রুমেলা সাহা
Dear আম্মু,
তোমার মনে আছে সেই গল্পটা, সেই যে --বুড়িগঙ্গার স্রোতে ভেসে চলেছে একটা নৌকো। নৌকোর ছইয়ের মধ্যে মাদুর পাতা। সেখানে নাকে নোলক, কপালে এত্তো বড় করে সিঁদুর টিপ পরা পুচকি মেয়েটা গাছকোমর করে ছোট্ট শাড়ি পরেছে। সে একা একা রান্নাবাটি, এক্কাদোক্কা কত খেলাই না খেলে সারা দিনে। ফরসা টুকটুকে ছোটখাটো মেয়ের মাথায় তেল চুপচুপে বেণী বাঁধা। নৌকার স্রোতের তালে তালে মেয়েটি এদিকে ওদিকে হেলে যায় কিন্তু প্রতিবারই অনায়াস দক্ষতায় ঠিক ভারসাম্য রক্ষা করে। কখনো নৌকোর পাটাতনে শুয়ে ছলাত ছলাত জলের শব্দ শোনে, কখনো তার কচি কচি আঙুল স্রোত ছুঁয়ে যায়।
তার বাড়ি নদী-নালার দেশে। পদ্মা, মেঘনা, তেঁতুলিয়া,সন্ধ্যা আরও কত নদীর ওপরে ভেসে বেড়ায় তাদের নৌকা। মেয়েটির এক দিদি ছিল। সেও পরমা সুন্দরী। একদিন এক মস্ত জমিদার বাড়ির ছেলের সঙ্গে দিদির বিয়ে হয়ে গেল। মেয়েটি একা, তার একটি ভাই আছে, তবে ভাইটি বেশ ছোট। একা একা নদীর সঙ্গে খেলা করেই মেয়ের সময় কাটে।
কথায় বলে আইতে শাল যাইতে শাল, তার নাম বরিশাল। বরিশালের কুমোরখালির গলাচিপাতে পুচকি মেয়েটির শ্বশুর বাড়ি। বিয়ের দিন মেয়েটি এতকিছু বুঝতেই পারেনি। কারা যেন গান করেছিল –
“আমের তলায় ঝামুর ঝুমুর কলাতলায় বিয়া.
আইলেন গো সোন্দরীর জামাই মুকুট মাথায় দিয়া”
কত জাঁক-জমক, লোকজন, আত্মীয়-কুটুম্ব। অনেক রাতে বিয়ের লগ্ন। যখন তাকে মণ্ডপে নিয়ে যাওয়া হয় তখন সে ঘুমিয়ে কাদা। হবে নাই বা কেন ? তখন সে সবে ছয়। আর সেই ঢ্যাঙ্গা কালো রোগা মত ছেলেটা, যার সঙ্গে তার জন্ম জন্মান্তরের সম্পর্ক তৈরি হল সে তখন এগারো। শুভ দৃষ্টি আর হল কই, ছোট্ট বর আর কনে ঘুমিয়ে পড়ছে বার বার। তাই বড় কাঁসার থালায় কনেকে বসিয়ে প্রায় কোলে নিয়েই বিয়ে সম্পন্ন হল।
আরও পড়ুন, এবার মায়ের নামেই পরিচিত হোক সন্তানেরা
গল্পটা চেনা লাগছে আম্মু। কতবার এই গল্পটা তুমি আমায় বলেছো। দুপুরে তোমার ঘরে খাটে শুয়ে শুয়ে আমার মাথার চুলে বিলি কেটে দিতে দিতে এরকম কত গল্পের ঝুলি তুমি রোজ খুলতে, মনে আছে। আর আমি আস্তে আস্তে জেনে নিতাম, তোমার দ্যাশের কথা। তোমার নিজের দ্যাশ। এই দ্যাশটার মত নয়, সেই দ্যাশে রাস্তার বদলে নদী বেশি ছিল। বাড়ির থেকে মাঠ বেশি ছিল। সেই দ্যাশটাই আমার কাছে রূপকথার হাতিশালে হাতি, ঘোড়াশালের ঘোড়া আর হিরে মানিক ভর্তি রাজবাড়ির মতোই আকর্ষণীয় ছিল। তোমার সঙ্গে আমিও সেই দুপুরগুলোতে তোমার দ্যাশে পাড়ি দিতাম। তুমি আমার আম্মু, যদি ওটা তোমার দ্যাশ হয় তবে ওটা আমারও দ্যাশ।
বড় হয়ে বুঝেছি ওটা আমার কাছে বিদেশ। তোমার বুড়িগঙ্গা, ঝালকাটি,বরিশালে যেতে হলে আমার পাসপোর্ট-ভিসা বানাতে হবে।আম্মু তুমি যখন ১৯৪৭ সনে এদেশে আসত বাধ্য হয়েছিলে তখন তোমার বয়স কুড়িও পেরোয়নি। সেই যে এলে আর কখনই যেতে পারোনি। কিন্তু মনে মনে প্রতি মুহূর্তে ভেবেছ এটা নয়, ওটাই তোমার নিজের দেশ। যেখানে তোমার সব আছে। তাই সব সময়ে বলতে “আমাগো দ্যাশ কেউ কখনো মাছ কিন্যা খায় নাই”।
আমাদের বাড়িতে যে ঝুমকো জবা, লঙ্কা জবা গাছগুলো ছিল সেগুলো তোমার শাশুড়ি বাংলাদেশ থেকে এনে দিয়েছিল। তুমি রোজ সেই ফুলে পুজো করতে। আত্মীয়তা ছিল গাছগুলোর সঙ্গে তোমার। তুমি আর দাদু একেবারে আলাদা ছিলে। তুমি বেঁটেখাটো ফর্সা, মিশুকে আর দাদু খুব লম্বা, অতি শ্যামবর্ণ গম্ভীর প্রকৃতির মানুষ। তোমার ৬টি সন্তান। এদেশে এসেছিলে কপর্দকশূন্য অবস্থায়। জেঠু তখন কোলে। সে বড় বিড়ম্বিত সময়। যুদ্ধ, মন্বন্তর, সাম্প্রদায়িকতা, দেশভাগ, উদ্বাস্তু, শরণার্থী...তোমাদের প্রজন্ম এইসবের সাক্ষী এবং ভুক্তভোগী। তোমরা এলে এক নতুন দেশে, সেখানে তোমাদের নতুন পরিচয়- উদ্বাস্তু। সর্বহারা,শরণার্থী আরও কত নাম তখন তোমাদের। একদিন আগেও যাদের সব ছিল, কলমের একটা আঁচড়ে তাদের সব শেষ হয়ে গেল।
আরও পড়ুন, ‘মা’ নামে শাঁখ বেজেই চলে
দাদু যখন মারা যায় তখন আমি খুব ছোট। আমার স্মৃতির বেশির ভাগ জুড়েই তুমি সাদা শাড়ি পড়ে আছো।ম নে আছে বিকেলগুলোতে গা ধুয়ে, পাট ভাঙা শাড়ি পরে, কালো ফিতে দিয়ে তোমার কোমর ছাপানো সাদা-কালো চুল বেঁধে, তুমি পাড়া বেড়াতে যেতে। আমিও তোমার সঙ্গী হতাম। পাড়ার সব বাড়িতে গিয়ে সে বাড়ির মহিলাদের সঙ্গে গল্প করতে। কে কেমন আছে তার খোঁজখবর করতে, দরকার মতো সাহায্য করতে। জানো আম্মু এখন মানুষ বড় একা। কেউ কারো খোঁজ, প্রয়োজন ছাড়া নেয় না। একা বাড়িতে কেউ মারা গেলে যতক্ষণ না পচে গন্ধ বেরোচ্ছে ততক্ষণ কেউ অন্যের ব্যাপারে নাক গলায় না।
বার্ষিক পরীক্ষার শেষে বড়পিসি পরীক্ষার খাতা নিয়ে আসত বাড়িতে। খাতা দেখত। ভূগোল আর অংকের সাবজেক্ট টিচার ছিল। আমি সবিস্ময়ে লক্ষ করতাম যারা ৩-৪ নম্বরের জন্য ফেল করে যাচ্ছে,বড়পিসি তাদের উত্তরগুলো রাবার দিয়ে মুছে পেন্সিল দিয়ে সঠিক উত্তর লিখে ঠিক পাশ করিয়ে দিত। একদিন জিজ্ঞেস করলাম, বড়পিসি বলল, ‘এই মেয়েগুলো যদি ফেল করে তখন এদের বাবা-মা আর পড়াবে না, জোর করে বিয়ে দিয়ে দেবে। তাই পাশ করাই, যাতে আর একটা বছর অন্তত পড়তে পারে।ওরা তো খুব গরিব।‘
তখন আমি ক্লাস ফোর, শুধু ভাবি, ইস… আমার স্কুলে কেন এমন টিচার নেই। পরে, বহু পরে বুঝেছি, বালিকা বিবাহ আটকাতে বড়পিসি এই কৌশলের আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিল। তখন তো কন্যাশ্রী, রূপশ্রী ছিল না। নৈতিক-অনৈতিকের বিচার আমি বুঝি না, শুধু এটা বুঝি মনুষ্যত্ব, মানবিকতা, ছাত্রীদের প্রতি দায়িত্ববোধ কতটা থাকলে এটা সম্ভব।
আরও পড়ুন, মাতৃত্ব, অবসাদ ও অপরাধবোধে
আম্মু তুমি ঋত্বিক ঘটকের মেঘে ঢাকা তারা দেখেছিলে কিনা জানি না। আমি যতবার এই ছবিটা দেখেছি, মনে মনে নীতার জায়গায় বড়পিসিকেই দেখেছি। এমন একটা মানুষ যে সারা জীবনে শুধুমাত্র স্যাক্রিফাইসই করে গেল। সেবার মহালয়াতে বাড়ি আসল।আর উমার সঙ্গেই বিদায় নিলো। পুজোয় কী যে অসুস্থ হল, ৭ দিনের মধ্যে সব শেষ। চিকিৎসার সুযোগ পাওয়া গেল না। সেই প্রথম তুমি সন্তানের মৃত্যু শোক পেলে। আমাদের পুরো বাড়ির ভিত নড়ে গেল।
আম্মু তোমায় একটা খুশির খবর দি। আমাদের বাড়িতে নতুন সদস্য এসেছে। তোমার নাতির ঘরে পুতি হয়েছে গো। ও আমাকে পিপি মানে পিসি বলে ডাকে। সারা বাড়ি জুড়ে এখন পুচকির রাজত্ব। আমাদের বারান্দা, উঠোন আর ছাদ।
ওর নাম বৃষ্টি। খুব দুরন্ত হয়েছে। ওর সঙ্গে তোমার বেশ মিল আছে জানো। ও মাড়ি দিয়ে চকলেট খায়। ওকে তখন একদম তোমার মত দেখতে লাগে। ও তোমাকে বড় আম্মু বলে। তোমার ফটোটার সামনে নমো করে। আর কী কাণ্ড করে জানো, তোমার ঠাকুরের আসন থেকে শিবলিঙ্গ তুলে এনে নিজের পুতুলের মধ্যে রেখে দেয়, তাই নিয়েই খেলে। ভক্ত আর ভগবানের এ বেশ সম্পর্ক। কে যে কাকে নিয়ে খেলছে তা তোমার মধুসূদনই জানে।
আম্মু তোমার বেলামাসিকে মনে আছে? বেলা মাসি এখন আশ্রমে থাকে। বেলা মাসির অন্ধ মা মারা যাওয়ার পরই ও ঠিকা কাজ ছেড়ে দিয়েছিল। জীবনের সব সঞ্চয় জমিয়ে ক্যানিং না কোথায় ২ কাঠা জমি কিনে যে বাড়িটা করেছিল, সেই বাড়িটাও ওর দিদির মেয়ে-জামাই কেড়ে নিয়েছে ওর কাছ থেকে। যদিও তাতে বেলা মাসির কোন আক্ষেপ নেই, বলে – “সবই গোপালের ইচ্ছা। বিষয় থাকলেই বিষয় চিন্তা থাকে, সে সব থেকে গোপালই আমাকে মুক্তি দিয়েছে।”
আরও পড়ুন, মা হওয়াই কি নারীত্বের একক পরিচয়?
আর লম্বা-মাসি? আমাদের বাড়িতে কাপড় কাচতে আসত? ওর নাম জানি না। ও খুব লম্বা ছিল তাই প্রত্যেকের মত তুমিও ওকে লম্বা-মাসি বলতে। ওর বড় মেয়ে রেজিনাকেও মাঝে মাঝে নিয়ে আসত। তুমি দুপরে ওকে ভাত খেতে দিতে। অনেক দিন এমন হয়েছে তোমাদের নিজেদের ভাত টুকু দিয়ে তুমি আর মা মুড়ি, চিড়ে খেতে। তুমি বলতে, “ওরা তো খেতে পারে না, কত দুর থেকে আসে, এইটুকু না খেলে বাঁচবে কী করে!”তোমার শাড়ি, আরও কত কী টুকিটাকি তুমি ওদের দিতে। তুমি বলতে, সেই দুর্যোগের রাতে যে নৌকা করে ওপার থেকে এপারে এসেছিলে প্রাণ হাতে নিয়ে, সেই নৌকার মাঝিও তো মুসলিম ছিল। তোমায় নৌকোর খোলে লুকিয়ে আনা হয়েছিল। নৌকোতে ওঠার সময় সেই মাঝি দাদুর হাত ধরে বলেছিলেন, - “ছোট কত্তা, আমার প্রাণ থাকতে আপনার আর ছোটগিন্নির কোন বিপদ হইবে না”। তিনি কথা রেখেছিলেন।তুমি বলতে, “সবই মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ। আমরা যেমন সব ছাইড়া আইসি, ওরাও তো সব ছাইড়া আমাগো দ্যাশে গেল।যন্ত্রণা দুদিকেই সমান।”
আম্মু তুমি খুব একটা লেখাপড়া করনি, কিন্তু তোমার বোধ,আন্তরিকতা,চেতনা,সহিষ্ণুতা,সহানুভূতি দিয়ে তুমি যা বুঝেছো,আজকের অনেক শিক্ষিত মানুষেরা এসব বোঝে না। তাই তো এখন সারা দেশে হিংসা, ঘৃণা,অসহিষ্ণুতার এত বাড়াবাড়ি।আমার খুব দুঃখ হয় এদের জন্য, এদেরও যদি তোমার মত আম্মু থাকত তাহলে এরাও এমন হতে পারতো না।
আম্মু তোমার ভারীর বউকে মনে আছে? ভারী আমাদের বাড়িতে জল দিত, সেই দাদুর আমল থেকেই। শেষের দিয়ে ওর বয়স বাড়ল, শরীর অশক্ত হল, জলের বোঝা আর বইতে পারতো না। তখন ভারীর বউ সেই দায়িত্ব তুলে নিলো কাঁধে। অনেক পুরুষের মাঝে একা মহিলা, আমাদের ভারীর বউ রোজ সকালে কাঁধে দুই ভার নিয়ে জল দিত বাড়ি বাড়িতে। ৩ ছেলে আর বুড়ো বরের ভরণপোষণের দায়িত্ব ও এভাবেই পালন করত।ওর বড় ছেলের সঙ্গে সেদিন দেখা হল, বলল, বাবা মারা যাওয়ার পর মাও বিহারে, নিজের দেশে চলে গেছে।
তারপর আস্তে আস্তে তোমার শরীর ভেঙে পড়ল। বয়সও তো হচ্ছিল তোমার। একদিন তোমার অমন সুন্দর চুলও বাড়িতে নাপিত এসে কেটে দিল। তুমি আঁচড়াতে পারতে না। তারপর এক মাথা কদম ছাট সাদা ধবধবে চুল নিয়ে তুমি বারান্দায় বসে থাকতে। সময় তোমার শরীরে নিজের ছাপ দিয়ে যেত। বিয়ের পর দাদু তোমায় একটা সুন্দর নাম দিয়েছিল. নন্দিতা। কাউকে অবশ্য কখনো কোন নামে তোমায় ডাকতে শুনিনি। তুমি ছিলে বড়দের মা আর আমাদের ছোটদের আম্মু। শেষের দিকে তোমার স্মৃতি উথাল-পাতাল করত। বর্তমানের বদলে অতীতের স্মৃতি তোমার কাছে তাজা ছিল। তখন খাটে শুয়ে শুয়ে তুমি কত ছড়া বলে যেতে।আমার খুব আফসোস হয়। তখন যদি ছড়াগুলো লিখে রাখতাম!
জানো আম্মু আমি পদ্মাকে ছুঁয়ে এসেছি। তোমার সেই চির চেনা, চির আপন পদ্মা। সেবার আমি মুর্শিদাবাদের জলঙ্গীতে গেছিলাম। ওখানেই পদ্মা দুই দেশের মাঝে বয়ে যায়। ভারত ওই পর্যন্তই পদ্মাকে পেয়েছে। তারপরের পদ্মা বাংলাদেশের।
জলঙ্গীতে আমার পায়ের ওপর দিয়ে বয়ে চলে পদ্মা। শরীর জুড়ে লেগে থাকে তোমার আলতো স্পর্শের মতো বাংলাদেশের বাতাস।
সেখানে আজানের সুরের সঙ্গে মহাকালের চরাচর থেকে ভেসে আসে আজন্ম শোনা তোমার হাহাকার...
"ওইডা...ওইডা আমাগো দ্যাশ..."
আমার গুলিয়ে যায় সব কিছু, পদ্মার স্ফটিক স্বচ্ছ জলে ভেসে ওঠে আমারই অবয়ব। আমি তাকে প্রশ্ন করি, তোমার দেশ কোনটা, অবয়ব খালি স্রোতের সঙ্গে নড়ে, উত্তর দেয় না।
তোমার পদ্মা খুব সুন্দরী। আমিও তোমার মতো তোমার পদ্মার প্রেমে ডুবে আছি সেই থেকে।
অবশেষে ডাক্তার জবাব দিল। সেটা আগস্টের প্রথম সপ্তাহ। বাড়ির সবাই মনে মনে প্রস্তুত হচ্ছে তোমার শেষ বিদায়ের জন্য। কিন্তু আমি জানতাম কবে তুমি যাবে। কারণ তোমার যাওয়াটা তো আর সকলের মত যাওয়া নয়, ওটা ফেরা। আমার আন্দাজ সত্যি প্রমাণ করে ১৫ই আগস্ট সকালে তুমি চলে গেলে আম্মু।
হ্যাঁ, ওই দিনই। স্বাধীনতা কাকে বলে আম্মু ? ১৯৪৭ –এর ১৫ই আগস্ট। ১ কোটি ৪ লক্ষের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছিল। ১ লক্ষের বেশি মানুষ হিংসার বলি হয়েছে। লুঠ,ধর্ষণ,ধর্ষণ জাত সন্তান এদের কথা না হয় বাদই দিলাম। কিন্তু একটা গোটা প্রজন্ম মানসিক, শারীরিক,আর্থিক ভাবে পঙ্গু হয়ে ধ্বংস হয়ে গেল। তোমরা কি ভেবে ছিলে এমন স্বাধীনতা আসবে ? মধ্যরাতে যে সূর্যটা উঠেছিল সেটা এত রক্তাক্ত হবে! আমরা অতীত থেকে শিক্ষা নিইনা। তাই কিছু মানুষের নোংরা মানসিকতার জন্য আজ আবার সারা দেশ সেই রক্ত স্নানের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।
২০১২ এর ১৫ ই আগস্টতোমার পার্থিব শরীর শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হল। সেদিন তুমি তোমার স্থূল শরীর ত্যাগ করে সূক্ষ্ম শরীরে, দেশ-কালের বেড়া ভেঙে ফিরে গেলে তোমার সেই ছোট বেলার মাতৃভূমিতে। সেই যেখানে নদীর এপার ওপার দেখা যায় না। সেখানে তুমি দড়িয়াবান্দা, এক্কা দোক্কা কত কিছুই না খেলে বেড়াচ্ছো। সেই ছোট্ট ফুটফুটে মেয়েটা যার মাথায় তেল চুপচুপে বেণী বাঁধা। সেই পদ্মা-মেঘনার বুকে, হাওয়াকে সঙ্গী করে ভেসে বেড়াচ্ছো। এখন কে তোমায় আটকাবে! আম্মু, সেই রূপকথার রাজ্যের ঠিকানা আমি আর কাউকে বলবো না। তুমি সেখানে নিশ্চিন্তে থাকো। আর কোন দেশভাগ তোমাকে সেখান থেকে উপড়ে আনতে পারবে না।
- ইতি তোমার নাতনী