রাজ্যের তিন কেন্দ্রের বিধানসভার উপনির্বাচন ২৫ নভেম্বর। খড়গপুর, কালিয়াগঞ্জ ও করিমপুরের উপনির্বাচনকে ঘিরে সাজ সাজ রব রাজনৈতিক দলগুলোর। সেমিফাইনাল খেলার ঢঙে নেমে পড়েছে রাজ্যের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো। এ যেন ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের মহড়া চলছে। উপনির্বাচনকে ঘিরে এই তিন কেন্দ্রের নির্বাচনী প্রচারে লাখ লাখ টাকা খরচ করছে রাজনৈতিক দলগুলো। টিকে থাকার লড়াই সকলেরই।
রাজনৈতিক মহলের মতে, খড়গপুর করিমপুর ও কালিয়াগঞ্জ উপনির্বাচনে বিজেপি ও তৃণমূল মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও এই উপনির্বাচনে কংগ্রেস ও বাম প্রার্থীরা তাদের যথেষ্ট বেগ দেবে। জোট প্রার্থীদের ভোট কাটাকাটির উপরই নির্ভর করতে পারে কে জয় পাবে, কে পরাজিত হবে। এমনকি কোন একটি কেন্দ্রে জোট প্রার্থীর ভাগ্যে শিকে ছেলেও অবাক হওয়ার কিন্তু কিছু থাকবে না।
আরও পড়ুন বিজেপির বিরুদ্ধে মমতার একসঙ্গে চলার আহ্বানে কী বলছে সিপিএম-কংগ্রেস?
মরণপণ এই নির্বাচনে কংগ্রেস এবং বামেরাও কিন্তু বিজেপি ও তৃণমূলের ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছে, এ কথা কিন্তু বলার অপেক্ষা রাখে না। বিজেপি ও তৃণমূল প্রার্থীরা তা মুখে স্বীকার না করলেও হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন। কারও কপালে ভাঁজ পড়েছে সংখ্যালঘু ভোট ধরে রাখা নিয়ে। কারও চিন্তা লোকসভার ভোট আগলে রাখা। অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন এই চিন্তাতেই রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছে বিজেপি ও তৃণমূলের।
শুধু আগামী বিধানসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই এই যুদ্ধংদেহী ভাব তা-ও কিন্তু নয়। আগামী ২০২০ সালে রাজ্যের অধিকাংশ পুরসভার নির্বাচন। সেই পৌরসভা নির্বাচনের আগে নিজেদের শক্তি যাচাই করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে রাজ্যের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো। এমনিতে বেশ কিছু পৌরসভার নির্বাচন বন্ধ রয়েছে। সেই পুরসভা গুলোতে প্রশাসক রয়েছে। কেন এই পুরসভাগুলোতে ভোট হচ্ছে না তা নিয়ে তৃণমূল ও বিরোধীদের মধ্যে চলছে চাপান-উতর।
২০২০ তে অধিকাংশ পুরসভা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে চলেছে রাজ্য সরকার। যার কারণে এই তিনটি বিধানসভা উপনির্বাচন আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বস্তুত, ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের আগে ওই পৌর নির্বাচনের ফল অনেকটাই প্রভাবিত করতে পারে বলে মনে করেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
আরও পড়ুন বিধানসভায় ‘ঐকমত্য’, বিজেপিকে রুখতে বাম-কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছে তৃণমূল?
যোগ সূত্র অনুযায়ী সেই পুর ভোটের আগে এই উপনির্বাচন বিশেষ ভূমিকা নেবে। সেই কারণে উপনির্বাচনে তৃণমূল, বিজেপি এবং বাম কংগ্রেস জোট এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে নারাজ। ময়দানে নেমে পড়েছেন সমস্ত দলের রাজ্য নেতৃত্ব। সাধারণত উপনির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রচারে যান না। এর আগেও দেখা গেছে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর সেভাবে কোনও উপনির্বাচনে প্রচারে যাননি। তৃণমূলের অন্য রাজ্য নেতৃত্ব ঝাঁপিয়ে পড়েছেন তিন। বিরোধীরা রাজ্য সভাপতি সাধারণ সম্পাদক, সম্পাদক সকলেই ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। কেই লড়াই চালাচ্ছেন পুনরুদ্ধার করার জন্য, কেউ জমি দখলে রাখার জন্য।
উল্লেখযোগ্য বিষয় গত লোকসভা নির্বাচনে সিপিএমের একটা বড় অংশের ভোট পদ্মশিবিরে পড়েছিল বলে দাবি উঠেছিল। তৃণমূল দাবি করেছিল সিপিএম বিজেপিতে ভোট ট্রান্সফার করেছে। দাবি যাই হোক সিপিএমের চলে যাওয়া ভোটের সেই অংশ কি ফিরে আসবে ভোটপ্রার্থীর ভাগ্যে? কংগ্রেস-সিপিএম জোট করায় এবার কংগ্রেস কর্মী সমর্থকরা কি করিমপুরের সিপিএম প্রার্থীকে ভোট দেবেন? এমন নানা প্রশ্ন ঘুরে বেড়াচ্ছে রাজনীতির ময়দানে।
আরও পড়ুন বাঙালির হিন্দু উগ্রবাদ কখনোই বিজেপি-নির্ভর নয়
বামেদের অন্য শরিকদের অভিযোগ ছিল, ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে তাঁরা কংগ্রেস প্রার্থীদের ভোট দিলেও কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বামপ্রার্থীদের ভোট দেননি। যার কারণে পরবর্তী ক্ষেত্রে ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসও বাম জোট ভেস্তে গিয়েছিল। যদিও পরবর্তীতে তৃণমূল এবং বিজিবির সঙ্গে লড়াই করতে কংগ্রেস ও বামেরা একেবারে কেন্দ্রীয় নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করতে থাকে। করিমপুরে সিপিএম, কালিয়াগঞ্জ ও খড়গপুর কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী দেয়। কংগ্রেস এবং বামেদের রাজ্য নেতৃত্ব তিন কেন্দ্রে জোরদার প্রচার করছে।
অন্য দিকে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য মুকুল রায় সহ বিভিন্ন রাজ্য নেতৃত্ব এবং জেলা নেতৃত্ব তিন কেন্দ্র চষে বেড়াচ্ছে। পাশাপাশি তাদের সাহায্য করছে আরএসএস সহ বিভিন্ন সংগঠন। ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে মাত্র তিনটে আসন পেয়েছিল বিজেপি। এই বিধানসভা উপনির্বাচনে ভালো ফল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পদ্ম শিবির। পাশাপাশি তৃণমূল কংগ্রেস নানাভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। একদিকে ভোট গুরু প্রশান্ত কিশোরের কৌশলী চিন্তাভাবনা। পাশাপাশি সাংগঠনিক ক্ষমতা কাজে লাগাতে চাইছে।
ময়দানে নেমেছেন মন্ত্রীরাও। মোটের উপরে ২৫ নভেম্বরের উপনির্বাচন ঘিরে রাজ্যরাজনীতি একেবারে সরগরম। তারওপর রয়েছে সব দলের অন্তর্কলহ। ক্ষমতা দখল করতে গিয়ে যেন কোন রাজনৈতিক হানাহানি ঘটনা না ঘটে এই সেই আশা করছে রাজনৈতিক মহল। তিন কেন্দ্রে রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রতিফলন মিলবে ২৮ নভেম্বর।