাদবপুরের প্রাক্তন উপাচার্যের হঠকারিতার ফলে সংগঠিত হোক কলরব আন্দোলনের কথা মনে রেখে), সেখানে মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ঘণ্টা পাঁচেকের মধ্যে পুলিশ ডাকলেন। সত্তর-আশিজন পুলিশ কর্মী জনা চল্লিশেক ছাত্রছাত্রীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। বুট পায়ে তাদের শরীর মাড়িয়ে, পেটে লাথি-ঘুষি মেরে নিজের অফিসে নিশ্চিন্তে বসে থাকা প্রিন্সিপালকে "ঘেরাওমুক্ত" করে নিয়ে যাওয়া হল। পুরুষ পুলিশ কর্মীরাই অনায়াসে বলপ্রয়োগ করলেন অবস্থানকারী ছাত্রীদের ওপর। এর প্রতিবাদে চিকিৎসকেরা একটি মিছিল করলেও সাধারণ মানুষকে তেমনভাবে অন্যায়ের প্রতিবাদে সামিল হতে দেখা যায়নি। সংবাদমাধ্যম এবং সোশাল মিডিয়াও ব্যস্ত ছিল সমসময়ে ঘটে চলা যাদবপুরের আন্দোলন এবং তারপর প্রেসিডেন্সি কলেজের ঘেরাও নিয়ে। এতেই হয়ত আরো সাহস পেয়ে ঔদ্ধত্যের মাত্রা বাড়িয়ে দেন মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। মরিয়া ছাত্ররা কলেজের মধ্যে আমরণ অনশনে বসলেও সেদিক থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকলেন তাঁরা।
মরে যাবার ইচ্ছে নিয়ে কেউ অনশনে বসে না। কয়েকজন তরুণ যখন জঙ্গি প্রতিবাদের রাস্তায় না হেঁটে অনশনে বসেছে, তখন বুঝতে হবে যে কলেজ কর্তৃপক্ষ এবং রাজ্য সরকারের শুভবুদ্ধিতে তারা আস্থা রাখতে চাইছে। তখনও তারা ভাবছে, অধ্যক্ষ আসলে পিতৃতুল্য। এমনিতে কথা শুনছেন না, কিন্তু না খেয়ে থাকতে দেখলে তিনি নরম হবেন। যুক্তিযুক্ত কথা মন দিয়ে শুনবেন। তা হল না। সময় গড়াতে লাগল। একজন দুজন করে ছাত্র অসুস্থ হতে লাগল। রক্তচাপ, রক্তের শর্করা মারাত্মকভাবে নেমে গেল তাদের। কোনোক্রমে ইমার্জেন্সিতে নিয়ে শুরু হল চিকিৎসা। কিন্তু অধ্যক্ষ তখনো তাদের প্রতি সম্পূর্ণ অসংবেদনশীল থেকে প্রমাণ করলেন সব শিক্ষক পিতৃতুল্য নন। এমনও কেউ আছেন সন্তানসম ছাত্রদের মৃত্যুর সম্ভাবনাও যাঁকে বিচলিত করতে পারে না।
কিন্তু ওদের না খেয়ে থাকা ঝাঁকিয়ে দিয়েছে ওদের সিনিয়র দাদা-দিদিদের। মেডিক্যাল কলেজের র্যাগিংহীন পারস্পরিক ভালবাসার প্রদীপ আবার জ্বলে উঠল। সতেরোই জুলাই ২০১৮, মঙ্গলবার, ছাত্রদের অনশন ১৭০ ঘণ্টা ছুঁলো। সিনিয়র চিকিৎসকেরাও সামিল হলেন অনশনে। সেখানে গিয়ে দেখি সত্তর ছোঁয়া অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসকও সামিল হয়েছেন অনশনে। মেডিক্যাল কলেজের সঙ্গে সম্পর্কিত নন, এমন বিভিন্ন সংগঠন এবং সাধারণ মানুষও এবার ছাত্রদের পাশে দাঁড়িয়ে সমর্থন জোগানো শুরু করেছেন। সংবাদমাধ্যম নজর দিতে শুরু করেছে। সাধারণ মানুষ ওয়াকিবহাল হয়ে আলোচনা শুরু করেছেন। এমনকি মেডিক্যাল কলেজ তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সমর্থক কিছু ছাত্রের সঙ্গে কথা বলে দেখা গেল, পরিচয় গোপন রাখার শর্তে তারাও এই আন্দোলনকে সমর্থন করছে, কারণ তারা বুঝতে পারছে এই ভুখ হরতালের পিছনে কোনো দলবাজি বা সংকীর্ণ স্বার্থ নেই।
শিক্ষকেরাও অনেকে মনেমনে ছাত্রদের সমর্থন করছেন দেখা গেল, কিন্তু প্রকাশ্যে কিছু বলার সাহস পাচ্ছেন না। এখানেই কি যাদবপুরের সঙ্গে মেডিক্যাল কলেজের তফাৎ হয়ে যায়? সেখানকার শিক্ষকেরা সরাসরি ছাত্রদের পাশে এসে দাঁড়ান, যদি তাদের দাবি ন্যায্য হয়। মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষকেরা ভেবে দেখতে পারেন। অন্তত কলেজ কাউন্সিলের মিটিং-এ ন্যায্য কথা খোলা গলায় বলুন। যাদবপুরের অধ্যাপকেরা যদি ভয়কে জয় করতে পারেন, আপনারা কেন পারবেন না? সরকারি চাকরি থেকে সাসপেন্ড হলেও দুবেলা প্র্যাক্টিস করে পরিবারকে ডাল-ভাত খাওয়াবার যোগ্যতা আপনাদের আছে। আপনাদের অনেকের বিবেকও যে ঠিক জায়গায় আছে, তা আজ বোঝা গেল।
ইতোমধ্যে প্রিন্সিপাল বিভিন্ন থানা মারফৎ এবং টেলিফোনে অনশনকারী ছাত্রদের বাবামায়েদেরও হুমকি দেবার চেষ্টা করেছেন। অনশন প্রত্যাহার না করলে কেরিয়ারের গুরুতর ক্ষতি করার ভয় দেখিয়েছেন। কিন্তু এই অপচেষ্টা ব্যুমেরাং-এর মতো তাঁর দিকে ফিরে এসেছে। ছাত্রদের বাবামায়েরা এসে জানিয়ে গেছেন, ন্যায্য দাবি না মানলে এবার তাঁরাও অনশনে বসবেন। অধ্যক্ষের বোঝা উচিত ছিল, নির্ভীক সুসন্তানদের পিতামাতা ভীরু নাও হতে পারেন।
সব মিলিয়ে আন্দোলনটি এখন আর অগ্রাহ্য করার জায়গায় নেই। বিশেষত মঙ্গলবার সিনিয়র চিকিৎসকদের অনশন এবং অন্য অনেকের অংশগ্রহণের পর অধ্যক্ষ রীতিমত চাপে পড়ে যান। যে রাজনৈতিক দলের হয়ে তিনি এসব করছেন বলে দাবি করেছেন, তাঁদেরও কোনো উপকার করছেন না। তাঁরা এখনো সাংগঠনিক শক্তিতে এবং ব্যালটপেপারের গুনতিতে অনেক জায়ফায় ভোট জিততে সক্ষম। মেডিক্যাল কলেজে একটি হস্টেল জবরদখল করতে পারার ওপর খুব নির্ভর করে নেই তাঁরা। অধ্যক্ষ যা করছেন, তা নিতান্তুই গোষ্ঠীস্বার্থে এবং এর থেকে সরকারের বদনাম ছাড়া প্রাপ্তি কিছুই নেই। অধ্যক্ষ এই পরিস্থতিতে ভুল স্বীকার করে কলেজ কাউন্সিলের মিটিং ডাকতে পারতেন। কিন্তু তিনি সত্যের পথে পা বাড়াতে নারাজ। সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখোমুখি হবার পরেই হঠাৎ অসুস্থ বোধ করার কথা জানালেন। তাঁর শারীরিক সুস্থতা আমরা সকলেই চাই, তাই অসুস্থতাকে বাস্তব মনে করে শারীরিক পরীক্ষা, ইসিজি, ইত্যাদির ব্যবস্থা করা হল তড়িঘড়ি। দেখা গেল সেসব স্বাভাবিক আছে। হাসপাতালের শিক্ষক চিকিৎসকেরা তাঁকে অম্বলের ওষুধ দিলেন। তাঁর কুশলসংবাদ পেয়ে অনশনমঞ্চে উপস্থিত সকলেই নিশ্চিন্ত বোধ করল, কিন্তু অধ্যক্ষ আর ফিরলেন না। স্নেহের ছাত্রদের জীবন-মৃত্যুর মাঝামাঝি ঝুলিয়ে রেখে তিনি কলেজ ছেড়ে চলে গেলেন।
বিকেল নাগাদ দেখা গেল, তাঁর ফিরে আসার পথটি বন্ধ হয়ে গেছে। মাননীয় ডিরেক্টর অব মেডিক্যাল এডুকেশন তাঁকে অপসারণ করে ইএনটি বিভাগের প্রধানকে নতুন অধ্যক্ষ ঘোষণা করলেন। অবশ্যই এটা ছাত্রদের এক বিরাট নৈতিক জয়। কিন্তু লড়াই এখনো বাকি আছে। এরা কিন্তু শুধু নিজেদের জন্য হস্টেলের ঘর চাইছে না, সেই ঘুষ তাদের দেবার চেষ্টা হয়েছিল তিনদিন আগেই, অনশনরত ছাত্রেরা ঘৃণাভরে তা প্রত্যাখ্যান করেছে। এরা চাইছে বিধি-বিধানের সঠিক প্রয়োগ, যাতে নিয়মানুসারে কলেজ ও হস্টেলের পরিচালনা হয়, যাতে সব ছাত্রছাত্রী বাস্তব পরিস্থিতি ও প্রয়োজন অনুসারে নিজেদের ন্যায্য প্রাপ্যটুকু পায়।
আরও পড়ুন, নিজেদের দাবিতে অনড় ছাত্ররা, চলছে আমরণ অনশন
এখানেই মেডিক্যাল কলেজের আন্দোলন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। দূরাগত ছাত্রদের বাসস্থানের মৌলিক অধিকার রক্ষার আন্দোলন, যা বৃহত্তর মানবাধিকার আন্দোলনের অংশ হিসেবে গণ্য হওয়া উচিত। শিক্ষা অধিকার যদি সত্যিই সকলের কাছে পৌঁছে দিতে হয়, মেডিক্যাল শিক্ষা এবং চিকিৎসা পরিষেবাকে যদি কর্পোরেট পুঁজির দখলে এবং সাধারণের নাগালের বাইরে চলে যাওয়া থেকে বাঁচাতে হয়, তাহলে সাধারণ পরিবারের ছাত্রছাত্রীদের এসব মৌলিক অধিকার রক্ষা করতে হবে। ডাক্তারদের আআন্দোলন ভেবে এড়িয়ে না গিয়ে এই বৃহৎ প্রকল্পে সাধারণ মানুষকেও অংশ নিতে হবে। সরকারকেও সংবেদনশীল ও নিয়মনিষ্ঠ হয়ে নিজেদের সদিচ্ছার প্রমাণ দিয়ে হৃত সম্মান পুনরুদ্ধার করতে হবে।