Advertisment

অদ্ভুত আঁধার এক...

কী পরিস্থিতিতে এই ঘটনা ঘটল, বহিরাগতদের প্রভাব কতটা ছিল, কোন রাজনৈতিক সমীকরণ ছিল কিনা, সে সব আলোচনা হচ্ছে, হবে, হোক। কিন্তু তার চেয়েও ঢের বেশি জরুরি প্রশ্ন, এ কোথায় চলেছি আমরা?

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
kolkata binodini girls school

স্কুলের সামনে বিক্ষুব্ধ জনতা। এক্সপ্রেস ছবি

ঢাকুরিয়ার একটি স্কুলে গতকাল একটি শিশুকে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ উঠেছে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে । তারপর কী ঘটেছে, কী ভাবে ঘটেছে, আমরা দেখেছি। অভিভাবকদের চূড়ান্ত দাদাগিরির সাক্ষী থেকেছে স্কুল-সংলগ্ন অঞ্চল। যথেচ্ছ ইটবৃষ্টি হয়েছে পুলিশের উপর, লাঠি-হেলমেট ছিনিয়ে নিয়ে আইনরক্ষকদের উপরই চড়াও হয়েছেন মারমুখী অভিভাবকরা। বাইক ভাঙচুর হয়েছে, স্কুলের ঘর তছনছ করে দেওয়া হয়েছে, ভাঙার চেষ্টা হয়েছে স্কুলের কোলাপসিবল গেট। পুলিশ উপায়ান্তর না দেখে লাঠি চালিয়েছে। আহত দু'পক্ষেরই একাধিক।

Advertisment

এতেই শেষ নয়। আরও কিছু দৃশ্য দেখেছি আমরা। শিক্ষিকাদের স্কুলের বাইরে বেধড়ক মারতে দেখেছি অভিভাবকদের, "শাড়ি ছিঁড়ে দে"-র উন্মত্ত চিৎকার সহ। দেখেছি, প্রাণভয়ে ছুটে পালাতে থাকা শিক্ষিকাকে অভিভাবকদের রোষ থেকে কীভাবে বাঁচিয়েছে স্কুলেরই চার পড়ুয়া।

কী পরিস্থিতিতে এই ঘটনা ঘটল, বহিরাগতদের প্রভাব কতটা ছিল, কোন রাজনৈতিক সমীকরণ ছিল কিনা, সে সব আলোচনা হচ্ছে, হবে, হোক। কিন্তু তার চেয়েও ঢের বেশি জরুরি প্রশ্ন, এ কোথায় চলেছি আমরা? একটা চূড়ান্ত নিন্দনীয় অন্যায়ের প্রতিবাদের নামে আর একটা নির্বিচার অন্যায়ই কি ভবিতব্য ক্রমশ আরও আরও অসহিষ্ণু হয়ে ওঠা এই সমাজের? আইন চুলোয় যাক, নিজেরাই নিজেদের হাতে তুলে নিয়ে 'ইনস্ট্যান্ট জাস্টিস'-এর প্রবণতা যে হারে বাড়ছে, শেষ কোথায় তার? কী আছে শেষে?

আইনের তোয়াক্কা না করে, সভ্য সমাজের রীতিনীতিকে বন্ধক রেখে কথায় কথায় পুলিশকে মার, ডাক্তারদের মার, শিক্ষকদের মার...মধ্যযুগের সঙ্গে কী তফাৎ আর রইল তবে? এই যদি হয় একবিংশ শতাব্দীতে অভিভাবকদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশের ভঙ্গী, কী আর পড়ে থাকে তাদের জন্য, যাদের এঁরা অভিভাবক?

গতকাল যা ঘটেছে, তা রোগ নয়। গভীরতর অসুখের দুর্লক্ষন। জীবনানন্দ মনে পড়ে যায় সব দেখেশুনে। 'অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ-পৃথিবীতে আজ।'

kolkata police kolkata news
Advertisment