রাজস্থানের পি সি সরকার জুনিয়র অশোক গেহলোটকেই মোদি ম্যজিকের দাওয়াই বাছলেন রাহুল। বাজিকর হয়ে পাওয়ার পলিটিক্সে এসে গুজরাতে তিন মেয়াদের শাসক হিসেবে বাঘা বাঘা নেতাদের মাত করেছিলেন মোদী একেবারে ভিন্ন নকশায়। সেই রেকর্ডে ভর করেই দিল্লির মসনদে। তিরিশ বছর পর প্রথম নিরঙ্কুশ হয়ে। বাজপেয়ী, আডবাণীকে ম্লান করে বিজেপিতে মিথ হলেন মোদি। ২০১৪-থেকে যাতে হাত দিচ্ছেন তাই সোনা। বাবরি মসজিদ যা পারেনি তাই পারলেন নরেন্দ্রভাই । ৮০-র মধ্যে ৭৩ টি আসন উত্তর প্রদেশে। মায়াহীন হল লোকসভা। কংগ্রেসে জিতে ফিরলেন শুধু সোনিয়া, রাহুল। মুলায়ম নিজে দু কেন্দ্রে জিতলেও পেলেন মোট পাঁচটি আসন। পুরো ঘূর্ণিঝড়ে বিধানসভায় তিন নম্বরে থাকা ভাজপা তিনশো পেরিয়ে রেকর্ড করল। এক গুজরাতি ভূমিপুত্র এহেন ম্যাজিক দেখালেন উত্তর প্রদেশের মতো রাজ্যে। যে রাজ্যকে নিয়ে গর্ব করেন নেতারা 'উত্তম প্রদেশ' বলে। মোদি জাদুতে বিহ্বল মাস-মিডিয়া হিন্দুত্বকে বানিয়ে দিল মোদীত্ব।
তারপর আজ মাত্র সাড়ে চার বছর পেরোতে না পেরোতেই অধিনায়কের ছবির রং চটে যাচ্ছে। বিরোধীরা তো আগে থেকেই সরব। তারপর সরব হয়েছেন শরিকরা। এবার শাসকদলের ভেতরেই নতুন চার্নিং শুরু। পরের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠককে লক্ষ্য ধরে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীকে খলনায়ক বানানোর তোড়জোড়ও শুরু পাশাপাশি। ফলে আগামী দিনে ঝড়ের মুখে পড়তে হবে মোদীকে। পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা ভোটের ফলাফল ২০১৯-এর লোকসভায় বিজেপির সম্ভাবনার মুখে বিশাল প্রশ্নচিহ্ন এঁকে দিয়েছে। পাঁচ বছর পেরোতে না পেরোতেই কোয়ালিশনের বাস্তবতা ফের দিল্লির দরবারি সংস্কার হতে চলেছে কি? দরবারি কানাড়ায় যে ধুন ধরেছিলেন মহাজোটের নেতারা কর্ণাটকে কুমারস্বামীর অভিষেকে, তারই প্রতিধ্বনি কি হবে ঊনিশের মার্চে?
আরও পড়ুন: সারা দেশে কংগ্রেসের সঙ্গে বোঝাপড়া সিপিএমের, ভোটের পর জোট, বাংলায় পদ্ম রুখতে ঘাসফুলে নয়
কোয়ালিশন যুগের সূত্রধর দেবগৌড়াই ছিলেন নেপথ্যে। কালক্রমে এসেছেন একই জমানার চন্দ্রবাবু, স্ট্যালিন। ধারাবাহিকতা রাখতে ইয়েচুরি। এবং মমতা, অখিলেশ, তেজস্বী, ফারুক ও সর্বোপরি মায়াবতী। এ জোট বাস্তবে ভূমিষ্ঠ হওয়ার বাস্তবতা সৃষ্টি করেছে রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়। সে কারণেই এই ফলাফল বিজেপির পক্ষে বিধ্বংসী। যে জাদুকরের কথা দিয়ে প্রসঙ্গের শুরু, তিনি জাতীয় নেতা হিসেবে আলোকিত নন। একেবারেই নেপথ্যচারি। এবং কেন পাইলটকে মুখ্যমন্ত্রী না করে সারা দেশের রাজনীতির দক্ষ জাদুকর গেহলোতকেই করা হল, সেই কারণটাও স্পষ্ট। বাজিকর মোদীকে মোকাবিলার জন্য রাজ্যে রাজ্যে এমনই মুখ্যমন্ত্রী চাই কংগ্রেসের। যাঁরা প্রতিপক্ষের সর্বোচ্চ নেতার মোকাবিলায় দলের হাতে অস্ত্র তুলে দেবেন, কিন্তু নিজেরা কখনও সর্বোচ্চ পদের দাবিদার হবেন না।
অশোক গেহলোট এমনই একজন। ১৯৭১-এর বাংলাদেশ যুদ্ধের পর উত্তর পূর্বে উদ্বাস্তুদের রক্ষণাবেক্ষণের কর্মে নিয়োজিত বছর কুড়ির গেহলোট ইন্দিরা গান্ধীর চোখে পড়েছিলেন। জহুরি ইন্দিরা ছাত্র সংগঠনের গুরুদায়িত্বে নিয়ে এসেছিলেন এবং কালক্রমে যুবা সর্বাধিনায়ক সঞ্জয় (গান্ধী)-কে বলেছিলেন ওঁকে যথাস্থানে নিয়োগ করতে। ধারাবাহিকভাবে এই মানুষটি নেহরু-গান্ধি পরিবারের প্রতি আনুগত্য ও সাংগঠনিক দক্ষতায় একে একে রাজীব, সোনিয়া ও রাহুলের আস্থাভাজন হন। বাবা ছিলেন মরুরাজ্যে আক্ষরিক অর্থেই দক্ষ জাদুকর, লক্ষ্মণ সিং। ছোটবেলায় বাবার জুনিয়র হিসেবে প্রদর্শনীতে থাকতেন। এবং ইন্দিরার চোখে না পড়লে জাদু দেখানোই হত ওঁর পেশা। মালি সমাজের মানুষ অশোক গরিবির মধ্যেই বড় হয়েছেন। একসময় খাবার জোটানোও ছিল কষ্ট সাধ্য। নিজেই বলেন, "ম্যাজিক আমার হৃদয়ে"।
সেই হার্দিক দক্ষতার নজির দেখালেন গুজরাতে। গোটা প্রসার ও প্রচার পর্বে রাহুলের সঙ্গে সঙ্গে গেহলোত। হার্দিক প্যাটেলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপিত হল, অল্পেশ ঠাকোর দলে এলেন। এবং ঘনিষ্ঠ হলেন জিগ্নেশ মেবানি। সবই গেহলোটের হাতযশ। তার ফল ফলল গুজরাতে। নিজের গড়েই রামধাক্কা। সী প্লেন নিয়ে সবরমতীতে নামতে হল। বুলেট ট্রেনের বুলি আওড়াতে হল, এবং আবার সোমনাথে দৌড়তে হল অমিত শাহকে।
বেঙ্গালুরুর মহাজোট গড়ার পর্বেও গুলাম নবি আজাদের সঙ্গী গেহলোট। একে একে জোটের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ শরিক মিলে বিজেপি-বিরোধী মঞ্চ এমন আকার নিল যে ১৯৯৬-এর দিল্লিতে ১৩ দিনের সরকারের হাল হল ইয়েদুরাপ্পার। ছাত্র রাজনীতির সময়ে সঞ্জয় গান্ধীর বৃত্তের সবাই তাঁকে 'গিলি বিলি' বলে ডাকতেন। সংগঠনে তখনও ওঁর জাদুবিদ্যা চলত বলেই। কাজেই এই যোগ্যতার সঙ্গে তরুণ নেতা ও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সচীন পাইলটের তুলনা চলবে কী করে? এ কারণেই সচীনকে মনেপ্রাণে চেয়েও রাহুল শেষ পর্যন্ত মা সোনিয়ার যুক্তিই মানতে বাধ্য হলেন।
আরও পড়ুন: রাম রুখতে রাহুলই বাম(ন) অবতার, লক্ষ্য দিল্লিতে সেকুলার সরকার
সোনিয়ার পরিণত বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার শৈলী তাঁকে কংগ্রেস দল তো বটেই, ওই পরিবারেরও অন্যদের চেয়ে পৃথক করেছে। কোয়ালিশন কালচারে অনভ্যস্ত কংগ্রেসকে কোয়ালিশন ধর্ম শিখিয়েছেন সোনিয়াই। এ ব্যাপারে তাঁর ফ্রেন্ড ফিলজফার গাইডের ভূমিকায় যাঁরা ছিলেন তাঁদের মধ্যে আছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু, সিপিএমের প্রাক্তন প্রধান হরকিষণ সিং সুরজিৎ, সিপিআইয়ের প্রাক্তন প্রধান অর্ধেন্দুভূষণ বর্ধন এবং প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নাম্বার টু প্রণব মুখোপাধ্যায়। ২০০৪ থেকে ২০১৪ কংগ্রেসের নেতৃত্বে সরকারের নেপথ্যে ছিল এঁদের পরামর্শ।
সেই পথনির্দেশই আত্মস্থ করে সোনিয়া রাহুলকে সাহায্য করছেন। এবং মোদীর 'কংগ্রেস-মুক্ত ভারত' গড়ার ডাক আখেরে শাপে বর হয়েছে রাহুলের। দল ও পরিবারের বিচ্যুতি সম্পর্কে সচেতন সোনিয়া ছেলেকেও সতর্ক করেছেন। তার ফলে ২০১৪ থেকেই নিজেকে পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে সচেষ্ট রাহুল। পারিবারিক কৌলিন্যের হ্যাংওভার থেকেও অনেকটা মুক্ত হওয়ার চেষ্টা ফলপ্রসূ হয়েছে। এজন্য তিনি মোদীর কাছে অবশ্যই ঋণী। নানা প্রসঙ্গে ঋণ স্বীকারও করেন।
এদিকে সোনিয়ার হস্তক্ষেপেই আরেকটি সমাধান মধ্যপ্রদেশে। বিজেপির ভবিষ্যৎবাণীই ফলে গেছে অক্ষরে অক্ষরে। বিজেপি বলেছিল, "কমল খিলেগা"। তা 'খিলেছেন' কংগ্রেসের বহু যুদ্ধের কমান্ডার কমল নাথ। তাঁর এমনই একটা উপস্থিতি যে, জাতপাতের পরিচয় তাঁর ক্ষেত্রে অচল। পারিবারিকভাবে শিল্পপতি কমল নাথের রাজনৈতিক চরিত্র চাণক্যচরিতের ছায়া অবলম্বনে রচিত। পারিবারিক উদ্যোগের সূত্রে তরুণ বয়স থেকেই কলকাতার সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িত। ভাল বাংলা ও বং কানেকশনের সুবাদে কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গের ভারপ্রাপ্ত হিসেবে নানা দায়িত্ব দিয়েছে বারবার। কংগ্রেসে থাকাকালীন বিদ্রোহী যুবনেত্রী মমতার সঙ্গে সম্বাদ ও সংলাপের দায়িত্বেও ছিলেন। কারণ, সে সময়কার প্রদেশ নেতা সোমেন মিত্রের সঙ্গেও ছিল কমল নাথের খুবই দহরম মহরম। সেই সঞ্জয় জমানা থেকেই।
ইন্দিরা গান্ধি থেকে সীতারাম কেশরীর সময় পর্যন্ত নানা মুশকিল আসানে ওঁর জুড়ি ছিল না। শেষ পর্যন্ত কলকাতা এআইসিসির সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিদ্রোহ ঠেকাতে পারেননি কেশরী। কিন্তু অন্তিম মুহূর্ত পর্যন্ত মমতাকে দলে রাখার চেষ্টা চালিয়ে গেছেন কমল নাথ। এহেন ব্যক্তিকে এবার ক্ষমতার ভারসাম্যে সমর্থন করেন একদা গোষ্ঠীশত্রু দিগ্বিজয় সিং। গোয়ালিয়রের রাজ ঘরানার বিরুদ্ধে এঁরা অবশ্য একজোট বরাবরই। অর্জুন সিংয়ের জমানাতেও সিন্ধিয়ারা ক্ষমতার শীর্ষে ছিলেন না। ভারসাম্যের শিল্পে পটু কমল নাথ শীর্ষাসন পেলেন চল্লিশ বছর ধৈর্য ও একাগ্রতার সঙ্গে রাজনীতির ক্রিজে থেকে। অর্জুন থেকে মাধবরাও পর্যন্ত নানা মামলায় জড়িয়ে প্রতিপক্ষের শিকার হয়েছেন। দিগ্বিজয়ের মতো ধুরন্ধর নেতাও দিকভ্রান্ত হয়েছেন। কিন্তু ব্যতিক্রমী কমল নাথ একনিমেষে পাহাড়চূড়ায় ওঠেননি যেমন, তেমন খাদেও পড়েননি। ধীর লয়ে লক্ষ্যের দিকে এগিয়েছেন।
পাঁচ রাজ্যের নির্বাচন বিজেপিকে যে বার্তা দিয়েছে, তা কাজে লাগিয়ে ২০১৯-এ পাশা পাল্টানোর সুযোগ পাওয়া প্রায় অসম্ভব। কারণ জনমত পরিবর্তনের বৈজ্ঞানিক সময়কাল পাঁচ বছরই। তার কম হলে হয় সমীকরণ বদল বা আচমকা বড় ইস্যুর অভ্যুদয়। কিন্তু হিন্দি বলয়ের উত্থান যত তীব্র, পতন ততই তিক্ত। ছ'মাসে হাওয়ার মুখ ঘোরানো যায় না। সেখানে ছত্তিসগড়ের রায় তো সবচেয়ে স্পষ্ট। সরাসরি মেরুবদলের সংকেত। মায়াবতী নিশ্চিত শিক্ষা নিয়েছেন এবং তাঁকে বদনাম করে দলে টানার চেষ্টা বুমেরাং হয়েছে। অমিত শাহ ও দিগ্বিজয় সিং ভিন্ন ফরমুলায় ভুল অঙ্ক করেছেন। বিচক্ষণ মোদীর কাছে এমন অঙ্ক আশা করা যায় না। কেননা এই খেলা তিনিই জানেন।
মায়াবতী কিন্তু সতর্ক। জিগ্নেশের মতো দলিত নেতার উদয়ের পর আর উত্তর প্রদেশে শূন্য পাওয়ার পর একাজ করলে শুধু প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য করতে পারেন। কিন্তু গদি ছাড়ার বিনিময়ে আঁতাঁত করবেন তো প্রধানমন্ত্রী মোদী? সেটা আগে ভাবুন। ভোট হলেই বিহারের মেক ইন ইন্ডিয়ার সরকার টলমল করবে। মায়াবতী ভোটের আগে জোটে না এলেও তৃণমূল স্তরে দলিত সংখ্যালঘু অনগ্রসর আঁতাঁত রুখতে পারবেন না। কারণ ওটা সত্যিই উত্তম প্রদেশ। পরিবর্তনের দিশারী। বঙ্গের মতো রণে ভঙ্গ দেওয়ার প্রশ্ন নেই। এবং উত্তর প্রদেশের আঞ্চলিক ও একশো শতাংশ সেকুলার দুটো দলের কেউই এখনও পর্যন্ত বলেনি, ৮০ তে অন্য কেউ আসিও না। আমরা একাই লড়ব। এমনকি আসন রফার বিষয়ে সবচেয়ে গোঁড়া যে মায়াবতী, তিনিও বলেননি। অথচ কে না জানে তিনি কী চান। এই পাঁচ রাজ্যের ভোট শুধু বিজেপিকেই নয়, অন্যদেরও শিক্ষা দিয়েছে। বিচক্ষণ নেতানেত্রীবৃন্দ অবশ্যই বুঝেছেন। কেউ বুঝে ভুল শুধরেছেন, কেউ বুঝেও ও পথে যাননি।
এবার কে কী করেছেন একটু দেখা যাক। সবার আগে গুমর ছেড়েছেন রাহুল। গোষ্ঠিবাজি জিইয়ে রেখে ডিভাইড আ্যন্ড রুল বর্জন করেছেন। দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর ক্ষেত্রে হাইকমান্ড-পসন্দ শক্তিহীন তৃতীয় ব্যক্তিকে মুখ্যমন্ত্রী করার কৌশলও পরিহার করেছেন। খামেবন্দি নাম পাঠাননি। কংগ্রেসি কালচার পাল্টেছেন বিরোধী নিন্দা শুনে। হিন্দি বেল্টের হাল দেখে কোমর কষেছেন মায়াবতী, অখিলেশ। কংগ্রেসকে নিঃশর্ত সমর্থন করেছেন মতাদর্শের খাতিরে।
ওদিকে উত্তর পূর্বে বিজেপির শান্তির নীড়ে ভেটো দিয়েছে মিজোরাম। নামে রাম থাকলেও আয়ারাম গয়ারামের খেলা নেই। এ পুরো উল্টা বুঝিলি রাম। এমএনএফ ভাজপার বন্ধু হবে এটাই তো প্রায় জানা। কিন্ত না, ওরা ওদের নেবে না বলে দিয়েছে। কংগ্রেসের হাতে হ্যারিকেন দেখে মুখপাত্র দারুণ বলেছিলেন। কিন্তু তারপর থেকে চুপ। তেলেঙ্গানাও মিজোরামের মতো। কংগ্রেস মুক্ত যত না, তার ঢেয়ে বেশি বিজেপি মুক্ত। বেঙ্কাইয়ার দারুন ফলোয়ার এদের নেতারা। তারপর মুখপাত্র রাও। দুজনের জন্য দুটো সিট। পোস্ট মর্টেম হবে। কিন্তু "যাকি রহি ভাবনা জৈসি/প্রভু মূরত দেখি তিন তৈসি"। হরি কেমন, যার মন যেমন। কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বলে মমতাজীর কাছে গিয়ে কেসিআর মাস্টারস্ট্রোক দিলেন। আর এখন ঘোষণা হয়ে গেল, বিজেপিকে সঙ্গে নেব না!
আবার তৃণমূল ১২ তারিখই দলের সাংসদদের জানিয়ে দিল, রাফাল দুর্নীতির প্রশ্ন এলেই তাতে সমর্থন। মমতা বললেন, ওই তিন রাজ্যে কংগ্রেস একাই আছে। একাই লড়েছে। ওদেরকে অভিনন্দন। আমরা তো এজন্যই সবার আগে বলেছি, যেখানে যে আছে সেখানে সেই লড়বে। রাজস্থানের সীকড়ে লাল ঝান্ডা নিয়ে গল্প শোনার লোকজন বাংলায় ভালোই। ইদানিং বাংলায় কেবলই হারের খবর শুনতে আর কার ভালো লাগে । তাই নেটে তল্লাশী । সেই গান। 'মরুবিজয়ের কেতন ওড়াও হে প্রবল প্রাণ...'। এমন সয়য় সূর্য মিশ্রর বিবৃতি। সারা দেশে মোদীর বিরুদ্ধে রায়। রায় শুধু মোদী নয় মৌলবাদকে যারা মাথায় তোলে তাদের সবার বিরুদ্ধে। তৃণমূল সাধু সাবধান! বাম বন্ধুরা বললেন, বাংলার সূর্য অস্ত গেছে। তবু সূর্যকান্ত নাছোড়। আরে আমাদের এখন নতুন সূর্যোদয় রাজস্থানে। এবারে পুজোয় ওই দুটো লাল কেন্দ্রে।
এবং বিজেপি ১১ তারিখ থেকে চুপ। শ্মশান বৈরাগ্য! রাজস্থানে, মধ্যপ্রদেশে তো কাঁটে কা টক্কর। তবু মোদী নীরব। শাহ রবহীন। শুধু শিবরাজ আর রমন বলে যাচ্ছেন। বসুন্ধরা 'নো কমেন্টস'। যে ভদ্রলোক প্রচার করতে করতে প্লেনের সিঁড়ি থেকে গড়িয়ে পড়ে যাচ্ছিলেন তাঁকে দেখে মনে হচ্ছে তাঁর কোনও দায় নেই। অবশেষে আলো। সুপ্রিম কোর্ট। মহামান্য আদালত বললেন, রাফাল কেনায় কোনও গড়বড় হয়নি। তো একথাটা ভোটের আগে বলা যেত না? অমিত বিক্রমে সভাপতি গাল পাড়লেন বিরোধী শক্তিকে। আর বিরোধীরা বলল, ওরা আদালত নিয়ে এত লাফাচ্ছে? কেন? ক'দিন আগেই রাম মন্দির নিয়ে যে ওরা বললেন, "আদালত যাই বলুক, মন্দির ওহিঁ বনায়েঙ্গে! নহি তো কানুন বদল দেঙ্গে?" আর আবহমান কাল ধরে ওরাই বলে আসছেন, "ইয়ে আদালত নহি, আস্থাকা সওয়াল হ্যায়।"